v চীনের বিশ্ব কোষv চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগ
শেন ইয়াং-এ দক্ষিণ কোরিয়ার আন্তর্জাতিক স্কুল
2008-11-17 19:51:44
উত্তর পূর্ব চীনের শেন ইয়াং শহর দক্ষিণ কোরিয়ার কাছাকাছি অবস্থিত। দক্ষিণ কোরিয়ার অনক অধিবাসী এখানে বসবাস করেন। সম্প্রতি শেন ইয়াং শহরে দক্ষিণ কোরিয়া আন্তর্জাতিক স্কুল গড়ে তুলেছে। এ স্কুল এখানে বসবাসকারী দক্ষিণ কোরীয়দের ছেলে মেয়েদের স্কুলে ভর্তির সমস্যা সমাধান করবে। আজকের অনুষ্ঠানে এ স্কুল সম্পর্কে কিছু কথা বলবো। 

দক্ষিণ কোরিয়া আন্তর্জাতিক স্কুলের তৃতীয় বর্ষের দক্ষিণ কোরিয়া থেকে আসা পাঁচজন ছাত্র-ছাত্রী শিক্ষকের কাছে চীনা ভাষার উচ্চারণ গুরুত্বের সঙ্গে শিখছে।

স্কুলে প্রবেশ করলে প্রশান্তিময় অনুভূতি জাগে।

শিক্ষাদানের উদ্দেশ্য সম্পর্কে বলার সময় স্কুলের উপাচার্য সোং রোং সুও বলেছেন, 

চীনে পুঁজি বিনিয়োগকারী দক্ষিণ কোরীয় শিল্পপতি এবং শেন ইয়াংয়ে বসবাসরত দক্ষিণ কোরীয়দের সংখ্যা অব্যাহতভাবে বাড়ছে। তাদের ছেলে মেয়েদের শিক্ষা গ্রহণের সমস্যাও অব্যাহতভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। এসব ছাত্র-ছাত্রীর বয়স খুব কম। তাদের পরিবেশের সঙ্গে খাপ খাওয়ার দক্ষতা ভালো নয়। এসব কারণই হচ্ছে শেন ইয়াং এ দক্ষিণ কোরিয়া আন্তর্জাতিক স্কুল প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্য।

উপাচার্য সোং বলেছেন, ২০০৬ সালে এ স্কুলে শিক্ষাদান শুরু হয়। দু'বছরের গবেষণা ও উন্নয়নের পর ২০০৮ সালের মার্চ মাসে চীনের শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনে স্কুলের শিক্ষাদান ও পরিচালনা আনুষ্ঠানিকভাবে চালু হয়েছে। তিনি আরো বলেছেন,

দক্ষিণ কোরিয়া আন্তর্জাতিক স্কুলের প্রতিষ্ঠায় শেন ইয়াং সরকার এবং সমাজের বিভিন্ন মহলের ব্যাপক সমর্থন রয়েছে। চীনে পুঁজি বিনিয়োগকারী দক্ষিণ কোরিয়ার শিল্পপতি ও শেন ইয়াংয়ে চাকরি পাওয়া দক্ষিণ কোরীয়রা এর জন্য ধন্যবাদ জানিয়েছেন।

শেন ইয়াং-এ দক্ষিণ কোরিয়া আন্তর্জাতিক স্কুলে কিন্ডারগার্টেন, প্রাথমিক ও মাধ্যমিক কোর্স রয়েছে। বর্তমানে স্কুলের আয়তন তেমন বড় নয়। তবে বিভিন্ন সাজ-সরঞ্জাম রয়েছে। স্কুল কর্তৃপক্ষ কম্পিউটার ,ছবি আকাঁ, গান গাওয়া ও নৃত্যের ক্লাস,পরীক্ষাগার এবং গ্রন্থাগারসহ ব্যক্তিগত উন্নয়নের বিভিন্ন স্থান ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য ব্যবস্থা করেছে। এ স্কুল শেন ইয়াংয়ের আরো বেশি দক্ষিণ কোরীয়র দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। ভর্তি প্রাপ্ত ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যা ধাপে ধাপে বাড়ছে। উপাচার্য সোং বলেছেন, পরবর্তী কয়েক বছরে ১ হাজার ২ শো ছাত্র-ছাত্রীর থাকার সুবিধা সম্পন্ন একটি হোস্টেল নির্মাণ করা হবে। তিনি মনে করেন, এ স্কুলের এতো ভালো উন্নয়ন হলো দু'দেশের ভৌগোলিক অবস্থা ও একই সংস্কৃতির সঙ্গে সম্পর্কিত। উপাচার্য সোং-এর চীনের সংস্কৃতি ও চীনাদের প্রতি ভালো অনুভূতি রয়েছে। তিনি বলেছেন, 

আমি চীনের সংস্কৃতি সম্পর্কে জানতে ও অনুধাবন করতে আগ্রহী। আমি মনে করি, চীনারা সংলাপ পছন্দ করে,তারা পারস্পরকে আন্তরিকভাবে সাহায্য করে। এটা আমার খুব ভালো লেগেছে। চীন ও দক্ষিণ কোরিয়ার ইতিহাস খুব দীর্ঘকালের। চীনা ও দক্ষিণ কোরীয়রা দেখতে প্রায় একই রকম। চীন ও দক্ষিণ কোরিয়ার সম্পর্কও খুব ঘনিষ্ঠ।

৩০ বছর বয়সী পিয়াও লিয়ান জি চীনে আট বছর ধরে আছেন। তিনি বলেছেন, 

আগে চীন দক্ষিণ কোরিয়ার চেয়ে কিছুটা পশ্চাত্পদ ছিল। তবে বর্তমানে চীনের অর্থনীতি দ্রুত উন্নতি লাভ করেছে। জনগণের জীবনযাত্রার মান দক্ষিণ কোরিয়ার মতই। চীনারা খুব অতিথিপরায়ন ও বন্ধুবত্সল। আমার অনেক বন্ধুই চীন যেতে চায়। তারা আমাকে সানন্দ দৃষ্টিতে দেখেছেন।

শিক্ষক পিয়াও বর্তমান শিক্ষাদানের পরিবেশ খুব পছন্দ করেন। দক্ষিণ কোরিয়ার শিক্ষাদানের পদ্ধতি এক নয়। এ স্কুলে প্রতি ক্লাসে শুধু বিশটি শিশু। শিক্ষক ও ছাত্র-ছাত্রীর মধ্যে যোগাযোগে তাতে খুব সুবিধা হয়। যাতে শিক্ষক তার ছাত্র-ছাত্রীদের আরো বেশি বুঝতে পারে।

সাক্ষাত্কারে আমরা জেনেছি যে, শিক্ষক পিয়াও'র স্বামী ও শিশু চীনে বসবাস করছেন। তার মেয়ে দক্ষিণ কোরিয়া আন্তর্জাতিক স্কুলে শিক্ষা গ্রহণ করছে। তিনি বলেছেন, (৬)

আমার মেয়ে এখানে তৃতীয় বর্ষে লেখাপড়া করছে। সে দেশ খুব পছন্দ করে। এখানে সে কেবল দক্ষিণ কোরিয় ভাষা, ইংরেজী ও চীনা ভাষা শিখতে পারে তাই নয়, বরং পিয়ানো ও নৃত্যও শিখতে পারে। এখানে দক্ষিণ কোরিয়ার চেয়ে আরো ভালো শিক্ষা গ্রহণ করতে পারে।

লি থাই চিং সাত বছরের আগে চীনে এসেছে। এখন সে আন্তর্জাতিক স্কুলের মাধ্যমিক স্কুলের ছাত্র। সে বলেছে, (৭)

আগে আমি চীনা ভাষা বলতে পারতাম না। চীনা বন্ধুদের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে প্রতিদিনই আমার চীনা ভাষার মান উন্নত হচ্ছে। আমার স্বপ্ন কনসুলেটে কাজ করা। স্নাতক হবার পর আমি একজন কুটনীতিকে পরিণত হওয়ার চেষ্টা করবো।

উপাচার্য সোং বলেছেন, চীনে শিক্ষা গ্রহণকারী দক্ষিণ কোরীয় ছাত্র-ছাত্রীরা ভিন্ন সাংস্কৃতিক পটভূমিতে আরো বেশি জীবনযাত্রার পদ্ধতিকে অনুভব করতে পারে। ছোট বেলা থেকেই তারা সমাজের সঙ্গে খাপ খাওয়ানোর দক্ষতা অর্জনের প্রশিক্ষণ নিতে পারে। একজনের বিদেশ জীবনের জন্য এসব কিছুই খুব গুরুত্বপূর্ণ।

শেন ইয়াং শহরে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের স্বীকৃতি প্রাপ্ত প্রথম দক্ষিণ কোরিয় স্কুলের উপাচার্য হিসেবে সোং-এর বিদেশে স্কুল গড়ে তোলায় পূর্ণ আস্থা রয়েছে। তিনি বলেছেন, দক্ষিণ কোরিয় আন্তর্জাতিক স্কুল গড়ে তোলার লক্ষ্য হলো শিক্ষাদানের মাধ্যমে ছাত্র-ছাত্রীদের বিশ্বের বিখ্যাত বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি করতে পারা এবং ছাত্র-ছাত্রীরা যাতে চীন ও দক্ষিণ কোরিয়াসহ বহু ক্ষেত্রে বিনিময়ে সেতু তৈরীতে অবদান রাখতে পারে।

  • সাক্ষাত্কার
  • সর্বশেষ সংবাদ
  • অন-লাইন জরীপ
     
    © China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
    16A Shijingshan Road, Beijing, China