v চীনের বিশ্ব কোষv চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগ
অলিম্পিক গেমসের প্রতিযোগিতার মাঠে নারী অশ্বারোহী লিউ লিনা
2008-11-04 20:03:45

লিউ লিনা চীনের অশ্বারোহী দলের ইতিহাসে এমন একটি নারী অশ্বারোহী ছিলেন যিনি প্রথম সুযোগেই অলিম্পিক গেমসে অংশ নেয়ার যোগ্যতা অর্জন করেন । এ বছরের মার্চ মাসে অলিম্পিক গেমসের যোগ্যতা লাভের প্রতিযোগিতায় তিনি অশ্বারোহনেসোয়ালো পাখির লেজ আকৃতির পোশাক পরে থাকা স্টেপ-নৃত্য ইভেন্টের যোগ্যতা অর্জনকরেন । চীনের ইতিহাসে তিনি প্রথমই অলিম্পিক গেমসের অশ্বারোহনের যোগ্যতা পান । এর পাশাপাশি চীনের অলিম্পিক গেমসের ২৮টি ইভেন্টের সব কটিতে প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়ার লক্ষ্য বাস্তবায়িত হয়েছে ।

গত দশ-বারো বছর ধরে অক্লান্তভাবে অশ্বারোহনকে ভালবেসে আসছেন বলে লিউ লিনা এই সাফল্য অর্জন করেন । ১৯৯৪ সালে ১৪ বছর বয়সী লিউ লিনা সিনচিয়াং উইগুর স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের ক্রীড়া বিদ্যালয়ের ট্রাক এন্ড ফিল্ড দলের বর্শা খেলোয়াড় ছিলেন । সিনচিয়াংয়ের অশ্বারোহন দলের তখনকালের উপনেতা বান চিছিয়াং খেলোয়াড় বেছে নিতে বিদ্যালয়টিতে যান । লিউ লিনাকে দেখে বান চিছিয়াং তাকে পছন্দ করলেন এবং তাকে বেছে নিলেন । এর পর লিউ লিনা অশ্বারোহন খেলার জগতে পদার্পন করলেন । তিনি বলেন, সোয়ালো পাখির লেজ আকৃতির পোশাক এবং সাদা পোশাকপরা অশ্বারোহীদের দেখতে সুন্দর লাগে । ঘোড়া ও ঘোড়ার পায়ের স্টেপ দুই-ই সুন্দর লাগে ।

পছন্দ করে তো বটেই , তবে প্রথম দিকে উচুঁ উচুঁ ঘোড়া দেখলে লিউ লিনার আরোহন করা সাহস ছিল না । কিন্তু কয়েক দিন পর অন্য কয়েকজন ছেলেমেয়েসহ লিউ লিনাকে কিরগিজস্তানে পাঠানো হয় । এথেকে লিউ লিনার অশ্বারোহন প্রশিক্ষনের জীবন শুরু হয় ।

কিরগিজস্তানে থাকাকালে তাদেরকে প্রতিদিন বারবার ঘোড়ায় উঠা, রেকাব ধরে রাখা এবং ঘোড়ায়বসার বিষয় নিয়ে অনুশীলন করতে হত । ঘোড়ার উপরে বসার সময় যে খাটাতে হয় তার সঙ্গে খাপখাওয়ার জন্য এবং ঘোড়ার হাটার তালের নিয়ম জানার জন্য অশ্বারোহীদেরকে সবসময় ঘোড়ার উপরে বসে থাকতে হয় এবং প্রতি আধা ঘন্টায় একটি করে ঘোড়া বদল করতে হয় ।

দীর্ঘ সময় ধরে বসার কারণে পা অবশ হয় , উরুর চামড়ায় ক্ষতের সৃষ্টি হয়, কোমর নড়াচড়া করতে অক্ষম হয় এবং ক্লান্তিতে দু'হাত নরম হয়ে যায় । তারপরও ১৫ বছর বয়সী লিউ লিনা এসব সহ্য করেছেন । তার বিদেশী কোচ স্মরণ করে বলেছেন, এত কঠিণ প্রশিক্ষণ অতিক্রম করা সহজ নয় । তবে সে অতিক্রম করেছে । এতে লিউ লিনা কখনো অসন্তোষ প্রকাশ করেনি । সে কখনো আলস্য প্রকাশকরে না । কোচের কাছে সে সবসময় একটি লক্ষী মেয়ে ।

২০০২ সালে লিউ লিনা ডেনমার্ক গিয়ে সেখানে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। তিনি সকাল ৭টায় উঠে ঘোড়ার আস্তাবল পরিস্কার করেন , ঘোড়ার লোমে চিরুনি দেন এবং প্রশিক্ষণের জন্য প্রস্তুতি নেন । প্রতিদিনতিনি প্রায় ১০ ঘন্টা ধরে ঘোড়ায় বসে প্রশিক্ষণ নেন । প্রশিক্ষণ শেষে তিনি ঘোড়াকে গোসল করান ।

২০০৩ সালে লিউ লিনা প্রথমবারের মতো আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় অংশ নেন এবং এথেন্স অলিম্পিক গেমসে অংশ নেয়ার যোগ্যতা লাভের চেষ্টা চালান । তিনি সোয়ালো পাখির লেজ আকৃতির পোশাক পরে থাকা স্টেপ-নৃত্য ইভেন্টে অংশ নেন । অশ্বারোহী ও ঘোড়ার বিনিময় এবং ঘোড়া অশ্বারোহীর মনের ভাব ব্যক্ত করার মাধ্যমে মানুষ ও পশুর মধ্যে সুষম অবস্থানবাস্তবায়ন করা এ ইভেন্টের লক্ষ্য । সেবার তিনি এথেন্স অলিম্পিক গেমসের যোগ্যতা লাভ করতে পারেননি ।

তিনি বলেন , তখন আমার নিজের ঘোড়া ছিল না । ডেনিশ কোচের একটি ঘোড়া ধার নিয়েছিলাম । ঘোড়াটি সত্যিকারের প্রতিযোগিতার ঘোড়া নয় এবং আমি মাত্র তিন দিন ঘোড়ায় চড়েছি । ঘোড়ার সঙ্গে ভালভাবে সহযোগিতা করিনি বলে সেবারের প্রতিযোগিতায় আমি সফল হইনি ।

২০০৮ সালের পেইচিং অলিম্পিক গেমসের প্রস্তুতির জন্য ২০০৫ সালে লিউ লিনা একাই অশ্বারোহনের রাজ্য জার্মানীতে যান । বিদেশে থাকাকালে সব কিছুই তার নিজেকেই করতে হয় এমন কি নিজেকেই প্রশিক্ষণের সময় বন্দোবস্ত করতে হয় । তাছাড়া প্রতিদিন তাকে ঘোড়ার আস্তাবল পরিস্কার করতে ও ঘোড়াকে নিয়ে ঘুরে বেড়াতে হয় । গত ৮ বছর বিদেশে থাকাকালে তিনি প্রেমালাপ করার অনেক সুযোগ হারিয়েছেন ।

যাতে এথেন্স অলিম্পিক গেমসের মতো বিফল না হয় তার জন্য ২০০৭ সালে সিনচিয়াং ক্রীড়া ব্যুরো বিপুল পরিমানের অর্থ দিয়ে লিউ লিনার জন্য " পিওয়াস্কা" নামে জার্মানীর ঘোড়া ক্রয় করেছে । ২০০৭ সালের দ্বিতীয়ার্ধ থেকে লিউ লিনা তার " পিওয়াস্কার" সঙ্গে স্পেন , হাঙ্গেরিসহ বিভিন্ন দেশে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক অশ্বারোহণ প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছেন । ২০০৮ সালের মার্চ মাসে লিউ লিনা স্পেনে অনুষ্ঠিত অলিম্পিক গেমসের বাছাইপর্বে পেইচিং অলিম্পিক গেমসের অশ্বারোহনেঅংশ নেয়ার যোগ্যতা লাভ করেন । যার ফলে চীনের প্রতিনিধি দলের অলিম্পিক গেমসের ২৮টি বড় ইভেন্টের সবকটিতেই অংশ নেয়ার লক্ষ্য বাস্তবায়িত হয় । এটা চীনের অলিম্পিক ইতিহাসে এক নতুন রেকর্ড সৃষ্টি করেছে । লিউ লিনা চীনের প্রথম অশ্বারোহী খেলোয়াড় হয়েছেন যিনি অলিম্পিক গেমসে অংশ নেয়ার যোগ্যতা লাভ করেন । তিনি বলেন , ওই মুহুর্তে আমার শুধু একটি ধারণা ছিল সেটা হল , আমি অলিম্পিক গেমসে অংশ নিতে পেরেছি ! সকলের আশা , অলিম্পিক গেমসের অশ্বারোহন ক্ষেত্রে চীনের অশ্বারোহীকে দেখা যায় । আমি সবার স্বপ্ন বাস্তবায়ন করেছি !

যদিও পেইচিং অলিম্পিক গেমসের মাঠে লিউ লিনা কোনো পদক পাননি তবে তার নৈপুন্য প্রদর্শনী সকল দর্শকের প্রশংসা পেয়েছে ।

  • সাক্ষাত্কার
  • সর্বশেষ সংবাদ
  • অন-লাইন জরীপ
     
    © China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
    16A Shijingshan Road, Beijing, China