আপনাদের অনেকের কাছেই হয়তো কুয়াং সি নামটি পরিচিত। কুয়াংসির বিশ্ববিখ্যাত কুই লিনের পাহাড়, পানি ও বর্নাঢ্য স্থানীয় রীতিনীতিতে মুগ্ধ হয়ে অনেক বন্ধু সেখান থেকে যেতেই চাইবেন না। বন্ধুরা, আপনারা যদি কুয়াং সি এবং সেখানকার মজার কোনো
জায়গা প্রাণভরে উপভোগ করতে চান, তাহলে আমাদের 'কুয়াং সি'র সৌন্দর্য্য' নামের বিশেষ অনুষ্ঠানটি শুনুন। এই বিষয় নিয়ে পর্যটন সাধারণ জ্ঞান প্রতিযোগিতায়ও আমরা আপনাদের অংশ গ্রহণকে স্বাগত জানাই। আজ ৪ পর্বের সেই বিশেষ অনুষ্ঠানের প্রথম পর্ব 'সুন্দর নদী সুন্দর দৃশ্য' প্রচারিত হচ্ছে।
অনুষ্ঠান শুরু হওয়ার আগে আমরা আপনাদেরকে দুটি প্রশ্ন দিচ্ছি। প্রথম প্রশ্নটি হচ্ছে কুই লিন শহরের প্রতীক কী? দ্বিতীয়টি, লি চিয়াং নদীর দৈর্ঘ্য কত? আশা করি আপনারা আমাদের অনুষ্ঠান মনোযোগ দিয়ে শুনছেন। এখনই আমরা এ দুটি প্রশ্নের উত্তর জানিয়ে দেবো।
চীনে ভ্রমণকারী বিদেশী পর্যটকদের মধ্যে একটি কথা চালু আছে সেটি হচ্ছে, পুরাকীর্তি নিদর্শন দেখতে চাইলে সি আনে যান এবং ভূদৃশ্য দেখার জন্য কুই লিনে যান। কুই লিন লি চিয়াং দর্শনীয় স্থানে অনেক বিখ্যাত দৃশ্য আছে। অল্প সময়ের জন্য ভ্রমণ করলে সবাই প্রধান প্রধান দৃশ্যগুলো বাছাই করেন। মধ্যে লি চিয়াং নদী, লু দি ইয়ান, ছি সিং ইয়ান, দু সিউ ফেং, ফু বো শান ও তিয়ে ছাই শান হচ্ছে কুই লিনের সেরা ভূদৃশ্য। এ সব বিখ্যাত দৃশ্যের মধ্যে কুই লিন শহরের প্রতীক হচ্ছে সিয়াং বি শান বা হাতি শুঁড় পাহাড়।
লিন চিয়াং নদীর তীরে দাঁড়ানো হাতি শুঁড় পাহাড় হচ্ছে কুই লিন শহরের প্রতীক। পাহাড়টি কুই লিন শহরের থাও হুয়া নদী ও লিন চিয়াং নদীর মিলন স্থলে অবস্থিত। এটা কুই লিন শহরের বিখ্যাত পাহাড়গুলোর মধ্যে একটি। ৩০ কোটি বছরেরও আগে সমুদ্রের তলদেশে গচ্ছিত চুনাপাথরে পাহাড়টি গঠিত হয়। পাহাড়টির আকৃতি একটি বড় হাতি শুঁড় লম্বা করে নদীর পানি খেলে যেমন দেখায় ঠিক তেমন। হাতির শুঁড় একটি লম্বা গোল গর্ত আছে। নদীর পানি এর মধ্য দিয়ে শরীরে যায়। হাতি শুঁড় পাহাড়ের নিচে বসবাস করা মা ওয়েই মিন আমাদেরকে হাতি শুঁড় পাহাড় সম্পর্কে একটি প্রাচীন জনশ্রুতি বলেছেন। তিনি বলেন,
(রি-১)
চীনের প্রাচীন জনশ্রুতি আছে স্বর্গের রাজার কিছু সংখ্যক স্বর্গীয় হাতি কুই লিনে এসে সুন্দর দৃশ্য দেখে মুগ্ধ হয়ে আর স্বর্গে ফিরে যেতে চায় নি। হাতিগুলোকে স্বর্গে ফিরে যাওয়ার জন্য স্বর্গের রাজা শেষ পর্যন্ত রাজাজ্ঞা জারি করেন। এর পরও একটি হাতি কোনো ভাবেই ফিরে যেতে চায় নি। সে জিদ ধরে যে কুই লিনের সুন্দর দৃশ্য ছেড়ে কিছুতেই যাবে না। এতে স্বর্গের রাজা খুব খেপে যান। তিনি একটি তরবারি দিয়ে হাতিটিকে হত্যা করেন। তখন থেকে হাতি ও তার ঘাতক তরবারি চিরদিনের জন্য কুই লিনে থেকে যায়।
কুই লিনের সুন্দর দৃশ্যে পর্যটকরা রীতিমতো নেশাগ্রস্ত হয়ে পড়েন। লি চিয়াং নদীর তীরে বেড়ানো, চা খাওয়া বা ছিপে মাছ ধরাটা পর্যটকদের অবসর বিনোদন। কুই লিন শহরের পর্যটন ব্যুরোর কর্মকর্তা ছেন ইউন ছুন বলেছেন, এখানকার প্রাকৃতিক পরিবেশ সংরক্ষণের জন্য পর্যটন উন্নয়নের মৌলিক নীতি হচ্ছে সংরক্ষণের পূর্ব শর্তে উন্নয়ন। তিনি বলেন,
(রি-৩)
পরিবেশ সংরক্ষণ হচ্ছে প্রথম। পরিবেশ সংরক্ষণ পরীক্ষায় পাস না করা প্রকল্প আমরা অনুমোদন করি না। কুই লিনের বর্তমান উন্নয়নে ধোঁয়া বা দূষণ নির্গমনকারী কারখানার অনুমতি দেওয়া হয় না। শুধু উন্নত প্রযুক্তির শিল্প উন্নয়ন করা হয়।
কুই লিনে ভ্রমণ শেষে অধিকাংশ পর্যটক ইয়াং সু জেলায় যান। কারণ ইয়াং সু'র দৃশ্য কুই লিনের চেয়ে আরো সুন্দর। উত্তর কুই লিন শহরের মাও এর শান বেড়াল পাহাড় ৪শ' কিলোমিটারেরও বেশি দীর্ঘ লি চিয়াং নদীর উত্সস্থল। কুই লিন শহর থেকে ইয়াং সু জেলা প্রায় ৮৩ কিলোমিটার দূরে। নদীর দু'পারের দৃশ্য ময়োবী এবং এটা বিশ্বের বৃহত্তম ও সবচেয়ে সুন্দর চুনাপাথুরে অঞ্চল। লি চিয়াং নদীর দু'পারে সারি সারি চূড়া, সবুজ বাঁশ, ঘন বন, মাঠ, পাহাড়ি ঘর এবং জেলে গ্রাম দেখা যায়। জার্মান পর্যটক হেরমাওয়া হার্থ বলেছেন, নৌকায় করে লি চিয়াংয়ে ভ্রমণ করে আসার পথে সব দৃশ্য এতো সুন্দর যে কেবলই হাতছানি দিয়ে ডাকতে থাকে। তিনি বলেন,
(রি-৪)
লি চিয়াং-এ আসার আগে আমি অনেক ছবি দেখেছি। তবে নিজ চোখে দেখে আরো সুন্দর মনে হয়েছে। আমার মনে হয় এটি ছবির মতো সুন্দর। আমার নিজের জন্মস্থানেও সুন্দর দৃশ্য আছে। তবে জায়গাটি খুব বড় না।
ইয়াং সু জেলায় যখন রাত নামে তখন সে সময়ের লি চিয়াং নদী মঞ্চে রূপ নেয়। ইয়াং সু'র ভেতরে নদীতে ২ কিলোমিটার জুড়ে বসে বিশাল নাচগানের আসর 'লিউ সান চিয়ে ছাপ'। অন্ধকার রাতে দূর থেকে হৃদয়গ্রাহী পাহাড়ী গান ভেসে আসে। হঠাত্ আলো উজ্জ্বল হয়ে ওঠে, লি চিয়াং নদীর অপর পাড়ের পাহাড়গুলোও হঠাত সামনে এসে দাঁড়ায়। এসময় দর্শকরা বিস্মিত হয়ে হাততালি দিতে থাকেন।
(রি-৫)
মোট ৬ শতাধিক শিল্পী এই আসরে অংশ নেন। তাদের মধ্যে অধিকাংশই অপেশাদার অভিনেতা-অভিনেত্রী। তারা স্থানীয় কৃষক। প্রায় ৭০ মিনিটের পরিবেশনায় তারা দর্শকদের জন্য লি চিয়াং নদীর তীরে জেলেদের প্রাচীন শৈলী ও অনাড়ম্বর দৈনন্দিন জীবন এবং এই অঞ্চলে সংখ্যালঘু জাতির রীতিনীতি নিবেদন করে থাকেন। তারা ফসল ফলানো, গরু চরানো ও চুয়াং জাতির কিংবদন্তীর পাহাড়ি গান পরিবেশন করেন। এ সব গান ভূদৃশ্যের সঙ্গে মিলে মিশে একাকার হয়ে যায়।
জার্মান দম্পতি লাউবিস এই নাচগানের প্রশংসায় পঞ্চমুখ। এটা তাদের প্রথম চীন ভ্রমণ। আগে পরিকল্পনা ছিল এক সপ্তাহ চীনে থাকবেন। এখন তারা আরো বেশি সময় থাকতে চান। টমাস লাউবিস বলেন,
(রি-৬)
এতো সুন্দর এই জায়গা! অবশ্যই এটা আমাদের সর্বশেষ চীন বা এশিয়া ভ্রমণ হবে না।
নাচগানের আসর 'লিউ সান চিয়ে ছাপ' উপভোগ করার পর পর্যটকরা ইয়াং সু-এ রাত কাটাতে খুব পছন্দ করেন। ইয়াং সু জেলার দৃশ্য কুই লিনের চেয়ে আরো সুন্দর শুধু সে কারণেই নয়, একটি প্রাচীন সড়কও পর্যটকদেরকে খুব আকর্ষণ করে। প্রাচীন সড়কটির দৈর্ঘ্য ৫ শ মিটারের মতো হলেও পশ্চিম সড়ক নামের এই সড়কের ইতিহাস ১ হাজার ৪ শতাধিক বছরের। নীল পাথর দিয়ে নির্মিত প্রাচীন সড়কের দু'পাশে ধূসর ঘর। এই ধরনের 'চীনা স্টাইল' হাজার হাজার বিদেশী পর্যটকদেরকে খুব টানে।
আলফ ইয়াং একজন অস্ট্রেলিয়ান। ৫ বছর আগে যখন তিনি চীন ভ্রমণে এসেছিলেন তখন তার কল্পলোকের আদর্শ পৃথিবীর সঙ্গে মিলে গিয়েছিল দৃশ্য যে কারণে তিনি আর জায়গাটি ছেড়ে যান নি। এরপরে সেখানে বিয়ে করেছেন, তাদের বাচ্চাও হয়েছে। তারা পশ্চিম সড়কে 'বাফেলো বার' নামে একটি বার খুলেছেন। আলফ ইয়াং বলেছেন, তিনি সারা জীবন পশ্চিম সড়কে থাকতে চান।
(রি-৮)
আমি এখানে ৫ বছর আছি। আমার দারুন পছন্দ এই জায়গা। পশ্চিম সড়ক পশ্চিমা দেশগুলোর মতো। এখানে অনেক মানুষের সঙ্গে বন্ধুত্ব হয়। কথাবার্তা বলেও ভালো লাগে। ইয়াং সু'র দৃশ্য খুব সুন্দর। সাইকেলে করে সড়কে বেড়াতে যাওয়া যায়। গ্রীষ্মকালে সাঁতার কাটা যায়। এ সব কারণে আমি এখানে বাস করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আমার স্ত্রীর সঙ্গেই এখানেই ভালোবাসার সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এখন আমাদের বাচ্চা আছে। আমার ভবিষ্যত জীবন পশ্চিম সড়কেই কাটবে।
এক কাপ কফি নিয়ে পশ্চিম সড়কের পাশে বসে আপনি প্রিয় বই পড়তে পারেন। বারে অনেক বন্ধুদের সঙ্গে হৈচৈ করে বিয়ার খেতে পারেন। আপনি যেভাবেই আনন্দ করতে চান পশ্চিম সড়ক তাতে না বলবে না। কারণ পশ্চিম সড়ক হচ্ছে মুক্ত অঞ্চল। এখানে থাকলে আপনিও স্বাধীন।
প্রিয় শ্রোতাবন্ধুরা, যদি আপনাদের ইচ্ছা থাকে, আপনারাও লি চিয়াং-এ নিজ চোখে দেখে আসতে পারেন। আজকের 'চলুন বেড়িয়ে আসি' অনুষ্ঠান এখানেই শেষ করছি। সবশেষে আমি আজকের দুটি প্রশ্ন আবার বলি। প্রথমটি, কুই লিন শহরের পর্যটন প্রতীক কী? দ্বিতীয়টি, লি চিয়াং নদীর দৈর্ঘ্য কত? আপনারা চিঠি পাঠালে বাংলা সার্ভিস, সি আর আই-১১, চীন আন্তর্জাতিক বেতার, পি.ও. বক্স ৪২১৬, পেইচিং, পি.আর. চাইনা—১০০০৪০। আমাদের ইমেইল ঠিকানা হচ্ছে ben@cri.com.cn. এবারের প্রতিযোগিতা ২০০৮ সালের ৬ অক্টোবর পর্যন্ত চলবে। ওয়েব-সাইটে ২০০৮ সালের ৬ অক্টোবর রাত ১২টা পর্যন্ত আপনি এতে অংশ নিতে পারবেন। আপনাদের অংশ গ্রহণকে আবারো স্বাগত জানাই। |