৩০ বছর সংস্কার ও উন্মুক্তকরণ নীতির মধ্য দিয়ে প্রাচ্যের প্রাচীন চীনে দ্রুত ও স্থিতিশীল উন্নয়ন সাধিত হয়েছে। নিজের স্পষ্ট ও স্বকীয়তা নিয়ে চীন আন্তর্জাতিক মঞ্চে আবির্ভূত হয়। চীন ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মধ্যকার যোগাযোগ ও লেনদেন গভীরতর হওয়ার প্রেক্ষাপটে চীন কীভাবে নিজের পথে এবং কী মনোভাব নিয়ে বিশ্বের কাছে এগিয়ে যাবে, এ বিষয়টি দিনে দিনে মানুষের কাছে ব্যাপকভাবে আলোচিত হচ্ছে।
'মেইমেই' মানে কি? আমরা ইন্টারনেটে গল্প করার সময় সুন্দরী তরুণীদের ডাকি মেইমেই।'
আপনারা মিশরের কায়রোয় অবস্থিত আয়ন শামস বিশ্ববিদ্যালয়ের চীনা ভাষার শিক্ষিকা মা ইয়ানের ক্লাসের রেকর্ডিং শুনছেন। তিনি চীনের সর্বশেষ প্রচলিত শব্দ ব্যাখ্যা করছেন। তাঁর মিশরীয় ছাত্রছাত্রীরা মনোযোগ সহকারে তাঁর ক্লাস শুনছেন। আরো কয়েকজন মিশরীয় শিক্ষক নোট লিখছেন।
সুদীর্ঘ ইতিহাস সম্পন্ন দেশ হিসেবে চীনের সংস্কৃতির সর্বদাই বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মানুষের কাছে প্রবল আকর্ষণী শক্তি আছে। বিশেষ করে বিগত ৩০ বছরে প্রাচীন চীনের আকাশ পাতাল পরিবর্তন ঘটেছে। ফলে মানুষের চীনকে জানার আগ্রহ আরো বেড়েছে। এখন বিদেশে চীনা ভাষার শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৪ কোটিরও বেশি। চীনা ভাষা ও চীনের সংস্কৃতি সম্প্রসারণের সংস্থা --- কনফুসিয়াস ইনস্টিটিউট ২০০৪ সাল থেকে এ পর্যন্ত গত ৪ বছরে বিশ্বের ৭৮টি দেশ ও অঞ্চলে মোট ৩০৫টি কনফুসিয়াস ইনস্টিটিউট ও কনফুসিয়াস ক্লাসরুম প্রতিষ্ঠা করেছে।
আসলে বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলের চীনা ভাষার শিক্ষার্থীদের কাছে চীনা ভাষা শেখা কেবল চীনের সংস্কৃতি জানার পদ্ধতি তা নয়, বরং এর মধ্য দিয়ে কর্মসংস্থান ও অর্থ উপার্জনের সুযোগ আরো বৃদ্ধি পাবে। যেমন বিদেশে ভ্রমনকালে চীনাদের পথনির্দেশক বা অনুবাদক হওয়া, চীনা কোম্পানীতে কাজ করা আর চীনাদের সঙ্গে ব্যবসা করা ইত্যাদি।

পাসকাল লামি
কারণ ৩০ বছরের উন্নয়নের পর চীন বিশ্বের অর্থনৈতিক উন্নয়নের এক গুরুত্বপূর্ণ চালিকাশক্তিতে পরিণত হয়েছে। আফ্রিকা ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার কিছু দেশে চীনা প্রকৌশলীরা স্থানীয় জলসেচ প্রকল্প, রেলপথ, সড়কপথ, সেতু নির্মাণ ও স্থানীয় ব্যক্তিদের জীবন উন্নয়নে সাহায্য করেছেন। চীনের উত্পাদিত বিপুল পরিমাণ আকর্ষণীয় পণ্য বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে সস্তাদামে বিক্রি হচ্ছে। বহু লোক এখান থেকে বিরাট সুবিধা পেয়েছে। আর্থিক সংকট মোকাবিলায় চীন ৪ ট্রিলিয়ন ইউয়ান রেনমিনপি অর্থ দিয়ে অর্থনীতি জাগিয়ে তোলার সময় বিশ্বের শেয়ার বাজারও চাঙ্গা করেছে। বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার মহাপরিচালক পাসকাল লামি বলেছেন, 'বলা যায়, চীনের নীতির মাধ্যমে আজ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের অন্যান্য সদস্যদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে সংযোগ স্থাপিত হয়েছে। বাণিজ্য ক্ষেত্রে আমরা এখন বড় চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হচ্ছি। এ সমস্যাগুলো সমাধান চাইলে চীনের অংশগ্রহণ ছাড়া অন্য কিছুর চিন্তাই করা যায় না।'
সংস্কৃতি ও অর্থনীতি ছাড়া চীন অন্যান্য ক্ষেত্রেও নিজের প্রভাব শক্তি প্রদর্শন করেছে। গত কয়েক বছরে চীন ধাপে ধাপে কোরীয় উপদ্বীপের পারমাণবিক সমস্যা সমাধানের প্রধান সমন্বয়কারী আর ইরানের পারমাণবিক সমস্যা সমাধানের সক্রিয় অংশগ্রহণকারী হিসেবে পরিণত হয়েছে। চীন, রাশিয়া ও মধ্য এশিয়ার কয়েকটি দেশ নিয়ে গঠিত শাংহাই সহযোগিতা সংস্থার প্রভাব দিনে দিনে সম্প্রসারিত হচ্ছে। পেইচিংয়ে আয়োজিত অলিম্পিক গেমস বিশ্বের কয়েক শ' কোটি টেলিভিশন দর্শকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। চীন লেবাননে মোতায়েন জাতিসংঘের শান্তি রক্ষী বাহিনীতে অবদান রেখেছে। চীনের যুদ্ধ জাহাজগুলো আফ্রিকায় গিয়ে জলদস্যুদের আঘাত হানা শুরু করেছে।

জ্যান পিয়েরে রাফারিন
এখন চীন বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েছে। বিশ্বের অগণিত মানুষ চীনা জনগণের সঙ্গে এখন নিবিড় সম্পর্ক গড়ে তুলেছে। ১৯৭৮ সালের আগে বিশ্বের কাছে চীনের প্রথম পরিচয় ছিল রহস্যময়। তখন মানুষ ঘন কুয়াশা ভেদ করে চীনকে দেখতে পেতো। কিন্তু ৩০ বছর পর আজকের চীনকে ভোরের সূর্যের মতো সবাই স্পষ্টভাবে তার চেহারাকে দেখতে পায়। ফ্রান্সের সাবেক প্রধানমন্ত্রী জ্যান পিয়েরে রাফারিন আজকের চীন প্রসঙ্গে বলেছেন, '১৯৭৫ সালে চীনের জাতীয় উত্পাদনের মোট মূল্য ছিল বিশ্বের উত্পাদনের মোট মূল্যের অনুপাতে কেবল ০.৫ শতাংশ। এখন এ পরিমাণ ৫ শতাংশে গিয়ে দাঁড়িয়েছে। চীনে প্রতি বছর ২ কোটি মানুষ বাড়ছে। চীনে তিন বছরের বর্ধিত জনসংখ্যা ফ্রান্সের সকল জনসংখ্যার সমান। আমি আশা করি, ফরাসী জনগণ এ তথ্যগুলো মনে রাখবেন। আমরা শক্তিশালী দেশের সারিতে ফিরে আসা চীনের প্রতি মনোযোগ দিতে এবং সমঝোতা ও সহযোগিতা করতেই হবে।' (ইয়ু কুয়াং ইউয়ে) |