v চীনের বিশ্ব কোষv চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগ
মানবজাতির অভিন্ন স্বপ্ন
2008-09-30 16:25:54

    ১৯৯৯ সাল থেকে চীন সাফল্যের সঙ্গে শেনচৌ নামে ছয়টি ধারাবাহিক নভোযান উতক্ষেপণ করেছে এবং ফেরত এনেছে। এবার শেনচৌ সাত-এর উতক্ষেপণ হচ্ছে চীনের মানববাহী মহাকাশযান প্রকল্পের 'তিন ধাপের' দ্বিতীয় ধাপ। এটা চীনের মানববাহী মহাকাশযান শিল্পের আরো উচ্চ মানে উন্নয়ন ত্বরান্বিত করার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ তাত্পর্য আছে।

    চীনে 'চাং ও চাঁদের দিকে যাওয়া', 'কুয়াফু সূর্যের সঙ্গে দৌঁড়ানো' এ ধরনের সুন্দর সুন্দর প্রাচীনকালের কিংবদন্তী আছে। পশ্চিমা দুনিয়ার পৌরাণিক কাহিনীর মধ্যেও পাখা আছে এমন দেবদূত আর স্বর্গের গাড়ি চালিয়ে মহাশুন্যে ঘুরে বেড়ানোর দেবদূত রয়েছে। বিংশ শতাবদ্বীর প্রথম দিক পর্যন্ত বিজ্ঞানীরা বহু পর্যায়ের রকেট দিয়ে মহাকাশ অভিযান করার পরিকল্পনা উত্থাপন করেন। তখন থেকে মানবজাতির মহাকাশ অন্বেষণের বাস্তব পদ্ধতি উদ্ভাবিত হয়।

    ১৯৫৭ সালে সোভিয়েট ইউনিয়নের 'স্পুতনিক' নামে প্রথম কৃত্রিম উপগ্রহের উতক্ষেপণও পৃথিবী প্রদক্ষিণ মানবজাতির মহাকাশ অভিযানের সূচনার উন্মেষ ঘটায়। মাত্র চার বছরের মধ্যে সোভিয়েট ইউনিয়নের নভোচারী ইউরি গ্যাগারিন 'প্রাচ্য এক' নভোযান দিয়ে মহাশুন্যে প্রবেশ করে মানবজাতির মহাশুন্যে উড্ডয়নের স্বপ্ন বাস্তবায়নের প্রথম ব্যক্তিতে পরিণত হন।

    এখন আপনারা গ্যাগারিনের পৃথিবীতে ফিরে আসার সময় সোভিয়েট ইউনিয়নের উষ্ণ অভ্যর্থনার আওয়াজ শুনছেন। গ্যাগারিন মহাশুন্যে প্রবেশের পর থেকেই মানবজাতির মহাকাশ অভিযানে এক একটি অগ্রগতির অর্জন শুরু হয়েছে। ১৯৬৫ সালে সোভিয়েট ইউনিয়নের নভোচারী আলেক্সে লেওনোভ মহাশুন্যে নভোযান থেকে বেরিয়ে মহাশুন্যে মানবাজাতির প্রথম পদচারণা বাস্তবায়ন করেন। ১৯৬৯ সালে মার্কিন নভোচারী নীল আর্মস্ট্রোং 'আপোলো-১১' নভোযানে চাঁদ পৌঁছে চাঁদে মানবজাতির প্রথম পদক্ষেপ রাখেন। তিনি বলেন, 'এটা ব্যক্তিগত একটি ছোট্ট পদক্ষেপ। তবে মানবজাতির ইতিহাসে একটি বড় পদক্ষেপ।'

  'মহাকাশ যুগ'-এর দ্বার হঠাত্ মানবজাতির কাছে খুলে যায়। কিন্তু তত্কালীন 'স্নায়ু যুদ্ধ' আন্তর্জাতিক পটভুমিতে মানবজাতির মহাকাশ অভিযানের ওপর যুক্তরাষ্ট্র ও সোভিয়েট ইউনিয়নের মহাকাশ প্রতিদ্বন্দ্বিতার কালো ছায়া পড়ে।

    মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও সোভিয়েট ইউনিয়নের মধ্যকার তুমুল মহাকাশ প্রতিদ্বন্দ্বিতা মহাশুন্যের শান্তি ক্ষুন্ন করেছে। জনসাধারণ আশংকা করতেন, যদি চলচ্চিত্র 'স্টার ওয়ারস' এর দৃশ্য বাস্তব জীবনে আবির্ভাব হয়, তাহলে কি হবে।

   'স্টার ওয়ারস' হচ্ছে গত শতাব্দীর ৭০'র দশকে যুক্তরাষ্ট্রের নির্মিত একটি বৈজ্ঞানিক কাহিনী ভিত্তিক চলচ্চিত্র । আসলে ১৯৮৩ সালে যুক্তরাষ্ট্রের তত্কালীন প্রেসিডেন্ট রোনাল্ড রীগ্যান 'কৌশলগত প্রতিরোধ পরিকল্পনা' উত্থাপন করেন। এ পরিকল্পনাকে 'স্টার ওয়ার পরিকল্পনা' বলা হতো। এর বিরুদ্ধে সোভিয়েট ইউনিয়নও বিরাট মহাকাশ পরিকল্পনা প্রণয়ন করে এবং অবশেষে এই প্রতিদ্বন্দ্বিতায় অতিরিক্ত ভার বহন করার কারণে নিজের অর্থনীতির পতন ঘটায়।

    যুক্তরাষ্ট্র ও সোভিয়েট ইউনিয়নের তুলনায় চীনের মহাকাশ অভিযান শুরু হতে এখনো অনেক দেরি আছে। কিন্তু নিজের পরিকল্পনা অনুযায়ী ধাপে ধাপে এগিয়ে সে যাচ্ছে।

    এখন আপনারা 'প্রাচ্য লাল' নামে সংগীত শুনছেন। ১৯৭০ সালে চীনের প্রথম কৃত্রিম পৃথিবী উপগ্রহ 'প্রাচ্য লাল-১' সাফল্যের সঙ্গে উতক্ষেপণের পর মহাশুন্য থেকে 'প্রাচ্য লাল' নামে এই সংগীত পাঠিয়েছিল। বহির বিশ্ব থেকে পাঠানো সুপরিচিত সংগীত শুনে সকল চীনা নাগরিক সে সময় আবেগাপ্লুত হয়ে পড়ে। এটা হচ্ছে মহাকাশ অভিযানে চীনাদের প্রথম পদক্ষেপ।

    ১৯৯৯ সালে চীনের প্রথম মানুষবিহীন নভোযান 'শেনচৌ-১' সাফল্যের সঙ্গে উতক্ষেপণ করা হয় এবং পূর্বনির্ধারিত স্থানে তা নিরাপদে অবতরণ করতে সক্ষম। ২০০৩ সালে চীনের 'শেনচৌ পাঁচ' নভোযানে নভোচারী ইয়াং লি ওয়েইকে মহাশুন্যে পাঠানো হয়। ২০০৫ সালে চীনের 'শেনচৌ ছয়' নভোযানে ফাই জুন লোং ও নিয়ে হাই শোং এ দু'জন নভোচারীকে মহাশুন্য ঘুরে আসেন। ২০০৭ সালে চীন প্রথম চাঁদ অনুসন্ধান উপগ্রহ 'ছাং ও এক' উতক্ষেপণ করে। এবার 'শেনচৌ সাত' এর উতক্ষেপণ দিয়ে মহাশুন্যে চীনাদের প্রথম পদক্ষেপ এগিয়ে নিয়ে এলো তার অগ্রযাত্রাকে।

    চীন মহাকাশ প্রযুক্তি উন্নয়নের প্রক্রিয়া ও চীনের সামাজিক উন্নয়নের ধাপ সংগতিপুর্ণ। চীনের মহাকাশ বিশেষজ্ঞ লি দা কুয়াং বলেন, 'আমাদের দেশে সংস্কার ও উন্মুক্তকরণের পর দ্রুত বিকাশ হয়েছে। অর্থনীতির ক্ষেত্রে আকাশ পাতাল পরিবর্তন হয়েছে। বিভিন্ন ক্ষেত্রের উন্নয়ন প্রতি দিনই হচ্ছে। এসব চীনের মহাকাশ অভিযান উন্নয়নের জন্য মজবুত জনশক্তি ও সম্পদের ভিত্তিকে দৃঢ় করেছে।'(ইয়ু কুয়াং ইউয়ে)

  • সাক্ষাত্কার
  • সর্বশেষ সংবাদ
  • অন-লাইন জরীপ
     
    © China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
    16A Shijingshan Road, Beijing, China