v চীনের বিশ্ব কোষv চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগ
সার্বিয়ার চীনতত্ত্ববিদের চোখে চীনের বিগত ৩০ বছর
2009-01-16 20:45:13

চীনের একটি ম্যাগাজিন কেন্দ্রে কর্মরত খুবতাসুতিক ড্রাগানা হচ্ছেন সার্বিয়ার একজন চীনতত্ত্ববিদ। ১৯৭৮ সালের সেপ্টেম্বরে তিনি সরকারী বৃত্তি পেয়ে প্রথম বারের মত চীনে আসেন। এরপর তিনি বহু বার চীনে লেখাপড়া ও সফর করেছেন। তিনি স্বচক্ষে দেখেছেন, চীনের সংস্কার ও উন্মুক্তকরণ এবং এর ফলে সৃষ্ট প্রতিটি মানুষের আনন্দময় পরিবর্তন। অবশেষে তিনি চীনে থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

১৯৭৮ সালে ড্রাগানা প্রথমবার চীনে আসেন। সেই বছরের শেষ দিকে চীন সংস্কার ও উন্মুক্তকরণের নীতি কার্যকর করে। একই বছরে চীনের রাষ্ট্রীয় নেতৃবৃন্দ আর বহু সরকারী পর্যবেক্ষণ দল যুগোস্লাভিয়া ও হাঙ্গেরিসহ পূর্ব ইউরোপীয় দেশে সফর করেন এবং সাবেক যুগোস্লাভিয়া থেকে শিল্পপ্রতিষ্ঠান পরিচালনার উন্নত অভিজ্ঞতা অর্জন করেন।

ড্রাগানার মনে চীনের অভিজ্ঞতা গ্রহণের বিষয়টি প্রথম রেখাপাত করে। এর এক প্রধান কারণ হলো চীন খোলা মন নিয়ে অন্য দেশের উন্নয়নের অভিজ্ঞতাকে গ্রহণ করে। তিনি বলেছেন, 'তখন বিমান বন্দর সড়কপথের দু'পাশে কিছু স্লোগান লেখা ছিল। এক স্লোগান ছিল 'যুগোস্লাভিয়ার কাছে শিক্ষা গ্রহণ করা'। এটা আমার কাছে অতি তাত্পর্যপূর্ণ। আমি এ জন্য খুব গর্ব বোধ করি।'

চীনে আসা অন্যান্য বিদেশী বন্ধুদের মতো রাজধানীর পেইচিং আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর হলো ড্রাগানার চীনকে জানার প্রথম জানালা। তিনি বলেন, তত্কালীন বিমান বন্দরে কেবল একটি টার্মিনাল ও একটি রানওয়ে ছিল। বর্তমানে এখানে বিশ্বের বৃহত্তম টার্মিনাল ভবন ও তিনটি রানওয়ে রয়েছে। তিনি বলেন, 'তখনকার বিমান বন্দর ছিল খুবই ছোট। তার সাথে বর্তমান স্থাপত্যকর্মের তুলনা হয় না। আজকের বিমান বন্দর দেখে তুমি ভাবতেও পারবে না যে, ৩০ বছর আগে তার রূপ কেমন ছিল।'

যানবাহনের পরিবর্তনও ড্রাগানার মনে অভাবনীয় অনুভূতির সৃষ্টি করেছে। ৩০ বছরে ব্যক্তিগত গাড়ি সাইকেলের স্থলাভিষিক্ত হয়ে চীনাদের প্রধান যানবাহনে পরিণত হয়েছে। পাবলিক বাস, ট্যাক্সি, বিলাসবহুল বাস, দো'তলা বাস, সাবওয়ে ও লাইটরেলসহ নানা যানবাহন চীনাদের যাতায়াতের জন্য এখন খুবই সুবিধাজনক। তিনি বলেন, '৩০ বছর আগে পেইচিংয়ের রাস্তায় সাইকেল ও পাবলিক বাস ছিল সবচেয়ে বেশি। তখন মোটরগাড়ি ছিল খুব কম, কেবল শহরে মোটরগাড়ি দেখা যেতো। ট্যাক্সিক্যাব দেখা যেতো না। আমরা ট্যাক্সি চাইলে আগে থেকেই টেলিফোন করে বলতে হতো কর্তৃপক্ষকে এবং তাকে জানাতে হতো, আমরা কোন দেশ থেকে এসেছি, আর কোথায় যেতে চাই। তারপর ট্যাক্সি আসতো।'

ড্রাগানা স্মরণ করে বলেন, তখন চীনে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের অভাব ছিল। টাকা থাকলেও কেউ পছন্দসই পণ্য কিনতে পারতো না। টিকেট দিয়ে প্রয়োজনীয় পণ্য কিনতে হতো। তিনি বলেন, 'তখন অনেক রকম টিকেট ছিল। প্রতিটি পরিবারের সদস্য সংখ্যা অনুযায়ী খাদ্যশস্যের টিকেট, মাংসের টিকেট, কাপড়ের টিকেট ও তেলের টিকেট দেয়া হতো। বলা যায়, সেই যুগে হাতে টিকেট না থাকলে চলতো না। আমাদের বৃত্তির মধ্যেও কিছু টিকেট ছিল।'

চীনে লেখাপড়া করার সময় পেইচিং মৈত্রী দোকান প্রায়শঃই ছিল ড্রাগানার যাওয়ার জায়গা। সেখানে সাইকেল, চামড়ার জুতা ও মদসহ নানা পণ্য পাওয়া যেতো। এ পণ্যগুলো সাধারণ দোকানে পাওয়া যেতো না। বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় পত্র ছিল এ দোকানে প্রচলিত একমাত্র মুদ্রা। তিনি বলেন, 'তখন সাধারণ দোকানে পণ্য ছিল খুব কম। বিদেশীরা সাধারণত মৈত্রী দোকানে কেনাকাটা করতেন। আমি সবসময় সেখানে গিয়ে পাঁউরুটি কিনতাম। এখন মৈত্রী দোকানের আশেপাশে অনেক প্লাজা ও বড় বড় সুপার মার্কেট প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। অন্যান্য দোকানের অনুপাতে আমি মনে করি, মৈত্রী দোকানের পণ্য এখন কমে গেছে।'

এখন পেইচিংয়ে অনেক বড় আকারের রাষ্ট্রায়ত্ত্ব বিভাগীয় বিপণি-বিতান ছাড়াও বিদেশী বিনিয়োগে নির্মিত আরো অনেক চেইন শপ আছে। সেখানে সব ধরনের পণ্য পাওয়া যায়। মৈত্রী দোকানের বিশেষ আকর্ষণ এখন আর নেই। মাদাম ড্রাগানা বলেন, অতীতে প্রয়োজনীয় পণ্য না পেলে তার মাথা ব্যথা হতো। কিন্তু এখন পণ্য খুব বেশি থাকায় পণ্য বাছাই করার জন্য তাঁর মাথা ব্যথা হয়।

৩০ বছরে বস্তুগত জীবন সমৃদ্ধি হওয়ার পাশাপাশি চীনাদের সাংস্কৃতিক জীবনও অনেক বদলে গেছে। ১৯৭৮ সালে ড্রাগানা পেইচিংয়ে লেখাপড়া করার সময় চলচ্চিত্র দেখাই ছিল তার সবচেয়ে ভালো বিনোদন মাধ্যম। ক্লাসের পর তাঁর বেশির ভাগ সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে কেটেছেন। তিনি বলেন, 'আমি প্রায় সবসময় বিদ্যালয়ের মধ্যে থাকতাম। রুমমেটের সঙ্গে রান্না করতাম আর মাঝে মধ্যে একটি চলচ্চিত্র দেখতাম। তখন পাব ও ক্লাবসহ অন্য রকম বিনোদন কেন্দ্রও ছিল না। জীবন ছিল খুব একঘেয়েমীতে ভরা।'

পরিসংখ্যান অনুযায়ী, বর্তমানে পেইচিংয়ে ৪০০ থেকে ৫০০টি পাব আছে। তা ছাড়া নানা রকমের ক্লাব, ব্যায়ামাগার ও নেটক্যাফে চীনাদের প্রধান বিনোদন কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। ড্রাগানা বলেন, এখন পেইচিং সত্যিকার অর্থে আন্তর্জাতিক মহানগরীতে পরিণত হয়েছে। 'আগের তুলনায় পেইচিং শহরের আয়তন অনেক বেড়েছে। সব জায়গায় সুউচ্চ ভবন আছে। অন্যান্য আন্তর্জাতিক মহানগরীর মধ্যে এর কোন পার্থক্য নেই। এখান আমি ইন্টারনেটের মাধ্যমে আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে যোগাযোগ করি এবং নানা রকম বিশ্ব পর্যায়ের সেবা উপভোগ করি।'

আগে ড্রাগানা সবসময় আত্মীয়দের চিঠির অপেক্ষা করতেন। কিন্তু চিঠি পেতে কমপক্ষে দু'সপ্তাহ সময় লাগতো। এখন তিনি মাউসে চাপ দিলে সঙ্গে সঙ্গে আত্মীয়দের সাম্প্রতিক অবস্থা জানতে পারেন। জীবনের নানা সুবিধা এবং চাকরির প্রয়োজন বিবেচনা করে অবশেষে মাদাম ড্রাগানা পেইচিংয়ে থেকে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তিনি বলেন, তিনি বর্তমান চীনকে পছন্দ করেন। তিনি বলেন, 'আমি এখানে থাকতে পছন্দ করি। আগে চীনারা সব একই রকম কাপড় পরতেন। রাস্তায় কেবল একই রং দেখা যেতো। কিন্তু এখন তারা বৈশিষ্ট পোশাকের ও ফ্যাশন অন্বেষণ করেন। আমি বর্তমান রঙিন চীনকে আরো বেশি পছন্দ করি।' (ইয়ু কুয়াং ইউয়ে)

  • সাক্ষাত্কার
  • সর্বশেষ সংবাদ
  • অন-লাইন জরীপ
     
    © China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
    16A Shijingshan Road, Beijing, China