নভেম্বর মাসের শেষ দিকে ভারতের মুম্বাইয়ে বিস্ফোরণ ঘটার পর ভারত ও পাকিস্তানের শান্তি প্রক্রিয়া আকস্মিকভাবে বন্ধ হয়ে যায়। দু'দেশের সম্পর্ক উত্তেজনাময় হয়ে উঠে। সম্প্রতি দু'দেশ তর্কবিতর্ক থেকে শুরু করে সামরিক বৈরি অবস্থায় প্রবেশ করেছে যা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের একাগ্র দৃষ্টির সঞ্চার করেছে। মধ্যস্থতার উদ্দেশ্যে কিছু দিন আগে মার্কিন চিফ অফ স্টাফের জয়েন্ট চেয়ারম্যান ম্যাক মুল্লেন আবারও দক্ষিণ এশিয়ায় গিয়েছেন। ধারণা করা হচ্ছে, ভারত ও পাকিস্তানের উত্তেজনাময় সম্পর্ক আরো কিছু দিন স্থায়ী হবে। কিন্তু দু'দেশের মধ্যে যুদ্ধের সম্ভাবনা অনেক কম।
২৬ নভেম্বর ভারতের মুম্বাইয়ে ধারাবাহিক সন্ত্রাসী হামলার শিকার হয়ে বহু লোক গুরুতর হতাহত হয়েছে। ভারত সরকার সন্ত্রাসী হামলার সঙ্গে পাকিস্তানের সম্পর্ক আছে বলে অভিযোগ করেছে। ভারতের সরকারী ও বেসরকারী সংস্থাগুলো এ হত্যাকান্ডের তদন্ত করার জন্য তীব্র দাবি জানায়। ভারতের অভিযোগ সত্বেও পাকিস্তান সংযমী অবস্থান অবলম্বন করেছে। পাকিস্তান এক দিকে সরকারের সঙ্গে সন্ত্রাসী ঘটনার সম্পর্ক অস্বীকার করেছে, অন্য দিকে তারা সন্ত্রাস দমন ক্ষেত্রে ভারতের সঙ্গে সহযোগিতা করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। আসলে পাকিস্তান সরকার সক্রিয় প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। তারা বহু সন্দেহভাজন ব্যক্তিকেও গ্রেফতার করেছে। এ পরিপ্রেক্ষিতে ভারত ও পাকিস্তানের সম্পর্কের আরো অবনতি হয় নি।
কিন্তু সম্প্রতি ভারত সরকার হঠাত্ পাকিস্তানের প্রতি অভিযোগের কন্ঠস্বর আরো জোরালো করে তার বিরুদ্ধে বলপ্রয়োগ করার হুমকি দিয়েছে। ভারতের এই কার্যকলাপ পাকিস্তানের শক্ত জবাব পেয়েছে। ভারতের কংগ্রেসের চেয়ারম্যান সোনিয়া গান্ধী ২১ ডিসেম্বর এক জনসমাবেশে বলেছেন, ভারত সবসময় প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে সুষ্ঠু সম্পর্ক বজায় রাখার যথাসাথ্য প্রচেষ্টা চালায়, একই সঙ্গে আশা করে, প্রতিবেশী দেশ ভারতের শান্তিকামী প্রয়াসকে দুর্বল মনে করবে না। নাহলে ভারত উপযুক্ত প্রতিশোধ নিতে দ্বিধা করবে না। পরের দিন ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রী প্রণব মুখার্জী আবারও হুমকি দিয়েছেন। তিনি ভারতে বিদেশী কূটনৈতিকদের এক অধিবেশনে বলেছেন, যদি পাকিস্তান মুম্বাই সন্ত্রাসী ঘটনার সঙ্গে জড়িত সন্ত্রাসী ব্যক্তিদের ওপর আঘাত হানার জন্য সংশ্লিষ্ট ব্যবস্থা না নেয় তাহলে ভারত 'প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা নেবে'।
ভারতের বক্তব্যের পর পর পাকিস্তান তার প্রবল প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছে। পাকিস্তানের সেনা বাহিনী প্রধান আশফাক কিয়ানি ২২ ডিসেম্বর বলেছেন, যদি ভারত পাকিস্তানে সামরিক আঘাত হানে, পাকিস্তান 'কয়েক মিনিটের মধ্যেই সমানভাবে সাড়া দেবে'। পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট আসিফ আলি জারদারি বলেছেন, পাকিস্তান ভারতের সঙ্গে শান্তিপূর্ণ ও আন্তরিক দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক বজায় রাখতে চায়। কিন্তু ভারতের নেতাদের হুঁশিয়ারী উচ্চারণের মধ্যে আক্রমণের ভাব প্রকাশ পেয়েছে যা এ অঞ্চলের শান্তিপূর্ণ পরিবেশ নষ্ট করেছে। পাকিস্তানের জাতীয় পালার্মেন্ট দেশের নিরাপত্তা সমস্যার ওপর আলোচনার জন্য এক বিশেষ অধিবেশনের আয়োজন করে এবং ২৪ ডিসেম্বর মুম্বাই হামলা ঘটনা সম্পর্কে পাকিস্তানের ওপর ভারতের 'অবাস্তব অভিযোগ' খন্ডন করে একটি প্রস্তাব গ্রহণ করেছে।
দু'দেশ অভিযোগ পাল্টা অভিযোগ করার পাশাপাশি দু'দেশ তাদের সেনাবাহিনীও জরুরীভাবে বিন্যাস করেছে। ভারত ও পাকিস্তানের সীমান্ত অঞ্চলে ভারতের স্থল ও বিমান বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। কোন আকস্মিক ঘটনা মোকাবিলার জন্য ভারতের বিমান বাহিনী সেখানে আরো বেশি রাডার ও পর্যবেক্ষণ সাজসরঞ্জামও বসিয়েছে। পাকিস্তানের বিমান বাহিনীও ২২ ডিসেম্বর সতর্ক অবস্থা গ্রহণ করেছে। তারা ইসলামাবাদ, রাওয়ালপিন্ডি ও লাহোরসহ প্রধান প্রধান শহরগুলোর আকাশসীমার তত্ত্বাবধানের মাত্রা জোরদার করেছে।
ভারত ও পাকিস্তানের সম্পর্ক এখন উত্তেজনাময় হলেও দু'দেশের মধ্যে যুদ্ধ হওয়ার সম্ভাবনা খুব কম। এর গুরুত্বপূর্ণ কারণ হচ্ছে ভারত ও পাকিস্তান উভয়েই পারমাণবিক অস্ত্রের অধিকারী দেশ। লড়াই করলে ফলাফল অভাবনীয় হতে পারে। ফলে দু'পক্ষ অবিবেচনাপ্রসূত উত্তেজনাকর কোন ব্যবস্থা নেবে না।(ইয়ু কুয়াং ইউয়ে) |