বিশেষ অনুষ্ঠান 'কুয়াং সি'র সৌন্দর্য'-এ আপনাদেরকে স্বাগত জানাচ্ছি আমি খোং চিয়া চিয়া। আজও আমার সঙ্গে রয়েছেন অমিত হাবিব। কুয়াং সি চুয়াং জাতি স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল দক্ষিণ-পশ্চিম চীন ও ভিয়েতনাম সীমান্তে অবস্থিত। কুয়াংসি হচ্ছে চীনের গুরুত্বপূর্ণ সীমান্ত প্রদেশ ও অঞ্চলগুলোর মধ্যে একটি। আজকের অনুষ্ঠানে আমরা আপনাদেরকে চীনের শেষ প্রান্তে নিয়ে যাবো। আপনারা নিজেরাই বুঝবেন সেখানকার প্রকৃতি ও সংস্কৃতি কতো আকর্ষণীয়।
অনুষ্ঠান শুরু করার আগে যথারীতি আপনাদেরকে প্রথমেই প্রশ্ন দুটি জানিয়ে দিচ্ছি। প্রথম প্রশ্নটি হচ্ছে চুয়াং জাতির প্রাচীনতম তারের বাদ্যযন্ত্রের নাম কী? দ্বিতীয় প্রশ্নটি হচ্ছে তে থিয়ান জলপ্রপাত চীন ও কোন দেশের সীমান্তে অবস্থিত? আশা করি আপনারা আমাদের অনুষ্ঠান মনোযোগ দিয়ে শুনছেন। এখনই আপনারা জানতে পারবেন প্রশ্ন দু'টির উত্তর।
গাড়িতে করে কুয়াং সি স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের রাজধানী নান নিং থেকে পশ্চিম দিকে আধ ঘন্টা গেলেই ভিয়েতনাম সংলগ্ন ছোং চুও শহরের নিং মিং জেলায় পৌঁছানো যায়। নিং মিং জেলায় চুও চিয়াং নদীর তীরে উত্তরাধিকারসূত্রে প্রাপ্ত প্রাচীন ম্যুরাল সবচেয়ে বিখ্যাত । এ সব ম্যুরাল পাহাড়ের উঁচু চূড়ায় আঁকা। বইপত্র ঘেঁটে দেখা গেছে এর ইতিহাস ২ হাজার বছরেরও বেশি সময়ের এবং সম্ভবত চুয়াং জাতির পূর্বসূরীরা ম্যুরালগুলো এঁকেছেন।
নৌকায় করে চুও চিয়াং নদীতে ভ্রমণ করলে চূড়ার গায়ে আঁকা ম্যুরালগুলো দেখা যায়। সবচেয়ে বড় ম্যুরালটি ২শতাধিক মিটার চওড়া এবং উচ্চতা প্রায় ৪০ মিটার। সবগুলো ম্যুরালের মানুষগুলোকে দেখলে মনে হবে নৃত্যরত। বিশেষজ্ঞদের ব্যাখ্যা অনুযায়ী, ম্যুরালগুলোর বিষয়বস্তু হচ্ছে বাম্পার ফলনের সময়ে মানুষের দেহভঙ্গী যা কিছুটা শ্রদ্ধা নিবেদনের মতোও মনে হয়। এতো আগে চুয়াং জাতির পূর্বসূরীরা কী ভাবে এতো উঁচু চূড়ায় ছবি এঁকেছেন? তারা কী ধরনের উপাদানের রং ব্যবহার করেছেন যা হাজার বছরেও এতোটুকু ম্লান হয় নি? এ সব রহস্য প্রত্নতাত্বিকদের গবেষণার বিষয়।
চুওচিয়াং নদীতে ভ্রমণ করলে চারদিক থেকে সারাক্ষণ স্থানীয় চুয়াং জাতির মেয়েদের গান ভেসে আসে। প্রতিটি মেয়ের হাতে 'থিয়ান ছিন' নামে চুয়াং জাতির বিশেষ তারের বাদ্যযন্ত্র । এই ধরনের প্রাচীন তারের বাদ্যযন্ত্র হাজার বছর ধরে প্রচলিত রয়েছে। এখনো চুয়াং জাতির মানুষের লোক সঙ্গীতের প্রধান বাদ্যযন্ত্র থিয়ান ছিন। এখন আপনারা যে গানটি শুনছেন তাতে স্থানীয় চুয়াং জাতির মেয়েরা সংগীত দিয়েছেন থিয়েন ছিন দিয়ে। গানটির নাম 'সুন্দর কুয়াং সি'।
নিংমিং জেলা থেকে পশ্চিম দিকে ঘন্টা খানেকের মধ্যে গাড়িতে করে সীমান্তের ছোট শহর পিং সিয়াং-এ যাওয়া যায়। চীন-ভিয়েতনাম সীমান্তে 'ইয়ো ই কুয়ান' মৈত্রী কৌশলগত গিরিদ্বার হচ্ছে পিং সিয়াং-এর গুরুত্বপূর্ণ পর্যটন স্থান। চীনে এ ধরনের মোট ৯টি বিখ্যাত কৌশলগত গিরিদ্বার আছে। যেমন হোপেই প্রদেশের শানহাই গিরিদ্বার, কানসু প্রদেশের চিয়া ইয়ু গিরিদ্বার এবং পেইচিং-এর উপকন্ঠের চুই ইয়োং গিরিদ্বার ইত্যাদি। এ সব সামরিক কৌশলগত গিরিদ্বার আর যুদ্ধের কাজে ব্যবহৃত হয় না। এখন এগুলো দর্শনীয় স্থান হিসেবে খুলে রাখা হয়। তবে একমাত্র মৈত্রী গিরিদ্বারটি এখনও চীন-ভিয়েতনাম সীমান্তে যোগাযোগ ও লেনদেনের গুরুত্বপূর্ণ রাজপথ। প্রাচীনকাল থেকে মৈত্রী গিরিদ্বার একটি কৌশলগত ও গুরুত্বপূর্ণ জায়গা। উনবিংশ শতাব্দীর শেষ দিকে চীনের সেনাবাহিনী এখানেই অনুপ্রবেশকারী ফরাসী বাহিনীকে পরাভূত করেছিলো।
গাড়িতে করে পিং সিয়াং-এর মৈত্রী গিরিদ্বার থেকে উত্তর দিকে প্রায় দু'ঘন্টার পথ পেরুলে চীন-ভিয়েতনাম সীমান্তের অন্য আরেক জেলা—তা সিন। তা সিন জেলার দুটো দর্শনীয় স্থান দেশী-বিদেশী পর্যটকদেরকে আকর্ষণ করে। একটি হচ্ছে মিং শি বাগান। আরেকটি আন্তঃদেশীয় তে থিয়ান জলপ্রপাত। মিং শি বাগানের নাম থেকেই বোঝা যায় যে, এটি কুয়াংসি'র গ্রামীণ অরণ্য। পর্যটকরা বাঁশের নৌকায় করে মিংশি নদীতে বেড়াতে পারেন। নদীর দু'পাশে কৃষি জমি, পানিকল ও বাঁশ বন। দূরে সবুজ পাহাড়। এই প্রাকৃতিক পরিবেশে গেলে মনটা খুব ভালো হয়ে যায়। তাইওয়ানের পর্যটক লুও ছাই ছিং প্রথম বারের মতো কুয়াংসিতে এসেছেন। তিনি সংবাদদাতাকে বলেন, খুব সুন্দর। পাহাড়গুলো আগে আমরা কখনও দেখি নি।
কিছু শ্রোতাবন্ধু হয়তো এরই মধ্যে জানেন যে, কুই লিনের দৃশ্যাবলী বিশ্বসেরা। তবে মিংশি বাগানের দৃশ্যটি একেবারেই আলাদা। মিংশি বাগান ছেড়ে যাওয়ার আগে এমন দৃশ্যও দেখেছি যে, একজন কৃষক গরু দিয়ে জমি চষছেন। কাছেই গ্রামের ওপরে কুন্ডলী পাকিয়ে ধোঁয়া উঠছে। এতো সুন্দর বাগান কেবল রূপকথায় পাওয়া যায়।
তে থিয়ান জলপ্রপাত দু'দেশ জুড়ে। এটি চীন ও ভিয়েতনাম সীমান্তে কুই ছুন নদীর উচ্চ অববাহিকায় অবস্থিত। কুই ছুন নদীর উত্স চীনে। নদীটি কুয়াংসি থেকে ভিয়েতনামে প্রবাহিত হয়ে আবারও কুয়াংসি'তে ফিরে এসেছে। পুরো জলপ্রপাত চওড়ায় ১শ' মিটার এবং উচ্চতায় ৮০ মিটার। এটি এশিয়ার বৃহত্তম এবং বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম আন্তঃদেশীয় জলপ্রপাত। গ্রীষ্মকালে তে থিয়ান জলপ্রপাতের পানি যেন ঢল নামে। ওপর থেকে নীচ পর্যন্ত জলপ্রপাতের তিনটি স্তর রয়েছে। দেখতে খুব সুন্দর ও বর্নাঢ্য। এতো বড় জলপ্রপাত যে দেখলে বিস্ময় জাগে। দূর থেকে জলপ্রপাতের গর্জন শোনা যায়।
জলপ্রপাতের পাশে দাঁড়ালে, কুই ছুন নদীর উল্টো দিকে ভিয়েতনাম এবং মাঝখানে চীন-ভিয়েতনাম সীমান্ত ফলক। মিংশি বাগানের মতো কুই ছুন নদীর তীরেও বংশপরম্পরায় বসবাসকারীরা ঢালে ফসল ফলায় আর নদীতে ছিপ দিয়ে মাছ ধরে। এক দিকে অবিরাম জলপ্রপাত এবং চোখের সামনে কৃষকদের কৃষি কাজ। পাশে কুই ছুন নদীর জল বয়ে যাচ্ছে কুলু কুলু ধ্বনিতে। এখানে এলে মুখ থেকে আপনাআপনিই বেরিয়ে আসে বাহ, কি চমত্কার! পর্যটকরা ভাষা খুঁজে না পেয়ে বলেন, স্বর্গীয়। তাইপেইয়ের পর্যটক লিন ইয়োং চেন বলেন,
এখানকার পাহাড় ও নদী দেখতে দারুণ। জলপ্রপাত পানি প্রবাহ ঋতু ও বৃষ্টিপাতের সঙ্গে সম্পর্কিত। এখন পানির পরিমাণ খুব বেশি নয়। আমার মনে হয় বেশি বৃষ্টির সময় এই দৃশ্য আরো সুন্দর হয়ে ওঠে।
লিন ইয়োং চেন বলেছেন, মিংশি বাগান ও তে থিয়ান জলপ্রপাতের দৃশ্য চমত্কার। এখানে শহরের চেঁচামেচি হৈ হুল্লোড় নেই, যেন স্বর্গের মতো। শহর থেকে অনেক দূরে যেন লুকিয়ে থাকা এক সৌন্দর্য। সেজন্যেই মানুষ এই সৌন্দর্য দেখে এক ধরনের রহস্যময়তা অনুভব করেন। তিনি সবাইকে স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন যে, ভ্রমণ করতে এলে এখানকার পাহাড়, নদী, ঘাস বা গাছের যত্ন নেওয়া উচিত। কারণ সুন্দর দৃশ্য কারোর নষ্ট করা উচিত নয়।
প্রিয় শ্রোতাবন্ধুরা, আজকের 'কুয়াং সি'র সৌন্দর্য' বিশেষ অনুষ্ঠানের শেষ প্রান্তে চলে এসেছি আমরা। সবশেষে আমি আজকের দুটি প্রশ্ন আবার স্মরণ করিয়ে দিচ্ছি। প্রথম প্রশ্নটি হচ্ছে চুয়াং জাতির প্রাচীন তারের বাদ্যযন্ত্রের নাম কী? দ্বিতীয় প্রশ্নটি হচ্ছে তে থিয়ান পাহাড়ি ঝরনা চীন ও কোন দেশের সীমান্তে অবস্থিত? আপনারা চিঠি পাঠালে বাংলা সার্ভিস, সি আর আই-১১, চীন আন্তর্জাতিক বেতার, পি.ও. বক্স ৪২১৬, পেইচিং, পি.আর. চাইনা—১০০০৪০। আমাদের ইমেইল ঠিকানা হচ্ছে ben@cri.com.cn. এবারের প্রতিযোগিতা ২০০৮ সালের ৬ অক্টোবর পর্যন্ত চলবে। ওয়েব-সাইটে ২০০৮ সালের ৬ অক্টোবর রাত ১২টা পর্যন্ত আপনি এতে অংশ নিতে পারবেন। চীন আন্তর্জাকিত বেতার এবং কুয়াং সি পর্যটন ব্যুরো এক সঙ্গে আয়োজন করা পর্যটন প্রতিযোগিতায় আপনাদের অংশ গ্রহণকে আবারো স্বাগত জানাই। |