v চীনের বিশ্ব কোষv চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগ
চীনের বিদেশি ভাষা প্রশিক্ষণের রাজা ইয়ু মিন হুং
2009-02-09 16:47:43

    চীনের ৩০ বছরের সংস্কার ও উন্মুক্তকরণের প্রক্রিয়ায় অনেক চীনাই নিজের বৈশিষ্ট প্রকাশের মধ্য দিয়ে নিজেদের জীবনের মূল্যকে খুঁজে নিয়ে ভাগ্য পরিবর্তন করার সুযোগ পেয়েছে । তাদের মধ্যে ইয়ু মিন হুং নামের একজন পুরুষ "হতাশা থেকে আশার আলোর পথ খুঁজে বের করে" রূপকথার মত একজন দরিদ্র মানুষ থেকে চীনের বৃহত্তম ভাষা প্রশিক্ষণ সংস্থা--নিউ ওরিয়েন্টাল শিক্ষা গ্রুপের প্রধান কর্মকর্তায় পরিণত হয়েছেন । চীনের বিদেশিগামী শিক্ষার্থীরা তাকে সম্মান করে "শিক্ষার অধিপাত" হিসেবে ডাকে ।

    ১৯৮০ সালে চিয়াং সু প্রদেশের গ্রাম থেকে আসা যুবক ইয়ু মিন হুং তিন বার সাধারণ উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ভর্তি পরীক্ষা দেয়ার পর সবশেষে চীনের সর্বোচ্চ উচ্চ পর্যায়ের বিশ্ববিদ্যালয় পেইচিং বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে পেরেছেন । তিনি বলেন :  

    আমি একজন গ্রামের ছেলে এবং পর পর তিন বার সাধারণ উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ভর্তি পরীক্ষা দিয়েছি । যখন আমি পেইচিং বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছি , তখন আমার সহপাঠিদের মান আমার চেয়ে অনেক ভালো । তাই তখন আমাকে খুব নিকৃষ্ট মনে হতো ।

    বন্ধু নেই , প্রেমও নেই । ইয়ু মিন হুংয়ের শুধু আছে বেশি বেশি বই । এখন ইয়ু মিন হুং সে অভিজ্ঞতা স্মরণ করে এখন খুব কৃতজ্ঞতা বোধ করেন । পেইচিং বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০০৮ শিক্ষা বর্ষের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে শ্রেষ্ঠ স্মাতক ছাত্র হিসেবে তিনি ভাষণ দেয়ার সময় বলেন : পেইচিং বিশ্ববিদ্যালয় আমার সারা জীবনটাকে পরিবর্তনের জায়গা । এ বিশ্ববিদ্যালয় আমাকে অনেক সুন্দর সুন্দর স্মৃতি দিয়েছে এবং কিছু দুঃখের স্মৃতি হৃদয়ে স্মরণীয় করে রেখেছে । ঠিক এ সুখ ও দুঃখেরমাধ্যমে আমি অবশেষে নিজের অবস্থান খুঁজে বের করেছি এবং আমি নিজে , পরিবার এবং সমাজের জন্য কিছু করতে শুরু করেছি ।

    চার বছরের লেখাপড়ার পর পেইচিং বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক হওয়ার পর ইয়ু মিন হুং এ বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন ইংরেজী শিক্ষক হয়েছেন । তখন চীনে দ্বিতীয় বার বিদেশে যাওয়ার উচ্ছাস দেয়া দেয় । দেশের দরজা খোলার পর আরো বেশি চীনা যুবকরা বাইরের পৃথিবীকে দেখতে আগ্রহী । যদিও বিদেশে যাওয়ার তখন সহজ ব্যাপার ছিলনা , তবুও পেইচিংয়ের পূর্বাঞ্চলের তৃতীয় রিং সড়কে অবস্থিত বিভিন্ন দেশের দূতাবাসে প্রতিদিন লোকেরা লাইন করে অপেক্ষা করতে থাকে । ইয়ু মিন হংয়ের অনেক সহপাঠীও একের পর এক বিদেশে গিয়েছেন । ভালোভাবে ইংরেজী জানা ইয়ু মিন হুংও বিদেশে যাওয়ার কথা চিন্তা করতেন । তিনি বলেন :

    আমার অনেক সহপাঠী ও বন্ধু বিদেশে পড়াশুনা করেন । আমি তাদের দিকে মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকাই । তাই আমিও দু'এক বছর চাকরির পর বিদেশে যাওয়ার চেষ্টা করতে থাকি ।

    ১৯৯০ সালে ইয়ু মিন হুং পেইচিং বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকের পদ ছেড়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেন । এমন সিদ্ধান্তের জন্য তখন খুব সাহসের প্রয়োজন হতো । তা মানে ইয়ু মিন হুং খুব শান্ত এবং স্থিতিশীল জীবন অনায়াসেই ছেড়ে দিয়েছেন ।

    বিদেশে যাওয়ার লোকের সংখ্যা আরো বেড়েছে । তাই বিভিন্ন বিদেশি ভাষা শিক্ষা সংস্থাও বেশি হয়েছে । পদত্যাগের পরের কয়েক বছরে ইয়ু মিন হুং এমন একটি সংস্থায় ইংরেজী ভাষা শেখাতেন । ১৯৯৩ সালে ইয়ু মিন হুং নিজেই একটি ভাষা প্রশিক্ষণ সংস্থা প্রতিষ্ঠার কথা চিন্তা করতেন । তিনি বলেন :

    অন্যরা স্কুল খুলতে পারে , আমিও করতে পারি । আসলে আমার মনে হয় আমার স্কুল তাদের চেয়ে আরো ভালো হবে । কারণ আমি ছাত্রছাত্রীদের খুবই বন্ধুর দৃষ্টিতে দেখি , আমার বিদেশি ভাষার মানও ভালো , ছাত্রছাত্রীরা আমার ক্লাস পছন্দ করবে।

    ১৯৯৩ সালের নভেম্বরে ইয়ু মিন হুং স্কুল খোলার লাইসেনস পান । অর্থ এবং কার্যালয় কিছুই নেই । তিনি পেইচিং চুং কুয়ান ছুন এলাকার দ্বিতীয় প্রাথমিক স্কুলের একটি সাদামাটা ঘরে স্কুল খোলার পর কাজ শুরু করেন ।

    এসব দুরুহ অভিজ্ঞতা ইয়ু মিন হুংকে নিঃসঙ্গতা ও ব্যর্থতাকে সহ্য করার ক্ষমতা এনে দিয়েছে । তার নিজের একটি প্রবচন আছে :হতাশ থেকে আশা আলো খুঁজে বের করতে পারলে জীবন উজ্জ্বল হবে । নিরলস চেষ্টার পর অল্প সময়ের মধ্যে ইয়ু মিন হুংয়ের স্কুল ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে বিখ্যাত হয়ে ওঠেন । তিনি বলেন :

    আমি শুধু দু'টি প্রকল্পের ওপর মনোযোগ দেই । এ দু'টি প্রকল্প সবই চীনের ছাত্রছাত্রীদের বিদেশে যাওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় দু'টি পরীক্ষা । একটি হল টোফল (toefl), আরেকটি হল জি আর ই (G R E)। আমি এ দু'টি প্রকল্প শুরু করার সময় যথাসাথ্য চেষ্টায় চীনের বিদেশি ভাষা প্রশিক্ষণের প্রথম শ্রেণীর ব্র্যান্ড অর্জনের লক্ষ্য নির্ধারণ করেছি ।

    এখন ইয়ু মিন হুংয়ের নিউ ওরিয়েন্টাল স্কুল চীনের বৃহত্তম বিদেশি ভাষা প্রশিক্ষণ সংস্থায় পরিণত হয়েছে । যদিও নিজের স্বপ্ন বাস্তবায়িত হয়েছে । তবে ইয়ু মিন হুং এর জন্য নিজের চলার পথে ক্লান্তিহীনভাবে চলছেন । তিনি মনে করেন , উন্নয়ন চাইলে স্কুলের শেয়ার সংস্কার করতে হবে । তিনিব বলেন :  

    কোম্পানীর কাঠামো সংস্কার ২০০১ সাল থেকে শুরু হয় । ২০০৪ সাল তা শেষ হয়। কোম্পানীর কাঠামো এবং শেয়ার কাঠামো প্রাথমিকভাবে নির্ধারিত হয়েছে । তখন চীনের শিক্ষা আইনের মধ্যে একটি নিয়ম ছিল স্কুল অন্য প্রদেশে শাখা খুলতে পারবে না । তবে আমরা স্কুল থেকে কোম্পানীতে পরিণত হওয়ার পর অন্য প্রদেশে যেতে পারবো ।

    শেয়ার সংস্কারের পর নিউ ওরিএনটল ক্রমাগতভাবে সাংহাই , উ হান ও চেং চৌশহ চীনের বড় শহরে শাখা খুলেছে । কোম্পানীর কাজের ক্ষেত্র আগের ইংরেজী ভাষা প্রশিক্ষণ থেকে এখনকার ইংরেজী ভাষা প্রশিক্ষণ , ছোট ছোট দেশের ভাষা প্রশিক্ষণ , যুবকদের ইংরেজীতে প্রশিক্ষণ দেয়া এবং বিদেশে যাওয়ার কন্সুলেট সেবায় সম্প্রসারিত হয়েছে ।

    ২০০৬ সালের ৭ই সেপ্টেম্বর নিউ ওরিয়েন্টাল গ্রুপ নিউয়র্ক শেয়ার বাজারে আনুষ্ঠানিকভাবে তালিকাভূক্ত হয়েছে। তা চীনের বেসরকারী শিক্ষার নতুন পথ খুঁজে বের করেছে । এর ফলে ইয়ু মিন হুং চীনের সবচেয়ে ধনী শিক্ষকে পরিণত হয়েছৈ ।বর্তমানে নিউ ওরিয়েন্টাল চীনের ইংরেজী ভাষা প্রশিক্ষণ বাজারের রাজা হয়েছে । তিনি বলেন ;  

    গত বছর আমাদের ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা ছিল প্রায় ১৩ লাখ । প্রতি বছর ২০ শতাংশ বা ৩০ শতাংশ বৃদ্ধি হার বজায় রয়েছে । চলতি বছর আমরা অনুমান করছি ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা ১৫ থেকে ১৬ লাখ হবে ।

    নিউ ওরিয়েন্টাল একটি পতাকা হয়েছে । ইয়ু মিন হুংয়ের ব্যক্তিগত সম্পদও অনেক বেশি । সমাজের জন্য তিনি কিছু করতে আগ্রহী । তিনি বলেন :  

    আমি এখন প্রায় দুই হাজার দরিদ্র ছাত্রছাত্রীদের লেখাপড়ার জন্য আর্থিক সাহায্য দেই । সি ছুয়ান ভূমিকম্পের ত্রাণ কাজে আমিও অনেক টাকা দান করেছি । আমি আশা করি একটি বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয় খুলতে পারবো । (শুয়েই ফেই ফেই)

  • সাক্ষাত্কার
  • সর্বশেষ সংবাদ
  • অন-লাইন জরীপ
     
    © China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
    16A Shijingshan Road, Beijing, China