বিদ্যাবার্তা ০৪১৩
  2020-04-13 14:22:26  cri

চলতি বছর বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শততম জন্মবার্ষিকী। এ উপলক্ষ্যে আমরা প্রতি সপ্তাহে বঙ্গবন্ধুর বই 'আমার দেখা নয়া চীন' উপস্থাপন করছি। আজকের আসরের শুরুতেই থাকবে বঙ্গবন্ধুর গ্রন্থ থেকে পাঠ। তা ছাড়া, পাকিস্তানি শিক্ষিকার চীনর গল্প এবং চীনা প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংয়ের চেচিয়াং প্রদেশ পরিদর্শন সম্পর্কে কিছু তথ্য থাকবে।

অনুষ্ঠানের শুরুতে বঙ্গবন্ধুর বই 'আমার দেখা নয়াচীন' থেকে পড়ে শোনাচ্ছি।

নারী দেশের উন্নয়নে অবদান রাখতে সক্ষম: পাকিস্তানি শিক্ষিকার সাক্ষাত্কার

পাকিস্তানে নারী-শিক্ষার উন্নয়ন ঘটছে। আজকাল অনেক নারী কাজ করছেন এবং দেশের উন্নয়নে অবদান রাখছেন। সম্প্রতি পাকিস্তানের কনফুসিয়াস ক্লাসরুমের দায়িত্বশীল শিক্ষিকা মোনা কানওয়াল চায়না মিডিয়া গ্রুপকে দেওয়া সাক্ষাত্কারে বলেন, নারীরা শুধু নিজের পরিবারে অবদান রাখবে, এমন নয়, বরং তারা দেশের জন্যও নিজ নিজ অবদান রাখতে সক্ষম।

মোনা কানওয়াল পাকিস্তানের তৃতীয় বড় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রুটস মিলেনিয়াম স্কুলের একজন সিনিয়ার ম্যানেজার এবং কনফুসিয়াস ক্লাসরুমের দায়িত্বশীল ব্যক্তি। ছোটবেলার অভিজ্ঞতা স্মরণ করে তিনি বলেন,

"আমার পিতা সেনাবাহিনীতে কাজ করতেন। তাই তাকে দেশের বিভিন্ন স্থানে কাজ করতে হতো। তিনি যেখানে যেতেন আমিও সেখানে যেতাম এবং নতুন জায়গার স্কুলে ভর্তি হতাম। প্রাথমিক স্কুল থেকে ১৭ বছর বয়স পর্যন্ত আমাকে বিভিন্ন শহরের বিভিন্ন স্কুলে পড়তে হয়েছে। প্রতিবারই পুরাতন জায়গার বন্ধুদের ছেড়ে যেতে হয়েছে নতুন জায়গায়।"

ছোটবেলা থেকে ভিন্ন ভিন্ন শহরে জীবন কাটানো এবং পড়াশোনা করা একটা বড় চ্যালেঞ্জ। তবে এতে তিনি বিশেষ অভিজ্ঞতাও অর্জন করেছেন। আর তার জন্য সুবিধা ছিল এই যে, তারা যেখানেই গেছেন, তার জন্য সবচেয়ে ভালো স্কুলটিই বরাদ্দ ছিল।

"আমার বাবা অন্যদের পিতার মতো নন। তিনি আমাদের বেশি অর্থ দেননি, তবে শ্রেষ্ঠ শিক্ষা দেওয়ার চেষ্টা করেছেন। আমাদের পড়াশোনার খরচ অনেক বেশি, তবে তিনি টাকা সঞ্চয় করে আমাদের পড়াশোনার খরচ চালিয়েছেন। অনেক সময় তিনি নিজেও আমাকে বিজ্ঞান ও গণিত বুঝিয়ে দিতেন। তাঁর সাহায্যে আমার পড়াশোনাও ভালো হয়েছে। আমার সুন্দর জীবনের জন্য তিনি সম্ভাব্য সবকিছু করেছেন।"

বাবা'র যত্ন ও প্রশিক্ষণে শ্রেষ্ঠ ফলাফল নিয়ে পাকিস্তানের ফাতিমা জিন্নাহ্ নারী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন মোনা। পরে তিনি এমবিএ ডিগ্রি অর্জন করে। স্নাতক হওয়ার পর তিনি বিয়ে করেন এবং শুরুতে বাড়িতে বাচ্চাদের যত্ন নিয়েই সময় কাটাতেন। তবে বাচ্চারা বড় হওয়ার পর তিনি চাকরি করতে চাইলেন। শুরুতে তার স্বামী তাঁর সিদ্ধান্তকে সমর্থন দেননি। পরে এ নিয়ে সমস্যার কারনে দু'জনের বিবাহবিচ্ছেদ হয়। বাচ্চাদের যত্ন নেওয়ার জন্য তিনি স্বামীর কাছ থেকে খোরপোষও নেননি।

 

"পাকিস্তানের আইন অনুসারে আমি স্বামীর কাছ থেকে কিছু খোরপোষ নিতে পারতাম। কিন্তু সেক্ষেত্রে আমার বাচ্চাদের বাবার সাথে থাকতে হতো। অথচ আমি বাচ্চাদের যত্ন নিতে চাই। তাই খোরপোষ পরিত্যাগ করি এবং বাচ্চাদের সাথে থাকি।"

দু'জন বাচ্চাকে যত্ন নেওয়া এবং শুরুতে আয় না থাকায় তার জীবন কষ্টের ছিল। তখন তিনি স্কুলে চাকরি নিতে চেষ্টা করেন। পরে তিনি ইংরেজি শিক্ষক হিসেবে রুটস মিলেননিয়াম স্কুলে কাজ নেন। এক বছর পর তিনি পড়াশোনা বিভাগের পরিচালক হিসেবে পদন্নোতি পান।

২০১০ সাল থেকে পাকিস্তানে কনফুসিয়াস ক্লাসরুম চালু হয় এবং মিলেননিয়াম গ্রুপের মাধ্যমিক ও প্রাথমিক স্কুলে চীনা ভাষা ক্লাস চালু হয়। মোনা ছাত্রছাত্রীদের নিয়ে চীনে আসেন এবং বেইজিং ভাষা ও সংস্কৃতি বিশ্ববিদ্যালয় (বিএলসিইউ)-তে চীনা ভাষা কোর্স করেন। তখন থেকে চীনা ভাষায় শেখার ব্যাপারে তার ব্যাপক আগ্রহ তৈরি হয়। ২০১৫ সালে পাকিস্তানের স্কুলের বিদেশি ভাষা বিভাগ ও কনফুসিয়াস ক্লাসরুমের দায়িত্বশীল ব্যক্তিতে পরিণত হন তিনি। তখন থেকে ক্লাসরুমেরর প্রশাসন, চীনের ঐতিহ্যিক সংস্কৃতির প্রদর্শন এবং এইচএসকে পরীক্ষা ও প্রতিযোগিতা বিভিন্ন কার্যক্রম তিনি চীনা শিক্ষকদের সাথে কাজ করতে থাকেন। তাঁর প্রিয় কাজ খুঁজে পেয়েছেন বলে মনে করেন তিনি।

"চীন আমাদের প্রতিবেশী ও পুরনো বন্ধু। আমাদের স্কুল এ কনফুসিয়াস ক্লাসরুমের সহযোগিতা এবং চীনা ভাষা প্রশিক্ষণ কোর্সের সম্প্রসারণে পাকিস্তান ও চীনের সম্পর্ক আরো জোরদার হয়েছে। আমাদের ছাত্রছাত্রী ও দেশ এতে উপকৃত। চীনা ভাষা শেখা তাদের জন্য কল্যাণকর।"

রুটস মিলেনিয়াম গ্রুপের শিক্ষার্থীদের মধ্যে চীনা ভাষাকে জনপ্রিয় করতে তিনি অনেক প্রচেষ্টা চালিয়েছেন। তাঁর প্রচেষ্টায় গত ৪ বছরের মধ্যে এইচএসকে পরীক্ষার অংশগ্রহণকারীর সংখ্যা ৪০ জন থেকে ৬০০ জনে উন্নীত হয়।

চাকরির কারণে স্বাধীনতা ও আত্মবিশ্বাস অনুভব করেন মোনা। শিক্ষাকাজে যোগ দিয়ে দেশের জন্য অবদান রাখার দায়িত্ব পালন করছেন বলে তিনি মনে করেন। দেশের নারীদের উদ্দেশ্যে মোনা বলেন, একজন নারী হিসেবে শুধু পরিবারের যত্ন নেওয়া একমাত্র কাজ নয়, বরং স্বাধীনভাবে নিজের মাতৃভূমির উন্নয়নে অবদান রাখা উচিত।

"আমাদের প্রত্যেককে জানতে হবে যে, আমাদের দেশের জন্য আমরা সবাই অবদান রাখতে সক্ষম। আর সেটা আমাদের দায়িত্ব। দেশের সকল নাগরিক অবদান রাখলে দেশের অগ্রগতি বাস্তবায়ন হবে। নারীরা পুরুষদের মতো দেশের জন্য অবদান রাখতে পারে।"

বর্তমানে মোনার চাকরি আগের চেয়ে আরো ভালো। তাঁর দু'টি বাচ্চা বড় হয়েছে। তিনি আবার বিয়ে করেননি। তবে তিনি জীবন নিয়ে সন্তুষ্ট। এ সম্পর্কে তিনি বলেন, মনের স্বাধীনতা থাকলে সুখী হওয়া যায়।


1  2  
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040