৬ নভেম্বর দক্ষিণ কোরিয়ার যুক্ত বার্তা সংস্থার প্রকাশিত এক দীর্ঘ প্রবন্ধে চীনের সংস্কার ও উন্মুক্তকরণের ৩০ বছরে অর্জিত লক্ষণীয় সাফল্যের ভূয়সী প্রশংসা করা হয়েছে।
প্রবন্ধে বলা হয়েছে, বর্তমান চীনে আকাশ পাতাল পরিবর্তন ঘটেছে। চলতি বছর বিশ্ব তথ্য মাধ্যমগুলো রাজনৈতিক কেন্দ্রীয় বিষয় হিসেবে চীনের উত্থানের ওপর মনোযোগ দিচ্ছে। বৃটেনের 'ইন্ডিপেন্ড্যান্ট' পত্রিকার ২ নভেম্বরের খবরে বলা হয়েছে, ২০০৮ সাল চীনের পরাশক্তি রাষ্ট্র হওয়ার বর্ষ হবে।
বলা যায়, চীনের দারিদ্র্য ও ক্ষুধা দূর করার চালিকাশক্তি হচ্ছে সংস্কার ও উন্মুক্তকরণ। ১৯৭৮ সালের ডিসেম্বর মাসে সংস্কার ও উন্মুক্তকরণের প্রধান স্থপতি তেং সিয়াও পিং চীনের কমিউনিস্ট পার্টির একাদশ কেন্দ্রীয় কমিটির তৃতীয় পূর্ণাঙ্গ অধিবেশনে সংস্কার ও উন্মুক্তকরণের নীতি উত্থাপনের পর চীন প্রতি বছর বার্ষিক অর্থনৈতিক বৃদ্ধির হার ১০ শতাংশ বজায় রেখে দ্রুত গতিবেগে আজকের সফলতা অর্জন করেছে।
৩০ বছরের সংস্কার ও উন্মুক্তকরণের মাধ্যমে চীনের অতীতের পশ্চাত্পদ গ্রামীণ সমাজ আধুনিক বাণিজ্যিক সমাজে পরিণত হয়েছে। ১৯৭৮ সালে চীনের মাথাপিছু জি.ডি.পি কেবল ৩৭৯ ইউয়ান রেনমিনপি ছিল। ২০০৬ সালের ফেব্রুয়ারী চীনের মাথাপিছু জি.ডি.পি ২০০০ মার্কিন ডলার পৌঁছে প্রায় ৪০ গুণ বেড়েছে।
১৯৭৮ সালে চীনের বৈদেশিক বাণিজ্যিক মূল্য মাত্র ২০৬৪ কোটি মার্কিন ডলার ছিল। ২০০৭ সালে চীনের অর্থনৈতিক আকার যুক্তরাষ্ট্র ও জাপানের পরে পৃথিবীতে তৃতীয় স্থান অধিকার করেছে। চীন ১.৪ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলারের বৈদেশিক মুদ্রার মজুদ দিয়ে চীনের বিনিয়োগ কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করে এবং যুক্তরাষ্ট্রের দ্বিতীয় বৃহত্তম বিনিয়োগ ব্যাংক মোর্গেন স্টেনলি এর ৯.৯ শতাংশের শেয়ার কিনেছে। এখন এ কোম্পানি সক্রিয়ভাবে বিদেশী সম্পত্তি কিনছে।
২০০৩ সাল ও ২০০৫ সাল চীন সাফল্যের সঙ্গে পর পর দু'বার মানববাহী নভোযান উৎক্ষেপণ করেছে। ২০০৭ সালে চীনের প্রথম চাঁদ অনুসন্ধানী উপগ্রহ উৎক্ষেপণ করা হয়েছে। ২০০৮ সালে মহাশূন্যে চীনের নভোচারীর পদচালনা হয়েছে। মহাকাশযান প্রযুক্তি ছাড়া, চীন ক্ষেপণাস্ত্র, জঙ্গী বিমান, যুদ্ধ জাহাজ নির্মাণের দক্ষতাসহ অনেক ক্ষেত্রে বিশ্বের উন্নত মানে পৌঁছেছে।
সংস্কার ও উন্মুক্তকরণের কারণে চীনে আমূল পরিবর্তন ঘটেছে। ১৯৭৮ সালের ডিসেম্বর মাসে তেং সিয়াও পিং সংস্কার ও উন্মুক্তকরণ নীতি উত্থাপনের পর চীনে অর্থনৈতিক নির্মাণে শ্রেণী সংগ্রামের রূপান্তর আর সংস্কারে ঐতিহ্যের রূপান্তর হয়েছে।
সংস্কার ও উন্মুক্তকরণের পর চীন নতুন যুগে প্রবেশ করেছে এবং চীনের বৈশিষ্ট্যের সমাজতান্ত্রিক পথ সূগম করেছে। বিগত ৩০ বছরে চীন বিশ্বকে তাক লাগানো সাফল্য অর্জন করেছে। ১৯৭৮ সালে চীনের শহরায়নের হার কেবল ১০.৬ শতাংশ ছিল। ৩০ কোটি দরিদ্র লোক ছিল। তখন চীন ছিল পৃথিবীতে সবচেয়ে পশ্চাত্পদ কৃষি প্রধান দেশগুলোর অন্যতম। কিন্তু ২০০৬ সালে চীনের অর্থনৈতিক আকার বিশ্বের চতুর্থ স্থানে রয়েছে। গত বছর চীন জার্মানীকে ছাড়িয়ে বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনৈতিক দেশের লক্ষ্যে এগিয়ে যাচ্ছে। (ইয়ু কুয়াং ইউয়ে) |