v চীনের বিশ্ব কোষv চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগ
মিয়ানমারের একজন মেয়ে নিন নিন এ
প্রিয় শ্রোতা বন্ধুরা, আপনারা চীন আন্তর্জাতিক বেতারের বাংলা অনুষ্ঠান শুনছেন। আজকের আসরে প্রথমে শুনবেন পেইচিং অলিম্পিক গেমস ২০০৮ সম্পর্কে খবর। তারপর থাকবে একটি প্রতিবেদন। পরিবেশন করছি আমি আপনাদের বন্ধু----

আন্তর্জাতিক অলিম্পিক কমিটির প্রবীণ সদস্য ও পেইচিং অলিম্পিক গেমসের সমন্বয় কমিটির সদস্য রিচার্ড কেভান গোস্পার চীন আন্তর্জাতিক বেতারের সংবাদদাতাকে দেওয়া একটি সাক্ষাত্কারে বলেছেন, ৭ বছরের প্রস্তুতির পর পেইচিং অলিম্পিক গেমস শিগগরি উদ্বোধন হতে যাচ্ছে। পেইচিং অলিম্পিক গেমস সাফল্যের সঙ্গে আয়োজিত হওয়ার ব্যাপারে তিনি আশাবাদী। তিনি গত সাত বছরে পেইচিং অলিম্পিক গেমসের প্রস্তুতি নিজের চোখে দেখেছেন। কেভান আনন্দের সঙ্গে বলেন, একটি চমত্কার অলিম্পিক গেমসের জন্য সকল শর্তই পূরণ হয়েছে। আমরা শিগগরি মহা মিলন দেখতে পারবো। আন্তর্জাতিক একক সমিতি ও বিভিন্ন দেশের অলিম্পিক কমিটির রির্পোট অনুযায়ী, আমরা সন্তুষ্টক সঙ্গে লক্ষ্য করেছি পেইচিং এখন পুরোপুরি প্রস্তুত।

পেইচিং অলিম্পিক গেমস ও প্রতিবন্ধী অলিম্পিক গেমসে অংশ গ্রহণকারী কেনিয়ার ক্রীড়া প্রতিনিধি দলের সম্মানে ২৯ জুলাই কেনিয়ায় চীনের রাষ্ট্রদূত জেন মিন একটি ভোজসভা আয়োজন করেন। ভোজসভায় রাষ্ট্রদূত জেন মিন বলেছেন, অলিম্পিক গেমস আয়োজন করা চীনের কয়েক প্রজম্মের স্বপ্ন। প্রায় তিন মাস আগে চীনে বড় ভূমিকম্প হয়েছে। কিন্তু কেনিয়া সহ বিশ্ব সম্প্রদায়ের সমর্থনে চীন সরকার ও জনগণ সে দুর্যোগ অতিক্রম করেছে । দুর্গত এলাকায় পুণর্গঠন কাজ চালানোর পাশাপাশি চীন অব্যাহতভাবে অলিম্পিক গেমসের প্রস্তুতি কাজ এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। আমাদের দৃঢ় বিশ্বাস, পেইচিং অলিম্পিক গেমস অবশ্যই একটি বৈশিষ্ট্যপূর্ণ ও উচ্চ মানের অলিম্পিক গেমস হবে। এতক্ষণ পেইচিং অলিম্পিক গেমস সম্পর্কিত খবর শুনলেন। এখন একটি প্রতিবেদন শুনবেন।

সম্প্রতি চীন আন্তর্জাতিক বেতারের উদ্যোগে চীনে অধ্যায়নরত ও কর্মরত বিদেশীদের মধ্যে চীনা ভাষার প্রতিযোগিতা আয়োজন করা হয়। প্রতিযোগিতায় অংশ গ্রহণকারীদের মধ্যে মিয়ানমারের একজন মেয়ে ছিলেন। তিনি ছিলেন তাদের মধ্যে এক মাত্র পেইচিং অলিম্পিকের স্বেচ্ছাসেবক । সুতরাং তিনি সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। মেয়েটির নাম নিন নিন এ। তার বয়স ২৫। তিনি সাবলীলভাবে চীনা ভাষা বলতে পারেন। প্রতিযোগিতায় তিনি বলেন,

এক বছরেরও বেশী সময় প্রতীক্ষায় পর অবশেষে দশ হাজারেরও বেশী আবেদনকারীর মধ্য থেকে আমি ৫ শতাধিক বিদেশী স্বেচ্ছাসেবকের অন্যতমে পরিণত হয়েছি। আমার মনে হয় আমি খুব ভাগ্যবান । এখানে আমি বলতে চাই , আমাদের সবার অংশ গ্রহণের কারনে অলিম্পিক গেমস আরও চমত্কার হবে।

নিন নিন এ মিয়ানমারে জন্ম গ্রহণ করেন। তার বাবা চীনের ইয়েনানের লোক । অল্প বয়সে ব্যবসার জন্য তার বাবা মিয়ানমারে যান। ওখানে তিনি বিয়ে করেন এবং স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন। ছোটবেলা থেকে নিন নিন বাসায় চীনের টিভি নাটকের মাধ্যমে চীনা ভাষা শিখতে শুরু করেন। ভাষায় তার প্রতিভা আছে। পরে তিনি পেইচিংয়ের রাজধানী নমার্ল বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। তিনি একজন বহিমুখী মেয়ে, নানা ধরনের সামাজিক তত্পরতায় অংশ গ্রহণ করতে আগ্রহী। এক বছর আগে যখন তিনি এই বিশ্ববিদ্যালয়ের চীনা ভাষা বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী তখন পেইচিং অলিম্পিক গেমসের জন্য সারা চীন থেকে স্বেচ্ছাসেবক সংগ্রহের খবর শোনেন। তিনি ইতস্ততঃ না করে ইন্টারনেটে নাম নিবন্ধন করেন।

কিন্তু অলিম্পিক গেমসের একজন স্বেচ্ছাসেবকে পরিণত হওয়া সহজ কাজ নয়। অনেক পরীক্ষা অতিক্রম করতে হয়। ইন্টারনেটে নিবন্ধন করার পর তিনি প্রতি দিন ইন্টারনেটে খোঁজ খবর রাখতেন। এক দিন, দু দিন, এক মাস , দু মাস--- কোনো খবরই পাচ্ছিলেন না। স্বেচ্ছাসেবক কেন্দ্রে ভর্তি হওয়ার শেষ তারিখও পার হয়ে গেছে । তখন তিনি এই আশা একেবারে ছেড়ে দেন। কিন্তু ১০ মাস পর যখন ব্যাপারটি প্রায় ভুলেই গেছেন তখনই তিনি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মৌখিক পরীক্ষা দেওয়ার বিজ্ঞপ্তি পান। তিনি বলেন,

এই বিজ্ঞপ্তি পেয়ে আমি খুব আনন্দিত হয়েছিলাম। মনে হলো আমি আমার লক্ষ্যের দিকে আরেকটি ধাপ এগিয়ে গেছি। কিন্তু যখন আমি ওখানে উপস্থিত হলাম তখন লক্ষ্য করলাম অন্য বিদেশীরা আমার চাইতে আরও ভাল চীনা ভাষা বলতে পারেন। এ দেখে আমি একটু বিষন্ন হলাম। আমি মনে মনে ভাবছিলাম, তারা সম্ভাবতঃ আমাকে পছন্দ করবেন না । আসলে আমি প্রতিযোগিতার মাঠে একজন স্বেচ্ছাসেবক হতে চাই । তারা আমাকে আদৌ নেবেন কি না সে সম্পর্কে আমার কোন ধারনা ছিল না। সুতরাং আমি সাক্ষাত্কার গ্রহণকারীকে সোজাসুসি বললাম: " আমাকে নিন, কোনো কাজেই আমার আপত্তি নেই। "

কিছু দিন পর বিশ্ববিদ্যালয় টেলিফোনে তাকে জানায় যে তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে একজন স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন। নিন নিন এর স্বপ্ন অবশেষে বাস্তবায়িত হয়েছে। আনন্দে বেশ কয়েক দিন তার ঘুম আসেনি। তার রুমে একজন পোল্যান্ডের ছাত্রী আছে। নিন নিন এর মতো তিনিও স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন। নিন নিন এ তার সঙ্গে তাদের সাফল্য উদযাপন করেছেন। কিন্তু যখন তিনি দর্শক পরামর্শ কেন্দ্রে টেলিফোন অপারেটার হিসেবে কাজে নিয়োগের খবর শুনলেন তখন কিছুটা হতাশ বোধ করলেন।

সত্যি কথা বলতে কি, তখন আমি একটু হতাশ হয়ে পড়েছিলাম। দশর্ক পরার্মশ কেন্দ্রের কাজ হল প্রতি দিন কক্ষের ভিতরে বসে টেলিফোন ধরা। ক্রীড়াবিদদেরকে দেখার সুযোগও আমার নেই। প্রতিযোগিতা দেখা তো আরও দূরের কথা। কিন্তু আমার মাথায় দ্বিতীয় চিন্তা কাজ করলো।মনে হলো কাজ যাই হোক না কেন সবই অলিম্পিকের জন্য সেবা। আসলে সব কাজ একই।

এভাবে নিন নিন এ হাজার হাজার স্বেচ্ছাসেবকের মধ্যে একজন হয়ে গেছেন। এছাড়াও তিনি ১৪ ধরনের ভাষার ১৫০০ তথ্য পরামর্শকের মধ্যে একজন । অলিম্পিক গেমস চলাকালে পেশাগত ও পুংখানুপুংখ সেবা দেওয়ার জন্য তারা অলিম্পিক সাংগঠনিক কমিটির বিশেষ প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছেন। যেমন ধরুন , বিভিন্ন ভেন্যু , ভেন্যুগুলোর প্রবেশ ও প্রস্থানের অবস্থান , কি কি জিনিসপত্র আনা নিষিদ্ধ ইত্যাদি সহ নানা ধরনের সেবা বিষয়ে প্রশিক্ষণ। প্রশিক্ষণের পর একটি কঠিন পরীক্ষা দিতে হবে ।পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পর একজন যোগ্য স্বেচ্ছাসেবক হতে পাবেন। প্রশিক্ষণের আরেকটি বিষয়বস্তু হল, টেলিফোন অপারেটারকে কিভাবে নিজের কাজের চাপ কমাতে হয়, কিভাবে পরষ্পরের সঙ্গে সহযোগিতা চালাতে হয়।

নিন নিন এ বলেন, এক দিন একজন জাপানী স্বেচ্ছাসেবক একজন ট্যাক্মি চালকের টেলিফোন ধরেছেন। ট্যাক্মি চালক বলেন, তার গাড়ীতে দু'জন জাপানী আছে। কিন্তু তিনি জাপানী ভাষা বোঝেন না।দু'জন জাপানী কোথায় যেতে চান তিনি বুঝতে পারছেন না। নিরুপায় হয়ে দর্শক কেন্দ্রে টেলিফোন করেছেন। এর পর দু'জন স্বেচ্ছাসেবকের সাহায্যে দুই জাপানী নিরাপদে গন্তব্যে পৌঁছেন। কল্পনা করা যায় না, সামন্য একটি টেলিফোন অন্যদের জন্য এত উপকারী । এই কাজ অত্যন্ত তাত্পর্যপূর্ণ। ভিন্ন দেশ ও বর্ণের স্বেচ্ছাসেবকদের সঙ্গে নিজের বৈশিষ্ট্যকে কাজে লাগানো ও অলিম্পিক গেমসে অংশ গ্রহণ করা তার জীবনের সবচেয়ে তাত্পর্যপূর্ণ ঘটনা।  

আমি এখানকার কাজ ছেড়ে দিতে পারি না। অলিম্পিক গেমসে অংশ গ্রহণ করা একজন স্বেচ্ছাসেবকের দায়িত্ব। অংশ গ্রহণ অলিম্পিক গেমসের জন্য সবচেয়ে বড় সাহায্য। চার বছর পর পর এক বার করে অলিম্পিক গেমস অনুষ্ঠিত হয়। অলিম্পিক গেমসে একজন স্বেচ্ছাসেবক হওয়া আমার সৌভাগ্য। এ ধরনের সুযোগ আমার জীবনে আর আসবে না।

অলিম্পিক গেমস চলাকালে মিয়ানমার থেকে আসা স্বদেশীদের জন্য ভাষা সেবা দেওয়া নিন নিন এর সব আকাংক্ষা। তিনি বেতারের মাধ্যমে অলিম্পিক গেমসে আগ্রহী সকল শ্রোতাকে বললেন,  

আমাদের টেলিফোন নম্বর ১২৩০৮য়ে যে কোনো সময় ফোন করতে স্বাগত জানাচ্ছি। যদি বিদেশ থেকে দূর পাল্লার টেলিফোন করেন তাহলে সামনে চীনের কোড নম্বর ০০৮৬ ও পেইচিং শহরের কোড নম্বর ১০ যুক্ত করবেন। আমাদের সেবায় সতুষ্ট হবেন বলে আমি আশা করি।

এতক্ষণ একটি প্রতিবেদন শুনলেন। শোনার জন্য ধন্যবাদ।

  • সাক্ষাত্কার
  • সর্বশেষ সংবাদ
  • অন-লাইন জরীপ
     
    © China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
    16A Shijingshan Road, Beijing, China