v চীনের বিশ্ব কোষv চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগ
হুপেই প্রদেশের চোংসিয়াং শহরের কৃষকরা জাপানে গিয়ে উন্নত প্রযুক্তি ও ব্যবস্থাপনা শিখছেন
2008-08-01 09:38:33

   চীনের মধ্যাঞ্চলের হুপেই প্রদেশের চোংসিয়াং শহরের জমি খুব উর্বর। এখানকার ফসল ও কৃষিপণ্যের বৈচিত্র্য অনেক বেশি। অনেক আগে থেকে স্থানীয় কৃষকরা এসব জমিতে চাষ করে আসছেন। কিন্তু সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এখানে কিছু আকস্মিক পরিবর্তন ঘটেছে। বেশি বেশি মানুষ জাপানে গিয়ে কৃষি বিজ্ঞান নিয়ে গবেষণা ও লেখাপড়া করতে শুরু করেছেন। তারপর তাঁরা নিজের শেখা উন্নততর কৃষি প্রযুক্তি ও ব্যবস্থাপনার অভিজ্ঞতা নিয়ে জন্মস্থানে ফিরে আসছেন। আজকের অনুষ্ঠানে আমি চোংসিয়াং শহরের কৃষকদের জাপানে অধ্যয়ন নিয়ে আপনাদের সঙ্গে কিছু কথা বলবো।

    বর্তমানে চোংসিয়াং শহরের সুইওয়ান গ্রামে শতাধিক পশু পালক পরিবার রয়েছে। হো চিয়া কুও-এর নেতৃত্বে এই ব্যাপক পশু পালনে সাফল্য এসেছে। হো চিয়া কুও-এর সফলতার পেছনে রয়েছে তাঁর জাপানে অধ্যয়ন। জাপানে গিয়ে লেখাপড়া সম্পর্কে চোং সিয়াং শহরের প্রথম কৃষক হিসেবে হো চিয়া কুও বলেন,

    প্রশিক্ষণ নেওয়ার জন্য চীন জাপানে কৃষক পাঠাচ্ছেএই খবর শুনে আমি অবাক হয়েছিলাম। একজন কৃষক হিসেবে আমি এখন ভাবতে শুরু করি, আমারও বিদেশে যাওয়ার সুযোগ আছে।

    হো চিয়া কুও ১৯৯৮ সালে জাপানের ইবারাকি -কেন জেলায় গিয়ে মিষ্টি মেলন ও স্ট্রবরির চাষের প্রযুক্তি শেখেন। সেখানে জীবন এক বছরের লেখাপড়ার সময় তিনি মিষ্টি মেলন ও স্ট্রবরির চাষের প্রযুক্তি ভালোভাবে আয়ত্ত করেন। তা ছাড়া তিনি নিজেই উপলব্ধি করেছেন যে, জাপানের কৃষকদের নিজেদের উদ্যোগে গঠিত সমবায় সহযোগিতা ব্যবস্থা, অর্থাত্ জাপানী কৃষি বিষয়ক সহযোগিতা সংস্থা কৃষকদের উত্পাদন, ব্যবস্থাপন, আয় বৃদ্ধি এবং ব্যয় কমানোর ক্ষেত্রে ব্যাপক ভূমিকা পালন করছে।

    জাপানী কৃষি সহযোগিতা সংস্থার দায়িত্ব হলো কৃষকদেরকে উত্পাদন উপকরণ, অর্থ, বীমা ও নির্দেশনাসহ বিবিধ ধরণের সেবা দেওয়া।

    জাপানের কৃষি উত্পাদনের অভিজ্ঞতা থেকে হো চিয়া কুও ব্যাপক পান। তিনি ভাবতে থাকেন, নিজের জন্মস্থানে তিনি এ ধরণের সহযোগিতা ব্যবস্থা গড়ে তুলতে পাবরেন কিনা?

    জন্মস্থানে ফিরে আসার পর হো চিয়া কুও-এর উদ্যোগে কয়েক জন পশু পালকের নিয়ে একটি পশু পালন সমিতি প্রতিষ্ঠিত হয়। তিনি প্রতিটি কৃষি পরিবারের সঙ্গে একটি চুক্তি স্বাক্ষর করেন। প্রতিটি কৃষি পরিবার দু'শ রেনমিনপির সঞ্চয় নিয়ে সমিতিতে যোগ দেন। বিনিময়ে সমিতি তাদের জন্য পশু খাদ্য এবং সময় মতো তাদেরকে পশু পালনের প্রযুক্তি পৌঁছে দেয়।

    এই সমিতির সদস্যের সংখ্যা আগের ৭ জন থেকে বর্তমানে দুই শতাধিকে দাঁড়িয়েছে। সমিতিতে যোগ দেওয়ার পর পশু পালকরা সরাসররি বহু উপকার পেয়েছেন। বর্তমানে প্রতি বছর পশু পালকদের মাথা পিছু নিট আয় ২৫ হাজার রেনমিনপি ছাড়িয়ে গেছে।

    চোং সিয়াং শহরের চিন তিয়ান গ্রামে আরেক জন জাপান ফেরত কৃষক থাকেন। তাঁর নাম চাং কুয়াংমিং। ২০০৫ সালে জাপানে যাওয়ার পর তাঁর চোখে সবকিছুই যেন নতুন ছিল। তিনি বলেন, বিশেষ করে জাপানের কৃষি প্রযুক্তি ও যন্ত্রায়ন তাঁর মনে গভীর ছাপ ফেলেছে।

    আমি জাপানের ইবারাকি-কেন জেলার জাপানী কৃষি বিষয়ক সহযোগিতা সংস্থায় যোগ দিয়েছি। আমার মনিব ধান ও লেটুসের চাষ করছিলেন। আমি তার কাছ থেকে অনেক কিছু শিখেছি।

 

    চাং কুয়াংমিং প্রায়ই ভাবতেন, আমি জাপানে যেতে পেরেছি, এটি পরেছি একটি দুর্লভ সুযোগ। তাই জন্মস্থানে ফিরে যাওয়ার পর আমাকে কিছু বাস্তব কাজ করতে হবে। তিনি বলেন,

    নতুন সমাজতান্ত্রিক গ্রামাঞ্চল নির্মাণের দাবি অনুযায়ী আমাদেরকে প্রযুক্তির অধিকারী নতুন কৃষক হতে হবে। ২০০৫ সালে আমি জাপানে এক বছর লেখাপড়া করেছি। এটি আমাকে একটি প্ল্যাটফর্ম যুগিয়েছে। এক বছরের চেষ্টায় আমি জাপানের উন্নততর কৃষি প্রযুক্তি শিখেছি। জন্মস্থানে ফিরে যাওয়ার পর আমি ঐতিহ্যবাহী কৃষির সঙ্গে আমার শেখা উন্নততর কৃষি প্রযুক্তি সমন্বিত করেছি এবং সাধারণ নিয়ম ভেঙ্গে দিয়েছি। যেমন, এ বছর আমি মোট ০.৫ হেক্টর তুলার জমিতে তরমুজের চাষ করেছি, ০.২ হেক্টর ধানের জমিতে সর্ষের চাষ করেছি এবং ০.৩ হেক্টর ধানের জমিতে গমের চাষ করেছি। এভাবে সনাতলী কৃষির চাষের চেয়ে আমার আয় ৩০ শতাংশেরও বেশি বেড়েছে। এরপর আমি এ ধরণের উন্নততর চাষের অভিজ্ঞতা চোং সিয়াং শহরের আরো বেশি কৃষকের কাছে পৌঁছে দেবো।

    জানা গেছে, জাপান যাওয়ার আগে চোংসিয়াং শহরের এসব কৃষককে তিন মাসব্যাপী জাপানী ভাষা প্রশিক্ষণ নিতে হয়। চোংসিয়াং শহরের সিন শি চি নামে কৃষি সহযোগিতা সংস্থার প্রশিক্ষণ শিবিরে আমাদের সংবাদদাতা দশ জনেরও বেশি নারীকে দেখেছেন। তারা এখানে প্রশিক্ষণ পাওয়ার পর জাপানে যাবেন। জানা গেছে, তাদের জাপান যাওয়ার প্রধান উদ্দেশ্য হলো দুধেল গরুর লালন পালন প্রযুক্তি শেখা। ওয়াং পিং নামের একজন নারী বলেন,

    প্রথমত, আমি পরিবারের আর্থিক অবস্থার উন্নতি করতে চাই। দ্বিতীয়ত, আমি উন্নততর কৃষি প্রযুক্তি শিখতে চাই।

    ওয়াং পিং আমাদের সংবাদদাতাকে আরো জানিয়েছেন, তার মতো এ ধরণের গ্রামীণ নারীর পক্ষে আগে বিদেশ যাওয়া অসম্ভব ছিল। এখন তারা স্বদেশ থেকে বের হতে এবং বহির্বিশ্ব দেখতে পারেন।

    চোং সিয়াং শহরের সিন শি চি নামে কৃষি সহযোগিতা সংস্থার প্রশিক্ষণ বিভাগের কর্মকর্তা চাও চিউ বলেন, এখানে প্রশিক্ষণপ্রাপ্তরা প্রতিদ্বন্দ্বিতার মাধ্যমে নির্বাচিত গ্রামাঞ্চলের সেরা তরুনতরুনী। তিনি আরো বলেন,

    যারা জাপানে অধ্যয়ন করেন তারা প্রথমত জাপানের উন্নততর ধারণা শেখেন, দ্বিতীয়ত তারা জাপানের মতোই চীনে তা ব্যবহার করেন।

    এ পর্যন্ত চোং সিয়াং শহর ৭৯টি দলে মোট ১১০০ জনেরও বেশি লোক জাপানে পাঠিয়েছে। তারা সবজি ও ফলের চাষ এবং দুধেল গরু পশু পালনসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রের প্রযুক্তি শিখেছেন। চোং সিয়াং শহরের মেয়র থিয়ান ওয়েনবিয়াও বলেন,

    জাপানে কৃষকপাঠানোর মাধ্যমে আমাদের শহরের কৃষকদের আয়ে বেড়েছে। তাই নয়। তারা জাপানের উন্নততর কৃষি প্রযুক্তি, ব্যবস্থাপনার অভিজ্ঞতা ও ধারণা চীনে দিয়েছেন। ফলে চীন ও জাপানের মধ্যকার বেসরকারী অর্থনীতি, সংস্কৃতি ও আদান-প্রদান ত্বরান্বিত হয়েছে এবং জাপানের শ্রম-শক্তির ঘাঁটতিও কিছুটা দূর হয়েছে। এতে পারস্পরিক কল্যাণের লক্ষ্যও বাস্তবায়িত হয়েছে। (লিলি)

  • সাক্ষাত্কার
  • সর্বশেষ সংবাদ
  • অন-লাইন জরীপ
     
    © China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
    16A Shijingshan Road, Beijing, China