সপ্তম এশিয়া-ইউরোপ শীর্ষ সম্মেলন ২৪ অক্টোবর বিকেলে আড়ম্বপূর্ণভাবেপেইচিংয়ে শুরু হয়েছে ।এশিয়া-ইউরোপ শীর্ষ সম্মেলনের সদস্য সংখ্যা ২০০৬ সালে ৪৫ টিতে সম্প্রসারিত হওয়ার পর এটা হচ্ছে প্রথম শীর্ষ সম্মেলন । চীনের প্রেসিডেন্ট হু চিনথাও সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বলেছেন , বিশ্বব্যাপী আর্থিক ও অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে এশিয়া ও ইউরোপকে সম্মেলনের সুযোগে সংলাপ জোরদার করতে হবে । ঐকমত্য সম্প্রসারিত করতে হবে , আস্থা জোরদার করতে হবে এবং সহযোগিতাকে গভীরে নিয়ে যেতে হবে ।
এবারের এশিয়া-ইউরোপ শীর্ষ সম্মেলনে ১০জন রাষ্ট্রপ্রধান ও ২৪জন সরকার প্রধানসহ ২২০০জন প্রতিনিধি অংশ নিচ্ছেন । এশিয়া-ইউরোপ শীর্ষ সম্মেলন এই প্রথমবারের মতো চীনে অনুষ্ঠিত হচ্ছে । বিশ্বব্যাপী আর্থিক সংকট ক্রমাগত তীব্রতর হওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে উদ্যোগী রাষ্ট্র হিসেবে চীন যথাসময় সম্মেলনের আলোচ্য বিষয় পরিবর্তন করে আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক ও আর্থিক পরিস্থিতিকে শীর্ষ সম্মেলনের প্রথম প্রধান আলোচ্য বিষয় হিসেবে গ্রহণ করেছে এবং বিভিন্ন সদস্যদেশের সঙ্গে সমন্বয় জোরদার করে সংকট মোকাবেলার জন্যএশিয়া-ইউরোপের দেশগুলোর সহযোগিতাকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে যাচ্ছে ।
ভাষণে হু চিনথাও উল্লেখ করেছেন , সম্প্রতি দেখা দেয়া বিশ্বব্যাপী আর্থিক সংকট মোকাবেলার জন্য সংশ্লিষ্ট দেশগুলো যে ইতিবাচক ব্যবস্থা নিয়েছে তিনি তার প্রশংসা করেন । চীন অর্থনীততে উন্নয়নের প্রবণতা বজায় রাখা বিশ্ব আর্থিক বাজার স্থিতিশীল করা ও বিশ্ব অর্থনীতির উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখা বলে মনে করে। পাশাপাশি বর্তমান সংকট মোকাবেলার জন্য চীন আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়েরসঙ্গে প্রচেষ্টা চালাবে । তিনি বলেন , চীন আর্থিক সংকট মোকাবেলার জন্য সক্রিয় থাকার পামাপাশি অভ্যন্তরের আর্থিক ব্যবস্থার স্থিতিশীলতাবজায় রাখা , আর্থিক বাজার ও আর্থিক সংস্থার বিনিময় জোরদার করা সহ বেশ কিছু ধারাবাহিক ব্যবস্থা নিয়েছে । চীন দায়িত্বশীল মনোভাব নিয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সঙ্গে আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে আর্থিক ও অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখার চেষ্টা করতে থাকবে ।
শীর্ষ সম্মেলনে অংশগ্রহণকারী বিভিন্ন দেশের নেতৃবৃন্দগণ পরপর ব্যক্ত করেছেন যে, আর্থিক সংকট মোকাবেলা করার জন্যবিভিন্ন দেশকে সহযোগিতা করতে হবে । ই ইউ কমিটির চেয়ারম্যান বারোসো বরেন , বিভিন্ন দেশের সরকার ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের যৌথ সমন্বয়ে গৃহীত তত্পরতায় বিশ্বব্যাপী আর্থিক সংকটের প্রশমন সম্ভব হয়েছে । পাশাপাশি ইউরোপ ও আমেরিকা এবং উন্নয়য়নমুখী দেশগুলো দ্বিধাহীনভাবেযে ব্যবস্থা নিয়েছে তা অত্যন্ত প্রয়োজনীয় ।আন্তর্জাতিক আর্থিক পরিস্থিতির ওপর মনোযোগ দেয়ার পাশাপাশি শীর্ষ সম্মেলনে অংশ নেয়া নেতারা সংলাপ ও "সহযোগিতা এবং পারস্পরির উপকারিতা ও কল্যাণ" এ প্রধান প্রতিপাদ্য নিয়ে ব্যাপকভাবে আলোচনা করবেন । গুরুত্বপূর্ণ আলোচ্য বিষয়ের মধ্যে রয়েছে জলবায়ু পরিবর্তন , জ্বালানির নিরাপত্তা ও খাদ্য সংকট ইত্যাদি । সম্মেলনে বিশ্বব্যাপী পরিস্থিতি এবং এশিয়া ও ইউরোপের পরিস্থিতিতে দেখা দেয়া উত্তপ্ত সমস্যাও স্থান পাবে । যেমন কোরিয় উপদ্বীপের পরমাণু সমস্যা , ইরানের পরমাণু সমস্যা ও মধ্যপ্রাচ্যের শান্তি প্রক্রিয়া । বিভিন্ন দেশের নেতারা এশিয়া-ইউরোপ সম্মেলনের ১২ বছরের গতিধারারও পর্যালোচনা করবেন , আন্তর্জাতিক এবং এশিয়ার ও ইউরোপের পরিস্থিতির নতুন বিকাশ ও এশিয়া ও ইউরোপ সম্মেলনের ওপর এ পরিস্থিতির প্রভাব নিয়ে আলোচনা করবেন এবং কৌশলগত দিক থেকে এশিয়া-ইউরোপ সম্মেলনের ভবিষ্যত উন্নয়নের রূপরেখা প্রণয়ন করবেন ।
এশিয়া ও ইউরোপের সর্বোচ্চ পর্যায়ের ও ব্যাপকতম আন্ত:সরকার ফোরাম হিসেবে গত ১২ বছরের এশিয়া-ইউরোপ সম্মেলন দুই মহাদেশের বিভিন্ন দেশের সংলাপ , সমঝোতা ও সহযোগিতা জোরদার করার মাধ্যমে এশিয়া ও ইউরোপের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের জন্যে অনুকুল অবস্থার সৃস্টি করেছে । এবারের সম্মেলনে ফরাসী প্রেসিডেন্ট নিকোলাস সার্কোজি তার প্রত্যাশা প্রকাশ করে বলেন ,
গত ১২ বছরে আমরা অনেক অগ্রগতি লাভ করেছি । তবে আমাদের আরো অনেক করার আছে । আমি চাই , আমাদের সম্মেলন যেমন একটি বিনিময়ের সুযোগ , তেমনি একটি নীতি নির্ধারণের সুবর্ণ সুযোগও বটে ।
এশিয়া –ইউরোপ সম্মেলনের মাধ্যমে চীনও এশিয়ার অন্যান্য দেশের সংগে বিনিময় ও সহযোগিতা জোরদার করেছে এবং ইউরোপীয় দেশগুলোর সংগে সংলাপ ও যোগাযোগ ঘনিষ্ঠ করেছে । চীনের প্রেসিডেন্ট হু চিন থাও তার ভাষণে এশিয়া-ইউরোপ সম্মেলনের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার উচ্চ মূল্যায়ণ করেছেন । তিনি এ সহযোগিতা কাঠামোকে সুসংহত করার প্রস্তাবও দিয়েছেন । তিনি বলেন ,
এশিয়া ও ইউরোপের উচিত নিজ নিজ সমাজ ব্যবস্থা , মতাদর্শ , সাংস্কৃতিক পটভূমি ও উন্নয়নের নমুনার ওপর সম্মান প্রদর্শন করা এবং যৌথভাবে বিশ্বব্যাপী চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার জন্যে সমতাপূর্ণ সংলাপের মাধ্যমে অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক বিরোধ নিরসন করা |