v চীনের বিশ্ব কোষv চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগ
ম্যারিয়ট হোটেলের বিস্ফোরণ জারদারির সন্ত্রাস দমন নীতির এক কঠিন পরীক্ষা
2008-09-22 20:29:05

     পাকিস্তানের রাজধানী ইসলামাবাদের ম্যারিয়ট হোটেলে ২০ সেপ্টেম্বর একটি ভয়াবহ সন্ত্রাসী বিস্ফোরণ ঘটেছে। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত এতে ৩০০ জনেরও বেশি লোক হতাহত হয়েছে। পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট আসিফ আলি জারদারি ২১ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে উপস্থিত থাকার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে গিয়েছেন। তিনি মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ ডাবলিউ বুশের সঙ্গে সাক্ষাত্ করবেন। সন্ত্রাস দমন সমস্যা দু' নেতার প্রধান আলোচ্য বিষয় হবে বলে মনে করা হচ্ছে। মারিওট হোটেল বিস্ফোরণ হচ্ছে জারদারির সন্ত্রাস দমন নীতির সম্মুখীন একটি বড় চ্যালেঞ্জ।

     বিস্ফোরণের পর জারদারি জাতীয় টেলিভিশনে ভাষণ দিয়েছেন। তিনি সন্ত্রাসবাদ ও উগ্রবাদের ওপর আঘাত হানা এবং শেষ পর্যন্ত পাকিস্তান থেকে সন্ত্রাসবাদ নির্মূল করার দৃঢ়প্রতিজ্ঞা ব্যক্ত করেছেন। কিন্তু জনমত মনে করে, জারদারির সম্মুখীন সন্ত্রাস ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার দায়িত্ব অতি কঠিন। এটি তাঁর নিজের নিরাপত্তা চ্যালেঞ্জের অন্যতম হবে। অনুমান অনুযায়ী, এবারের সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা হচ্ছে সন্ত্রাসী ব্যক্তিদের পাকিস্তান সরকারের ওপর নেয়া প্রতিশোধমূলক তত্পরতা। গত কয়েক মাসে পাকিস্তান সরকার স্থানীয় ও সশস্ত্র তালিবান শক্তি নির্মূল করার উদ্দেশ্যে উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশ ও ফেডারেল কেন্দ্রশাসিত উপজাতি অঞ্চলে ব্যাপক সামরিক অভিযান চালিয়েছে। ইসলাম ধর্মের রমজান মাস শুরু হওয়ার পরও সামরিক পক্ষের নির্মূল অভিযান বন্ধ হয় নি। এখন পর্যন্ত কোন সংস্থা ম্যারিয়ট হোটেলের বিস্ফোরণ ঘটনার জন্য দায়িত্ব স্বীকার করে নি।

    অন্যান্য তথ্য মাধ্যমের মতে, জারদারির বিরুদ্ধেই এবারের এ হামলার ঘটনা ঘটেছে। জারদারির স্ত্রী, পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেনজির ভূট্টো গত বছরের শেষ দিকে আততায়ীর গুলিতে নিহত হন। পাকিস্তানের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ইউসুফ রাজা গিলানির গাড়ীবহরও অজ্ঞাত পরিচয় বন্দুকধারীদের হামলার শিকার হয়েছে। জারদারি ক্ষমতাসীন হওয়ার পর তাঁর ব্যক্তিগত নিরাপত্তাকে তাঁর সম্মুখীন পাঁচটি বড় চ্যালেঞ্জের অন্যতম একটি বলে মনে করা হচ্ছে। পাকিস্তান কর্তৃপক্ষের এবারের সন্ত্রাসী হামলার প্রাথমিক তদন্তের পর প্রকাশিত ফলাফল থেকে বুঝা যায়, হামলাকারী সবসময় প্রেসিডেন্ট জারদারির পিছনেই ছিলো। ২০ সেপ্টেম্বর বিকাল তিনটায় জারদারি সংসদ ভবনে বক্তৃতা দেয়ার সময় হামলাকারী লক্ষবস্তু হিসেবে সংসদ ভবনের ওপর হামলার অপচেষ্টা চালানোর উদ্যোগ নেয়। এরপর পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী জিলানি প্রধানমন্ত্রীর সচিবালয়ে জারদারি ও সামরিক নেতৃবৃন্দকে ইফতারির দাওয়াত দেন। হামলাকারীর বড় ট্রাকটি প্রধানমন্ত্রীর সচিবালয়ের নিকটে যাওয়ার চেষ্টা করে। কিন্তু উপরোক্ত দুটি জায়গার নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার থাকায় হামলাকারী লক্ষবস্তুর কয়েক শ মিটার দূরের ম্যারিয়ট হোটেলে এ বিষ্ফোরণ ঘটায়।

     জারদারি এখন যুক্তরাষ্ট্রের জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে অংশ নিচ্ছেন। তিনি ২৩ সেপ্টেম্বর মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ ডাবলিউ বুশের সঙ্গে সাক্ষাত্ করবেন। বিশেষ উল্লেখযোগ্য যে, যুক্তরাষ্ট্র হচ্ছে জারদারি ক্ষমতাসীন হওয়ার পর সফর করা দ্বিতীয় দেশ। এর আগে তিনি বৃটেন সফর করেছেন। এ থেকে প্রতিপন্ন হচ্ছে যে, জারদারির মার্কিন পন্থী নীতি অনুসরণ করবেন। ফলে বিস্ফোরণের পর মনে করা হচ্ছে যে, এবারের সন্ত্রাসী- হামলার ঘটনা আর জারদারির মার্কিন নীতির সঙ্গে সম্পর্ক রয়েছে। হামলাকারী তার মার্কিন পন্থী নীতির ওপর চাপ সৃষ্টি করতে চায়।

    ম্যারিয়ট হোটেলের বিস্ফোরণ ঘটনায় আবার প্রমাণিত হয়েছে, পাকিস্তানের অভ্যন্তরে নিরাপত্তা পরিস্থিতির ক্রমাগত অবনতি হওয়া। জারদারি এ মাসের প্রথম দিকে ক্ষমতাসীন হওয়ার পর সন্ত্রাস দমন ও দেশের সার্বভৌমত্বের অসংগতির কঠিন পরিস্থিতির সম্মুখীন হন। বিশ্লেষকরা মনে করেন, পাকিস্তানের উপজাতি অঞ্চলের 'তালিবানায়ন' সমস্যা দিন দিন গুরুতর হচ্ছে। এটা নিঃসন্দেহে পাকিস্তানের অভ্যন্তরের নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতার ওপর গুরুতর প্রভাব ফেলবে। যুক্তরাষ্ট্র সন্ত্রাস দমনের প্রয়োজনে বার বার সীমারেখা পার হয়ে পাকিস্তানের অভ্যন্তরে সশস্ত্র সদস্যের ওপর অভিযান চালিয়েছে। এতে পাকিস্তানের সার্বভৌমত্ব ও ভূভাগের অখন্ডতার লঙ্ঘন হয়েছে। পাকিস্তান সরকার ও সামরিক বাহিনী এ সময় প্রবল মনোবল নিয়ে জানিয়েছে, যদি মার্কিন বাহিনী অব্যাহত সীমারেখা পার হয়ে অভিযান চালাতে থাকে তাহলে পাকিস্তানের সেনাবাহিনী পাল্টা আক্রমণ করবে। অনুমান করা যায়, ম্যারিয়ট হোটেলের বিস্ফোরণের পর পাকিস্তানের নিজেদের নিরাপত্তা রক্ষা করার দায়িত্ব আরো বেড়ে যাবে।(ইয়ু কুয়াং ইউয়ে)

  • সাক্ষাত্কার
  • সর্বশেষ সংবাদ
  • অন-লাইন জরীপ
     
    © China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
    16A Shijingshan Road, Beijing, China