v চীনের বিশ্ব কোষv চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগ
তথ্য সংগ্রহের উদ্দেশ্যে চীনের প্রথম ভ্রমণকারী লিউ ইয়ু থিয়ান
2009-01-02 20:21:42
গত ৩০ বছরে চীনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে বেশ অনেকই তাদের কর্মোদ্যোগের জন্য দেশের ভেতর প্রথম ব্যক্তি হিসেবে পরিচিত হয়েছেন। আজকের "তাহাদের কথা" অনুষ্ঠানে আমরা চীনের পেশাগত অনুসন্ধান ক্ষেত্রে যিনি প্রথম উদ্যোগ নিয়েছিলেন সেই লিউ ইয়ু থিয়ানের গল্প আপনাদের শোনাবো।

বন্ধুরা, ১৯৭৮ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত এ ৩০ বছরের মধ্যে চীনের সংস্কার ও উন্মুক্তকরণের ফলে উন্নয়ন কর্মকান্ড অতি দ্রুত বাস্তবায়িত হয়েছে। এর মধ্যে অন্তর্ভূক্ত রয়েছে চীনের বিভিন্ন ক্ষেত্রের ওপর অনুসন্ধানের মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহের কাজ। নয়া চীন প্রতিষ্ঠার পর, অনুসন্ধানমূলক তত্পরতা বেশ কয়েকবার নেয়া হলেও এটি সব সরকারের উদ্যোগে এবং সরকারী বরাদ্দের মাধ্যমে চালানো হয়। তবে চীনের সংস্কার ও উন্মুক্তকারণের পর এ অবস্থার পরিবর্তন করা হয়। এ সম্পর্কে চীনের তথ্য অনুসন্ধান সমিতির চেয়ারম্যান ইয়ান চিয়াং চেং আমাদের সংবাদদাতাকে বলেন:" চীনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে সংস্কার ও উন্মুক্তকারণ শুরু হওয়ার পাশাপাশি চীনা জনগণের মতাদর্শের চেতনার বেশ উন্নতি হয়েছে। এতে অনুসন্ধান ক্ষেত্রের অনেক অনুরাগীই নিজেদের স্বপ্নকে বাস্তবে রুপান্তরিত করার জন্য যথাসাধ্য প্রচেষ্টা চালিয়েছেন। লিউ ইয়ু থিয়ান এর মধ্যে অন্যতম।"

৬৬ বছরের লিউ ইয়ু থিয়ান তাঁর অনুসন্ধানের মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহের জন্য ২৪ বছর কাটিয়ে দিয়েছেন। তিনি বহুবার "থা কে লা মা কান" এবং "কু আর পান থুং কু থে"সহ চীনের পাঁচটি বৃহত্তম দূর্গম মরুভূমি পার হয়ে অনুসন্ধানের কাজ সম্পন্ন করেছেন। এ পর্যন্ত তিনি সুষ্ঠুভাবে ৮৬টি ক্ষেত্রে অনুসন্ধানের দায়িত্ব শেষ করেছেন। "অভাবনীয়" এ শব্দটি হচ্ছে লিউ ইয়ু থিয়ানের অনুসন্ধানের অভিজ্ঞতার মধ্যে সবচে' শ্রেষ্ঠ ।

আসলে ১৯৬৪ সালে লিউ ইয়ু থিয়ান লেখাপড়া শেষ করে চীনের সিন চিয়াং রেল পথ ব্যুরোর সম্প্রচার বিভাগে একটি উপযুক্ত কাজ পান। সেসময় এ কাজ কেবল যে অফিসের ভাল পরিবেশ ও স্থিতিশীল আয় তা নয়, বরং এ কাজে তার ব্যস্ততাই বেশি ছিল নয়। এ সম্পর্কে লিউ ইয়ু থিয়ান বলেন:" তখন আমার দায়িত্ব ছিল শুধুমাত্র কয়েকটি রিপোর্ট লেখার জন্য। প্রতিদিন অফিসে থাকার সময় মাত্র ৪টি ঘন্টাই যথেষ্ট ছিল।"

তবে ১৯৮২ সালে একটি পত্রিকায় বলা হয়, একজন বিদেশী তথ্য অনুসন্ধানকারী চীনের মহাপ্রাচীর ভ্রমণ করতে চেয়েছিলেন। এ রিপোর্ট প্রকাশ হওয়ার পর, ৪০ বছরের লিউ ইয়ু থিয়ান মনে করতেন, মহাপ্রাচীর হচ্ছে চীনা জনগণের । চীনাদেরই সবচে' প্রথম নিজেদের মহাপ্রাচীরের ইতিহাস, ঐহিত্য ও গঠনের ওপর অনুসন্ধান করা উচিত। তবে লিউ ইয়ু থিয়ান তার রেল পথের অনুসন্ধানের কাজ ত্যাগ করতে পারেন নি। এ সম্পর্কে তিনি স্মরণ করে বলেন:" রেল পথের কাজ একটি খুবই ভাল কাজ। এটা ছেড়ে দিলে সবাই মনে করবেন যে, আমার মাথা ঠিক নেই। তাইনা?"

এছাড়া, লিউ ইয়ু থিয়ানের পরিবারও এর অনেক বিরোধীতা করেছে। তবে শেষ পর্যন্ত লিউ ইয়ু থিয়ান তার এ কাজ পরিত্যাগ করে একাই নিজে নিজে মহাপ্রাচীরের ওপর অনুসন্ধান কাজ করেছেন। এর পর, তার মহাপ্রাচীর ভ্রমণ সংক্রান্ত প্রবন্ধ চীনের মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের পাঠ্য বই হিসেবে প্রকাশ করা হয়।

প্রবন্ধে তিনি লিখেছেন, 'বিশ্বের সাতটি বিস্ময়ের অত্যতম' হিসেবে আখ্যয়িত মহাপ্রাচীর হচ্ছে বিশ্বের এমন একটি প্রাচীনকালের সামরিক প্রতিরক্ষামূলক প্রকল্প যার নিমার্নের ইতিহাস সবচেয়ে দীর্ঘ এবং আকার সবচেয়ে বিরাট। এই মহাপ্রাচীর চীনের ভূখন্ডে ৭ হাজার কিলোমিটারেরও বেশী বিস্তীর্ণ রয়েছে । ১৯৮৭ সালে মহাপ্রাচীর বিশ্ব উত্তরাধিকারের তালিকায় অন্তভুর্ক্ত হয়। মহাপ্রাচীরের নিমার্ণের কাজ খৃষ্টপূর্ব নবম শতাব্দী থেকে শুরু হয়। চীনের বসন্ত ও শরত যুগ আর রাজ্যসমূহের যুদ্ধমান যুগে বিভিন্ন রাজ্যের মধ্যে লড়াই চলাই থাকতো। বড় রাজ্যগুলো পরষ্পরের আক্রমণ থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্যে সীমান্তের নিকটবর্তী পাহাড়ে মহাপ্রাচীরের নির্মাণ শুরু করে। খৃষ্টপূর্ব ২২১সালে ছিন রাজবংশের প্রথম রাজা চীনকে একীকরণ করার পর আগের ছোট ছোট রাজ্যের নির্মিত মহা প্রাচীর সংযুক্ত হতে থাকে । আস্তে আস্তে আঁকাবাঁকা পাহাড়গুলোতে তৈরী এই প্রাচীর উত্তর সীমান্তের প্রতিবন্ধকতায় পরিণত হয়। যাতে উত্তর দিকের মঙ্গোলিয়ার বিস্তীর্ণ তৃণভূমির পশুপালকদের আক্রমণ প্রতিরোধ করা যায়। ছিন রাজবাংশ আমলে মহাপ্রাচীরের দৈর্ঘ্য ৫০০০ কিলোমিটার। ছিন রাজবংশের পর হান রাজবংশ মহা প্রাচীরের দৈর্ঘ আরও ১০ হাজার কিলোমিটার বাড়িয়ে দেয় । দু' হাজারেরও বেশি বছর ধরে চীনের বিভিন্ন সময়পর্বের শাসকগণ ভিন্ন মাত্রায় মহাপ্রাচীর নিমার্ণ করে।

এ সব বিষয় লিউ ইয়ু থিয়ানের প্রবন্ধেই প্রথম জানা যায়। এখন মহা প্রাচীর বলতে সাধারণত মিং রাজবংশের সময় নির্মিত মহাপ্রাচীরকেই বুঝায়। এটা চীনের পশ্চিমাংশের কান সু প্রদেশের চিয়াইউ চোকা থেকে চীনের উত্তর-পূর্ব লিয়াও নিং প্রদেশের ইয়ালোচাম্পু নদীর তীর পযর্ন্ত বিস্কৃত ছিল। এই মহা প্রাচীর চীনের ৯টি প্রদেশ, শহর ও স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের মধ্যে বিস্তীর্ণ হয়।মোট দৈর্ঘ্য ৭৩০০ কিলোমিটার ।প্রায় ১৪ হাজার লির সমান। সুতরাং চীনের মহা প্রাচীরকে ১০ হাজার লির মহা প্রাচীর বলা হয়। প্রতিরক্ষা প্রকল্প হিসেবে মহা প্রাচীর পাহাড়রে নিমির্ত হয় এবং মরুভূমি , মালভূমি , জলাভূমি অতিক্রম করে । মহাপ্রাচীর যে সব জায়গা অতিক্রম করেছে সে সব জায়গার ভূগোলিক অবস্থা খুব জটিল। নিমার্নকারীরা ভূগোলিক অবস্থা অনুযায়ী ভিন্ন বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন কাঠামো প্রয়োগ করেছেন। এতে চীনের পূর্বপুরুষদের মেধা প্রতিফলিত হয়। মহাপ্রাচীরে চীনের প্রাচীনকালের লক্ষ লক্ষ শ্রমিকজিবীর মেধা আর শ্রম প্রতিফলিত হয়। ১৯৮৭ সালে মহা প্রাচীর 'চীনা জাতির প্রতীক' হিসেবে বিশ্ব উত্তরাধিকারের তালিকায় অন্তভুর্ক্ত হয়।

তবে লিউ ইয়ু থিয়ান এ প্রথমজন চীনা অনুসন্ধাকারী মহাপ্রাচীর না গিয়ে এ সব তথ্য আমরা জানতে পারবো না। বর্তমান চীনের বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের সম্প্রাচারের মাধ্যমে লিউ ইয়ু থিয়ান এবং অন্যান্য অনুসন্ধানকারীদের গল্প চীনে বেশি ছড়িয়ে পড়া হয়। চীনের অনুসন্ধান সমিতির একটি সর্বশেষ পরিসংখ্যান থেকে জানা গেছে, এখন চীনে অনুসন্ধানকারীদের সংখ্যা বেড়েছে ৫ কোটি।

  • সাক্ষাত্কার
  • সর্বশেষ সংবাদ
  • অন-লাইন জরীপ
     
    © China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
    16A Shijingshan Road, Beijing, China