আজ এ অনুষ্ঠানে ক্যান্সার প্রতিরোধে চীনের অন্তঃর্মঙ্গলিয়ার চিং হাই নামে একজন প্রফেসর আপনাদের কিছু জানাচ্ছি আমি…
২০০৬ সালের ১৭ জুন চীনের অন্তর্মঙ্গোলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকদের উদ্যোগে ডক্টরেট ডিগ্রি প্রাপ্ত ছাত্রছাত্রীদের জন্য একটি প্রশ্নোত্তর অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয় । সভাকক্ষে ভাবগম্ভীর পরিবেশ বিরাজ করছিল । তখন চিং হাই নামে একজন মঙ্গোলীয় পন্ডিত উচ্চস্বরে তার প্রবন্ধ পাঠ করছিলেন । তিনি প্রৌঢ় , লম্বা নন । ক্যান্সার রোগে আক্রান্ত ।
তিনি নিশ্চিন্তে পরীক্ষক মন্ডলী থেকে শুরু করে বিশেষজ্ঞ ও পন্ডিতদের প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছেন । ফলে তিনি শ্রেষ্ঠ ফলাফল পেয়েছেন এবং সকল শ্রোতার বিশেষ প্রশংসা লাভ করেন । ডক্টরেট ডিগ্রীধারী স্নাতকদের জন্য এটা একটা অসাধারণ অসাধারণ প্রাপ্তী । একজন ক্যান্সার রোগী হিসেবে চিং হাই অধ্যবসায়ের সঙ্গে একটি উন্নত মানের প্রবন্ধ রচনা করেছেন । সবাই তাকে খুব প্রশংসা করেছেন ।
চিং হাই আবেগের সঙ্গে বলেন ,
সভা কক্ষে সবাই হাততালি দিয়ে তাকে অভিনন্দন জানান । তিনিও খুব উত্ফুল্ল হয়ে উঠেন । তিনি মনে করেন , তিনি যে এত সাফল্য অর্জন করেছে , তা সত্যিই সহজ নয় । প্রশ্নোত্তর শেষে তিনি নিজের শিক্ষককে একটি পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন । তিনি বলেন , তিনি যে সকল সাফল্য অর্জন করেছেন , তার মূলে রয়েছে শিক্ষকের সহযোগিতা । লেখাপড়া ও ক্যান্সার রোগের সকল বাধা-বিপত্তি কাটিয়ে ওঠার জন্য তার শিক্ষক তাকে ব্যাপকভাবে সাহায্য করেছেন । তাকে ধন্যবাদ জানানো প্রয়োজন।
অন্যান্য সহপাঠী ও শিক্ষকদের চোখে চিং হাই একজন অধ্যবসায়ী পন্ডিত । গত ১০ বছরে ক্যান্সার রোগ চিকিত্সার জন্য তার শরীরে ৮টি অস্ত্রোপচার করা হয়েছে । কিন্তু তিনি কখনো তার অধ্যায়ন ও গবেষণার কাজ বন্ধ করেন নি । ক্যান্সার রোগ প্রতিরোধের ক্ষেত্রে তার অভাবনীয় অধ্যবসায় ও নির্ভীক মনোবল পরীলক্ষিত হয় । তিনি অধ্যাপনার ক্ষেত্রেও যথাসাধ্য অবদান রেখেছেন ।
গত বছরের মার্চ মাসে তার পিত্তকোষে অষ্টম অস্ত্রোপচারটি করা হয় ।
এসব অস্ত্রোপচারের মধ্যে সেবারের অস্ত্রোপচারটি একটি ছোট অস্ত্রোপচার । তার স্বাস্থ্যের অবস্থারও দ্রুত উন্নতি হয় ।
বেশ কয়েকবার অস্ত্রোপচারের ফলে চিং হাইয়ের ঘ্রাণ শক্তি হারিয়ে গেছে । তার ডান চক্ষু তুলে ফেলা হয়েছে । বাইরের সঙ্গে যোগাযোগ করার জন্য অডিও ফোনের প্রয়োজন হয় । গত ১০ বছরে রোগে আক্রান্ত হওয়ার পর থেকে তিনি ছাত্রদের অধ্যাপনা করে আসছেন । পড়ানো ও গবেষণার প্রয়োজনে তিনি বেশ কয়েকবার বাইরে গেছেন । তিনি অসুস্থতা উপেক্ষা করে ৪২ লাখ শব্দের একটি প্রবন্ধও রচনা করেছেন ।
তিনি গুরুতর ক্যান্সার রোগে আক্রান্ত হলেও জর্জরিত মৃত্যুর ভয় পান নি । মঙ্গোলীয় সাধারণ পশুপালকের ছেলে হলেও একজন প্রফেসরের যোগ্যতা অর্জনের জন্য তিনি নিজেকে বেশ সৌভাগ্যবান মনে অনুভব করছেন । এখন তিনি তার স্বল্প সময় কাজে লাগিয়ে আরো বেশি অধ্যাপনা কাজ করতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ ।
ক্যান্সার রোগে আক্রান্ত হওয়ার পর তিনি এক সময় খুব হতাশ ছিলেন । কিন্তু তিনি তার স্বল্প সময়কে কাজে লাগিয়ে আরো বেশি কাজ করতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ ।
দশ বারো বছর আগেই চিং হাই অন্তর্মঙ্গোলীয় জাতির আধুনিক ইতিহাস গবেষনার ক্ষেত্রে অবদানের জন্য স্বল্পবয়সী একজন পন্ডিত হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন । ঠিক এই সময় তিনি ক্যান্সার রোগে আক্রান্ত হয়েছেন বলে ধরা পড়ে । এতে তিনি খুব অবাক হন । তিনি বলেন ,
তিনি এই দারুণ যন্ত্রণাদায়ক খবরে মোটেই মর্মাহত হন নি । কিন্তু শারীরিক অসুস্থতার জন্য তিনি এক সময় বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনার কাজ ত্যাগ করতেও চেয়েছিলেন । তখন ডক্টরেট ডিগ্রি এমন কি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপনার চাকরির কথা কিছুই তিনি ভাবেন নি ।
১৯৯৯ সালে তার প্রথম অস্ত্রোপচার করা হয় । অস্ত্রোপচারের পর তার চেহারার অনেক পরিবর্তন হয়েছে । এতে তার নাক ও মুখের কাঠামোও অনেক নষ্ট হয়েছে । তার কথাবার্তার শক্তিও প্রায় হারান । অধ্যাপনার কাজ করতে না পারার জন্য তিনি মনে কষ্ট পান । তার ছাত্রছাত্রীরা তাকে খুব সেবাযত্ন করেন । তাকে দেখার জন্য অনেকে হাসপাতালে যান । কিন্তু দুঃখের কথা তিনি সবার সাথে কথাও বলতে পারেন নি । তিনি শুধু হাতের ইশারায় তার মনের ভাব প্রকাশ করেন । তার পর তিনি চেহারার মাংসপেশী নাড়ানোর চর্চা করতে শুরু করেন । যাতে মুখের ভিতরে জিভের অবস্থান পরিবর্তন করা যায় ।
চিং হাই প্রতি দিন অধ্যবসায়ের সঙ্গে কথাবার্তা চর্চার চেষ্টা করতেন । অবশেষে তিনি একদিন স্পষ্টভাবে কথা বলতে পারলেন এবং অধ্যাপনার কাজ পুনরায় শুরু করলেন । তার পর প্রতিটি অস্ত্রোপচারের পরই তার মুখ ও নাকের কাঠামোর পরিবর্তন হতে থাকে । তার কথাবার্তার শক্তি আবার প্রায় হারিয়ে গেল । কিন্তু তখনো তিনি তার দুঃখজনক ভাগ্যের কথা স্বীকার করতেন না । প্রতিটি অস্ত্রোপচারের পর তিনি অবিরামভাবে কথাবার্তার চর্চায় অটল ছিলেন । এতে তার অধ্যবসায়ী প্রাণে শক্তির সঞ্জার হয় ।
ক্যান্সার রোগ মোকাবিলা করার মানুষের জন্য অধ্যবসায় ও সংগ্রামী মনোবলের প্রয়োজন । সহকর্মী ও ছাত্রছাত্রীদের যত্ন ও সেবায় তিনি অধ্যবসায়ের সঙ্গে রোগ প্রতিরোধ করে এসেছেন ।
তিনি বলেন , পশুপালকের একজন ছেলে হয়েও তিনি দারুন এক সংগ্রামী জীবনযাপনের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন । এ অভিজ্ঞতার আলোকেই তিনি সকল বাধা অতিক্রম করতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।
(থান ইয়াও খাং) |