সৌদি আরব , মালি , সেনেগাল , তাঞ্জানিয়া ও মরিশাসে এক রাষ্ট্রীয় সফরে চীনের প্রেসিডেন্ট হু চিন থাও ১০ ফেব্রুয়ারী দুপুরে বিশেষ বিমানযোগে পেইচিং থেকে রওয়ানা হয়েছেন । এশিয়া ও আফ্রিকার পাঁচটি দেশে এ আটদিনব্যাপী সফর হচ্ছে নতুন বছরে চীনের সর্বোচ্চ নেতার প্রথম বিদেশ সফর ।
বসন্ত উত্সব হচ্ছে চীনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহ্যবাহী উত্সব । বসন্ত উত্সবের সময় আত্মীয়স্বজন ও বন্ধুবান্ধবের সংগে দেখাসাক্ষাত করা হচ্ছে চীনের চিরাচরিত ব্যাপার । বসন্ত উত্সবের পর পরই প্রেসিডেন্ট হু চিন থাও যেসব দেশ সফরে যাচ্ছেন , সেসব দেশ সবই চীনের পুরনো ও নতুন বন্ধু । চীনের সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী চাই চুন সাংবাদিকদের দেয়া এক সাক্ষাত্কারে এ পাঁচটি দেশের সংগে চীনের সম্পর্কের উচ্চ মূল্যায়ণ করেন । এবারের সফরের লক্ষ্য সম্পর্কে তিনি বলেন ,
চীন আশা করে যে , এবারের সফরের মাধ্যমে সৌদি আরবের সংগে চীনের কৌশলগত ও বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক আরো সুসংহত হবে , উপসাগরীয় সহযোগিতা কমিটির সংগে চীনের যৌথ সহযোগিতা আরো সম্প্রসারিত হবে , চীন-আফ্রিকা সহযোগিতা ফোরামের পেইচিং শীর্ষ সম্মেলনের সাফল্যের চূড়ান্ত পর্যায়ের কাজ বাস্তবায়ন ত্বরান্বিত হবে এবং আফ্রিকার এ চারটি দেশের সংগে চীনের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক ও সহযোগিতা আরো জোরদার হবে ।
সৌদি আরব হচ্ছে হু চিন থাওয়ের এবারের সফরের প্রথম ধাপ । দশ বারো বছর আগে দু দেশের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপিত হলেও অল্প সময়ের মধ্যে দু দেশের সম্পর্কের দ্রুত উন্নতি হয়েছে । চীন ও সৌদি আরবের মধ্যে ইতোমধ্যে কৌশলগত ও সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক প্রতিষ্ঠিত হয়েছে । বহু বছর ধরে সৌদি আরব বরাবরই পশ্চিম এশিয়া ও আফ্রিকায় চীনের বৃহত্তম বাণিজ্যিক অংশীদার ।
চাই চুন আরো বলেন , সৌদি আরব সফরকালে হু চিন থাও উপসাগরীয় সহযোগিতা কমিটির মহাসচিব আটিয়ার সংগেও সাক্ষাত করে এ কমিটির সংগে চীনের সহযোগিতা নিয়ে মত বিনিময় করবেন ।
চীন –আফ্রিকা সম্পর্কের উন্নয়ন সবসময় বিশ্ববাসীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে আসছে । প্রতি বছরের শুরুতে চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আফ্রিকা সফরে যান । এটি চীনের একটি কূটনৈতিক রেওয়াজে পরিণত হয়েছে । চীনের প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর হু চিন থাওও এবার নিয়ে চতুর্থবারের মত আফ্রিকা সফরে যাচ্ছেন ।
চীনের আধুনিক আন্তর্জাতিক সম্পর্ক গবেষণা ইন্সটিটিউটের পশ্চিম এশিয়া ও আফ্রিকা গবেষণাগারের উপপরিচালক সুই ওই চুং হু চিন থাওয়ের আফ্রিকা সফরের তিনটি দিক ব্যাখ্যা করে বলেন ,
প্রথমত এ বছর হচ্ছে চীন-আফ্রিকা সহযোগিতা ফোরামের সাফল্য পর্যালোচনার বছর এবং আগামী ফোরামের জন্যে পরিকল্পনা প্রণয়নের বছর । দ্বিতীয়ত আর্থিক সংকট চীন ও আফ্রিকার ওপর প্রভাব ফেলেছে । আর্থিক সংকট কাটিয়ে উঠার জন্যে দু পক্ষ কেমন করে সহযোগিতা করবে ? এটি এখন দেখার বিষয় । তৃতীয়ত চীন ও আফ্রিকা তাদের সহযোগিতা বাড়ানোর প্রক্রিয়ায় দু পক্ষ কিভাবে নতুন সমস্যা মোকাবিলা করবে এবং কি কি নতুন ব্যবস্থা নেবে ? এটিও দেখা দরকার ।
চীনের সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী চাই চুন বলেন , আন্তর্জাতিক আর্থিক সংকট চীন-আফ্রিকা সহযোগিতার ওপরও কিছু নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে । এ প্রভাবকে সর্বনিম্ন পর্যায়ে কমিয়ে আনার জন্যে চীন ধারাবাহিক ব্যবস্থা নিচ্ছে । তিনি বলেন ,
প্রেসিডেন্ট হু চিন থাওয়ের ঘোষিত আটদফা ব্যবস্থা বাস্তবায়নের জন্যে চীন তার কাজ জোরদার করবে এবং সময়মত এবং উচ্চ মানে আফ্রিকায় তার দেয়া সাহায্যের প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন করবে । আমাদের বিশ্বাস , দু পক্ষের মিলিত প্রচেষ্টায় চীন –আফ্রিকা সহযোগিতার ওপর আর্থিক সংকটের প্রভাব মোকাবিলা করতে পারবো ।
চীনের আফ্রিকা বিষয়ক বিশেষজ্ঞ সুই ওই চুং বলেন , উন্নয়নশীল দেশগুলোর সংগে সহযোগিতা জোরদার করা যেমন চীনের স্বার্থ , তেমনি উন্নয়নশীল দেশগুলোর স্বার্থের সংগেও সংগতিপূর্ণ ।
|