v চীনের বিশ্ব কোষv চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগ
প্রধান নিবাহী কর্মকর্তা সিয়া চিয়েনথোংয়ের কাহিনী
2009-01-20 21:02:43

পূর্ব চীনের হাংচৌ শহরের থিয়েনসিয়া বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিগ্রুপের প্রধান নিবাহী কর্মকর্তা সিয়া চিয়েনথোং ছোট্ট বেলায় বুদ্ধিমান ছেলে ছিলেন । ৫ বছর বয়সে তিনি প্রাথমিক স্কুল এবং ১৪ বছর বয়সে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন । ২৪ বছর বয়সে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিজাইন বিভাগের ইতিহাসে সবচেয়ে কম বয়সী ডক্টরেট হন । এই ৩১ বছর বয়সী যুবক শহরের ডিজাইন ও সফ্টওয়্যার উন্নয়নে লক্ষণীয় সাফল্য অর্জন করেছেন । আজকের অনুষ্ঠানে শুনুন সিয়া চিয়েনথোংয়ের কাহিনী । পরিবেশন করছি আমি…

১৯৯১ সালের বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা থেকেই সিয়া চিয়েনথোংয়ের কাহিনী বলা যাক । সে বছর সিয়া চিয়েনথোং পেইচিং ছিংহুয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের মাইক্রো বৈদ্যুতিক বিভাগে ভর্তির জন্য আবেদন করেছেন । কিন্তু চেচিয়াং প্রদেশে ছিংহুয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের এই বিভাগ মাত্র এক জন ছাত্র নেবে । ফলে সিয়া চিয়েনথোং এক পয়েন্টের পার্থক্যে ছিংহুয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে পারেননি । অবশেষে তিনি পেইচিং বন বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যান ডিজাইন বিভাগের ভর্তিপত্র পান । মাত্র ১৪ বছর বয়সের সিয়া তখন নিরাশ হন । এ কথা স্মরণ করে তিনি বলেন ,তখন আমার বয়স খুব কম ছিল । সব কিছুকে আমি তেমন গুরুত্ব দেই না । যে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে চাই সে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি না পারার কারণ কী আমি ভেবে দেখেছি ।

বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাত্তক হওয়ার পর সিয়া চিয়েনথোং পেইচিংয়ে ডিজাইনের কাজ করেন । অবসর সময় তিনি প্রতিদিন রাতে দুঘন্টা ইংরেজী পড়ান এবং গভীর রাতে ফিরে অন্য এক কোম্পানির জন্য ডিজাইনের কাজ করেন । সিয়া চিয়েনথোং বলেন, বিদেশে লেখাপড়া করার স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্যই তার এই সব কাজ করার উদ্দেশ্য। ২ বছর চেষ্টার পর ১৯৯৬ সালে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের হার্ভাডে ভর্তি হন ।

হার্ভাডে সিয়া চিয়েনথোং একদিকে ডিজাইন বিদ্যার ডিগ্রি এবং অন্য দিকে জি-আই-এস ভৌগলিক তথ্যসম্পর্কিত সফ্টওয়্যার উন্নয়নের কাজ করেন । প্রতিদিন তিনি বিরামহীনভাবে প্রণালী তৈরী করেন,ডিজাইন করেন এবং নিবন্ধ লেখেন । ডক্টরেটডিগ্রি পড়াকালে সিয়া চিয়েনথোং খুব কম ঘুমান । এ সম্পর্কে তিনি বলেন, হার্ভাডে পড়ার সময় আমি প্রতিদিন ১৮ ঘন্টা ধরে বই পড়ি । তখন স্বাস্থ্য ভাল , তাই ১৮ ঘন্টা ধরে বই পড়ার কোনো সমস্যা ছিল না । আগে আমি অন্য লোকের ওপর , বিশেষ করে যারা স্নাত্তক হয়ে মাত্র কোম্পানিতে আসেন তাদের ওপর প্রতিদিন ৬ ঘন্টা বই পড়ার কথা বলতাম । আমি তাদেরকে বলতাম, আমার মতো ৬ বছর নয় তোমাদের ৪ বছরই যথেষ্ট । অন্য দিক থেকে বলতে গেলে আমার এক দিন তোমাদের তিন দিনের সমান । আমি ৬ বছর ধরে দিনে ১৮ ঘন্টা বই পড়ি তার মানে তোমাদেরকে ১৮ বছর ধরে দিনে ৬ ঘন্টা পড়তে হয় ।

জি আই এস ভৌগলিক তথ্য প্রযুক্তি পথনির্দেশক ব্যবস্থায় সবচেয়ে বেশি ব্যবহার করা হয় । ভাগ্য হল, সিয়া চিয়েনথোংয়ের শিক্ষক এর অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা ।সিয়া চিয়েনথোং হার্ভাড বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার কেন্দ্রের প্রধানশক্তি হিসেবে শিক্ষকের সঙ্গে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পের গবেষণায় অংশ নিয়েছেন ।

১৯৯৯ সালে চীনের সাবেক প্রধানমন্ত্রী চু রোংচি যুক্তরাষ্ট্র সফরকালে সিয়া চিয়েনথোংকে পেইচিং ফিরে আসতে উত্সাহ দিয়েছেন । তিনি নিজেও তাই ইচ্ছা করেন । ২০০০ সালে হার্ভাড ডিজাইন দলের প্রধান সদস্য হিসেবে তিনি হানচৌ শহরের গণ সরকারের আমন্ত্রণে বিশ্ব সাংস্কৃতিক পুরাকীর্তি হিসেবে হানচৌয়ের পশ্চিম হ্রদের আবেদন কার্যক্রমের ডিজাইন কাজে অংশ নিয়েছেন ।

২০০১ সালে ২৫ বছর বয়সী সিয়া চিয়েনথোং হাংচৌয়েডিজাইন কোম্পানি ও জি আই এস সফ্টওয়্যার কোম্পানি সহ নিজের দুটি কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করেছেন । তিনি যেমন প্রধান ডিজাইনার তেমনি প্রধান নিবাহী কর্মকর্তাও ।

কোম্পানির অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা, কোম্পানির কাজকর্ম বিভাগের প্রধান ব্যাপস্থাপক ওয়েন মনে করেন , সিয়া চিয়েথোংয়ের বৈচিত্র্যময় চরিত্রের ফলে কোম্পানি আরও বেশি প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হতে সক্ষম হয়েছে । তিনি বলেন, তিনি কার্যক্রম প্রণয়ন করতে সক্ষম । এটা আমাদের পণ্যের উন্নয়নে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ । শুরু থেকেই আমাদের স্পষ্ট দিক নির্দেশনা । উপার্জন করা তাঁর প্রধান উদ্দেশ্য নয় । কোম্পানির কাজ ভালভাবে চালিয়ে যাওয়া তার প্রধান লক্ষ্য ।

তিনগিরিখাতের পুনর্বাসন প্রকল্প, অলিম্পিক বন পার্কসহ বিরাটাকারের প্রকল্পগুলোর টেন্ডার পাওয়া ছাড়া সিয়া চিয়েনথোংয়ের কোম্পানি চীন ও যুক্তরাষ্ট্রসহ বেশ কয়েকটি আন্তর্জাতিক পুরস্কারও পেয়েছে । এ জন্য তিনি ডিজাইন ক্ষেত্রে একজন বিখ্যাত ব্যক্তিতে পরিণত হন ।

সকাল থেকে রাত পর্যন্ত ব্যস্ত থাকা সত্বেও তিনি কখনো ক্লান্তি অনুভব করেন না । তিনি বলেন , নিজের পছন্দ কাজ করা তার ভাল লাগে । তিনি বলেন , স্বাধীনভাবে নিজের পছন্দের কাজ করতে পারছি বলে আমি খুব খুশি । দ্বন্দ্ব বা ক্লান্তি থাকলেও আমি আনন্দিত । এমন কি অনেক কাজ সম্পন্ন করেছি বলে আমি গর্বিত ।

সিয়া চিয়েনথোংয়ের কোম্পানির সফ্টওয়্যার ইতোমধ্যে চীনের পেইচিং,ইয়াংচৌ ও ছেংতুসহ বেশ কয়েকটি শহরের ডিজিটাল নির্মান প্রকল্পে ব্যবহার করা হয়েছে । এখন তাদের পণ্য যুক্তরাষ্ট্র ও জাপানসহ আন্তর্জাতিক বাজারে প্রবেশ করছে । সফ্টওয়্যার কোম্পানির শাখা কোম্পানিগুলো চীনের বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে আছে । এগুলোতে মোট ২ হাজারেরও বেশি শ্রমিক কাজ করছেন ।

সহকর্মী কো হাওয়ের চোখে সিয়া চিয়েনথোং একজন নিখুঁত মানুষ । এ সম্পর্কে তিনি বলেন, তিনি একজন পূর্ণাঙ্গ মানুষ । তিনি প্রতিটি কাজ নিজেই সুন্দরভাবে সম্পন্ন করতে চান ।

  • সাক্ষাত্কার
  • সর্বশেষ সংবাদ
  • অন-লাইন জরীপ
     
    © China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
    16A Shijingshan Road, Beijing, China