বন্ধুরা, পেইচিং-এর ৭৯৮ শিল্পকলা এলাকায় শিল্পের আকর্ষণে দশর্নার্থীদের ভীড় লেগে থাকে। এতে একদিকে যেমন শিল্পের প্রতি কিছু মানুষের বোঝাপড়া ও ধারনা পাল্টায়, অন্যদিকে কারো কারো নতুন অনুপ্রেরণা ও নান্দনিক বোধের সৃষ্টি হয়। এটা পেইচিং ৭৯৮ শিল্পকলা এলাকার অন্যতম আকর্ষণশক্তি। আজকের অনুষ্ঠানে আমি আপনাদেরককে ৭৯৮ শিল্পকলা এলাকায় নিয়ে যাবো।
পেইচিং ৭৯৮ শিল্পকলা এলাকা উত্তর-পূর্ব পেইচিংয়ের ছাও ইয়াং অঞ্চলে অবস্থিত। শহরের কেন্দ্র থেকে কিছুটা দূরে হলেও বাসে করে এখানে আসা খুব সহজ। শিল্পকলা এলাকায় আসলে বেশ কয়েকটি সড়ক ও নানা ডিজাইনের বড়-ছোট ঘর দেখা যায়। এখানে আসা বিভিন্ন বর্ণ ও বিভিন্ন ভাষার দেশী-বিদেশী পর্যটকের যাতায়াত রয়েছে। জানা গেছে, ফরাসী পর্যটকদের জন্য মহাপ্রাচীর ও স্বর্গ মন্দিরের পর ৭৯৮ শিল্পকলা এলাকা তৃতীয় পছন্দের জায়গা। জায়গাটি তাদের এতো পছন্দ তার কারণ হলো তারা ৭৯৮ শিল্পকলা এলাকার সঙ্গে প্যারিসের বিখ্যাত সড়কের তুলনা করতে পছন্দ করেন।
৭৯৮ শিল্পকলা এলাকায় বিভিন্ন ধরনের আর্ট গ্যালারী, স্টুডিও, শিল্পী স্টুডিও, ফ্যাশনের দোকান, বইয়ের স্টল, রেস্টুরেন্ট, বার এবং রোমান্টিক কফি বারসহ বিভিন্ন সাংস্কৃতিক ও শিল্পকলা উপাদান রয়েছে। শিল্প এলাকার প্রতিটি জিনিস শিল্পকলা সংশ্লিষ্ট। জানা গেছে, ৭৯৮ শিল্পকলা এলাকার আর্ট গ্যালারী, শিল্পী স্টুডিও এবং ফিল্ম ও ভিডিও তথ্য মাধ্যম, প্রকাশনা এবং ডিজাইন উপদেষ্টাসহ বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংস্থা ফ্রান্স, ইতালি, ব্রিটেন, নেদারল্যান্ডস, বেলজিয়াম, জার্মানী, জাপান, অস্ট্রেলিয়া, দক্ষিণ কোরিয়া এবং চীনের তাইওয়ান ও হংকং বিশেষ প্রশাসনিক অঞ্চলসহ বিভিন্ন দেশ ও অঞ্চল থেকে এসেছে। এটি চীনের সংস্কৃতি প্রদর্শনী কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। প্রতি দিন ৭৯৮ শিল্পকলা এলাকা বিভিন্ন ধরনের শিল্পের মধ্য দিয়ে মানুষের কাছে ৭৯৮-এর বিশেষ শিল্প পরিবেশ তুলে ধরে।
৭৯৮ শিল্পকলা এলাকায় আসা মানুষেরা এখানকার অলিম্পিক পরিবেশও অনুভব করতে পারছেন। সড়কের দু'পাশের 'সাড়ম্বর ছাপচিত্র অনুষ্ঠান, অলিম্পিকের জন্য করতালি অভিনন্দনের দেয়ালিকাগুলো আকর্ষণীয়। প্রদর্শনটি চলছে 'পেইচিং ব্রিজ আর্ট গ্যালারীতে'। ব্রিজ আর্ট গ্যালারী হচ্ছে ৭৯৮ শিল্পকলা এলাকার বিখ্যাত আর্ট স্পেস। এবারের প্রদর্শনতে চীনের বিখ্যাত চিত্রকর উ কুয়ান চুংসহ বিভিন্ন শিল্প গুরুর শিল্প-কর্ম ছাড়া তরুণ প্রজন্মের কিছু শিল্পীর কর্মও এখানে দেখানো হচ্ছে। ব্রিজ আর্ট গ্যালারীর কর্মী হৌ হুয়ান বলেন, এটা পেইচিং অলিম্পিক গেমসের সাংগঠনিক কমিটির একমাত্র পুরস্কার প্রদানের এবং অন্যান্য এখতিয়ারপ্রাপ্ত চীনের আধুনিক শিল্প কর্মের যৌথ প্রদর্শনী। ১৫জন শিল্পীর সবাই খুব বিখ্যাত। সরকার শিল্পী ও তাদের কর্মের অনুমোদন দিয়েছে।
জানা গেছে, ৭৯৮ শিল্পকলা এলাকায় গড়ে প্রতি দিন বেশ কয়েকটি এ ধরনের প্রদর্শনী চলে। শিল্পকলা এলাকা ২০০৬ সাল থেকে প্রতি বছর '৭৯৮ শিল্পকলা উত্সব' আয়োজন করে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মিনেসোটা অঙ্গরাজ্যের পর্যটক ব্যাটি ৭৯৮ শিল্পকলা এলাকা সম্পর্কে নিজের অনুভূতি প্রকাশ করেছেন এ ভাবে, চীনের সুন্দর আধুনিক শিল্প-কর্ম দেখে আমার বিম্ময় জেগেছে। তবে কিছু শিল্প-কর্ম অবশ্যই খুব সুন্দর না, যদিও আমি কিছু শিল্পীর নামই জানি না। তাদের কাজ দেখে আমি বুঝেছি, চীনের আধুনিক শিল্পকলার উত্সাহব্যঞ্জক প্রসার ঘটছে।
এখন আমি আপনাদেরকে ৭৯৮ শিল্পকলা এলাকার অন্য আরেকটি বিশেষ আর্ট স্পেস 'এস জেড শিল্প কেন্দ্র' সম্পর্কে জানাবো। দর্শ করা এখানে বিভিন্ন স্টাইলের শিল্প প্রদর্শনী দেখা ছাড়াও এখানকার প্রকাশনাগুলো থেকে চীনের আধুনিক শিল্পের উন্নয়নের ইতিহাস, আধুনিক শিল্পী, শিল্প-কর্ম এবং শিল্প সম্পর্কে মন্তব্য জানতে পারেন। শিল্প কেন্দ্রটির দায়িত্বশীল ব্যক্তি কেং ছিং হুয়া বলেন, আমরা যে কাজ করতে চাই, তা হচ্ছে উঁচু মানের আর্ট গ্যালারীর ভূমিকার পাশাপাশি জনসাধারণকে সেবা দেওয়া। এর মধ্যে রয়েছে শিল্পকলা আলোচনা সভা ও ভ্রাম্যমান গ্রন্থাগার আয়োজন। এছাড়া বই প্রকাশের মধ্য দিয়ে আধুনিক শিল্প ও বইয়ের সম্মেলন ঘটানো যায়। তবে আরো ভালোভাবে শিল্পীদেরকে সেবা দেওয়া যায়।
৭৯৮ শিল্পকলা এলাকায় একটি আর্ট স্টেসে বিশেষ করে '২০০৮ সাংস্কৃতিক অলিম্পিক' শিরোনামে প্রদর্শনী করা হয়। এতে বিভিন্ন রকমের শিল্প-কর্ম থেকে সাংস্কৃতিক অলিম্পিক চেতনার বিস্তার এবং পেইচিং অলিম্পিকের প্রতি শিল্পীদের প্রত্যাশা ব্যক্ত হয়েছে। এই আর্ট স্পেসের নাম 'আর্ট কি ৭৯৮ প্রদর্শনী কেন্দ্র'। কেন্দ্রের দায়িত্বশীল ব্যক্তি হুয়াং মিং হোং বলেন, এই কেন্দ্র চলতি বছরের মে মাস থেকে চালু হয়েছে। এখানে প্রদর্শনীতে স্থান পাওয়া ১শ'৭৪টি ছবি চীনের বিভিন্ন চিত্রকলা কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ের তরুণ শিল্পী, অধ্যাপক এবং ছাত্রছাত্রীদের কয়েক হাজার শিল্প কর্ম থেকে বাছাই করা হয়েছে। মোট ৪শ'টি চিত্রকর্ম বাছাই করা হলেও জায়গার অভাবে মাত্র ১শ' ৭৪টি প্রদর্শিত হচ্ছে। এর সবগুলোই তরুণ শিল্পীদের কাজ। অলিম্পিক সম্পৃক্ততার অংশ হিসেবে জনসাধারণের কাছে এভাবেই সাংস্কৃতিক অলিম্পিক তত্পরতা তুলে ধরা হয়েছে।
আর্ট স্পেসটি ছোট আকারের চীনা ঐতিহ্যবাহী চা ঘর বসানো হয়েছে। শিল্প-কর্ম উপভোগ করার পাশাপাশি পর্যটকরা এখানে চীনের 'চা' সংস্কৃতির সঙ্গে একাত্ম হতে পারেন। একইভাবে চা খেতে খেতে শিল্প-কর্মও উপভোগ করতে পারেন। এই আর্ট স্পেসের দায়িত্বশীল ব্যক্তি হুয়াং মিং হোং বলেন, আমাদের চা খুব বিশিষ্ট। বিদেশীরা তা খুব পছন্দ করেন। আমরা প্রাচ্য সৌন্দর্য্যের অন্তর্নিহিত অর্থ মাথায় রেখে চা'য়ের ব্র্যান্ড তৈরি করি। তবে তা ঐতিহ্যবাহী কুংফু চা নয়। পর্যটকরা ছবি দেখার সঙ্গে সঙ্গে এখানে বসে শিল্প-কর্ম দেখতে পারেন। অনেক মানুষ এ ব্যবস্থা খুব পছন্দ করেন।
৭৯৮ শিল্পকলা এলাকায় সব সময় গুরুত্বপূর্ণ আন্তর্জাতিক শিল্প প্রদর্শনী, শিল্প তত্পরতা এবং ফ্যাশন তত্পরতা অনুষ্ঠিত হয়, যা শীর্ষ বিশ্বের রাজনীতি, চলচ্চিত্র বা টেলিভিশন ব্যক্তিত্ব এবং সমাজের বিখ্যাত মানুষকে টেনে আনে। ২০০৪ সাল থেকে সুইডেনের প্রধানমন্ত্রী, সুইজারল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী, জার্মানির সাবেক চ্যন্সেলর গেরহার্ড শ্রোয়েডার, অস্ট্রিয়ার প্রধানমন্ত্রী, ইইউ'র চেয়ারম্যান হোসে ম্যানুয়েল বারোসো, বেলজিয়ামের রাণী, জাতিসংঘ সাবেক মহাসচিব কফি আনানের স্ত্রী, ফ্রান্সের সাবেক প্রেসিডেন্ট জ্যাক শিরাকের স্ত্রী, নরওয়ের প্রধানমন্ত্রীর স্ত্রী, বেলজিয়ামের যুবরাজ, ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট নিকোলাস সারকোজি এবং আন্তর্জাতিক অলিম্পিক কমিটির চেয়ারম্যান জ্যাক রগে ৭৯৮ শিল্প এলাকা পরিদর্শন করেছেন।
২০০৩ সালে মার্কিন 'টাইম' ম্যাগাজিন পেইচিং ৭৯৮ শিল্পকলা এলাকাকে বিশ্বের ২২টি সবচেয়ে সাংস্কৃতিক বৈশিষ্ট্যসম্পনন শিল্প কেন্দ্রের একটি হিসেবে চিহ্নিত করে। একই বছর যুক্তরাষ্ট্রের 'নিউজ উইক' ম্যাগাজিন জায়গাটিকে বিশ্বের শ্রেষ্ঠ ১২টি শিল্পকলা এলাকার তালিকায় অন্তর্ভূক্ত করে। সেই প্রথম বারের মতো তারা চীনের রাজধানী পেইচিংকে এতো সামনে নিয়ে আসে। এটির গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠার অনেকগুলো কারণের মধ্যে একটি হচ্ছে এই শিল্পকলা এলাকার অবস্থান ও উন্নয়ন পেইচিং-এর সামর্থ্য ও সুপ্ত শক্তির প্রমাণ। ৭৯৮ শিল্পকলা এলাকার স্থাপত্য রুপান্তর পরিকল্পনা হচ্ছে ২০০৪ সালে পেইচিংয়ের ২০ বছরের শ্রেষ্ঠ স্থাপত্যের গুরুত্বপূর্ণ প্রদর্শনী কর্ম।
প্রিয় বন্ধুরা, এতক্ষণ শুনলেন পেইচিং ৭৯৮ শিল্পকলা এলাকা সম্পর্কে ব্যাখ্যা। যদি আপনাদের ইচ্ছা থাকে, আপনারাও ৭৯৮ শিল্পকলা এলাকাকে নিজ চোখে দেখে আসতে পারেন। আজকের 'চলুন বেড়িয়ে আসি' অনুষ্ঠান এখানেই শেষ করছি। শোনার জন্য আপনাদেরকে অসংখ্য ধন্যবাদ। আপনারা সবাই ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন। আর অপেক্ষা করুন আগামীতে আপনাদেরকে কোন দর্শনীয় স্থানে নিয়ে যাই সেটা জানার জন্য। |