২০ নভেম্বর ১০০ জন নিয়ে গঠিত চীনা যুব প্রতিনিধি দল ভারতে দশ দিন ব্যাপী সফর শেষ করে ২০ নভেম্বর চীনে ফিরে এসেছে। প্রতিনিধিরা ভারত সফরকালে আধুনিক ভারতের বিকাশ দেখেছেন এবং চীন ও ভারতের বিনিময়ের প্রয়োজনীয়তা ও জরুরী দিকগুলো উপলব্ধি করেছেন।
চীনা যুব প্রতিনিধি দলের নেতা ছিলেন চীনের যুব ফেডারেশনের ভাইস-চেয়ারম্যান, চীনের কমিউনিস্ট যুব লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সচিবালয়ের সম্পাদক ওয়াং হোং ইয়ান। সফরকালে চীনের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আসা এক শ জন যুব ক্যাডার, শিল্পপতি, পন্ডিত, শিল্পী ও ছাত্র প্রতিনিধিগণ ভারতের সমাজ ব্যবস্থা গভীরভাবে পরিদর্শন করেছেন। প্রতিনিধি দলের নেতা ওয়াং হোং ইয়ান বলেছেন, 'ভারতের সরকার ও যুব ও ক্রিড়া মন্ত্রণালয় এবারের সফরের ওপর অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়েছে। দশ দিনে আমাদেরকে মুম্বাই, পুনে, আগ্রা, দিল্লি ও জয়পুরসহ পাঁচটি শহর ঘুরিয়ে দেখিয়েছে। আমরা সেখানকার স্কুল, কারখানা, খামার ও কমিউনিটি সেন্টার পরিদর্শন করেছি। আমরা ভারতীয় যুবকদের সঙ্গে সংস্কৃতি, ক্রিড়া, পরিবেশ সুরক্ষা, যুব কর্মকান্ড কাজ ও সাংগঠনিক কাজ সম্পর্কে ব্যাপক মত বিনিময় করেছি। '
এবারের ভারত সফরকালে বৈচিত্রময় ভ্রমণ ও সুষ্ঠু পরিদর্শন কর্মসূচী চীনের যুবক প্রতিনিধিদের হৃদয়ে অভিন্ন অনুভুতি এনে দিয়েছে। প্রতিনিধি দলের সদস্য, চিয়াং সু প্রদেশের বিদ্যুত্ কোম্পানির প্রকৌশলী পাও থোং বলেছেন, 'আমরা ভারতীয় যুবকদের আন্তরিকতা ও বন্ধুত্ব অনুভব করেছি। বিশেষ করে মুম্বাই ও পুনে পরিদর্শন করেছি, সেখানকার বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক যুব ছাত্রছাত্রীরাই চীনের সংস্কৃতিকে পছন্দ করে। চীনের আধুনিক জীবন আর বিভিন্ন রীতিনীতির ওপর তাদের ভালো জ্ঞান আছে।'
কুয়াংতুং প্রদেশের যুব ফেডারেশনের উপ-মহাসচিব শাও কুও মনে করেন, 'ভারতীয় যুবকরা খুব হাসিখুশি। তারা আমাদের সঙ্গে বিনিময় করতে পছন্দ করেন। আমি মনে করি, চীনের ওপর তাদের কিছু ধারণা আছে এবং তারা চীনকে আরো বেশি জানতে চান।'
কুয়াংতুং প্রদেশের যুব ফেডারেশনের সদস্য থান লিয়ান মনে করেন, সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য রক্ষার ক্ষেত্রে চীন ভারতের কাছ থেকে অভিজ্ঞতা নিতে পারে।
বেইজিং ডাক যোগাযোগ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক চাও পাও কুও লক্ষ্য করেছেন, 'এবারের সফরের একটি স্পষ্ট অনুভুতি হচ্ছে ভারতে সরকার হোক, যুবকযুবতী হোক, সবাই চীনকে এশিয় অঞ্চলের একটি লক্ষণীয় দেশ হিসেবে তুলনা করেন। বলা যায়, ভারত এশিয়া তথা সারা বিশ্বে তাদের আরো বেশি অধিকার অর্জনের জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা চালিয়ে নিজেদের উন্নয়ন করছে।'
পুনে মিথোজীবিত্ব আন্তর্জাতিক শিক্ষা কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা এস বি মজুমদার সংবাদদাতাকে বলেছেন, 'চীন ও ভারত সরকার দু'দেশের যুবকদের বিনিময় কর্মসূচী পালনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে দেখে আমি খুব খুশি। বর্তমান এ উন্মুক্ত বিশ্বে আমি বিশ্বাস করি, যুব প্রজন্ম হচ্ছে সংস্কৃতি ও মৈত্রীর উত্তরাধিকার এবং পরস্পরের সহায়ক। আমি মনে করি, চীন ও ভারতের যুবকদের বিনিময়ের গুরুত্বপূর্ণ তাত্পর্য আছে। '
২০০৭ সালে চীনের প্রেসিডেন্ট হু চিন থাও ভারত সফরকালে নির্ধারিত পাঁচ বছরের মধ্যে পাঁচ শ জন যুবকের পরস্পর সফর পরিকল্পনা অনুযায়ী, চীন এ নিয়ে তৃতীয় বারের মতো এক'শ জন যুব নিয়ে গঠিত প্রতিনিধি দলকে ভারত সফরে পাঠিয়েছে। চীনা প্রতিনিধি দলকে বিদায় সংবর্ধনার সময় ভারতের যুব ও ক্রীড়া বিষয়ক মন্ত্রী এম এস গিল বলেছেন, 'আমি আনন্দের সঙ্গে দেখেছি যে, দু'দেশের সরকার সংশ্লিষ্ট সিদ্ধান্ত নেয়ার পর দু'দেশের মধ্যে তিন বার যুব বিনিময় হয়েছে। আমাদের দু'দেশের যুব বিভাগগুলো এই প্রকল্পের সারসংকলন করে ভবিষ্যতের কাজকে আরো সম্প্রসারণ ও সুষ্ঠু উন্নয়ন করবে।'
চীনের প্রতিনিধি দলের নেতা ওয়াং হোং ইয়ান গিলের প্রস্তাবের সঙ্গে পুরোপুরি একই মত প্রকাশ করেন। কারণ তিনিও উপলব্ধি করেছেন, বর্তমানে চীন ও ভারতের যুবকদের বিনিময় আরো জোরদার করা এবং সমঝোতা বাড়ানোর প্রয়োজন রয়েছে। (ইয়ু কুয়াং ইউয়ে) |