v চীনের বিশ্ব কোষv চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগ
ছাংচিয়াং নদীর পাশে প্রথম নগর ---ঈবিন
2008-11-03 19:08:30

    ২০০১ সালে শ্রেষ্ঠ বিদেশী ভাষার চলচ্চিত্র হিসেবে অস্কার পুরস্কার বিজয়ী 'ও হু ছাং লোং' এর কথা হয়তো অনেক শ্রোতাবন্ধুদের এখনো স্পষ্ট মনে আছে। এ চলচ্চিত্রের মধ্যে 'বাঁশ সাগরে লড়াই করার দৃশ্য'টি সবচেয়ে প্রশংসনীয় ছিল। সবুজ রংয়ের বিশাল বাঁশ বনে পাখির মতো তুলতুলে একজন সুন্দরী নারী আর একজন কুংফু পারদর্শী পুরুষ তাদের লড়াইয়ের মধ্য দিয়ে চীনের উসুকে সুন্দরভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন। এ চলচ্চিত্রের মধ্যে দেখানো বাঁশ সাগর সিছুয়ান প্রদেশের ঈবিন শহরের দক্ষিণ-পূর্ব দিকে অবস্থিত। তাকে চীনের সকল মধ্যে সবচেয়ে সুন্দরতম বন বলে অভিহিত করা হয়। চীনারা তাকে আদর করে 'সুনান চুহাই' বলে।

    প্রায় ১২০ বর্গকিলোমিটার সুনান চুহাই অঞ্চলে হেঁটে যেতে থাকলে আপনি দেখতে পাবেন সর্বত্র সবুজ বাঁশ আর বাঁশ, হালকা বাতাসে দুলতে থাকা পর্দার মতো জলপ্রপাত ও পরিস্কার পরিচ্ছন্ন ছোট্ট নদী এবং শুনতে পাবেন মন ভোলানো পাখির গান। চীনে একটি কবিতা আছে, খাবারের মধ্যে মংস না থাকলেও চলবে, তবে থাকার জায়গায় বাঁশ না থাকলে চলবেই না। বাঁশ চীনাদের হৃদয়ে বিশেষ মর্যাদায় আসীন। এটা হচ্ছে চীনের সংস্কৃতি ও প্রাচ্য সংস্কৃতির প্রতীক। সুনান চুহাই এর ইতিহাস এক হাজার বছরেরও বেশি। এ স্থান হচ্ছে চীনের বাঁশ সংস্কৃতির অন্যতম উত্স স্থল। সুনান চুহাই দর্শনীয় অঞ্চলের ব্যবস্থাপনা ব্যুরোর পরিচালক পাই হাও জানিয়েছেন, 'এ দর্শনীয় অঞ্চলের তিনটি বৈশিষ্ট্য আছে। প্রথমতঃ চীনে, এমনকি পৃথিবীতেও এমন বিশাল অঞ্চলের বাঁশ বন নেই। এটিই একমাত্র। এটা হচ্ছে চীনের একমাত্র বাঁশ সম্পদের প্রধান জাতীয় পর্যায়ের দর্শনীয় স্থান। দ্বিতীয়তঃ এ দর্শনীয় স্থানে নিগেটিভ অক্সিজেন এর পরিমাণ অতি বেশি থাকায় এখানে মানুষ জনের থেকে বিশ্রাম করার জন্য খুব ভালো। তৃতীয়তঃ এ অঞ্চলে খাবারের বৈশিষ্ট্যপূর্ণ সংস্কৃতি আছে। বাঁশ সাগরে উত্পাদিত বাঁশ দিয়ে নানা ধরনের খাবারও তৈরি করা যায়। আমরা তাকে 'পান্ডার খাবার' বলি।'

  যদি বৃষ্টির পর আপনি প্রশান্ত বাঁশ বনে দাঁড়িয়ে মনোযোগ দিয়ে শুনতে চেষ্টা করেন, তাহলে আপনি বাঁশের ধীরে ধীরে বেড়ে ওঠার আওয়াজও শুনতে পাবেন। মাঝে মধ্যে দু'একটি বন্য খরগোশ ও বন্য শূকরও এ বলে দেখা যায়। ভাগ্য ভালো হলে টাটকা চুনসুন সংগ্রহ করতে পারে। এটা হচ্ছে স্থানীয় মানুষের সবচেয়ে পছন্দের খাবার।

সমুদ্রের মধ্যকার সমুদ্র

   সুনান চুহাই দর্শনীয় অঞ্চলে ৪০ হাজার বর্গমিটারের একটি হ্রদ আছে। স্থানীয় লোকেরা তাকে 'সমুদ্রের মধ্যকার সমুদ্র' বলে ডাকে। বাঁশের তৈরি ভেলায় বসে হ্রদে ঘুরে বেড়ানোর সময় আরো দেখতে পাবেন অসংখ্য সাদা সারসের বিবরণ। স্থানীয় একজন অধিবাসী ছেন লিন আমাদের বলেছেন, 'ও হু ছাং লোং চলচ্চিত্রটি এই সমুদ্রের মধ্যকার সমুদ্রে তোলা হয়েছে। পর্যটক হিসেবে আপনি ঈবিন আসলে সমুদ্রের মধ্যকার সমুদ্রে না দেখলে তা হবে সত্যিকার পরিতাপের বিষয়। এখানে বসে এক কাপ চাও খেতে পারেন। তা আপনাকে সতেজ করবে। এখানকার চায়ের সুগন্ধিও খুব মিষ্টি গভীর।'

    বিস্তীর্ণ বাঁশ সাগরে ভ্রমণ করতে করতে অনেক সময় অতিথিরা আর ফিরে যেতে চায় না। সিছুয়ানের ছেনতু থেকে আসা পর্যটক ফাং হুই বলেন, 'সুনান চুহাই আসার পর এতো বেশি সুন্দর বাঁশ দেখেছি যে, আমার মন হালকা হয়ে গেছে। যেন ভূ-স্বর্গে ঘুরে বেড়াচ্ছি। দারুণ সুন্দর। এখানে বাঁশ ও হ্রদ থাকায় আমরা নৌকা চালাতে পারি, সুস্বাদু খাবার খেতে পারি। কোন চাপ অনুভব করি না। কেবল অন্তহীন সুখী জীবন অনুভব করছি।'

    সুনান চুহাই এর সঙ্গে সমান সুনাম পেয়েছে ঈবিন শহরের উপকন্ঠে অবস্থিত লিচুয়াংও। লিচুয়াং ছাংচিয়াং নদীর দক্ষিণ তীরে অবস্থিত। এই সাংস্কৃতিক নামকরা নগরের ইতিহাস ১৪৬০ বছরের। এখন পর্যন্ত লিচুয়াংতে সম্পূর্ণভাবে প্রাচীন স্থাপত্যগুলো সংরক্ষিত আছে। তা থেকে চতুর্দশ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময় থেকে বিংশ শতাব্দীর প্রথম দিক পর্যন্ত সিছুয়ানের দক্ষিণাঞ্চলের অধিবাসীদের বসতবাড়ির বৈশিষ্ট্য প্রতিফলিত হয়। এ স্থান হচ্ছে পর্যটকদের পছন্দের একটি গুরুত্বপূর্ণ দর্শনীয় স্থান।

    লি চুয়াং নগরের পশ্চিম দিকে অবস্থিত চাং পরিবারের উপাসনালয়ের আয়তন প্রায় ৪০০০ বর্গমিটার। এ স্থাপত্যকর্ম ১৮৪০ সালে নির্মিত হয়েছে। এটা হচ্ছে লি চুয়াংয়ে সবচেয়ে ভালোভাবে সংরক্ষিত প্রাচীন স্থাপত্যকর্মের অন্যতম। এ উপাসনালয়ের প্রধান অংশ হচ্ছে কাঠ দিয়ে তৈরি চক মেলানো বাড়ী। এর দরজা ও জানালা সবই বৈশিষ্ট্যপূর্ণ। প্রতিটি জানালায় দুটি সারসের ভাস্কর্য করা হয়েছে। এই স্থাপত্যকর্মের ৫০টি জানালায় মোট ১০০টি সারসের ভাস্কর্য রয়েছে। প্রতিটি সারসের আকার ভিন্ন এবং দেখলে মনে হবে সজীব ও জীবন্ত। তাকে 'একশটি সারস ও সুখী মেঘের জানালা' বলে অভিহিত করা হয়। পথপ্রদর্শক চাং হুই জানিয়েছেন, 'একশটি সারস দিয়ে সুখী ও দীর্ঘায়ু এর অর্থ বুঝানো হয়েছে। চাং পরিবারের রেকর্ড অনুযায়ী, এমন একটি জানালা নির্মাণ করতে ১৪ লিয়াং রুপা দরকার। ছিং রাজবংশে একজন প্রথম শ্রেণীর সরকারী কর্মকর্তার এক মাসের বেতন মাত্র ১৫ লিয়াং রুপা। তার তুলনা করলে বুঝা যায়, এ জানালা নির্মাণ করতে কত খরচ হয়েছে।'

    চাং হুই আরো বলেছেন, গত শতাব্দীর ৪০'র দশকে চীনের অনেক উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং গবেষণা সংস্থা পর পর লি চুয়াংয়ে স্থানান্তর করেছে। লি চুয়াং জাপ-বিরোধী প্রতিরোধ যুদ্ধের সময় চীনের এক সাংস্কৃতিক কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। তখন চীনের রাজপ্রাসাদ জাদুঘরের কয় হাজার বাক্স মূল্যবান পুরাকীর্তি অতি কষ্টের পর লি চুয়াংয়ে আনা হয়েছে। এখানকার চাং পরিবারের উপাসনালয়ে পাঁছ ছয় বছর ধরে তা সংরক্ষিত ছিল।

    সমৃদ্ধ প্রাকৃতিক সম্পদ ও সাংস্কৃতিক সম্পদ ছাড়া পর্যটকরা ঈবিনে আরো গভীর জাতিগত রীতিনীতিও অনুভব করতে পারবেন। ঈবিন এর দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের শিংওয়েন জেলা বিশ্ব ভূতত্ত্ব পার্কের জন্য খ্যাতি পেয়েছে। এখানে কেবল মহান পাথর সাগর ও পাথর ক্ষয়ে সৃষ্টি গুহাসহ নানা ভূতাত্বিক বিস্ময়কর দৃশ্য আছে তা নয়, বরং এখানে আছে সিছুয়ানের বৃহত্তম মিয়াও জাতি অধ্যুষিত এলাকা।

    অনুষ্ঠানটি শেষ হওয়ার আগে আমি প্রশ্ন দুটি আপনাদের জানিয়ে দিচ্ছি।

    প্রথম প্রশ্ন: অস্কার পুরস্কার বিজয়ী কোন চলচ্চিত্র দক্ষিণ সিছুয়ানের বাঁশ সাগরে চিত্রায়িত হয়েছে?

    দ্বিতীয় প্রশ্ন: লিচুয়াং প্রাচীন নগর ছাংচিয়াং নদীর পাশে অবস্থিত কিনা?  

    (ইয়ু কুয়াং ইউয়ে)

  • সাক্ষাত্কার
  • সর্বশেষ সংবাদ
  • অন-লাইন জরীপ
     
    © China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
    16A Shijingshan Road, Beijing, China