নেপাল ফেডারেল গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্রের প্রথম প্রধানমন্ত্রী পুষ্প কমল দাহাল প্রচন্ড ১৮ সেপ্টেম্বর ভারতে পাঁচ দিনব্যাপী আনুষ্ঠানিক সফর শেষে কাঠমন্ডু ফিরে গেছেন। এটা হচ্ছে নেপালের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর প্রচন্ডের প্রথম আনুষ্ঠানিক বিদেশ সফর।
সফর শেষ হওয়ার আগে প্রচন্ড তথ্য মাধ্যমকে বলেন, তাঁর ভারত সফর সাফল্যমন্ডিত হয়েছে। সফরের ফলাফল সন্তোষজনক। এর আগের দিন প্রচন্ড নয়াদিল্লীতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। বৈঠকের পর দু'পক্ষ যৌথ বিবৃতিতে ব্যক্ত করেছে যে, দু'দেশ অব্যাহতভাবে দ্বিপক্ষীয় বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের উন্নয়ন সুসংবদ্ধ করবে এবং দু'দেশের সম্পর্কের জন্য নতুন চালিকাশক্তি যোগাবে। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ভারত সরকার পুরোপুরি নেপালের শান্তিপূর্ণ ও গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক রূপান্তরকে সমর্থন করে। ভারত বুনিয়াদী ব্যবস্থার নির্মাণ, মানবসম্পদ উন্নয়ন, শিক্ষা ও চিকিত্সাসহ নানা ক্ষেত্রে নেপালকে সহায়তা দেবে। নেপাল সরকার সুষ্ঠু বাণিজ্যিক পরিবেশ গড়ে তুলতে ভারত সরকার ও সেদেশের শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোর বিনিয়োগ আকর্ষণ করবে।
সফরকালে প্রচন্ড ভারতের প্রেসিডেন্ট প্রতিভা দেবীসিং পাতিল, ক্ষমতাসীন ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সোনিয়া গান্ধির সঙ্গে সাক্ষাত্ করেছেন। ভারতের পররাষ্ট্র ক্ষেত্রের একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের সমস্যা হলো প্রচন্ড আর ভারত পক্ষের বৈঠকের প্রধান আলোচ্য বিষয়। নির্বাচনের সময় প্রচন্ড ঘোষণা করেছিলেন, ক্ষমতা গ্রহণের পর তিনি পুনরায় নেপাল ও অন্যান্য দেশের সঙ্গে স্বাক্ষরিত সকল চুক্তি পর্যালোচনা করবেন। ভারত সফরের আগে প্রচন্ড নেপালের মন্ত্রিসভার অধিবেশনে বলেছেন, ভারতের সঙ্গে এখন কোন চুক্তি স্বাক্ষর করবেন না। তবে দু'পক্ষ কতগুলো দ্বিপক্ষীয় চুক্তির বিষয় পুনর্বার পর্যালোচনার সমস্যা নিয়ে আলোচনা করবে।
এ বছর নেপালের রাজনৈতিক পরিস্থিতির ব্যাপক পরিবর্তন ভারতে গভীর উদ্বেগ সঞ্চার করেছে। ভারতের অভ্যন্তরীণ জনমত সবসময় নেপালের মাওবাদী কমিউনিস্ট পার্টিকে বিদ্রোহী শক্তি মনে করে। কিন্তু এখন নেপালের মাওবাদী কমিউনিস্ট পার্টি নেপালের ক্ষমতাসীন পার্টিতে পরিণত হয়েছে। ভারতের কিছু তথ্য মাধ্যম প্রচন্ড প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হওয়ার পর পরই বেইজিং গিয়ে অলিম্পিক গেমসের সমাপনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকা এবং চীনের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে সাক্ষাত্ করার ব্যাপারে উদ্বেগ প্রকাশ করে। কারণ, নেপালের পূর্বের সরকারী শীর্ষনেতা নির্বাচনের পর সবসময় প্রথমেই ভারত সফর করতেন। ভারতের সংশয় কমানোর জন্য প্রচন্ড ১৫ সেপ্টেম্বর নয়াদিল্লীতে ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মহলের প্রতিনিধিদের সঙ্গে সাক্ষাত্ করার সময় বলেছেন, 'নেপাল ও ভারতের মধ্যে বিশেষ সাংস্কৃতিক, ঐতিহাসিক এবং পারস্পরিক নির্ভরযোগ্য অর্থনৈতিক সম্পর্ক আছে। নেপালের বিকাশ আর ভারতের সঙ্গে গুরুত্বপুর্ণ সম্পর্ক আছে।' প্রচন্ড বলেন, নেপালের নতুন সরকার ভবিষ্যতে ভারতের সঙ্গে আরো বেশি বিনিময় ও সহযোগিতা করবে। তারা পারস্পরিক আস্থা ও উপাকারিতা এবং উভয়ের কল্যাণের ভিত্তিতে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের উন্নয়ন করবে। তিনি আশা করেন, নেপাল ও ভারতের সম্পর্ক এক নতুন যুগে প্রবেশ করবে।
দক্ষিণ এশিয়ার স্থল-বেষ্টিত দেশ হিসেবে নেপাল তিন দিক থেকে ভারত সংলগ্ন। নেপালের উত্তর দিকে হিমালয় পর্বতের মাধ্যমে চীনের সঙ্গে সংলগ্ন। নেপালের পক্ষে দুটি বড় প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে শান্তিপূর্ণ ও মৈত্রী সম্পর্ক বজায় রাখা একটি অনিবার্য বিষয়। ফলে যে কোন রাজনৈতিক পার্টি ক্ষমতাসীন হলে বাস্তববাদী পররাষ্ট্র নীতি অনুসরণ করতেই হবে। তা নাহলে চীন বা ভারত যে কোন পক্ষের সঙ্গে সম্পর্কের অবনতি হলে তা হবে নেপালের জন্য দূর্ভাগ্যের বিষয়।
ভারতও উপলব্ধি করেছে যে, ভারত ও নেপালের বহু বছরের বিদ্যমান সম্পর্কের মধ্যে কিছু বিষয় সংশোধন প্রয়োজন। যেমন ভারত ও নেপালের মধ্যে ১৯৫০ সালের ৩১ জুলাই স্বাক্ষরিত 'নেপাল ও ভারতের শান্তিপূর্ণ মৈত্রী চুক্তি'। নেপালের প্রতিটি সরকার মনে করে, এই চুক্তির মধ্যে কিছু ধারা নেপালের স্বাধীনতা ও নিরপেক্ষ শান্তিপূর্ণ পররাষ্ট্র নীতি বিরোধী। ফলে নেপাল বার বার ভারতের কাছে এ চুক্তি সংশোধনের অনুরোধ জানায়। এখন ভারত এই সমস্যা রফা করার প্রস্তুতি নিয়েছে। দু'দেশের পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ের বৈঠক শিগগিরি অনুষ্ঠিত হবে।(ইয়ু কুয়াং ইউয়ে) |