সপ্তম এশিয়া-ইউরোপ শীর্ষ সম্মেলন ২৫ অক্টোবর বিকালে পেইচিংয়ে শেষ হয়েছে। আর্থিক সংকট মোকাবিলার জন্য এশিয়া-ইউরোপ সহযোগিতা জোরদারের বিবৃতি অনুমোদন ছাড়াও এবারের শীর্ষ সম্মেলনে খাদ্য নিরাপত্তা ও দুর্যোগকালীন ত্রাণকাজে সহযোগিতা , টেকসই উন্নয়ন এবং জলবায়ু পরিবর্তনসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে সাফল্য অর্জিত হয়েছে। সম্মেলন শেষ হওয়ার পর চীনের প্রধানমন্ত্রী ওয়েন চিয়া পাও বলেন, এবারের শীর্ষ সম্মেলনের সাফল্য এশিয়া-ইউরোপ সহযোগিতার জন্য গুরুত্বপূর্ণ ও সুদুরপ্রসারী প্রভাব সৃষ্টি করেছে।
বিশ্বব্যাপী আর্থিক সংকটসহ নানা ধরনের চ্যালেঞ্জের পরিপ্রেক্ষিতে দু'দিনব্যাপী সপ্তম এশিয়া-ইউরোপ শীর্ষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।এশিয়া-ইউরোপ অঞ্চলের দেশগুলো ও বিশ্ব সম্প্রদায় এবারের শীর্ষ সম্মেলের ওপর উচ্চ পর্যায়ের মনোযোগ দিয়েছে। ১০জন প্রেসিডেন্ট ও ২৬ জন প্রধানমন্ত্রী এবং আঞ্চলীক সংস্থার দায়িত্বশীল কর্মকর্তা এবারের শীর্ষ সম্মেলনে অংশ নিয়েছেন।
২৪ অক্টোবর সন্ধ্যায় " আন্তর্জাতিক আর্থিক পরিস্থিতি সম্পর্কিত বিবৃতি" প্রকাশিত হয়েছে। বিবৃতিটিতে বলা হয়, বর্তমান আর্থিক সংকটের চ্যালেঞ্জকে সঠিকভাবে মোকাবিলার জন্য যথোচিত সময়ে বিভিন্ন পক্ষের কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া উচিত। এর পাশাপাশি সম্মেলনে আন্তর্জাতিক মুদ্রা ও ব্যাংকিং ব্যবস্থায় কার্যকর ও সার্বিক সংস্কার চালানোর দৃঢ়সংকল্পও প্রকাশ করা হয়েছে।
শীর্ষ সম্মেলনের সমাপনী অনুষ্ঠানের পর আয়োজিত এক প্রেস ব্রিফিংয়ে চীনের প্রধানমন্ত্রী ওয়েন চিয়া পাও বলেছেন, বর্তমান আর্থিক সংকট মোকাবিলার জন্য বিশ্বের সকল দেশের উচিত আস্থা, সহযোগিতা ও দায়ীত্ব সম্পাদন করা। তিনি বলেন,আস্থার অর্থ এই যে, সকল দেশ বিশেষ করে উন্নত দেশের উচিত যত তাড়াতাড়ি সম্ভব চূড়ান্ত পদক্ষেপ নেয়া এবং ব্যাংকিং বাজার স্থিতিশীল করা । যাতে জনসাধারণের আস্থা পুনরায় ফিরিয়ে আনা যায়। । তা ছাড়া, বতর্মান ভয়াবহ আর্থিক সংকট মোকাবিলার জন্য বিভিন্ন দেশের মধ্যে সহযোগিতা জোরদার করা।
আর্থিক সংকট মোকাবিলা ছাড়া এশিয়া ইউরোপ সম্মেলনের বিভিন্ন সদস্যরা খাদ্যের নিরাপত্তা ও দুর্যোগকালীন ত্রাণকাজে সহযোগিতা, টেকসই উন্নয়ন, জলবায়ুর পরিবর্তন এবং বিভিন্ন সভ্যতার মধ্যকার সংলাপসহ নানা বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছে এবং অনেক গঠনমূলক ও অগ্রবর্তী প্রস্তাব ও মতামত উত্থাপন করেছে। সম্মেলনে গৃহীত 'টেকসই উন্নয়ন সংক্রান্ত বেইজিং ঘোষণায়' বিভিন্ন পক্ষ প্রতিশ্রুতি দিয়েছে যে, জাতিসংঘের সহস্রাব্দের উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা বাস্তবায়ন ত্বরান্বিত করবে, 'অভিন্ন কিন্তু পৃথক দায়িত্ব পালন করার ভিত্তিতে' আন্তর্জাতিক সহযোগিতা জোরদার করবে, যুক্তিযুক্তভাবে জলবায়ুর পরিবর্তন এবং জ্বালানী নিরাপত্তার সমস্যার সমাধান করবে। ই ইউ কমিটির চেয়ারম্যান বালোজো বলেন , ব্যাংকিং সংকট ছাড়া আমরা অন্য চ্যালেঞ্জের কথা অবহেলা করি নি । যেমন আবহাওয়ার পরিবর্তন , উন্নয়ন , জাতিসংঘের সহস্রাব্দী উন্নয়ন লক্ষ্য বাস্তবায়ন ইত্যাদি বিষয়ের ওপর আমরা গুরুত্ব দেই। আমি মনে করি , টেকসই উন্নয়নের পেইচিং ঘোষণা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ । এতে আমাদের উন্নয়নের লক্ষ্য পেশ করা হয়েছে । এটা আবহাওয়া পরিবর্তন সমস্যা সমাধানে সহায়ক হবে।
জানা গেছে , শীর্ষ সম্মেলনে গৃহীত চেয়ারম্যান বিবৃতিতে এশিয়া ও ইউরোপ সম্মেলনের সদস্য দেশগুলোর অবস্থান প্রতিফলিত হয়েছে এবং এশিয়া ও ইউরোপের দেশগুলোর সহযোগিতার দিকস্থিতি ও প্রধান ক্ষেত্র নির্ধারণ করা হয়েছে।
চীনের প্রধানমন্ত্রী ওয়েন চিয়া পাও সম্মেলনের উচ্চ মূল্যায়ন করেছেন। তিনি বলেন, বর্তমান সম্মেলন এশিয়া ও ইউরোপ সম্মেলনের সহযোগিতা প্রক্রিয়ায় সুদুর প্রসারী প্রভাব ফেলবে। চীন আশা করে, বিভিন্ন সদস্য দেশ সম্মেলনের প্রস্তাবগুলো বাস্তবায়ন করবে , এশিয়া ও ইউরোপের নতুন অংশীদারী সম্পর্ক আরো সুসংবদ্ধ করবে এবং এশিয়া ও ইউরোপের সহযোগিতাকে এক নতুন পর্যায়ে উন্নীত করবে। |