
চীনের সংস্কার ও উন্মুক্তকরণ নীতি প্রণয়নের ৩০ বছরে চীনের শেন জেন শহরের স্থাপত্য শূন্য থেকে আকাশ ছুই ছুই করছে। এ প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে এ শহরের অর্থনৈতিক ও সামাজিত উন্নয়নের অগ্রগতি প্রতিফলিত হয়েছে।
১৯৮২ সালে দশ হাজারেরও বেশি প্রকল্প সৈনিক শেন জেন বিশেষ প্রশাসনিক অঞ্চলে প্রবেশ করেছে। তাঁদের কাজ হলো শেন জেনকে একটি আধুনিক ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ের নগরে পরিণত করা। চাং হুই সিয়াং তাদের মধ্যে একজন।
"নির্মাণ করতে চাইলে শ্রেষ্ঠ পর্যায়ের স্থাপত্য নির্মাণ করা" এ হলো চাং হুই সিয়াং ও তাঁর সহকর্মীদের যৌথ শুভেচ্ছা। কিন্তু কী ভাবে নির্মান করা হবে ? এ প্রশ্নের সম্মুখীন হয়ে চাং হুই সিয়াং শেন জেন সংলগ্ন হংকংয়ে তার দৃষ্টিভঙ্গির বিকাশ ঘটালেন।
গত ৬০ ও ৭০ দশকে রিয়েল এস্টেট, শিল্প, পর্যটন ও ব্যাংকিং ক্ষেত্রের উন্নয়নের ফলে হংকংয়ের অর্থনীতি দ্রুত বৃদ্ধি পেয়ে বিশ্বের ব্যাংকিং ও বাণিজ্য কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে।

নদীর এ পাশে শেন জেন শহরে যখন কিছুই নেই এখন অন্য পাশে বড় বড় ভবন ও চোখ বাঁধানো বাতী দেখে চাং হুই সিয়াং স্বপ্ন দেখতেন। তিনি বলেন,"তখন আমি চিন্তা করলাম, কবে শেন জেন হংকংয়ের মত হতে পারবে। হংকং-এর কাছ থেকে আমাদের শিখতে হবে। "১৯৮৩ সালে আমরা ইলেক্ট্রোনিক ভবন নির্মান করেছি। ১৬তলা ভবন শেন জেনে সবচেয়ে উচুঁ এবং সারা চীনের তা তখন মাত্র কয়েকটি ছিল।
এ সাফল্য তাদের উত্সাহিত করেছে। এর পরের এক বছরের মধ্যে তারা ৫৩তলা বাণিজ্য ভবন নির্মান করেছে। এবং ৩দিনে এক তলা নির্মান করে "শেন জেনের দ্রুততার" রেকর্ড সৃষ্টি করেছে। বাণিজ্যিক ভবন গত ৮০ দশকের মাঝামাঝি চীনের প্রতীকি ভবন হয়েছে।

গত ৭০ ও ৮০ দশকের মাঝামাঝি একশটিরও বেশি ভবন নির্মিত হয়েছে। যা শেন জেন শহরের পরিবেশকে সুন্দর করেছে এবং অন্য শিল্পের উন্নয়নকে তরান্বিত করেছে। শেন জেন বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থাপত্য ডিজাইন ও গবেষণা একাডেমীর প্রধান স্থপতি স্থাপত্য নিয়ে ৩০ বছর ধরে গবেষণা করেছেন। তিনি বলেন, "এটি হলো শেন জেন শহরে কাঠামোগত উন্নয়নের প্রথম পদক্ষেপ। হংকংয়ের সঙ্গে সংলগ্ন হওয়ার সুবিধাকে কাজে লাগিয়ে শেন জেন হংকংয়ের মত একটি শহরে পরিণত হওয়ার সিন্ধান্ত নেয়।
কিন্তু শেন জেন শহরে বড় বড় ভবন নির্মিত হলেও জনসাধারণের চাহিদা মেটানো যায় নি। চাং হুই সিয়াং জনসাধারণের জীবন যাপনের মান উন্নয়নের জন্য পুরোনো সড়ক সংস্কারের চিন্তা করতেন।

শেন জেন শহরে সাবওয়ে স্টেশনের পুরোনো সড়ক এলাকা খুব জনপ্রিয় ছিল। ১৯৯৮ সালের আগে এ সড়ক খুব নোংরা ছিল। "১৯৯৮ সালের আগে পুরোনো সড়ক প্রথমবারের মত সংস্কার করা হয়েছে। আমরা কুয়াং তুংয়ের স্থাপত্যের বৈচিত্র রক্ষা করার পাশাপাশি ক্রীতাদের বৃষ্টি থেকে রক্ষার দেয়ার জন্য বিশেষ ডিজাইন করেছি।
তা ছাড়া, শেন জেন শহরের স্থাপত্যের বৈচিত্র সংরক্ষণের জন্য চাং হুই সিয়াং ও ডিজাইনার অনেক চিন্তা ভাবনা করেছেন। যেমন আগের কিউবিক ভবনের পরিবর্তে তারা হুয়াং ছিয়াং হুয়া লিয়ান ভবনের চার দিকে ৮ মিটারের কোয়াটর্জ ঘড়ি স্থাপন করেছে। এ ডিজাইন শেন জেন শহরের একটি বিশেষ দর্শনীয় স্থানে পরিণত হয়েছে।

এক পরিসংখ্যান অনুযায়ী শেন জেন শহরের নিবন্ধিত লোকসংখ্যা ১৫ লাখ। ৬০ লাখ স্থায়ী নাগরিক আছে। ৬০ লাখ মানুষের মধ্যে অধিকাংশই অন্য প্রদেশ থেকে এসেছে। তারা এ শেন জেন শহরের জন্য যথেষ্ট শ্রম দেয়ার পাশাপাশি বিভিন্ন চিন্তা-ভাবনাও সঙ্গে করে নিয়ে এসেছেন।
১৯৯৭ সালে চাং হুই সিয়াং অবসর নিয়েছেন। কিন্তু তিনি নির্মাণের কাজ তার ছেলে চাং সিয়াও রুংকে দিয়েছেন। চাং সিয়াও রুং স্থাপত্য নিয়ে নিজের দৃষ্টিভঙ্গি প্রকাশ করেছে। তিনি বলেন, "আমার বাবার মত স্থপতিরা অন্যদের শিখিয়ে দিয়ে ডিজাইন করেন। কিন্তু আমরা তা করি না। আমরা নিজের উদ্যোগ নিয়ে ডিজাইন করি।

২০০৪ সালের মে মাসে শেন জেন শহরের সরকারী ভবন বা নাগরিক কেন্দ্র চালু করেছে। তাছাড়া শেন জেন শহরের হো সিয়াং নিং গ্যালারি চীনাদের জীবনধারার সংস্কৃতিকে স্থাপত্যের সঙ্গে যুক্ত করেছে। তিনি বলেন, গত ৯০ দশকের শেষ দিক থেকে এখন পর্যন্ত শেন জেন শহরের স্থাপত্য তৃতীয় পর্যায়ে প্রবেশ করেছে। শিল্পায়নের পর শেন জেনকে উচ্চ পর্যায়ে শহর হিসেবে নির্মাণের কথা বিবেচনা করা হচ্ছে।
গত কয়েক বছর "সবুজ", মানবিক সংস্কৃতি ও জৈব সংস্কৃতি শেন জেনের স্থাপত্যের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে। "যেমন প্রবাসী চীনাদের এলাকায় প্রকৃতির কোনো ক্ষতি হয় নি। "এটিকে চীনের শহর ও নগর উন্নয়নের দিক হিসেবে দেখা হবে"
স্থাপত্যের উচ্চতার দিক থেকে এবং বহুমুখিতার দিকে এসে আবারও সাংস্কৃতিক ও ঐতিহ্যিক সভ্যতার দিকে যাওয়া। গত ৩০ বছর শেন জেন শহরের স্থাপত্য নির্মানের ক্ষেত্রে সংখ্যার বিষয়টিকে আমলে না নিয়ে গুণমানের দিকে দৃষ্টি হয়েছে। আর তাইতো আজকের শেন জেনের স্থাপত্য দেখে এর সামাজিক অবস্থা বোঝা যায়। (ওয়াং তান হোং) |