v চীনের বিশ্ব কোষv চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগ
বিজয়ী হোক, ব্যর্থ হোক, সবাই অলিম্পিকের বীর(ছবি)
2008-08-25 18:30:30

    সদ্য সমাপ্ত পেইচিং অলিম্পিক গেমসের মাঠে এমন অনেক খেলোয়াড় রয়েছেন, তারা চ্যাম্পিয়ন না হলেও নিজের নৈপণ্য দিয়ে চ্যাম্পিয়নের মতো সম্মান পেয়েছেন।

 মাথিউ ইমোনস ও তাঁর স্ত্রী

  আমেরিকান শ্যুটার মাথিউ ইমোনস ফাইনালে ৪.৪ রিং শুট করার সময় তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বিসহ সারা বিশ্ব তাঁর জন্য অনুতাপ বোধ করেছে। কারণ চার বছর আগে তিনি বলতে গেলে একই ভুল করেছিলেন। কিন্তু প্রতিযোগিতার পর ইমোনস আমাদের কল্পনার মতো চুপসে যান নি। তাঁর কাছে হারানো সেই স্বর্ণপদক তাঁর শ্যুটিং এর একমাত্র লক্ষ্য নয়। তিনি বলেন, 'শ্যুটিং এর জন্য আমি অনেক সময় ব্যয় করেছি। এটা আমার পেশাগত চাকরির মতো। যদি আমি এ ক্রীড়ার মধ্য থেকে আমার চাওয়া পাই, যদি আমি এ ক্রীড়া উপভোগ করি, তাহলে আমি অবশ্যই শ্যুটিং চর্চা অব্যাহত রাখবো। আসলে এখন পর্যন্ত আমি এ ক্রীড়া ক্ষেত্রে উত্তাপ অনুভব করি। আমি মনে করি, অবসর নেয়ার আগে আমি আরেকবার অলিম্পিক গেমসে অংশ নেবো।'

    সত্যি কথা, পেইচিং অলিম্পিক গেমসের মাঠে ইমোনসের মতো অনেক খেলোয়াড় শান্ত-স্নিগ্ধ মন নিয়ে স্বর্ণ পদককে দেখেন।

ওকসানা ছুসোভিটিনা ও তাঁর ছেলে

    জিমন্যাস্টিকস মাঠে যখন ওকসানা ছুসোভিটিনার নাম ডাকা হয়, তখন সবাইর ভেতর তার প্রতি সম্মানও জেগে উঠে। অলিম্পিক ইতিহাসে তিনি একমাত্র নারী জিমন্যাষ্ট যিনি মোট পাঁচ বার অলিম্পিক গেমসে অংশ নিয়েছেন। পেইচিং অলিম্পিক গেমসের ফ্লোরে দাঁড়াতে পারাই তো জিমন্যাস্টিকস ইতিহাসের এক বিস্ময়। ছুসোভিটিনা সংবাদদাতাকে বলেন, 'আমি প্রথম বার অলিম্পিক গেমসে অংশ নেয়ার সময় আমার দলের সঙ্গে ছিলাম। এখন পঞ্চম বার অলিম্পিক গেমসেও আমার দলের সঙ্গে এসেছি। আমি এর জন্য আনন্দ বোধ করি। আমি খুব সুখী।'

    যদিও এবার তিনি সোনা জিতেন নি। তবে ছুসোভিটিনা যে শ্রদ্ধা, সম্মান ও করতালি পেয়েছেন তা কোন জিমন্যাষ্ট চ্যাম্পিয়নের চেয়ে কম নয়।

    পেইচিং অলিম্পিক গেমসে দর্শকরা 'স্বপ্নের দল' নামে অভিহিত করা চীনের জাতীয় ডাইভিং দলের শ্রেষ্ঠ নৈপণ্যের প্রশংসা করার পাশাপাশি রাশিয়ার বিখ্যাত ডাইভার দিমিত্রি সাউতিনকেও ভুলে নি। গত দশ বারো বছর তিনি একাই চীনের কয়েক প্রজন্মের ডাইভারের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে আসছেন। যদিও তিনি পর পর দুটি অলিম্পিক গেমসেই চ্যাম্পিয়ন হতে পারেন নি। তারপরও তাঁর ওপর তথ্য মাধ্যমের মনোযোগ ও প্রতিদ্বন্দ্বিদের শ্রদ্ধা একটুও কমে নি। আসলে এথেন্স অলিম্পিক গেমসের পর তত্কালীন ৩০ বছর বয়সী সাউতিন অবসর নেয়ার কথা ভেবেছিলেন। কিন্তু ডাইভিং এর প্রেমের কারণে তিনি আবার প্রতিযোগিতায় ফিরে এসেছেন। তিনি বলেন, 'সত্যি, এথেন্স অলিম্পিক গেমসের পর আমি অবসর নেয়ার কথা বলেছিলাম। কারণ, তখন আমি ডাইভিং ত্যাগ করে আরেকটি চাকরি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। কিন্তু পরের এক বছর আমি কিছু করি নি। আমি বুঝতে পেরেছি, ডাইভিং ছাড়া আমি নিজেকে হারিয়ে ফেলবো। ফলে আমি ফিরে এসে অব্যাহতভাবে ডাইভিং করি।'

    আরেকজন খেলোয়াড়কেও বীর বলা যায়। তিনি হচ্ছেন ডেনমার্কের নামকরা ব্যাডমিন্টন খেলোয়াড় পিটার গেদ। নিঃসন্দেহে গত দশ বছরে তিনি বিশ্বের ব্যাডমিন্টন জগতের সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ খেলোয়াড়ের অন্যতম এবং পর পর তিন বছর ধরে বিশ্বের প্রথম স্থানে ছিলেন। কিন্তু তিনি তিন বার অলিম্পিক গেমসে অংশ নিলেও কোন বারই পদক পান নি। ৪ বছর বয়স থেকে ব্যাডমিন্টন খেলা শুরু করেন, আজ পর্যন্ত গেদ ২৮ বছর ধরে ব্যাডমিন্টন খেলে যাচ্ছেন। অলিম্পিক গেমসের কোন পদক না পেলেও ব্যাডমিন্টন ও অলিম্পিক গেমসের প্রতি তাঁর গভীর ভালোবাসা আমাদের মুগ্ধ করেছে। তিনি বলেন, 'আমার মনে হয়, অলিম্পিক গেমস হচ্ছে পৃথিবীতে একমাত্র গেমস যা বিভিন্ন দেশের মানুষকে সম্মিলিত করে সুস্থ মন নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার নির্ভেজাল মঞ্চ। আমাদের উচিত এ ধারাবাহিকতা বজায় রাখা। এটা হচ্ছে অলিম্পিকের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়বস্তু।'

    সকল খেলোয়াড় চ্যাম্পিয়ন হতে পারেন না। কিন্তু সকল খেলোয়াড় অলিম্পিকে অংশ নিতে পারেন এবং উপভোগ করতে পারেন। স্বর্ণপদক প্রতিযোগিতার সন্ধিক্ষণে প্রতিটি অংশগ্রহণকারী, বিজয়ী হোক বা ব্যর্থ হোক, সবাই অলিম্পিকের গৌরব উপভোগ করতে পারেন। (ইয়ু কুয়াং ইউয়ে)

  • সাক্ষাত্কার
  • সর্বশেষ সংবাদ
  • অন-লাইন জরীপ
     
    © China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
    16A Shijingshan Road, Beijing, China