v চীনের বিশ্ব কোষv চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগ
দেশী-বিদেশী সংস্কৃতির বিনিময়ের ৩০ বছরের পরিবর্তন
2008-10-29 18:27:56

  চীনের সংস্কার ও মুক্তদ্বার নীতির ৩০ বছর পার হয়ে গেলো। ৩০ বছরের মধ্যে বিদেশের সঙ্গে চীনের সম্পর্কের সংস্কৃতি মেশানোর সেতু নির্মিত হয়েছে। দেশী-বিদেশী সাংস্কৃতিক বিনিময় কর্তৃপক্ষ তথা বেসরকারী ক্ষেত্রে একটি সর্বোচ্চ সমৃদ্ধিশীল সময়ে প্রবেশ করেছে।

    প্রিয় শ্রোতাবন্ধুরা, এখন আপনরা যে অপেরা শুনছেন তা হচ্ছে "শা চিয়া বাং" নামক আধুনিক অপেরার একটি অংশ। চীনের স্বদেশের বিপ্লবের গল্পের বর্ণনায় ভরা এই শিল্প-কর্ম গত শতাব্দীর ৬০ ও ৭০ দশকে খুব জনপ্রিয় হয়েছিল। বর্তমানের তরুণ-তরুনীরা কল্পনাও করতে পারবে না যে, তাদের বাবা দাদারা কী ধরণের একঘেঁয়ে জীবন কাটিয়েছিলেন। শহরের কারাওকে ও ডিস্কো হল তো দূরের কথা সাধারণ পরিবারে টিভি সেট পর্যন্ত ছিলো না। মাত্র কয়েকটি থিয়েটারে এক বছর ধরে শুধু "শা চিয়া বাং" নামে অপেরা পরিবেশিত হতো।

    এখন ৫০ বছর বয়সী চাং ইউ নিজের উদ্যোগে দেশী-বিদেশী সাংস্কৃতিক শিল্পের বিনিময়ের ফলে অনেক উন্নয়নের ঐতিহাসিক পরিবর্তনের অভিজ্ঞতা অর্জন করেছেন। এখন তিনি হচ্ছেন চীনের বৈদেশিক সংস্কৃতি গোষ্ঠীর মহা ব্যবস্থাপক, পরিবেশনা ও পরিদর্শন বিষয়ক চীনের সবচেয়ে বিখ্যাত পরিকল্পক আর আয়োজক এবং বৈদেশিক সাংস্কৃতিক যোগাযোগ বিষয়ক একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা। ১৯৮২ সালে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকের পর চাং ইউ চীনের সংস্কৃতিক মন্ত্রণালয়ের বৈদেশিক সাংস্কৃতিক যোগাযোগ ব্যুরোয় কাজ করেন। প্রথম কয়েক বছর, তাঁর অভ্যর্থনা জানানো বিদেশী দলের মধ্যে অধিকাংশই ছিল এশীয়, আফ্রিকা এবং ল্যাতিন আমেরিকা অঞ্চলের সরকারী সাংস্কৃতিক বিনিময় দল। ১৯৯০ সালে তিনি সরকারের কাজ থেকে পদত্যাগ করে পরিবেশনা ও প্রদর্শনীকে জনপ্রিয় করে তোলার কাজ শুরু করেন। তিনি বলেন,

    ৩০ বছর পর বর্তমানে আমার পরিবেশানা পরিমাণ অসংখ্য। প্রতি কোয়ার্টার ও মাসে তথা প্রতি সপ্তাহে অনেক পরিবেশনা আছে এবং যা চীনের অনেক শহরে অনুষ্ঠিত হয়। যেমন, জাতীয় থিয়টারসহ পেইচিংয়ের অনেক প্রধান থিয়েটারে প্রতি রাতে ইউরোপীয়, এশীয়, আফ্রিকা, ল্যাতিন আমেরিকা এবং আরব দেশের পরিবেশনা আছে। ব্যাপক পরিবেশনা নিয়ে চীনের সাংস্কৃতিক বিনিময়ের জাঁকজমকপূর্ণ পরিবেশ সৃষ্টি হচ্ছে। আমি মনে করি, এটা হচ্ছে ৩০ বছরের দেখা বড় পরিবর্তন।

    চাং ইউ বলেন, বর্তমান চীনের পরিবেশনা বাজারে যে বৈচিত্র্যময় সমৃদ্ধিশীল পরিস্থিতি দেখা দিয়েছে এ প্রসঙ্গে তিনি আগে কল্পনাও করতে পারতেন না।

    চলতি বছরের অলিম্পিক গেমসের সময় চীনের সংশ্লিষ্ট বিভাগের উদ্যোগে অনুষ্ঠিত নানা ধরণের অলিম্পিক সাংস্কৃতিক কার্যক্রম ৮০টি দেশ ও অঞ্চলের ১০০টি সাংস্কৃতিক দলের প্রায় কয়েক হাজার শিল্পীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে। তথ্য মাধ্যমের মন্তব্য এই যে, চীন পরিবেশনা এবং আর্ট ওয়ার্ক বিনিময়ের ক্ষেত্রে বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় এলাকায় পরিণত হচ্ছে। চীনে সাংস্কৃতিক শিল্পের স্বাদ গ্রহণ করা বিদেশী শিল্পপ্রতিষ্ঠান এবং শিল্পীদের সংখ্যা অব্যাহতভাবে বাড়ছে।

    ৪১ বছর বসয়ী মার্কিন লিসা ১৯৯১ সালে চীনে এসেছেন। প্রথমে তিনি একজন রচয়িতা ছিলেন। তারপর তিনি ছবি আঁকা ও ভাস্কর্ষ ক্ষেত্রে পুঁজি বিনিয়োগ করতে শুরু করেন। এই ক্ষেত্রে অনেক বছর কাজ করার পর লিসা চীনের শিল্পকলা বাজার সম্পর্কে অনেক জেনেছেন। তিনি নিজের ব্যবসার প্রতি আস্থায় ভরপুর। তিনি বলেন,

    আমি চীনের শিল্পকলা বাজার সম্পর্কে খুবই আগ্রহী। চীনে আসার পর আমি চীনের শিল্পকলা বাজারের পরিবর্তন অনুভব করতে পারি। বর্তমান বিভিন্ন সাংস্কৃতিক প্রেক্ষাপটে চীন সরকারের উন্মুক্ততা দেখে আমি আমার দোকানের ভবিষ্যত নিয়ে আস্থাশীল। বিশেষ করে অলিম্পিক গেমসের পর আমি বিশ্বাস করি, এখন হচ্ছে আমার ব্যবসা সম্প্রসারণের সবচেয়ে ভালো সুযোগ।

    লিসার দোকান পেইচিংয়ের ৭৯৮ শিল্প অঞ্চলে অবস্থিত এবং যা চীনের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে। আগে এখানে একটি কারখানার গুদাম ছিল। ২০০২ সালে অনেক শিল্পীর কর্ম অফিস এবং সাংস্কৃতিক সংস্থা এখানে স্থানান্তরিত হয় এবং এখানে ধাপে ধাপে ডিজাইন কোম্পানি, ফ্যাশন দোকান, রেস্তোরা এবং বার অধ্যুষিত এলাকায় পরিণত হয়েছে। আন্তর্জাতিক প্রভাবসম্পন্ন চীনের বৃহত্তম শিল্প এলাকা হিসেবে এখানে চীনের শিল্পীদের দৃষ্টি আকর্ষণ করা ছাড়াও, লিসাসহ বিদেশীদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। এখানে বিদেশী পুঁজির শিল্প সংস্থার সংখ্যাও কম নয়।

    চীনের সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের সাংস্কৃতিক বাজারের উপ-পরিচালক থুও চু হাই বলেন, চীন সরকার উন্মুক্ত সাংস্কৃতিক নীতিমালা প্রণয়ন করেছে এবং দেশী-বিদেশী শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলো সম্পর্কে একই মানদন্ড গ্রহণ করেছে, যাতে সাংস্কৃতিক শিল্পকলা ক্ষেত্রে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় অংশ নেয়ার জন্য বিদেশী পুঁজিকে অনুপ্রেরণা দেয়া যায়। তিনি বলেন,

    চীনের সাংস্কৃতিক বাজারের উন্মুক্তকরণের আওতা এবং মাত্রার দিক ব্যাপক। সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় এবং বিভিন্ন জায়গার সাংস্কৃতিক বিভাগের নিয়ন্ত্রণাধীন সাংস্কৃতিক বাজারে পরিবেশনা বাজার, বিনোদন বাজার, সিডি ও ডিভিডির বিক্রী এবং শিল্প কর্মের বিক্রীর তত্পরতাও উন্মুক্ত হয়েছে।

    চীনের অর্থনৈতিক শক্তি জোরদার হওয়ার পাশাপাশি সরকারের উদ্যোগে অনুষ্ঠিত সাংস্কৃতিক বিনিময় কার্যক্রম ও উন্নয়নের প্রবণতা দেখা দিয়েছে। চীন বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সঙ্গে ব্যাপক ও গভীর সাংস্কৃতিক বিনিময় চালাতে শুরু করেছে। সংস্কার ও মুক্তদ্বার নীতি চালু হওয়ার শুরুতে এশীয়, আফ্রিকা এবং ল্যাতিন আমেরিকান অঞ্চলসহ ঐতিহ্যবাহী বন্ধুত্বপূর্ণ সুপ্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে সক্রিয়ভাবে বিনিময়ের পরিস্থিতির পরিবর্তন হয়েছে।

    প্রিয় শ্রোতাবন্ধুরা, আপনার এখন যে সঙ্গীত শুনছেন তা হচ্ছে ফ্রান্সের ঢাক ঢোল বাদ্যযন্ত্র বাদক দল এবং চীনের কু চেং বাদকদের সম্মিলিতভাবে পরিবেশিত "শে হুও"নামে সঙ্গীত। সঙ্গীতে পশ্চিমা ঢাক ঢোল বাদ্যযন্ত্র এবং চীনের বীণা এবং কু চেংসহ বাদ্যযন্ত্র নিয়ে চীনের ঐতিহ্যবাহী লোক রীতিনীতি প্রকাশিত হয়েছে। তা হচ্ছে ২০০৩ থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত চীন ও ফ্রান্সের মধ্যে পারস্পরিক সংস্কৃতি বর্ষ আয়োজনের পর সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে দু'দেশের বিনিময়ের সাফল্যের প্রতিফলন। চীনের দর্শকরা বলেন, এ ধরণের উপায়ের মাধ্যমে তাঁরা সংস্কৃতির সম্মিলনকে দেখছেন এবং এর সৌন্দর্য অনুভব করছেন। একজন দর্শক বলেন,

    এ ধরণের উপায় নতুন। এতে চীনের ঐতিহ্যবাহী সংস্কৃতির চেতনা থাকা ছাড়াও, কিছু আধুনিক উপাদান মেশানো হয়েছে। আমি প্রথমবারের মতো এ ধরণের সঙ্গীত শুনেছি।

    চীন ও ফ্রান্সের সাংস্কৃতিক বর্ষ ছাড়াও, ২০০৬ সালে চীনের রাশিয়া বর্ষ তত্পরতা অনুষ্ঠিত হয় এবং ২০০৭ সালে জাপানের সঙ্গে চীনের সাংস্কৃতিক ও ক্রীড়া বিনিময় বর্ষের কার্যক্রম এবং দক্ষিণ কোরিয়ার সঙ্গে চীনের বিনিময় বর্ষও অনুষ্ঠিত হয়।

    চীন সরকারের উদ্যোগে নানা ধরণের আন্তর্জাতিক শিল্পকলা বিনিময় তত্পরতাও ধাপে ধাপে বাড়ছে। প্রতি বছর চীন এশীয় সাংস্কৃতিক দিবস, পেইচিংয়ে সম্মিলন এবং শাংহাই আন্তর্জাতিক শিল্পকলা দিবসসহ বিরাটাকারের সাংস্কৃতিক বিনিময় তত্পরতার আয়োজন করে, যাতে চীনে আরো বেশি বিদেশী সাংস্কৃতিক দলের বিনিময় করার জন্য আরো বেশি সুযোগ সৃষ্টি করা যায়।

    এর পাশাপাশি চীন সরকার চীনের সংস্কৃতি বিদেশে জনপ্রিয় করে তোলার চেষ্টা করছে এবং চীনের সংস্কৃতি ও শিল্পকলাকে বিদেশের জনগণের কাছে পরিচিত করে তুলছে। পরিসংখ্যান থেকে জানা গেছে, প্রতি বছর সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন পাওয়া বৈদেশিক সাংস্কৃতিক বিনিময় প্রকল্পের সংখ্যা প্রায় ২০০০ এবং যা ৩০ হাজার পার্সন-টাইমস।

    বিশেষজ্ঞদের মতামত এই যে, আন্তর্জাতিক সাংস্কৃতিক বাজারের প্রতিদ্বন্দ্বিতায় অংশ নেয়া এবং বিদেশে চীনের প্রভাব সম্প্রসারণ করা এবং পারস্পরিক সমঝোতা বাড়ানোর জন্য চীনের শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোকে আরো বেশি বিখ্যাত ব্র্যান্ড সৃষ্টি করা উচিত এবং একই সঙ্গে সরকারকে সাহায্য করার মাত্রা বাড়ানো উচিত্। (লিলি)

  • সাক্ষাত্কার
  • সর্বশেষ সংবাদ
  • অন-লাইন জরীপ
     
    © China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
    16A Shijingshan Road, Beijing, China