v চীনের বিশ্ব কোষv চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগ
ভারতের মহাকাশযান প্রক্রিয়া ও চাঁদ অনুসন্ধান পরিকল্পনা
2008-11-03 19:17:58
    সিনহুয়া বার্তা সংস্থার খবরে জানা গেছে, ২২ অক্টোবর ভারত তার প্রথম চাঁদ অনুসন্ধান নভোযান 'চন্দ্রায়ন-১' উতক্ষেপণ করেছে। এ থেকে প্রতিপন্ন হয়েছে যে, ভারতের মহাকাশযান শিল্প এক নতুন পর্যায়ে প্রবেশ করলো। আসলে চাঁদ অনুসন্ধান নভোযানের উতক্ষেপণ এক দিনের কাজ নয়। এর পিছনে ভারতের চল্লিশ বছরেরও বেশি সময়ের মহাকাশযান প্রযুক্তির ওপর গবেষণার প্রয়াস রয়েছে।

    ১৯৬৩ সালে ভারত নিজের প্রথম রকেট উতক্ষেপণ কেন্দ্র নির্মাণ করে এবং প্রথমবারের মত একটি আকাশ অনুসন্ধান রকেট উতক্ষেপণ করতে সক্ষম হয়। ১৯৭৫ সালের ১৯ এপ্রিল ভারতের নিজের তৈরি উপগ্রহ সাবেক সোভিয়েট ইউনিয়নের রকেট উতক্ষেপণ কেন্দ্র থেকে উতক্ষেপিত হয়। ১৯৮০ সালের ১৮ জুলাই ভারত প্রথমবারের মতো নিজ দেশের উতক্ষেপণ কেন্দ্র থেকে সাফল্যের সঙ্গে নিজের তৈরি পরিবাহক রকেট উতক্ষেপণ করে। তখন থেকেই ভারত পৃথিবীতে উপগ্রহ উতক্ষেপণের সামর্থ্যের অধিকারী ষষ্ঠ দেশে পরিণত হয়।

    এখন ভারতের উপগ্রহ গবেষণা ও প্রয়োগ প্রযুক্তি উন্নত আন্তর্জাতিক মানে পৌঁছেছে বা প্রায় তার কাছাকাছি চলে এসেছে। এ পর্যন্ত ভারত বিভিন্ন ধরনের ৩০টি উপগ্রহ উতক্ষেপণ করেছে। এ উপগ্রহগুলো ভারতের শিক্ষা, স্বাস্থ্য, দুর্যোগ প্রতিরোধ, প্রাকৃতিক সম্পদ রক্ষা প্রয়োগ ও প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রসহ নানা ক্ষেত্রে ইতিবাচক ভূমিকা পালন করেছে।

    এর পাশাপাশি ভারতের পরিবাহক রকেট প্রযুক্তিরও লক্ষণীয় অগ্রগতি অর্জিত হয়েছে। ২০০১ সালের এপ্রিল মাসে ভারত 'ভূ-সমলয় ক্ষমতা সম্পন্ন যোগাযোগ উপগ্রহের পরিবাহক রকেট' সাফল্যের সঙ্গে ২.৫৪ টন ওজনের একটি টেলিযোগাযোগ উপগ্রহকে পৃথিবীর সমলয়সম্পন্ন কক্ষপথে পাঠিয়েছে। এ থেকে প্রতিপন্ন হয়েছে যে, ভারত বিশ্বের মহাকাশযান গবেষণার অন্যতম দেশের সারিতে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে।

    এখন ভারতের নিজের তৈরি চার ধরনের পরিবাহক রকেট আছে। তা হচ্ছে উপগ্রহ পরিবাহক রকেট-৩, বড় ঠেলা শক্তি পরিবাহক রকেট, মেরু-অঞ্চলীয় উপগ্রহ পরিবাহক রকেট এবং ভূ-সমলয়ের ক্ষমতা সম্পন্ন যোগাযোগ উপগ্রহ পরিবাহক রকেট।

    ২০০১ সালের ২২ অক্টোবর ভারত মেরু-অঞ্চলীয় উপগ্রহ পরিবাহক রকেটের সাহায্যে সাফল্যের সঙ্গে তিনটি উপগ্রহকে পূর্বনির্ধারিত কক্ষপথে পাঠিয়েছে। এবারও মেরু-অঞ্চলীয় উপগ্রহ পরিবাহক রকেটের সাহায্যে 'চন্দ্রায়ন-১' চাঁদ অনুসন্ধান নভোযান উতক্ষেপণ করেছে। এ ধরনের রকেট হচ্ছে ভারতের তৈরি রকেটগুলোর মধ্যে উতক্ষেপণের যোগ্যতা সম্পন্ন এবং সর্বাধিক সাফল্যের হারের এক ধরনের রকেট।

    ২০০২ সালের ৯ ফেব্রুয়ারী ভারতের মহাকাশযান বিজ্ঞানীরা অতি নিম্ন তাপমাত্রায় ভারতের তৈরি রকেটের ইঞ্জিনের ওপর পরীক্ষা চালান এবং তারা সফল হন। পরিবাহক রকেট এ ধরনের ইঞ্জিন ব্যবহার করে উপগ্রহকে পৃথিবী থেকে ৩৬ হাজার কিলোমিটার দূরের কক্ষপথে পাঠিয়েছে। ২০০৪ সালের সেপ্টেম্বরে দ্বিতীয় প্রজন্মের ভূ-সমলয় ক্ষমতা সম্পন্ন যোগাযোগ উপগ্রহ পরিবাহক রকেট দিয়ে একটি ১.৯৫ টন ওজনের শিক্ষা উপগ্রহকে পৃথিবী থেকে ৩৬ হাজার কিলোমিটার দূরে কক্ষপথে পাঠানো হয়েছে। এর আগে বিশ্বে কেবল চীন, যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, ফ্রান্স ও জাপান এ পাঁচটি দেশ অতি নিম্ন তাপমাত্রার ইঞ্জিনের সাহায্যে ভূ-সমলয় ক্ষমতা সম্পন্ন যোগাযোগ উপগ্রহ উতক্ষেপণের সামর্থ্য ছিল।

    ভারতের মহাশুন্য গবেষণা সংস্থা ২০০৩ সালে 'চাঁদ অনুসন্ধান পরিকল্পনা' উত্থাপন করেছে। এ পরিকল্পনা বাস্তবায়নের তিনটি পর্যায় রয়েছে। 'চন্দ্রায়ন-১' এর উতক্ষেপণ হচ্ছে এ পরিকল্পনার প্রথম ধাপ। এর পর ভারত ২০১১ সালে 'চন্দ্রায়ন-২' প্রকল্প কার্যকর করবে। তারা চাঁদ প্রদক্ষিণ অনুসন্ধানী নভোযান পাঠাবে এবং চন্দ্রপৃষ্ঠে একটি যন্ত্রমানব অবতরণ করাবে। তৃতীয় ধাপ হচ্ছে ২০২৫ সালে ভারতীয় নভোচারী চাঁদে অবতরণ করবেন। তা ছাড়া ভারত ২০১৫ সালে প্রথম নভোচারীকে মহাশুন্যে পাঠানোর পরিকল্পনাও করেছে।

    এখন ভারত সম্পূর্ণ মহাকাশযান সংস্থা প্রতিষ্ঠা করেছে। কেবল মহাকাশযান পরিকল্পনায় জড়িত ভারতীয় মহাশুন্য গবেষণা সংস্থায় ১৬ হাজার ৮০০ জন কর্মচারী আছে। বর্তমানে ভারত পরিবাহক রকেটের নির্মাণ ও উতক্ষেপণ, কৃত্রিম উপগ্রহ, ভূ-নিয়ন্ত্রণ ও ফেরত আনাসহ নানা প্রযুক্তি আয়ত্ত করেছে। ভারত রকেট ও উপগ্রহের নির্মাণ, উপগ্রহের উতক্ষেপণ, অনুসরণ ও নিয়ন্ত্রণসহ নানা ক্ষেত্রে অপেক্ষাকৃত প্রবল শক্তি অর্জন করেছে। (ইয়ু কুয়াং ইউয়ে)

  • সাক্ষাত্কার
  • সর্বশেষ সংবাদ
  • অন-লাইন জরীপ
     
    © China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
    16A Shijingshan Road, Beijing, China