v চীনের বিশ্ব কোষv চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগ
গানের ডানায় ভর করে অলিম্পিকে যায়—তুংজাতির মেয়ে উ ইউয়ুচেন
2008-10-14 18:36:38
    ২০০৮ সালের ৮ আগষ্ট সন্ধ্যায় ২৯তম অলিম্পিক গেমসের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের পরিবেশনায় চীনের ৫৬টি জাতির কিশোর-কিশোরীদের প্রতিনিধিরা যার যার জাতির রংবেরংয়ের পোশাক পরে জাতীয় স্টেডিয়াম " বার্ড নেষ্টের"মঞ্চে দাঁড়িয়ে সম্মিলিত কন্ঠে জাতীয় সঙ্গিত গেয়েছে । এই দৃশ্য স্টেডিয়ামে উপস্থিত থাকা এবং টেলিভিশনের সামনে বসে থাকা সকল দেশিবিদেশী দর্শকদের মুগ্ধ করেছে ।

    অলিম্পিক গেমসের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এত বেশি দর্শক ছিলেন । আমরা শুধু দেশের মানুষকে শোনাইনি বরং গোটা বিশ্বের মানুষকেও শুনিয়েছি । আমরা সবাই অত্যন্ত আবেগপ্রবণ হয়েছি ।গাইবার সময় কাঁদতে খুব ইচ্ছা হয়েছিল । এটা একটি ভিন্ন অনুভূতি,একেবারে ভিন্ন ।

    যে মেয়ে কথা বলছিলেন তার নাম উ ইউয়ুচেন –জাতীয় সঙ্গীত দলের একজন সদস্য ।

    একজন চীনা মানুষ হিসেবে আমরা ছোটবেলা থেকে প্রাথমিক স্কুলে জাতীয় পতাকা উত্তোলনের সময় অথবা অনেক অনুষ্ঠানে জাতীয় সঙ্গীত গাইতাম । কিন্তু আগের তুলনায় এবার সত্যিই ভিন্ন অনুভব লেগেছে আমার ।

    অলিম্পিক গেমসের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে জাতীয় সঙ্গিত গাইতে পেরে কুইচৌ প্রদেশের তুংজাতির একটি মেয়ে হিসেবে উ ইউয়ুচেন নিজেকে খুব সৌভাগ্যবতিমেয়ে বলে মনে করে । আমি তুং জাতির মহান গান গাইতে পারি বলে আমাকে বেছে নেয়া হয় । তুং জাতির মহান গান না থাকলে আমি এখানে অলিম্পিক গেমসে অংশ নিতে আসতাম না এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ারও সুযোগ পেতাম না ।

    উ ইউয়ুচেন চীনের কুইচৌ প্রদেশের লিপিং জেলার সাংচু থানার কাইপাওচুকুয়াং গ্রামের অধিবাসী । ছোটবেলা থেকেই তিনি তুং জাতির মহান গান গাইতে পছন্দ করে আসছেন । তিনি কখনো ভাবতে পারেননি যে,তিনি " গানের ডানায় ভর করে"উড়তে উড়তে পাহাড়ের বাইরে ও বিশ্বে আসতে পারতেন এবং সুভাগ্য নিয়ে ২৯তম অলিম্পিক গেমসের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের সভাকক্ষ" বার্ড নেস্টের" মঞ্চে দাঁড়াতে পারতেন । উ ইউয়ুচেন বলেছেন ,তুং জাতির মহান গান তার ভাগ্য পরিবর্তন করেছে । তিনি বলেন, আমি তুং জাতির মহান গান গাইতে পারি বলে আমি বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়া করতে পেরেছি,অলিম্পিক গেমসের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অংশ নিতে পেরেছি এবং আমাদের তুং জাতির মহান গান সঙ্গে নিয়ে দেশের বিভিন্ন জায়গায় এমন কি বিশ্বের বেশ কয়েকটি দেশে যেতে পেরেছি ।

    কত বছর বয়সে তুমি প্রথমবার তুং জাতির গান গাইতে শুরু করেছো?

    উ:বুঝতে পারার বয়স থেকেই

    তোমার প্রথম গানের শিক্ষক কে?

    উ: আমার দাদি

    অলিম্পিক গেমসে অংশ নিতে পেরে তোমার কী অনুভূতি হয়েছে?

    উ:এ ধরণের আবেগ কখনো হয়নি । কখনো হয়নি ।

    তুমি তুং জাতির মহান গান গাইতে পছন্দ করো ?

    উ: পছন্দ করি । বিশেষভাবে পছন্দ করি ।

    তোমার পছন্দ কী পর্যায়ের?

    উ:নিজেকে হারিয়ে ফেলি এমন পছন্দ হয় ।

    তুং জাতির মহান গানের ভবিষ্যত সম্পর্কে তোওমার ধারণা কী?

    উ:সবাই অন্য লোকসঙ্গীতের মতো আমাদের তুং জাতির মহান গানও গাইতে পছন্দ করবেন ।তুং জাতির মহান গানের মাধ্যমে সবাই তুং জাতির সংস্কৃতি জানতে পারবেন বলে আমি আশা করি । এর জন্য আমাদের উচিত অটল থাকা ও চেষ্টা করা ।

    চীনের তুং জাতি প্রধানত দক্ষিণ চীনের কুইচৌ প্রদেশ 。 হুনান প্রদেশ ও কুয়াংসি চুয়াংজাতি স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলে বসবাস করে । তুং জাতি পরিশ্রমী, বুদ্ধিমতি এবং নৃত্য ও গীতে পারদর্শী জাতি । তুংজাতির সংস্কৃতি বিশেষ এবং বৈচিত্র্যময় । সেতুতে বাতাস-বৃষ্টির আশ্রয়কারী দালান ও টাওয়ার নির্মিত রয়েছে বলে তুংজাতির বিখ্যাত "ফোং-ইয়ূছিয়াও অর্থাত বাতাস-বৃষ্টি সেতু"সকলের কাছে পরিচিত । তুংজাতির লোকসঙ্গীত বাদ্যযন্ত্র বাজানো ছাড়াও এক ধরণের সম্মিলিত কন্ঠে গান গাওয়া । ১৯৮৬ সালে ফ্রান্সে পরিবেশনার সময় তা আলোড়ন সৃষ্টি করে । একে "আকাশ থেকে আসা সম্মিলিত কন্ঠস্বর" বলে প্রশংসা করা হয় ।

    তুংজাতির একটি প্রবাদ আছে,খাওয়া মানুষকে শারিরীক শক্তি দেয় আর গাওয়া মানুষকে মানসিক শক্তি দেয় । তুংজাতির জীবনযাপনে গান গাওয়া খাবারের মতো গুরুত্বপূর্ণ। উ ইয়ুচেন দাদি ও মার কাছ থেকে গানের প্রতিভা উত্তরাধিকার হিসেবে পেয়েছেন । তার কন্ঠস্বর মধুর । তিনি গৌরবের সঙ্গে বলেছেন , দাদি তার প্রথম গানের শিক্ষক । তিনি বলেন, দাদির সঙ্গে পাহাড়ে যাওয়ার সময় প্রায়শই ঝিঁঝিঁ পোকা ,কীটপতঙ্গ ও পাখির আওয়াজ শুনতে পেতাম । দাদি শোনার সাথেসাথে কিছু পাখি বা ঝিঁঝিঁপোকার মতো শব্দ করতেন । তার পর তিনি আমাকে শিখাতেন । আমি শিখতে পছন্দ করি ।

    " কোকিল পাখির গান"কৃষির জমিতে কাজ করার সময় উ ইউয়ুচেন দাদির কাছ থেকে শিখেছেন ।সে বললো , দাদি আর মার তুলনায় সে অত্যন্ত সৌভাগ্যবতি। ১৯৯৯ সালে ১৪ বছর বয়সী উ ইউয়ুচেন বিমানে করে পাহাড় থেকে বাইরে বের হওয়ার স্বপ্ন দেখতো। কিন্তু দারিদ্র্যের কারণে ১৬ বছর বয়সে বাধ্য হয়ে ইউয়ুচেন স্কুলচ্যুত হয়। সে ভাবতে পারেনি ,তার ভাগ্য পরিবর্তন করার এক সুযোগ নিঃশব্দে তার কাছে চলে আসবে ।

  • সাক্ষাত্কার
  • সর্বশেষ সংবাদ
  • অন-লাইন জরীপ
     
    © China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
    16A Shijingshan Road, Beijing, China