মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ ডাবলিউ বুশ ইরাক সফরের পর ১৫ ডিসেম্বর কাবুল পৌঁছে আফগানিস্তান সফর করেছেন। মার্কিন প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর এটি হলো আফগানিস্তানে বুশের দ্বিতীয় সফর এবং তাঁর কার্যমেয়াদ শেষ হওয়ার আগে আফগানিস্তানে তাঁর বিদায়ী সফর। বিশ্লেষকরা মনে করেন, বুশের আকস্মিকভাবে আফগানিস্তান সফর করার উদ্দেশ্য হচ্ছে এর মাধ্যমে আফগান সরকারের কাছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নতুন সরকারের সমর্থনের কথা প্রকাশ করা এবং তাঁর বিদায়ের আগে আফগানিস্তানে মোতায়েন মার্কিন বাহিনীকে উত্সাহ দেয়া।
খবরে জানা গেছে, স্থানীয় সময় সকাল ৫টায় বুশ কাবুলের কাছাকাছি বাগ্রাম বিমান বন্দরে পৌঁছে সেখানে অপেক্ষারত মার্কিন বাহিনীর কর্মকর্তা ও সৈন্যদের সঙ্গে দেখা করেছেন। এরপর তিনি হেলিকপ্টার যোগে কাবুলে যান। সেখানে তিনি আফগানিস্তানের প্রেসিডেন্ট হামিদ কারজাইর সঙ্গে বৈঠক করেছেন। বুশের এবারের আফগানিস্তান সফর আকস্মিক, তবে তিনি আফগানিস্তানে মাত্র কয়েক ঘন্টা যাত্রাবিরতি করেছেন। বিশ্লেষকরা উল্লেখ করেছেন, বুশের আফগানিস্তান সফরের সময় স্বল্প হলেও তা বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব বহন করেছে।
প্রথমতঃ তাঁর সৃষ্ট আফগান যুদ্ধের 'সফলতার' কথা উল্লেখ করা। বাগ্রাম বিমান বন্দরে বুশ বলেছেন, সাত বছর আগের তুলনায় এখন আফগানিস্তানের বিরাট পরিবর্তন ঘটেছে। ২০০১ সালে যুক্তরাষ্ট্রের আফগান যুদ্ধ শুরুর পর আফগানিস্তানের নিরাপত্তার পরিস্থিতির অনেকটাই উন্নতি হয়েছে। স্কুল, হাসপাতাল ও সড়কপথসহ নানা বুনিয়াদী ব্যবস্থার পুনর্গঠন হয়েছে। তবে বুশ স্বীকার করেছেন যে, আফগানিস্তানের সহিংস তত্পরতা বৃদ্ধির প্রবণতা এখন দেখা যাচ্ছে। তবে তিনি মনে করেন, এর কারণ হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের বাহিনী যে জায়গায় মোতায়েন করেছে, সেখানে এর আগে কখনো বাহিনী মোতায়েন ছিল না। ফলে সশস্ত্র ব্যক্তিদের তীব্র প্রতিক্রিয়া জেগে উঠেছে।
দ্বিতীয়ত: তার ক্ষমতা হস্তান্তরের আগেই আফগান সরকারকে যুক্তরাষ্ট্রের নতুন সরকারের সমর্থনের বিষয়টি ব্যক্ত করা। সফরকালে বুশ প্রথমে আফগান সরকারকে এক তথ্য জানিয়েছেন, তা হলো যদিও হোয়াইট হাউসে ক্ষমতার রদবদল হবে, তবে আফগান সরকার আগের মতোই যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন পাবে। সাত বছর আগে বুশ আফগান যুদ্ধ বাঁধিয়ে তালিবান সরকারকে উত্খাত করেছে। কিন্তু সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দেখা যায় তালিবান সশস্ত্র যোদ্ধাদের পুনরায় ক্ষমতায় প্রত্যাবর্তনের প্রবণতা দেখা দিচ্ছে। খবরে জানা গেছে, আফগানিস্তানের অধিকাংশ অঞ্চলে তালিবানের সশস্ত্র যোদ্ধারা অনুপ্রবেশ করেছে। কারজাই সরকারের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে কেবলমাত্র কাবুল ও এর আশেপাশের কিছু এলাকা। ৪০ দিনের মধ্যে বুশের কার্যমেয়াদ শেষ হবে। তাঁর উত্তরসূরী ওবামা সম্প্রতি বলেছেন, সন্ত্রাস দমনের প্রধান যুদ্ধের মাঠ ইরাক থেকে আফগানিস্তানে স্থানান্তরিত করা হবে। কারজাইর সঙ্গে যৌথভাবে আয়োজিত প্রেস ব্রিফিংয়ে বুশ বলেছেন, আফগানিস্তান পরবর্তী মার্কিন সরকারের ওপর নির্ভর করতে পারে। যেমন আফগানিস্তান বর্তমান মার্কিন সরকারের ওপর নির্ভর করছে।
তৃতীয়ত: অব্যাহতভাবে পাকিস্তানকে সন্ত্রাস দমন জোরদার করার তাগিদ দেয়া। এখন পাকিস্তানে সন্ত্রাসী হামলা ও সহিংস তত্পরতা ঘন ঘন ঘটছে। আফগানিস্তান সংলগ্ন অঞ্চল হচ্ছে 'আল-কায়েদা সংস্থার' নিয়ন্ত্রিত এলাকা। যুক্তরাষ্ট্র মনে করে, পাকিস্তানে বিশেষ করে পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের সীমান্ত অঞ্চলের সন্ত্রাসী তত্পরতা বাড়ার কারণে আফগানিস্তানের সন্ত্রাস দমন যুদ্ধ বিরাট হুমকির সম্মুখীন হয়ে পড়েছে। প্রেস ব্রিফিংয়ে বুশ বলেছেন, যদি পাকিস্তান সন্ত্রাসী হামলা প্রায়শই ঘটানোর দেশে পরিণত হয়, তাহলে আফগানিস্তান যুদ্ধে জয়ী হওয়া খুব কঠিন হবে। তিনি আরো বলেছেন, পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের সীমান্ত অঞ্চলের সশস্ত্র ব্যক্তিদের ওপর আঘাত হানার জন্য যুক্তরাষ্ট্র অব্যাহতভাবে পাকিস্তানের সঙ্গে সহযোগিতা করবে।
চতুর্থত: বিদায়ের আগে আফগানিস্তানে মোতায়েন মার্কিন বাহিনীকে উত্সাহ দেয়া। আফগানিস্তানে যুক্তরাষ্ট্রের বাহিনী সাত বছর ব্যয় করেছে। এর মধ্যে ধারাবাহিকভাবে সৈন্যের সংখ্যা বাড়ালেও দেখা যাচ্ছে তালিবানের শক্তিও বেড়ে গেছে। এখন আফগানিস্তানে প্রায় ৩১ হাজার মার্কিন সৈন্য আছে। কিন্তু আফগানিস্তানে মোতায়েন মার্কিন সেনাপতি বলেছেন, আফগানিস্তানের পরিস্থিতি স্থিতিশীল করতে কমপক্ষে আরো ২০ হাজার মার্কিন সৈন্য দরকার। সফরকালে বুশ আফগানিস্তানে আরো বেশি সৈন্য পাঠানোর কথা বলেছেন। এটা নিঃসন্দেহে আফগানিস্তানে মোতায়েন মার্কিন সৈন্যকে উত্সাহ দেবে।
জানা গেছে, সম্প্রতি বুশ সরকার আফগান যুদ্ধের নীতি পর্যালোচনা করছে এবং এক রোড ম্যাপের খসড়া করছে। রোড ম্যাপ অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্র প্রধানতঃ আফগানিস্তানের সরকারী বাহিনীর শক্তি বাড়াতে সাহায্য করবে, যাতে আফগান যুদ্ধের বিজয় অর্জন বাস্তবায়িত হয়। (ইয়ু কুয়াং ইউয়ে) |