ইউয়ুনান চীনের দক্ষিণ-পশ্চিম সীমান্ত অঞ্চলে অবস্থিত। ইউয়ুনান দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া ও দক্ষিণ এশিয়া উপমহাদেশ সংলগ্ন। পশ্চিমবঙ্গ ভারতের পূর্ব দিকে অবস্থিত। এর রাজধানী কলকাতা হচ্ছে ভারতের তৃতীয় বৃহত্তম শহর। ইউয়ুনান প্রদেশ আর পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য হচ্ছে চীন ও ভারতের মধ্যে ব্যবধানের দিকে সবচেয়ে কাছেv দু'টি প্রদেশ। কুনমিং থেকে কলকাতাগামী বিমান পথের দূরত্ব কেবল ১৫০০ কিলোমিটার। এ দুটি জায়গা উভয় দু'দেশের আদান-প্রদানের গুরুত্বপূর্ণ সংযোগস্থল।
গত ৮ ও ৯ নভেম্বর ইউয়ুনান প্রদেশের দালি পাই জাতি স্বায়ত্তশাসিত জেলায় ইউয়ুনান প্রাদেশিক সরকারের উন্নয়ন গবেষণা কেন্দ্রের উদ্যোগে 'চীনের ইউয়ুনান প্রদেশ ও ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের অর্থনৈতিক সহযোগিতা সংক্রান্ত চতুর্থ আন্তর্জাতিক সেমিনার' অনুষ্ঠিত হয়েছে। এ সেমিনারের প্রসঙ্গ ছিল 'ঐতিহাসিক সুযোগকে কাজে লাগিয়ে বাস্তবতার আলোকে প্রদেশ পর্যায়ের সহযোগিতা ত্বরান্বিত করা'। দুই অঞ্চলের প্রায় ৩০০ জন বিশেষজ্ঞ, পন্ডিত, সরকারী কর্মকর্তা এবং শিল্পপতিরা এ সেমিনারে অংশ নিয়েছেন।
ইউয়ুনান প্রাদেশিক উন্নয়ন গবেষণা কেন্দ্রের উপ-পরিচালক ইয়াং চিয়ে জানিয়েছেন, এখন ইউয়ুনান ও পশ্চিমবঙ্গের সহযোগিতা সেমিনার একটি শিথিল সংগঠন হিসেবে দু'পক্ষের সহযোগিতা দ্রুত উন্নয়নের চাহিদা মেটাতে পারে না। তিনি মনে করেন, ইউয়ুনান ও পশ্চিমবঙ্গের সহযোগিতা সেমিনারটিকে সহযোগিতা ফোরামে রূপান্তর করা উচিত। অর্থনীতি ও বাণিজ্য, পর্যটন, শিক্ষা, সংস্কৃতি, পরিবহন ও শিল্প প্রতিষ্ঠানসহ নানা ক্ষেত্রের কার্যগ্রুপও গড়ে তোলা উচিত।
ইয়াং চিয়ে বলেছেন, 'পর্যটন ক্ষেত্রের সহযোগিতায় সর্বপ্রথম সাফল্য অর্জিত হবে। ইউয়ুনান হচ্ছে চীনের পর্যটন সম্পদে সবচেয়ে সমৃদ্ধ প্রদেশের অন্যতম। এখন ইউয়ুনানে সম্পূর্ণ পর্যটন শিল্প ব্যবস্থা গঠিত হয়েছে। ২০০৭ সালে ইউয়ুনান ৪৫ লাখ ৮০ হাজার বিদেশী পর্যটককে অভ্যর্থনা জানিয়েছে। এর মধ্যে ভারতীয় পর্যটকের সংখ্যাই ৬৪০০'র বেশি। এ সংখ্যা ২০০৩ সালের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ বেড়েছে। পশ্চিমবঙ্গের পর্যটন সম্পদও প্রচুর রয়েছে। কলকাতা হচ্ছে ভারতের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ পর্যটন শহর। দু'দেশের সরকার 'পর্যটন সহযোগিতা চুক্তি' স্বাক্ষরের পর এ দুটি প্রদেশের পর্যটন সহযোগিতার সুষ্ঠু পরিবেশ ও সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে।'
এ প্রসঙ্গে ভারতের মাকা গবেষণা ইনস্টিটিউটের গবেষক কৃষ্ণ শ্রি নিভাসান পুরোপুরি একই মত। তিনি বলেছেন, 'আমরা যৌথভাবে কিছু পর্যটন লাইন তৈরি করে তা জনপ্রিয় গড়ে তুলতে পারি। প্রথমেই এ দুই প্রদেশের পর্যটনে উত্সাহী ব্যক্তিবর্গ কুনমিং থেকে কলকাতাগামী ফ্লাইটের মাধ্যমে পারস্পরিক সফর করা সম্পর্কিত প্রচার কাজ চালাতে পারি।'
তিনি আরো বলেছেন, চীন ও ভারত উভয়েই বিশ্বে চা উত্পাদনকারী বড় দেশ। দু'দেশের জন্য চা কেবল নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য ও দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ তা নয়, বরং ব্যাপক কৃষকদের দারিদ্র্য বিমোচনের গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক উত্স। এখন ইউয়ুনান আর পশ্চিম বঙ্গ চা উত্পাদনের প্রযুক্তি বিনিময় এবং প্রক্রিয়াকরণের সাজসরঞ্জাম আমদানি ক্ষেত্রে প্রাথমিক সহযোগিতা শুরু করেছে। ভবিষ্যতে এ ক্ষেত্রের সহযোগিতা আরো বাড়বে।
শিক্ষা ক্ষেত্রের সহযোগিতাও সম্প্রসারণ করা যায়। ইয়াং চিয়ে বলেছেন, এখন ইউয়ুনানয়ে অধ্যায়ণরত রয়েছে ২৮২ জন ভারতীয় ছাত্রছাত্রী। এর মধ্যে ২৬৬ জন ভারতীয় ছাত্রছাত্রী দালি ইনস্টিটিউটের ম্যাডিকেল কলেজে। অপর দিকে পশ্চিম বঙ্গ সফটওয়্যার, জীব বিজ্ঞান প্রকল্প, কৃষি ও ইংরেজী ভাষার শিক্ষাসহ নানা ক্ষেত্রে নিজের প্রাধান্য রয়েছে। এ ক্ষেত্রগুলোতে দু'পক্ষের সহযোগিতার উজ্জ্বল ভবিষ্যত সম্ভাবনা আছে। কৃষ্ণ শ্রি নিভাসান প্রস্তাব করেছেন, দু'পক্ষের ছাত্রছাত্রীরা পারস্পরিক সফর করতে পারেন। তারা প্রতিপক্ষের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে গিয়ে লেখাপড়া করতে পারেন অথবা শিক্ষা দিতে পারেন। দুই প্রদেশের সংশ্লিষ্ট বিভাগ এ সব ছাত্রছাত্রীদের কিছু দৈনন্দিন-ভাতা দিতে পারে।
তা ছাড়া এবারের সেমিনারে দুই প্রদেশের সংশ্লিষ্ট প্রতিনিধিরা সংস্কৃতি ও শিল্পকলা, ক্রিড়া প্রতিযোগিতা, তথ্য প্রযুক্তি, স্বাস্থ্য ও পরিবেশ রক্ষাসহ নানা ক্ষেত্রের সহযোগিতার ওপর সুনির্দিস্ট প্রস্তাব করেছেন।
উল্লেখ্য যে, ২০০৩ সালে ইউয়ুনান ও পশ্চিমবঙ্গের সহযোগিতার প্রথম আন্তর্জাতিক সেমিনার ভারতের কলকাতায় আয়োজনের পর কুনমিং ও কলকাতায় তিন বার অনুষ্ঠিত হয়েছে। (ইয়ু কুয়াং ইউয়ে)
|