v চীনের বিশ্ব কোষv চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগ
উইগুর জাতির ছেলেকে হানজাতির মেয়ের কিডনি দান
2008-10-07 20:45:55
    ৫৬টি জাতি নিয়ে গঠিত একটি বড় পরিবারের নাম চীন । ভিন্ন জাতির জনগণ পরস্পরকে ভালবাসে এবং একের অপরকে সাহায্য করে । যখন কেউ বিপদে পড়ে তখন সবাই দ্বিধাহীনভাবে নিজের যতোটুকু ক্ষমতা তা দিয়ে সাহায্য করবে ।

    ওয়াং ইয়েননার বয়স ২৩ বছর । দোকানে প্রসাধন দ্রব্য বিক্রি আর পোশাক বিক্রি করতো । মাসে যে বেতন পেতো সেটা মাকে দিয়ে সংসার চালাতে সাহায্য করতো । গত বছরের সেপ্টেম্বর মাসের এক দিন ওয়াং ইয়েননা খবর কাগজ থেকে জানতে পেরেছে, উইগুরজাতির ছেলে মওলা ওমর ইউরেমিয়ায় আক্রান্ত হয়েছে । খবরটা পড়ে ওয়াং ইয়েননা কিশোরবয়সী ছেলেটির জন্য খুব চিন্তায় পড়ে যায় । সে ছেলেটিকে সাহায্য করতে চায় । আমি জানি তার রক্ত বি-গ্রুপের, আমার রক্তও বি-গ্রুপের । আমি তাকে সাহায্য করতে চাই । নতুন প্রজন্মের তরুণী হিসেবে অন্য লোকের জন্য আমাকে ভাবতে হবে ।যাদের সাহায্য দরকার তাদেরকে সাহায্য করা উচিত । যে কোনো উপায়ে হোক না কেন , চেষ্টা করলে তুমি নিশ্চিন্তে বলতে পারবে , আমি চেষ্টা করেছি ।

    ১.৮ মিটার লম্বা ছেলে মওলা ওমর ক্রীড়াপ্রিয় । বাস্কেটবল খেলা তার শখ । প্রফুল্ল ও হাসিখুসি মওলা ওমর সবসময় অন্য লোককে সাহায্য করে । ২০০৭ সালের মার্চ মাসে ১৮ বছর বয়সী মাওলা ওমার ভয়াবহ ইউরেমিয়ায় আক্রান্ত হয় । কেউই এ কথা তখন বিশ্বাস করতে পারেনি । কিডনি পরিবর্তন করাই তাকে বাঁচানোর একমাত্র উপায় --ডাক্তারদের এ কথা শুনে তার বাবা মা এখানে ওখানে সর্বত্রই কিডনি খোঁজার চেষ্টা করেন এবং বার্তা সংস্থার মাধ্যমে ছেলেকে বাঁচানোর জন্য কিডনি চেয়ে বিজ্ঞাপন প্রচার করে । কিন্তু এক সপ্তাহ পর আরেক সপ্তাহ পার হয়ে গেলো, কোনো সাড়া পাওয়া গেলো না । ওমরের বাবা মা যখন হতাশ হয়ে পড়েছেন ঠিক সে সময়ে তাঁরা একটি সুখবর পেলেন । ১৭ সেপ্টেম্বর একটি হানজাতির মেয়ে হাসপাতালে ওমরকে দেখতে আসেন । তিনি বিনাপয়সায় ওমরকে তাঁর একটি কিডনি দিতে চান । এই আকস্মিক সুখবরে ওমরের বাবা মা আনন্দিত এবং মুগ্ধ হন ।

    ওয়াং ইয়েননা একজন অবিবাহিতা মেয়ে । এটা কি আদৌ সত্যি ? ওমর ওয়ান ইয়েননাকে সন্দেহ করে । কিন্তু দ্বিতীয় দিন ওয়াং ইয়েননা আবার আসে। এবার ওমরের সন্দেহ একেবারে মুছে যায় । সে মনোযোগের সঙ্গে ওয়াং ইয়েনার সঙ্গে কথাবার্তা শুরু করে । এ সম্পর্কে ওমরের বাবা বলেন , দ্বিতীয় দিন মেয়ে আবার এসেছে । সে আমাকে বলেছে, চাচা, চিন্তা করবেন না । আমি স্থির করেছি । আমি অনুশোচনা করব না ।

    অনেকে ওয়াং ইয়েননার সিদ্ধান্ত বুঝতে পারেন না । কেন তিনি বিনাপয়সায় ওমরকে নিজের কিডনি দিতে চাইছেন? মওলা ওমরের সঙ্গে প্রথমবারের সাক্ষাত ওয়াং ইয়েননার মনে গভীর রেখাপাত করেছে । এ সম্পর্কে তিনি বলেন, রোগে আক্রান্ত ওমরকে দেখার সঙ্গে সঙ্গে আমি তাকে সাহায্য করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি । আমার এই সিদ্ধান্ত আবেগ থেকে নেইনি। আমি চাই সে সুষ্ঠুভাবে বেঁচে থাকবে, সুন্দরভাবে জীবনযাপন ও পড়াশুনা করবে ।

    নানা পরীক্ষার ফলাফল থেকে প্রমাণিত হয় যে, মওলা ওমরের সঙ্গে ওয়াং ইয়েননার কিডনি সম্পূর্ণ খাপখায় । ওয়াং ইয়েননা ওমরকে কিডনি দান করতে পারে । ২০০৮ সালের ২৭ মার্চ ওমরের শরীরে শল্যচিকিত্সা করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় । বাবা মার অনুমতি ছাড়া শল্যচিকিত্সার জন্য সব প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে । ওয়াং ইয়েননার একটাই আফসোস যে , নিজের একটি কিডনি ওমরকে দেওয়ার কথাটা বাবা মা এখনো জানেন না । ইয়েননা বলেন, আমি মনে করি , আমি বড় হয়েছি, সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার আমার আছে । মায়ের শরীর তেমন ভাল নয়, তাকে বলার সাহস আমার নেই । তিনি নিশ্চয়ই রাজী হবেন না । মার স্বাস্থ্যের কারণে বাড়ির সব দায়িত্ব বাবাকে বইতে হচ্ছে বলে আমি ঝামেলা তৈরি করতে চাই না ।

    তাহলেও এ বিষয়ে বাবা মাকে বলতে হবেই । না বললে চলবে না । বিষয়টা জানার পর বাবা ও মেয়ের মধ্যে দুঘন্টা ধরে কথাবার্তা হয় । এ সম্পর্কে ইয়েননার বাবা ওয়াং সিউচিয়াং বলেন, আমি শুধু তাকে একটি কথা জিজ্ঞেস করেছি , তুমি এবং ওমরের বাবার মধ্যে কোনো কারবার আছে কী ? আমাদের আর্থিক অবস্থা তেমন ভাল নয় তাই বলে আমি চাই না আমার মেয়ে নিজের জীবন দিয়ে কারবার করুক।

    ওয়াং ইয়েননা বাবাকে জানায়, সে শুধু উইগুর জাতির এই ছেলেকে সাহায্য করতে চায় । সে খুব তরুন , শিগগিরই বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে যাচ্ছে । মেয়ের কথা শুনে বাবার মন নরম হয় । কিডনি দান করা ভালব্যাপার । কিন্তু তার মেয়ের বিয়ে হয়নি । একটি কিডনি কমে গেলে পরবর্তীকালে তার বাচ্চা হওয়া,বিবাহ ও পরিবারের কোনো ক্ষতি হবে কি না ? ওয়াং সিউচিয়াং বলেন, ডাক্তারের কাছ থেকে জেনেছি, শল্যচিকিত্সার প্রথম দিকে স্বাস্থ্যের ঠিকমতো যত্ন নিলে অন্য নারীর মতো গর্ভধারণ করবে , প্রসব করতে পারবে , কোনো সমস্যা হবে না । মেয়ের সিদ্ধান্তে বাবা আর বাধা দিলেন না । ২৭ মার্চ শল্যচিকিত্সা সাফল্যের সঙ্গে সম্পন্ন হলো । সিনচিয়াং মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন প্রথম হাসপাতালের কিডনি বিভাগের প্রধান লিউ চিয়েন বলেন , মওলা ওমরের শরীরে ওয়াং ইয়েননার কিডনি ট্রান্সপ্লান্ট স্থানীয় চিকিত্সায় একটি রেকর্ড স্থাপন গড়লো। ভিন্ন জাতির মধ্যে , হান জাতি ও উইগুর জাতির মধ্যে এটা প্রথম কিডনি ট্রান্সপ্লান্ট।

    শল্যচিকিত্সার পরে চতুর্থ দিনে ওয়াং ইয়েননা ও মওলা ওমরের দেখা হয়েছে । ওমারের ম্লান চেহারা লাল হয়েছে দেখে ইয়েননা হাল্কাভাবে দীর্ঘশ্বাস ফেলেছেন । তার আকাঙক্ষা অবশেষে বাস্তব হয়েছে । ইয়েননাকে দেখে তার দু'হাত ধরে ওমর বলে, দিদি, অনেক ধন্যবাদ । আপনি আশু সুস্থতা এবং আমাদের দুজনের স্বাস্থ্য কামনা করি ।

    এখন ওয়াং ইয়েননা ও মওলা ওমর দুজন হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে নিজনিজ বাড়িতে বিশ্রাম নিচ্ছে । তারা আপন ভাইবোনের মতো টেলিফোনে কথাবার্তা বলেন ।

  • সাক্ষাত্কার
  • সর্বশেষ সংবাদ
  • অন-লাইন জরীপ
     
    © China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
    16A Shijingshan Road, Beijing, China