এক. প্রতিষ্ঠা
এশিয়া-ইউরোপ সম্মেলন হচ্ছে এশিয়া ও ইউরোপের সরকারী ফোরাম। ১৯৭৪ সালের জুলাই মাসে ইউরোপীয় ইউনিয়ন 'এশিয়া মুখী নতুন কৌশল' প্রণয়ন করেছে। এ নতুন কৌশলটিতে এশিয়ার সঙ্গে আরো ব্যাপক সংলাপ করা এবং গঠনমূলক, স্থিতিশীল ও সমান অংশীদারিত্বের সম্পর্ক গড়ে তোলার প্রস্তাব করা হয়েছে। ১৯৯৪ সালের নভেম্বরে সিঙ্গাপুরের প্রধানমন্ত্রী গোহ ছোকতুং এশিয়া-ইউরোপ সম্মেলন আয়োজনের প্রস্তাব করেন এবং বিভিন্ন পক্ষের ব্যাপক ইতিবাচক সাড়া পেয়েছেন। ১৯৯৬ সালের ১ ও ২ মার্চ প্রথম এশিয়া-ইউরোপ শীর্ষ সম্মেলন থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংককে অনুষ্ঠিত হয়েছে। এ থেকে প্রতিপন্ন হয়েছে যে, এশিয়া-ইউরোপ সম্মেলন আনুষ্ঠানিকভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
দুই. লক্ষ্য
এশিয়া-ইউরোপ সম্মেলনের লক্ষ্য হচ্ছে সংলাপের মাধ্যমে সমঝোতা বাড়ানো, সহযোগিতা জোরদার করা, আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের জন্য অনুকূল শর্ত সৃষ্টি করা এবং এশিয়া ও ইউরোপের নতুন ধরনের সার্বিক অংশীদারিত্বের সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা করতে ত্বরান্বিত করা।
তিন. সদস্য
প্রতিষ্ঠার সময় এশিয়া-ইউরোপ সম্মেলনের সদস্যদের মধ্যে ছিল আসিয়ানের সাতটি সদস্য, চীন, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, ই.ইউর ১৫টি সদস্য এবং ইউরোপীয় পরিষদ। ২০০৪ সালে এশিয়া-ইউরোপ সম্মেলনের প্রথম দফা সম্প্রসারণ বাস্তবায়িত হয়েছে। আসিয়ানের তিনটি সদস্য এবং ই.ইউর সাতটি নতুন সদস্য এতে যোগদান করেছে। ২০০৬ সালে ষষ্ঠ এশিয়া-ইউরোপ শীর্ষ সম্মেলনে মঙ্গোলিয়া, ভারত, পাকিস্তান, আসিয়ানের সচিবায়ল, বুলগেরিয়া ও রোমানিয়া এই ছয়টি নতুন সদস্যকে গ্রহণ করতে রাজি হয়েছে। এভাবে এশিয়া-ইউরোপ সম্মেলনের দ্বিতীয় দফা সম্প্রসারণ বাস্তবায়িত হয়েছে। এখন এ সংস্থার সদস্যের সংখ্যা। তা হচ্ছে চীন, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, মঙ্গোলিয়া, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড, ফিলিপাইন, সিঙ্গাপুর, ব্রুনেই, ভিয়েতনাম, লাওস, কাম্পুচিয়া, মিয়ানমার, আসিয়ানের সচিবালয়, ভারত, পাকিস্তান, অস্ট্রিয়া, বেলজিয়াম, ডেনমার্ক, ফিনল্যান্ড, ফ্রান্স, জার্মানী, গ্রীস, আয়ারল্যান্ড, ইতালি, লোক্সেমবার্গ, নেদারল্যান্ড, পর্তুগাল, স্পেন, সুইডেন, বৃটেন, হাঙ্গেরি, পোল্যান্ড, চেক, স্লোভানিয়া, স্লোভাকিয়া, এস্তোনিয়া, লাতভিয়া, লিথুয়ানিয়া, মাল্টা, সাইপ্রাস, রোমানিয়া, বুলগেরিয়া ও ই.ইউ পরিষদ।
চার. এশিয়া-ইউরোপ সম্মেলনের মৌলিক নীতি
এশিয়া-ইউরোপ সম্মেলনের সদস্যরা একমত হয়েছে যে, এশিয়া-ইউরোপ সম্মেলনের প্রক্রিয়ায় যে মৌলিক নীতি অনুসরণ করা উচিত তা হচ্ছে পারস্পরিক সম্মান, সমতা, মৌলিক অধিকার ত্বরান্বিত করা, আন্তর্জাতিক আইনে লিপিবদ্ধ দায়িত্ব পালন করা, অন্য দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ের ওপর হস্তক্ষেপ না করা, সহযোগিতার প্রক্রিয়া উন্মুক্ত করা এবং যথাক্রমে এগিয়ে যাওয়া, সংলাপের পর মতৈক্যের ভিত্তিতে ফলো-আপ কার্যকলাপ চালানো, এশিয়া-ইউরোপ সম্মেলনের বিভিন্ন সদস্য দেশের নেতৃবৃন্দের আলোচনার মাধ্যমে নতুন সদস্য বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয়া।
পাঁচ. সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্র
এশিয়া-ইউরোপ সম্মেলনের তিনটি প্রধান ক্ষেত্র হচ্ছে রাজনৈতিক সংলাপ, অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক সহযোগিতা এবং সামাজিক সংস্কৃতি ও অন্য ক্ষেত্রের বিনিময়।
ছয়. কার্যকলাপের ব্যবস্থা
সর্বোচ্চ শ্রেণীর সম্মেলন -- শীর্ষ সম্মেলন দু'বছর একবার করে যথাক্রমে এশিয়া ও ইউরোপে অনুষ্ঠিত হয় । শীর্ষ সম্মেলন এশিয়া-ইউরোপ সম্মেলনের পথনির্দেশক নীতি ও উন্নয়নের দিক নির্ধারণ করে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রীদের সম্মেলন ও উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সম্মেলন এশিয়া-ইউরোপ সম্মেলনের তত্পরতার প্রণয়ন করে ও গোটা কর্মসূচীর সমন্বয় এবং শীর্ষ সম্মেলনের প্রস্তুতিমূলক কাজ করে। তা ছাড়া নিয়মিত ও অনিয়মিতভাবে অর্থনীতি, অর্থ, সংস্কৃতি, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, পরিবেশ, শুল্ক বিভাগ, তত্ত্বাবধান, শ্রম ও কর্মসংস্থান, মাঝারি ও ছোট আকারের শিল্প প্রতিষ্ঠানসহ নানা পেশাগত ক্ষেত্রের মন্ত্রী পর্যায়ের সম্মেলন আয়োজিত হয়। এ সম্মেলনগুলো নিজ নিজ ক্ষেত্রে শীর্ষ সম্মেলনের সিদ্ধান্তগুলো কার্যকরী করে, সহযোগিতার পরিকল্পনা ও সংশ্লিষ্ট কর্মসূচী প্রণয়ন করে। এশিয়া ও ইউরোপের দুটি সদস্য দেশ পালাক্রমে সমন্বয়কারী হিসেবে নিজ অঞ্চলের সদস্যদের অবস্থান সমন্বয় করে।
এশিয়া-ইউরোপ তহবিল হচ্ছে এশিয়া-ইউরোপ সম্মেলনের কাঠামোতে এশিয়া ও ইউরোপের একাডেমি, সংস্কৃতি ও ব্যক্তিদের সফর বিনিময়ের আয়োজনকারী সংস্থা। এর সচিবালয় রয়েছে সিঙ্গাপুরে। (ইয়ু কুয়াং ইউয়ে) |