চীনের দক্ষিণ পূর্ব সাগরীয় ফু চিয়ান প্রদেশ ও তাইওয়ান একটি নদী দিয়ে বিছিন্ন হয়। এ দু'জায়গায় ভৌগলিক পরিবেশ, আবহাওয়া ও পরিবেশসহ বিভিন্ন ক্ষেত্র মোটামুটি একই। ফু চিয়ান প্রদেশের রাজধানী ফু চৌ শহরে ইয়ু শেং জুটা কোম্পানি লিমিটেড নামক একটি তাইওয়ানের কোম্পানি আছে। এ কোম্পানির চেয়ারম্যান ওয়াং চিয়ান খুনের পূর্বপুরুষ ফু চিয়ান প্রদেশে থাকতেন। চীনের মূল ভূভাগে ব্যবসা করা তার ছোটবেলা থেকেই বরাবরের স্বপ্ন।
চীনা জাতির সংস্কৃতি দীর্ঘদিনের। কয়েক হাজার বছরের সভ্যতার কারণে চীনে অনেক ঐতিহ্যবাহী উত্তরাধিকার রয়েছে। সেই জন্য অনেকে চীনের মূলভূভাগে আসার স্বপ্ন দেখেন। ওয়াং চিয়ান খুনও তাঁদের মধ্যে একজন। তিনি বলেন, "আমি সব সময় চীনের মূলভূভাগে আসার স্বপ্ন দেখি। গত ৮০'র দশক থেকে আমি সব সময় চীনের মূল ভূভাগে আসার কথা ভাবছি। আমার এ স্বপ্ন ১৯৯০ সালে পূরণ হয়েছে।
১৯৯০ সালে প্রণালীর দু'তীরের অর্থনীতি ও সংস্কৃতির আদান-প্রদান নিবিড় হয়। এ সময় তাইওয়ানের ব্যবসায়ীদের সুযোগ-সুবিধা দেয়ার জন্য অনেক নীতি প্রণয়ন করা হয়েছে। এ সুযোগ সুবিধাকে কাজে লাগিয়ে ওয়াং চিয়ান খুন তাইওয়ানের একজন শিল্পপতির সঙ্গে শেন জেন শহরে আসেন। তখন তাঁর বয়স ৪০ বছরও হয় নি।
শেন জেন শহরে তাইওয়ানের ব্যবসায়ীদের জন্য সুযোগ-সুবিধা সংক্রান্ত নীতি জানার পর ১৯৯৩ সালে ওয়াং চিয়ান খুন নিজের বাড়ী ফু চিয়ান প্রদেশের ফু চৌ শহরে এসে ব্যবসা শুরু করেন। তিনি ফু চৌ ইয়ুন শেং জুটা কোম্পানি লিমিটেড নামে শিল্প প্রতিষ্ঠারউদ্যোগ গ্রহণ করেন। তিনি বলেন, "১৯৯০ সাল চীনের মূল ভূভাগে আসার ৩ বছরের মধ্য আমি অনেক অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করেছি। আমি এখানে কারখানা নির্মান করে তাইওয়ানের অর্ডার গ্রহণ করার পর মূলভূভাগে উত্পাদনের ব্যবস্থা করেছি।
চীনের ইতিহাসে দু'জনকে ওয়াং চিয়ান খুন খুব শ্রদ্ধা করেন। একজন হচ্ছে মাও সেতুং এবং আরেকজন ফু চিয়ান প্রদেশের ইতিহাসে খুব বিখ্যাত ওয়াং শেন জি। এ দু'জনের আদর্শ তাঁর ব্রতে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।
তিনি আমাদের সংবাদদাতাকে জানিয়েছেন, চীনের মহাননেতা মাও সে তুং-এর আদর্শকে তিনি কোম্পানির ব্যবস্থাপনার কাজে লাগিয়েছেন। তিনি মনে করেন, ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে মাও সে তুং প্রাধান্য ও অপ্রাধান্যের পার্থক্য করতে পারতেন এবং সমস্যা নিয়ে গবেষণা ও সমাধান করতে পারতেন। এগুলো তার ধারণা-ভাবনার জন্য অনুকূল।
২০০৩ সালে সার্স চীনের মূল ভূভাগে দেখা দেয়। এতে ওয়াং চিয়ান খুন-এর ব্যবসার ওপর অনেক প্রভাব পড়ে। কিছু দিন মন খারাপ করার পর ওয়াং চিয়ান খুন আবার আত্মবিশ্বাসী হয়ে কাজে লেগে যান। তিনি বলেন, যখন তাঁর মনে পড়লো কষ্টকর ও সংকটাপন্ন সময়ে মাও সে তুং তাঁর বুদ্ধি ও সাহস দিয়ে কষ্টকে অতিক্রম করে জয়ী হয়েছেন, তখন তিনি আবার সহসী হয়ে উঠেন। তিনি বলেন, "এ সময়ে আমি কর্মীদের প্রশিক্ষণ দিতে থাকতাম। দ্বিতীয় বছরে যখন বসন্তকাল আসে তখন আমাদের কোম্পানিতে একটি উত্পাদনকারী দল গড়ে উঠে।
ওয়াং চিয়ান খুন-এর নেতৃত্বে ইয়ুন শেং জুটা কোম্পানি বড় আকার ও কাঠামোগত প্রশিক্ষণ শুরু করে। এ কোম্পানির গুণগতমান উন্নয়নের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভিত্তি প্রদান করেছে।
আরেকজন যিনি ওয়াং চিয়ান খুনের ওপর প্রভাব ফেলেছেন তাঁর নাম ওয়াং শেন জি। তিনি আসলে ওয়াং চিয়ান কুনের পূর্ব পুরুষ। গত ৮৯৭ সালে ওয়াং শেন জি হলেন ফু চৌ শহরের প্রশাসক। সে সময়ে তিনি পরিবেশ রক্ষা ও মানুষের জীবন-যাপনের ওপর বেশ গুরুত্ব দিতেন। তিনি উত্পাদন, স্কুল প্রতিষ্ঠা ও জলসেচ নির্মাণ করে স্থানীয় জনগণের কল্যাণের জন্য অনেক কাজ করেছেন।
ওয়াং শেন জি-এর চরিত্র ওয়াং চিয়ান খুনের ওপর প্রভাব পড়ে। কর্মীদের পক্ষ থেকে তিনি চিন্তা করেন। তাঁর কোম্পানির অর্থ বিভাগের পরিচালক মাদাম ইন বলেন, "২০০৬ সালে আমাদের ভুলের কারণে কোম্পানিকে আরও দশ লাখ কর দিতে হয়েছে। আমাদের চেয়ারম্যান আমাকে কিছুই বলেন নি। এ ঘটনা থেকে পরিস্কার যে, আমাদের বস অনেক ভালো।
বেশ কয়েক বছরের কষ্টের পর ওয়াং চিয়ান খুন উত্পাদন, ব্যবস্থাপনা ও বিক্রিসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে অনেক অভিজ্ঞতা অর্জন করেছেন। তাঁর কোম্পানিও দিন দিন বড় হয়ে উঠছে। কোম্পানি প্রতিষ্ঠার ৩ বছরের পর বিক্রির পরিমাণ প্রথম দিকের চেয়ে তিন গুণ বেড়েছে। কোম্পানির কর্মীর সংখ্যা তখনকার ৩০০জন থেকে বেড়ে ২ হাজারে দাঁড়িয়েছে।
এ লক্ষ্যণীয় সাফল্যের পরেও ওয়াং চিয়ান খুন সন্তুষ্ট নন। তিনি বলেন, "আমাদের কোম্পানির নামের মতো আমি এ কোম্পানির উন্নয়ন করতে চাই। আমাদের কোম্পানির নাম "ইয়ুন শেং" এর অর্থ হচ্ছে লাফানো। সেই জন্য আমাদের কোম্পানিও লাফিয়ে লাফিয়ে উন্নত হবে। বিদেশের বাজারে দখলের লক্ষ্যে আমি এ কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করেছি। সেইজন্য যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডা আমাদের বৃহত্তম বাজার। |