v চীনের বিশ্ব কোষv চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগ
চীনা জনগণের উত্তম অলিম্পিক চেতনা
2008-09-04 20:00:47
    অলিম্পিক গেমসে প্রতিযোগিতার ফলাফলের চেয়ে খেলার মনোবল আরো গুরুত্বপূর্ণ । পেইচিং অলিম্পিক গেমসে চীনের ক্রীড়া অনুরাগীদের মধ্যে বিপুল উদ্দীপনা ও সুষ্ঠু চেতনা দেখা দিয়েছে । বিভিন্ন দেশের দর্শকরা তার জন্য খুব প্রশংসা করেছেন ।

    পেইচিং অলিম্পিক গেমসের প্রথম দিন এথেন্স অলিম্পিক গেমসের সোনা জয়ী চীনের শ্যুটার তু লি নারীদের ১০ মিটার এয়ার রাইফেল ফাইনালে ব্যর্থ হন । তিনি শুধু পঞ্চম হয়েছিলেন । প্রতিযোগিতা শেষে ব্যাপক দর্শক তাকে খুব উত্সাহ দিয়েছেন । এতে তিনি খুব উদ্দীপ্ত হন ।

    স্নেহপূর্ণ দর্শকরা তাকে উত্সাহ দিয়েছেন যে , তার দক্ষতা ও সংগ্রামী মনোবল আসলে খুব ভাল । অধ্যবসায়ী । খেলোয়াড়ের জন্য স্বর্ণপদক জয় খুবই আকর্ষণীয় । সবাই জয় চায় । কিন্তু এতে তাদের উপর ব্যাপক চাপ সৃষ্টি হয় ।

    ১৯৮৪ সালে লসএঞ্জেল্স অলিম্পিক গেমসের পুরুষদের এয়ার পিস্তল ফাইনালে চীনের শ্যুটার স্যু হাই ফুং সোনা জিতেন । তখন থেকে চীনারা অলিম্পিক গেমসের সাফল্যের ওপর ব্যাপক নজর রেখে আসছেন । ১৯৮৮ সালে দক্ষিণ কোরিয়ার সিউল অলিম্পিক গেমসে চীনের প্রসিদ্ধ পুরুষ জিমন্যাস্ট লি নিং প্রতিযোগিতায় ব্যর্থ হন । দেশে ফিরে আসার পর দর্শকরা তাকে কোন উত্সাহ দেন নি । এতে তিনি খুব হতাশ হন ।

    চীনে সংস্কার ও উন্মুক্তকরণ চালু হয়েছে ৩০ বছর হল । অলিম্পিক চেতনা ও জয়-পরাজয়ের বিষয়ে চীনাদের ধারনার অনেক পরিবর্তন হয়েছে । জয় হোক পরাজয় হোক দর্শকরা খেলোয়াড়দেরকেই উত্সাহ দেন । এতে প্রকৃত অলিম্পিক চেতনা ও প্রাচ্যের সভ্যতা সংযুক্ত হয়েছে । পেইচিং অলিম্পিক চেতনা বিষয়ক গবেষণাগারের প্রধান চিন ইউয়ান ফু বলেন , স্বর্ণপদক এবং জয়-পরাজয়ের ব্যাপারে উদারতা অবলম্বন করা হচ্ছে চীনাদের নতুন অলিম্পিক চেতনা । এবারের অলিম্পিক গেমসে এ ধরনের বৈশিষ্ট্য সর্বক্ষেত্রেই দেখা গেছে ।

    আগে স্বর্ণপদক জয়ের ওপর চীনারা অতিরিক্ত পিপাসার্ত ছিল । আসলে একটি উন্নয়নশীল বৃহত দেশের অন্যান্য দেশের মতো এ ধরনের পিপাসা থাকাও খুব স্বাভাবিক । কিন্তু পেইচিং অলিম্পিক গেমসে চীনের দর্শকরা আবিষ্কার করেন যে , স্বর্ণপদক ছাড়া অন্যান্য বহু মূল্যবান জিনিসও আছে ।

    প্রফেসর চিং ইউয়ান ফু বলেন , প্রতিযোগিতার ফলাফলের চেয়ে অলিম্পিক চেতনা ও খেলার সংগ্রামী মনোবল আরো বেশি প্রয়োজন । চীনের বিখ্যাত খেলোয়াড় লিউ সিয়াং পা ব্যথার কারণে পুরুষদের ১১০ মিটার হার্ডলস প্রতিযোগিতা পরিত্যাগ করেন । এই অলিম্পিক গেমসে দর্শকরা তার সাফল্যের অপেক্ষায় ছিল । তার প্রতিযোগিতা পরিত্যাগে সবাই খুব অবাক হয়েছেন এবং মর্মাহত হয়েছেন । কিন্তু এর পাশাপাশি দর্শকরা তাকে আরো বেশি সমবেদনা , সহানুভূতি , স্নেহ ও উত্সাহ দিয়েছেন । এতে দর্শকদের উদারতাই প্রতিফলিত হয়েছে ।

    কুও হান থিয়ান পেইচিংয়ের একটি আইটি কোম্পানির একজন কর্মী । পুরুষদের ১১০ মিটার হার্ডলসে লিউ সিয়াং জিতবেন বলে তিনি আশা প্রকাশ করেছিলেন । এবারে তার প্রতিযোগিতা দেখার জন্য তিনি ও তার পরিবার পরিজন সপরিবারে বার্ড নেস্টে যান । লিউ সিয়াংয়ের প্রতিযোগিতা পরিত্যাগে তারা দুঃখ পেয়েছেন এবং সমবেদনা প্রকাশ করেছেন ।

    তারা অনেক কস্টে অলিম্পিক গেমসের দৌড়-ঝাঁপ-নিক্ষেপ প্রতিযোগিতার টিকেট কিনেছেন । তারা দেখলেন , লিউ সিয়াং খেলার মাঠে হাজির হয়েছেন । তিনি দৌড়াবার চেষ্টা করলেন । কিন্তু পায়ের দারুণ ব্যথার কারণে তিনি বাধ্য হয়ে প্রতিযোগিতা থেকে সরে দাঁড়ালেন । তার গুরুতর অবস্থা দেখে কুও হান থিয়ান ও তার পরিবার পরিজন মর্মাহত হলেন । কিন্তু তারা তার প্রতি সমর্থন অব্যাহত রাখার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন । তিনি বলেন , লিউ সিয়াং তো পা ব্যাথার কারণে বাধ্য হয়ে প্রতিযোগিতা পরিত্যাগ করেছেন । পরে তার প্রতিযোগিতা আবার দেখতে পারবেন বলে তিনি আশা প্রকাশ করেছেন ।

    প্রফেসর চিং ইউয়ান ফু মনে করেন , পেইচিং অলিম্পিক গেমসে চীনের দর্শকদের শ্রেষ্ঠ অলিম্পিক চেতনা প্রকাশ পেয়েছে । এতে চীনাদের আত্মবিশ্বাস ও সভ্য আচরণ আরো উন্নত হয়েছে । এই অলিম্পিক গেমস থেকে এক বিশ্ব , এক স্বপ্ন শিরোনামে চীনাদের অলিম্পিক চেতনা পুরোপুরিভাবেই প্রতিফলিত হয়েছে ।

    এ অলিম্পিক গেমসের প্রথম দিন নারীদের এয়ার রাইফেলে চীনের বিখ্যাত শ্যুটার তু লি'র সোনা জয়ের কথা ছিল । কিন্তু তিনি শুধু পঞ্চম হলেন । এতেও চীনের দর্শকরা হতাশ হন নি । তারা উদারতা অবলম্বন করেছেন এবং তু লিকে অব্যাহতভাবে চেষ্টা করার জন্য উত্সাহ দিয়েছেন । ফলে তু লি অন্য নারীদের এয়ার পিস্তলে সোনা জিতেছেন । চীনের দর্শকরা দৌঁড়বিদ লিউ সিয়াং-এর প্রতিও অনুরূপ উদারতা অবলম্বন করেছেন । এ থেকে বোঝা যায় , চীনের দর্শকদের আধুনিক সভ্যতার মান অনেক উন্নত হয়েছে । এ ক্ষেত্রে চীন ও বিদেশের ব্যাপক দশর্ক , সংবাদদাতা ও কর্মকর্তাও একমত ।

    ২০ আগস্ট বার্ড নেস্টে নারীদের হ্যামার থ্রো ফাইনালে বিদেশী প্রতিদ্বন্দ্বী আকসানা মিয়ানকোভা চীনের চাং ওয়েন স্যুকে পরাজিত করে চ্যাম্পিয়ন হন । এ উপলক্ষে দর্শকমন্ডলী ভীষণ আনন্দঘন ও অভিনন্দনের পরিবেশে মুখরিত হয়ে উঠে । সু দা ইয়্যু নামে একজন দর্শক সংবাদদাতাকে বলেন , তিনি মনে করেন যে , খেলোয়াড়রা দর্শকদের জন্য ব্যাপক প্রফুল্লতা ও উদ্দীপনা বয়ে এনেছেন । এতে দর্শকরা ক্রীড়াশৈলী উপভোগ ও অসীম চ্যালেঞ্জকেও অনুভব করেছেন ।

    আগে হ্যামার থ্রো প্রতিযোগিতা দর্শকদের তেমন একটা দৃষ্টি আকর্ষণ করতো না । আসলে এতে মানুষের শক্তি ও অধ্যবসায়ও তুলে ধরা হয়েছে । পোলভল্ট প্রতিযোগিতাও খুবই চিত্তাকর্ষক । পোলভল্টের প্রতিযোগিতায় দর্শকরা ব্যাপক আমোদ প্রমোদ অনুভব করেছেন । দর্শকরা তাদের চমত্কার নৈপুণ্যের জন্য উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন ।

    পেইচিং অলিম্পিক গেমসে চীনের দর্শকরা যেমন চীনা তেমনি বিদেশী খেলোয়াড়দের জন্যও তুমুল করতালি দিয়েছেন । নারীদের দ্বৈত ব্যাডমিন্টন ফাইনালে জাপানের দু'জন খেলোয়াড় চীনের দু'জন খেলোয়াড়কে পরাজিত করেছেন । তখন চীনের দর্শকরা তাদের জয়ের জন্য অভিনন্দন করে হাততালি দিয়েছেন । নারীদের স্যাব্রে ফাইনালে চীনের খেলোয়াড় ইউক্রেনের খেলোয়াড়ের কাছে হেরে গেছেন । দর্শকরাও ইউক্রেনের খেলোয়াড়কে জয় লাভের জন্যও করতালি দিয়ে অভিনন্দিত করেছেন । এতে প্রমানিত হয়েছে যে , চীনের দর্শকদের ধারনা ও সভ্যতা ক্রমশঃ উন্নত হচ্ছে । তাদের অলিম্পিক চেতনাও দিন দিন বাড়ছে ।

    যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন পোস্ট পত্রিকার সর্বশেষ একটি প্রতিবেদনে বলা হয় , পেইচিং অলিম্পিক গেমস চলাকালে চীনের দর্শকরা ব্যাপক উদ্দীপনা দেখিয়েছেন । খেলার নৈপুণ্য আরো সম্প্রসারনের জন্য তারা বিভিন্ন দেশের খেলোয়াড়দেরকে উত্সাহ দিয়েছেন । এতে তাদের ক্রীড়া ক্ষেত্রেরসুষ্ঠু চেতনা ফুটে উঠেছে । একটি প্রাচীন মহানগর হিসেবে পেইচিংয়ে এখন আরো স্ফুর্তিপূর্ণ ও সৌন্দর্যপূর্ণ পরিবেশ বিরাজ করছে । পেইচিং অলিম্পিক গেমসে চীনের দর্শকরা মানসিকতা ও অলিম্পিক চেতনার দিক থেকে একটি অদ্বিতীয় স্বর্ণপদক জিতেছেন ।

(থান ইয়াও খাং)

  • সাক্ষাত্কার
  • সর্বশেষ সংবাদ
  • অন-লাইন জরীপ
     
    © China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
    16A Shijingshan Road, Beijing, China