v চীনের বিশ্ব কোষv চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগ
"প্রাচ্যের প্রথম অসি খেলোয়াড়"-- লুয়ান জুচিয়ে
2008-08-26 16:41:21
১৯৭৮ সালে স্পেনে অনুষ্ঠিত বিশ্ব যুব অসি চ্যাম্পিয়নশীপে একজন চীনা নারী অসি খেলোয়াড়ের বাহু ভাঙ্গা অসির আঘাতে আহত হয়েছে । তাহলেও নারী খোলোয়াড়টি অবিরামভাবে প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছেন এবং রানার্সআপ হয়েছেন । তার কাহিনী ব্যাপক চীনা মানুষের কাছে পরিচিত । তিনি হলেন লুয়ান জুচিয়ে । ১৯৮৪ সাল লস এ্যাঞ্জেলস অলিম্পিক গেমসে চীনের অসি চালনা ইতিহাসে লুয়ান জুচিয়ে প্রথম এবং এ পর্যন্ত মাত্র একটি স্বর্ণপদক অর্জন করেছেন । সবাই লুয়ান জুচিয়েকে " প্রাচ্যের প্রথম অসি খেলোওয়াড়" বলে থাকেন । এর পর লুয়ান জুচিয়ে বিদেশে অবস্থান করতে থাকেন । ধীরে ধীরে তিনি দেশের মানুষের দৃষ্টি থেকে মলিন হয়ে গেছেন । কিন্তু ২০০৮ সাল পেইচিং অলিম্পিক গেমসের অসি প্রতিযোগিতার মাঠে ৫০ বছর বয়সী লুয়ান জুচিয়ে আবার সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করেন ।

কানাডায় অবস্থান করলেও লুয়ান জুচিয়ে কখনো অসি খেলা ছেড়ে দেননি । তিনি স্থানীয় অসি দলের কোচ হয়েছেন । ৫০ বছর বয়সী লুয়ান জুচিয়ে কানাডা দলের পক্ষ থেকে পেইচিং অলিম্পিক গেমসে অংশ নিচ্ছেন । কেন পেইচিং অলিম্পিক গেমসে অংশ নিতে চাচ্ছেন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন , পেইচিং সাফল্যের সঙ্গে স্বাগতিক শহর হওয়ার পর আমি মনে করলাম, আমাকে পেইচিং যেতে হবে । কিন্তু আমি আবার ভাবলাম এটা অসম্ভব । কিন্তু পেইচিং অলিম্পিক গেমস যতই ঘনিয়ে আসুক না কেন আমার এই আবেগ ও ইচ্ছা ততই প্রবল হয়ে উঠল ।সুতরাং ২০০৬ সালের শেষ দিকে আমি পেইচিং অলিম্পিক গেমসে অংশ নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেই । ২০০৭ সাল থেকে আমি নানা প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে শুরু করি । আমি নিজেকে চ্যালেঞ্জ মুখোমুখি করতে চাই ।

মাত্র ১৫ মাস আগে যখন লুয়ান জুচিয়ে পেইচিং অলিম্পিক গেমস অংশ নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন খুব কম প্র্রতিযোগিতায় অংশ নেন বলে তার নাম তখন বিশ্বের ৪০০ নামের তালিকার বাইরে ছিল । সুতরাং অলিম্পিক গেমসে অংশ নিতে চাইলে তাকে আমেরিকার প্রথম দুই নম্বরে অন্তর্ভুক্ত হতে হবে । যথেষ্ট পয়েন্ট পাওয়ার জন্য ২০০৭ সালের মে থেকে অক্টোবর মাস বিশ্ব অসি চ্যাম্পিয়নশীপ শেষ হওয়া পর্যন্ত সময়ের মধ্যে তিনি আহত শরীর নিয়ে দক্ষিণ কোরিয়া, চীন,জাপান, আর্জেটিনা,কিউবা,যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার ৮টি ধাপের প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছেন ।২০০৮ সালের ফেব্রুয়ারী মাসের শুরু থেকে মার্চ মাসের শেষ দিকে তিনি আবার অষ্ট্রিয়া, জার্মানি ও ফ্রান্সসহ ইউরোপের মোট ৬টি ধাপের প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছেন । নিঃসন্দেহে এত ঘন যাতায়াত ও প্রতিযোগিতা একজন ৫০ বছর বয়সী নারীর পক্ষে একটি অত্যন্ত কঠিন কাজ । তিনি বলেন , বলা যায় , অলিম্পিক গেমসে এই খেলা আমার জীবনে সবচেয়ে কঠিন এক খেলা । কারণ আমার বয়স তো ৫০ বছর হয়েছে এবং ২০ বছর আগে আমি পেশাদারী খেলোয়াড়েরপদ থেকে সরে এসেছি ।সুতরাং বলা যায় এই প্রক্রিয়া আমার পক্ষে অত্যন্ত কঠিন ছিল এবং কখনো হয়নি । আমি এশিয়া থেকে আমেরিকায়, আমেরিকা থেকে ইউরোপে প্রতিযোগিতা করেছি । পেইচিং অলিম্পিক গেমসে অংশ নেওয়ার জন্য আমি প্রায় ৬ মাসের জন্য কাজ ছেড়েছি ।এটা এমন একটি কঠিন ও ক্লান্তির প্রক্রিয়া যা আমার জীবনে কখনো ছিল না ।

লুয়ান জুচিয়ে মনে করেন , পেইচিং অলিম্পিক গেমসে অংশ নেয়ার যোগ্যতা পাবার জন্য তিনি যে চেষ্টা করেছেন তা অসি খেলা সম্পর্কে তার ভালবাসার প্রতিফলন । অসি খেলার জন্য তার জীবনযাপনে আকাশ পাতাল পরিবর্তন হয়েছে । লুয়ান জুচিয়ের পক্ষে নিজের মাতৃভূমিতে অলিম্পিক গেমসে অংশ নেয়ার জন্য তা যতটুকুই অসুবিধা ও কষ্টের সম্মুখীন হক না কেন তা নিয়ে বসে থাকার উপায় নেই ।

তিনি বলেন , আমি মনে করি , এটা খুবই যোগ্যতর। কারণ বলা যায় , নিজের মাতৃভূমিতে অলিম্পিক গেমসে অংশ নেয়া একশ' বছরেও সুযোগপাওয়া কষ্টকর। খেলোয়াড়ের পদ থেকে অবসর নেওয়ার বিশ বছর পর অর্থাত ৫০ বছর বয়সে মাতৃভূমিতে অলিম্পিক গেমসে অংশ নেয়া আমার পক্ষে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ যা অর্থের দ্বারা হিসাব করা যায় না । আমি কখনো অনুশোচিত হব না ।

৮ বছর আগে ৪২ বছর বয়সী লুয়ান জুচিয়ে কানাডার পক্ষ থেকে ২০০০সালের সিডনি অলিম্পিক গেমসে অংশ নিয়েছিলেন । আহত হওয়ার কারণে তিনি প্রথম দফার প্রতিযোগিতায় পাশ হতে পারেননি এমন কি তিনি ২০০৪ সালের এথেন্স অলিম্পিক গেমসে অংশ নেওয়ার যোগ্যতাও লাভ করতে পারেননি । আজ যখন তিনি ৫০ বছর বয়সে আবার পেইচিং অলিম্পিক গেমসের অসি খেলার মঞ্চে দাঁড়ান, তখন খুব স্বাভাবিক , অনেকের সন্দেহঃ তিনি কী ভাল ফল অর্জন করতে পারবেন ?কিন্তু এসব লুয়ান জুচিয়ের পক্ষে কোনো বড় সমস্যা নয় । তার পক্ষে প্রতিযোগিতার ফলের বদলে অংশ নেওয়াই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করেন ।

লুয়ান জুচিয়েন বলেন,ফলাফল পক্ষে-বিপক্ষে যাই হোক না কেন তা আমার গুরুত্বপূর্ণ নয় । গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হল আমি পেইচিং অলিম্পিক গেমসে প্রবেশ করেছি ।যদি আমি ফলের কথা বিবেচনা করি তাহলে আমি আসতাম না । আজ এই মঞ্চে দাঁড়িয়ে তরুণী খেলোয়াড়দের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করার প্রক্রিয়া আমার পক্ষে কঠিন ।

২০ বছর আগে লুয়ান জুচিয়ে চীন থেকে কানাডায় অবস্থান শুরু করেন এবং কোচ হিসেবে কাজ শুরু করেন । ২০ বছর পার হলেও তিনি মাতৃভূমিতে সবার আন্তরিক সমাদর পাছেন । তিনি ভাবতে পারেননি যে , যখন তিনি রাস্তায় বেড়াতে যান তখন অনেকে তাকে চিনে ফেলে এবং তার নাম বলতে পারে । তিনি বলেন,কেউ আমাকে ভোলেনি এবং সবসময় আমার খোজখবর নেন বলে আমি এ সুযোগে মাতৃভূমির জনগণকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি ।পেইচিং অলিম্পিক গেমসের সাফল্যের কামনা করি ।

  • সাক্ষাত্কার
  • সর্বশেষ সংবাদ
  • অন-লাইন জরীপ
     
    © China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
    16A Shijingshan Road, Beijing, China