v চীনের বিশ্ব কোষv চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগ
সংগ্রাহক পাই মিংয়ের গল্প
2009-01-23 20:05:39
সংগ্রহ হচ্ছে আবহমান যুগের একটি অন্যতম সখ। পেইচিংয়ে এমন একজন বেসরকারী সংগ্রাহক আছেন। এ জীবনের শুরুর দিক থেকেই তিনি খুবই কম দামে বিভিন্ন পরিবারের বিক্রি করে দেয়া প্রাচীণ মূল্যবান জিনিস তার শখ হিসাবে সংগ্রহ করে যাচ্ছেন। একজন সংগ্রাহক হিসাবে তিনি এখন সবার কাছে পরিচিত উঠেছেন। অবশেষে তিনি নিজে ব্যক্তিগত জাদুঘরও নির্মাণ করেছেন। তিনি হচ্ছেন চীনের একজন বিখ্যাত সংগ্রাহক পাই মিং। তাঁর সংগ্রহের ভান্ডার হলো চীনের সংস্কার ও উন্মুক্তকরণের ৩০ বছরের মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য একটি চিত্র। এটি প্রাচীণ পেইচিং কীভাবে সংস্কার ও উন্মুক্তকরণের সাথে সাথে উন্নয়নের মধ্য দিয়ে লক্ষ্যণীয় পরিবর্তন অর্জিত হয়েছে। সবাই পাই মিংকে " ফিয়ান পাই" বলে অভিহিত করেন। বন্ধুরা, আজকের " তাহাদের কথা" অনুষ্ঠানে আমরা এ বিষয় নিয়েই আলোচনা করবো:

পাই মিংয়ের সাক্ষাত্কার নেয়ার সময় তাঁর হাতে চীনের ইউয়ান রাজবংশের একটি নীল ও সাদা রঙের চীনামাটির পত্র দেখা ছিলেন। তিনি আমাদেরকে বলেন, সংগ্রহের মাধ্যমে সংস্কার ও উন্মুক্তকরণ প্রক্রিয়াকে এগিয়ে নেয়ার একটি হাতছানি ছিল। গত শতাব্দীর ৫০ দশকে গণমালিকানা ও ব্যক্তিগত মালিকানার একীকরণ করা এবং সাংস্কৃতিক বিপ্লবের পর চীনের সংগ্রহ বাজারকে নিম্নমুখীনতার দিকে ঠেলে দিয়েছে। এমন কি, সংশ্লিষ্ট প্রাচীণ মূল্যবান জিনিসের দোকানটিও পুরোপুরিভাবে বন্ধ হয়ে গেছে। এ সম্পর্কে পাই মিং বলেন:" সেসময় সবাই এ সব প্রাচীণ মূল্যবান জিনিস সম্পর্কে তেমন বেশি সচেতন ছিলেন না। আমরা মনে করতাম যে, প্রাচীণকালের জিনিসটা খুব পুরনো। গত ৭০ দশকের শেষ দিকে এবং ৮০ দশকের শুরুর দিকে পেইচিং অধিবাসীদের মনে এ সব প্রাচীণকালের জিনিসের ওপর কোনো চেতনা ছিল না। "

গত শতাব্দীর ৭০ দশকে ঐতিহ্যবাহী সংস্কৃতির ব্যাপারে অনেক বেশি মানুষ তীব্র সমালোচনা করেছিলে। এতে ব্যাপক পুরাকীর্তি ধ্বংস হয়ে গেছে। সবার মতো পাই মিংয়ের পরিবারে বেশ কয়েকটি নীল ও সাদা রঙের চীনামাটিও গত শতাব্দীর ৮০ দশকের শুরুর দিকে পাই মিংয়ের বিনিময়ে হংকংয়ের একজন ডিরেক্টারকে গ্রহণ করা হয়েছে। সেসময় অনেক তরুণ-তরুণীর মতো ২০ বছরের পাই মিং একজন ফ্যাশন অনুসরণকারী। তাঁর কয়েক নীল ও সাদা রঙের চীনামাটির বিক্রীর পর অর্জিত প্রায় ১০ হাজার ইউয়ানের টাকা সব টেপরেকর্ডার কেনার জন্য ব্যবহার করেছেন। পাই মিং আমাদের সংবাদদাতাকে বলেন, তখন আমি মনে করতাম যে, টেপরেকর্ডার কয়েক নীল ও সাদা রঙের চীনামাটির চেয়ে বেশ অনেক মূল্যবান। এ ব্যাপারটি স্মরণ করলে, পাই মিং বেশ নিবিষ্ট চিত্তে বলেন, " গত ৭০ দশকের শেষ দিক এবং ৮০ দশকের শুরুর দিক, তখন ঠিক আমাদের সংস্কার ও উন্মুক্তকরণের শুরু । সে সময় আমরা তেং লি জুনের গান শুনতে পছন্দ করতাম এবং নাচতে পছন্দ করতেন। সবাই ফ্যাশন অনুসরণ করে চলতে হতো । ফ্যাশনের আকর্ষনীয়তা বৃদ্ধির একটি গুরুত্বপূর্ণ আর তা হচ্ছে মাত্র একটি শব্দ, বিক্রী করা। প্রাচীণকালের জিনিস যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বিক্রী করলে , নিজের হাতে ততই টাকা গ্রহণ করতে সক্ষমহবে। এখন ৩০ বছরের সময় কেটে গেছে। সেসময়ের কয়েকটি গানের শব্দ হয়তো আমার মনে আরও আছে। তবে আমার পরিবারে প্রাচীণকালের সে সব মূল্যবান জিনিস আর কোন দিন ফেতে আসবে না ।"

১৯৭৮ সালে চীনের সংস্কার ও উন্মুক্তকরণ শুরু হয়। যা চীনের সংগ্রহ বাজারের নতুন সুযোগ ও তেজীয়ান ভাবন দিয়েছে। গত শব্দাতীর ৮০ দশকে চীনের পর্যটন শিল্প দ্রুতভাবে উন্নয়ন পেয়েছে। বিদেশী পর্যটকদের বিশেষ পছন্দ প্রাচীণকালের ছবি এবং লেখা চীনের একটি গুরুত্বপূর্ণ লাভজনক পণ্যে পরিণত হয়েছে। এ সময়ে পাই মিংও এ সব জিনিসের সংগ্রহে অনুরাগী হয়েছেন। এ সম্পর্কে তিনি বলেন:" সংস্কার ও উন্মুক্তকরণের শুরুর দিকে আমার পরিবারের ঐ সব প্রাচীণ জিনিস বিক্রী করতে করতে শেষ হয়ে গেছে। গত ৮০ দশকের শেষ দিক থেকে সবাই সত্যিকারভাবে এর ওপর বেশ গুরুত্ব আরোপ করে আসছি। সেসময় সারা চীনের সঙ্গে রাজধানি পেইচিং থেকে সকল জনগণের জীবন-যাত্রা বেশ ব্যাপক পরিবর্তন সৃষ্টি হয়েছে। মানুষের সাংস্কৃতিক ধারণাও আস্তে আস্তে বেশ পরিবর্তন করতে যাছে। এক কথা , বেসরকারী সংগ্রহের উত্সাহ আসলে গত ৮০ দশকের শেষ দিক থেকে শুরু হয়।"

পাই মিংয়ের পরিবারে যে সব প্রাচীণকালের মূল্যবান জিনিস ছিল তা সব সস্তার দামে হংকংয়ের একজন পরিচালক কিনে নিয়েছেন। হঠাত্ এক দিন পাই মিং এ পরিচালকের একটি চিঠি পান। চিঠিতে বলা হয়, পাই মিংয়ের বিক্রীত ঐ সব সস্তা জিনিসটা এখন সত্যিকারভাবে সংগ্রাহকদের চোখের মূল্যবান জিনিসে পরিণত হয়েছে। এ খবর পেয়ে পাই মিং সব বুঝতে আরেন এবং দুঃখ পান। কারণ সে সব প্রাচীণ মূল্যবান জিনিস এখন লোকের কাছে , নিজের নয়।

আসলে পাই মিং স্পষ্টভাবে বুঝতে পেরেছেন যে, ঐ সব জিনিস আর পাওয়া যাবে না। তবে তিনি আরও আশা করেন, তিনি সে সময়ের ইতিহাস খুঁজে বের করতে পারবেন। সুতরাং, অন্যজনের চোখে মূল্যহীন এমন ছোট জিনিসটা, পাই মিংয়ের কাছে বেশি মূল্যবান হয়ে দেখা দেয়।

গত শতাব্দীর ৯০ দশকে চীনের সংস্কার ও উন্মুক্তকরণের কাজ অব্যাহত এগিয়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে প্রাচীণ পেইচিং শহরও লক্ষ্যণীয় পরিবর্তন হয়েছে। পরিবর্তনের মধ্যে অন্তর্ভূক্ত রয়েছে বেশ উচ্চ স্থাপত্য নির্মাণের কাজ। কোন নির্মাণের খবর পেলে পাই মিং সেখানে ছুটি যান এংব নিশ্চিতভাবে ঐ নির্মাণের স্থল থেকে সংশ্লিষ্ট ছোট ছোট টুকরা জিনিস সংগ্রহ করেন। এ সম্পর্ক তিনি বলেন:" সেসময় আমাকে পাগল বলে মনে করা হত। সবাই মনে করতেন, আমার মাথা ঠিক নেই, প্রতিদিন এ সব মূল্যহীন নিজিস সংগ্রহ করে শুধু শুধু সময় নষ্ট করছেন। এ ছাড়া, আমার বাসায় একটুও খালি জায়গা নেই, যেখানে-সেখানে ছড়ানো সব আমার চীনামাটির টুকর।"

দশ বছরের মধ্যে পাই মিং মোট ৬০ হাজারেরও বেশি বিভিন্ন ধরণের চীনামাটির টুকরা সংগ্রহ করেছেন। এসব টুকরা পরিষ্কার করার লক্ষ্যে তাঁর পরিবারের পানি সরবরাহের পরিমাণ সারা কমিউনিটির সকল পরিবারের মোট পরিমাণের চেয়ে আরও বেশি। পাই মিং মনে করেন, এ সব সুন্দর চীনামাটির টুকরা দেখলে তার মনে হয় যেন সেসময়ের ইতিহাসের সঙ্গে মিশে যাওয়ার মতো আনন্দ পাচ্ছেন। এ সম্পর্কে তিনি বলেন:" টুকরা ছোট হলেও, তার ওপরে আরও সেসময়ের সাংস্কৃতিক তথ্য অনুভব করতে সক্ষম। সেজন্য তার ওপর সংশ্লিষ্ট গবেষণা কাজ করলে ,আপনাদের নিশ্চয় আরো অনেক মজা ও আনন্দ লাগবে।"

২০০১ সালে পাই মিং নিজের ব্যক্তিগত জাদুঘর পেইচিংয়ের দক্ষিণাঞ্চলে চালু করেন। এ জাদুঘরের রয়েছে চীনের থাং , সুং , ইউয়ান , মিং এবং ছিং রাজবংশের ৬০ হাজারেরও বেশি প্রাচীণ চীনামাটির টুকরা । বন্ধুরা, চীনামাটির ওপর আপনার আগ্রহ থাকলে নিশ্চয় পাই মিংয়ের এ জাদুঘরে চলে আসবেন।আনন্দও তৃপ্তিপারেন ইতিহাসকে অনুভব করে।

  • সাক্ষাত্কার
  • সর্বশেষ সংবাদ
  • অন-লাইন জরীপ
     
    © China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
    16A Shijingshan Road, Beijing, China