v চীনের বিশ্ব কোষv চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগ
কূটনীতিক উ চিয়ান মিনের গল্প
2009-02-06 15:56:52

৭০ বছরের উ চিয়ান মিন, তাঁকে " চীনের সবচে' বিখ্যাত কূটনীতিকদের মধ্যে অন্যতম" বলে অভিহিত করা হয়। চীনের কূটনীতির উন্নয়নের একজন প্রত্যক্ষদর্শী ও অংশগ্রহণকারী হিসেবে উ চিয়ান মিনের অভিজ্ঞতা যেন একটি "গল্পের বইয়ের" মতো। বন্ধুরা, আজকের " তাহাদের কথা" অনুষ্ঠানে আমরা এ বিষয় নিয়েই আলোচনা করবো।

পেই চিং বৈদেশিক ভাষা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফরাসী বিভাগে লেখাপড়া শেষ করার পর উ চিন মিন বহু বছর ধরে চীনের মহানেতা মাও সে তুং এবং চৌ এন লাইসহ চীনের প্রথম পর্যায়ের শীর্ষ নেতাদের দোভাষীর কাজ করেছেন। ১৯৭১ সালে জাতিসংঘে চীন গণ প্রজাতন্ত্রের বৈধ আসন পুনরায় পাওয়ার পর, উ চিয়ান মিন জাতিসংঘে চীনের প্রথম দফা প্রতিনিধি দলের একজন সদস্য হিসেবে নিউইয়র্কে এসেছিলেন। সে সময় তিনি চীন পুনরায় আন্তর্জাতিক মঞ্চে ফিরে আসার আনন্দের উদ্বেল হয়ে উঠেছিলেন । তবে তিনি নিজ উদ্যোগেই সংস্কার ও উন্মুক্তকরণ শুরু হওয়ার আগে বিশ্বের কাছে চীনের ভাবমূর্তির অগ্রগতি সম্পর্কে সাবধান বা সতর্ক করে দিয়ে ছিলেন। এ সম্পর্কে উ চিয়েন মিন বলেন:" একবারে জার্মানীর একজন কাউন্সিলার আমাকে আমন্ত্রণ করায় আমি একটি মিলন মেলায় গিয়েছিলাম। তখন তিনি অংশগ্রহণকারী সবার সাথে আমাকে পরিচয় করিয়েছেন। এ মানুষ হচ্ছেন মার্কিন প্রতিনিধি দলের শীর্ষ সচিব আর এ হচ্ছেন ফ্রান্সের কর্মকর্তা। যখন তিনি ইসরাইলের কাউন্সিলারের সাথে আমাকে পরিচয় করিয়ে দেন। তখন করমর্দনের জন্য এ ইসরাইলী কাউন্সিলার হাত আমার দিকে বাড়িয়ে দেয় । তবে আমাদের ভেতরে নিয়ম আছে যে, তাদের সাথে হাত করমর্দন করা নিষিদ্ধ।"

সেসময় চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় চীনা কূটনীতিকের জন্য বাইরে যোগাযোগের ক্ষেত্রে বেশ কিছু নীতি প্রণয়ন করেছে। যেমন কয়েকটি দেশের কূটনীতিদের সঙ্গে যোগাযোগ না করা এবং উন্মুক্ত স্থানে তাদের সাথে করমর্দন করা নিষিদ্ধ । তিনি বলেন" তাঁর হাত আমার দিকে চলে এসেছে। কী, আপনি তার সাথে করমর্দন করবেন না?।"

অব্যশই করমর্দন করলাম। সেদিনের কথা স্মরণ করলে, উ চিয়ান মিন বেশ অনুভব করেন যে, সংস্কার ও উন্মুক্তকরণের আগে এবং এর শুরুর পরে চীনের বিশাল পরিবর্তন হয়েছে। এ সম্পর্কে তিনি বলেন:" হ্যাঁ! চীনে বিশাল পরিবর্তন করা হয়। আমি মনে করি, চীনের ৩০ বছরের কূটনৈতিক প্রক্রিয়া পর্যালোচনা করতে চাইলে , বলতে গেলে তিনটি বাক্য নিয়ে বর্ণনা করা যায়। যা হচ্ছে পরিস্থিতির বড় পরিবর্তন, নীতির বড় সমন্বয় এবং কূটনীতির বড় উন্নয়ন। কূটনৈতিক কাজের প্রধান দিকও সংগ্রাম থেকে সহযোগিতায় পরিণত হয়েছে।"

চীনের সংস্কার ও উন্মুক্তকরণ , চীন নিজের উন্নয়ন এবং চীন ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের পারস্পরিক গুরুত্ব আরোপ বর্তমানের এ বিশাল পরিবর্তন সৃষ্টি করেছে। এ পরিবর্তনের শুরুর দিক হচ্ছে ১৯৭৮ সালের শেষ দিকে অনুষ্ঠিত চীনের কমিউনিস্ট পার্টির একাদশ কংগ্রেসের তৃতীয় পূর্ণাঙ্গ অধিবেশন। সেবারের সম্মেলনের একটি গুরুত্বপূর্ণ ফলাফল হলো সংস্কার ও উন্মুক্তকরণের প্রস্তাব নির্ধারণ করা। যা চীনের কূটনৈতিক বিষয় এগিয়ে নেয়ার লক্ষ্যে একটি নতুন অধ্যায় উন্মোচিত হয়েছে। এ সম্পর্কে উ চিয়ান মিন বলেন:" চীনের সংস্কার ও উন্মুক্তকরণের পর, চীনা জনগণের জীবন-যাত্রার মান ধীরে ধীরে উন্নত হয়ে উঠছে। এটি সারা বিশ্বের দৃষ্টি আকর্ষিত হয়। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় চীনের ওপর বেশ গুরুত্ব আরোপ করেছে। আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে চীন একটি গুরত্বপূর্ণ অবস্থান অর্জনে সক্ষম হয়েছে। এ সময়ে আমি অনুভব করেছি যে, আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক সমস্যার সমাধানে সারা বিশ্বের জন্য চীনের অংশ নেয়া প্রয়োজন।

১৯৯১ সালে উ চিয়ান মিন চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন মুখপাত্র ছিলেন। একই বছরে , সোভিয়েট ইউনিয়ন ভেঙে যাওয়া, পূর্ব-ইউরোপের অভ্যূত্থান ঘটনা এবং ওয়ারশ' চুক্তি সংস্থা ভেঙে যাওয়া এ সব অস্থার প্রেক্ষাপটে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় একটি জটিল পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে। একই কথা, চীনের কূটনীতিও বহু চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে। তবে উ চিয়ান মিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্রের দায়িত্ব গ্রহণের ৩ বছরেরও বেশি সময়ে তিনি মোট ১৬৮বার সংবাদ সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেছেন। এতে তাঁর বুদ্ধিমত্তায় সংশ্লিষ্ট প্রশ্নের উত্তরে তিনি সুষ্ঠুভাবে বিশ্বের কাছে চীনের উন্নয়ন এবং অবস্থান অবহিত করেছেন। ফলে চীন সম্পর্কিত সংশ্লিষ্ট ভুল বক্ত্যবের সংশোধন করা হয়েছে। এ সম্পর্কে উ চিয়ান মিং স্মরণ করে বলেন:" আমার মনে আছে যে, এক সংবাদ সম্মেলনে তিব্বতের শান্তিপূর্ণ মুক্তি উদযাপনী সম্পর্কে একজন সংবাদদাতা আমাকে জিজ্ঞেস করেন: ' শুনেছি , তিব্বতের শান্তিপূর্ণ মুক্তি উদযাপনী অনুষ্ঠানে আপনারা বেশ খরচ করেছেন। তবে তিব্বতে জনগণের জীবন-যাত্রার মান এতো নিচের দিকে কেন? যদি আপনারা এ সব অর্থ তিব্বতী জনগণের জীবন-যাত্রার মান উন্নয়নের লক্ষ্যে ব্যবহার করতেন, তাহলে তা আরো ভাল হতো।' এ প্রশ্নের উত্তরে আমি কোন চিন্তা করিনি। আমি বলি, কিছু কিছু গুরুত্বপূর্ণ উত্সব উদযাপন শুধু চীনা জনগণের তা নয়, বরং তা সারা বিশ্বেরও । যেমন যুক্তরাষ্ট্রের স্বাধীনতার ২০০তম বার্ষিকী উদযাপনের জন্য মার্কিন সরকারও অনেক ব্যয় করেছে। তবে সেসময়ে যুক্তরাষ্ট্রেও অনেক গৃহহীন ছিল। তাহলে কেন যুক্তরাষ্ট্র এতো ব্যয় করলো ? এ ধরণের ব্যাপার আরও অনেক অনেক রয়েছে।"

সংবাদদাতার এ প্রশ্নের উত্তর উ চিয়ান মিন খুবই চমত্কারভাবে দিয়েছেন। সুতরাং, এ থেকে সংবাদ জগতের সবাই উ চিয়ান মিনকে একজন বিশিষ্ট কূটনীতিক বলে অভিহিত করেছে।

উ চিয়ান মিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্রের দায়িত্ব গ্রহণকালে চীনের কূটনীতির লক্ষণ্যীয় উন্নয়ন হয়েছে। যেমন , ইন্দোনেশিয়ার সঙ্গে চীনের কূটনৈতিক সম্পর্ক পুনরায় শুরু , ভিয়েতনামের সঙ্গে চীনের সম্পর্ক স্বাভাবিক বাস্তবায়ন, ভারতের সঙ্গে চীনের সম্পর্কের বেশ কিছু উন্নতি হয়েছে। এর ফলে চীন সৌদি আরব, সিঙ্গাপুর, ব্রুনেই, ইসরাইল, দক্ষিণ কোরিয়া এবং সোভিয়েট ইউনিয়ন ভেঙে যাওয়ার পর বিভিন্ন দেশসহ মোট ২৩টি দেশের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা করে। এ সংখ্যা নয়া চীন প্রতিষ্ঠার শুরুর দিকে প্রথমবারের মতো চীনের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠাকারী দেশগুলোর সংখ্যার চেয়েও বেশি।

এ ছাড়াও , ১৯৯৮ সালে উ চিয়ান মিন চীনের পক্ষ থেকে সদর দফতর প্যারিসে আন্তর্জাতিক প্রদর্শনী ব্যুরোর কাছে " শাং হাই বিশ্ব উদ্যান মেলা--২০১০"-এর আবেদনপত্র দাখিল করেছেন। ২০০২ সালের শেষ দিকে পুনরায় তাঁর সভাপতিত্বে চীনের প্রতিনিধি দল সুষ্ঠুভাবে চূড়ান্ত বক্তব্য তুলে ধরেছে। শাং হাইয়ের বিজয় উ চিয়ান মিনের যথাসাধ্য প্রচেষ্টার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ। তবে তিনি বলেন, চীনের কূটনৈতিক ক্ষেত্রে অর্জিত সকল সাফল্য, যা সরকারের সঠিক নীতি বাস্তবায়নের ফসল।

  • সাক্ষাত্কার
  • সর্বশেষ সংবাদ
  • অন-লাইন জরীপ
     
    © China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
    16A Shijingshan Road, Beijing, China