বিদ্যাবার্তা ০৩০৯
  2020-03-09 10:30:35  cri

'কোভিড-১৯ মহামারী ঠেকানো ও আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন নিশ্চিতকরণ' শীর্ষক কর্মসম্মেলনে সি'র গুরুত্বপূর্ণ ভাষণ

ফেব্রুয়ারি মাসের শেষ দিকে বেইজিংয়ে কোভিড-১৯ মহামারী ঠেকানো এবং চীনের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন নিশ্চিত করা বিষয়ে আয়োজিত এক কর্মসম্মেলন আয়োজিত হয়। এতে গুরুত্বপূর্ণ ভাষণ দেন প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং।

তিনি বলেন, বর্তমানে মহামারী প্রতিরোধ-কার্যক্রমের সন্ধিক্ষণ চলছে। নিয়ন্ত্রণকাজে শিথিলতা দেখানো চলবে না। পাশাপাশি, সমাজ ও অর্থনীতির উন্নয়নের জন্য নির্ধারিত কর্মকাণ্ডও চালিয়ে যেতে হবে।

প্রেসিডেন্ট সি'র এ কথা চীনাদের উত্সাহ দেয়; তাদেরকে মহামারী প্রতিরোধক যুদ্ধে জয়ী হতে আশাবাদী করে। চীনারা ঐক্যবদ্ধ হয়ে মহামারী ঠেকানোর সাথে সাথে দেশের অর্থনীতির উন্নয়নে প্রচেষ্টা চালাবে এবং সময়মতো সার্বিকভাবে সচ্ছল সমাজ গঠনে অবদান রাখবে।

আসলে কোভিড-১৯ মহামারী ঘটার পর চীনের কেন্দ্রীয় সরকার এর প্রতিরোধের ওপর অনেক গুরুত্ব দেয় এবং বিভিন্ন পর্যায়ের সরকার কার্যকর প্রতিরোধক ব্যবস্থা গ্রহণ করে।

উহান জয়ী হলে হুপেই জয়ী হবে আর চীনও জয়ী হবে। প্রেসিডেন্ট সি'র ভাষণ শোনার পর উহান থুংজি হাসপাতালের সিপিসি'র সম্পাদক উ জিং বলেন, মহামারীর বিরুদ্ধে লড়াইয়ের এই গুরুত্বপূর্ণ সময়ে প্রেসিডেন্ট সি'র কথা আমাদের চিকিত্সকদের জন্য ব্যাপক উত্সাহব্যঞ্জক।

চিকিত্সকরা মহামারী প্রতিরোধের গুরুত্বপূর্ণ শক্তি। থুংজি হাসপাতাল উহানের মহামারী প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করেছে। ফেব্রুয়ারি মাসের শেষ দিক পর্যন্ত ৩২ হাজারেরও বেশি রোগী এখানে চিকিত্সা নিয়েছে। ২৩০০ জনেরও বেশি গুরুতর আক্রান্ত রোগীকে এখানে ভর্তি করানো হয়। অনলাইনে চিকিত্সা পরামর্শ নিয়েছেন ৭৫ হাজার জনেরও বেশি।

এতো বেশি রোগীর চিকিত্সাসেবা দেওয়া চিকিত্সকদের নিরলস প্রচেষ্টার প্রতিফলন। চিকিত্সকদের স্বাস্থ্যের ওপর গুরুত্ব দেন প্রেসিডেন্ট সি। চিকিত্সকদের জন্য পর্যাপ্ত প্রতিরোধক-পোশাক, নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য, ও খাবার নিশ্চিত করার ওপর গুরুত্ব দেন তিনি। চিকিত্সকরা যাতে ভাইরাসে আক্রান্ত হতে না-পারেন, তা নিশ্চিত করতে সম্ভাব্য সবকিছু করার কথাও বলেন তিনি। এ সম্পর্কে উ জিং বলেন, 'প্রেসিডেন্ট সি'র উদ্বেগ আমাদের মুগ্ধ করেছে।'

কয়েকদিন আগে বেইজিংয়ের শৌকাং হাসপাতালে ইন্টারশিপ করা তিব্বত বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিত্সা একাডেমির শিক্ষার্থীদের চিঠি দেন প্রেসিডেন্ট সি। তাদের তিব্বতি নববর্ষের শুভেচ্ছা জানান। ২৪ বছর বয়সী তিব্বতি শিক্ষার্থী তানজেনওয়াংতুই বলেন, 'মহামারী প্রতিরোধে চিকিত্সকরা আমাদের দৃষ্টান্ত। স্নাতক হওয়ার পর আমি তিব্বতে গিয়ে সাধারণ মানুষকে চিকিত্সাসেবা দেবো।'

প্রেসিডেন্ট সি আরো বলেন, যদিও চীনে মহামারী প্রতিরোধে অনেক সাফল্য এসেছে, তবে ভাইরাস পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আসার আগ পর্যন্ত কাজে কোনো শিথিলতা দেখানো যাবে না। বেইজিং একটি সুপার বড় শহর, অনেক কর্মী বেইজিংয়ে ফিরে এসেছে; তাই এখানকার মহামারী প্রতিরোধক কাজ অনেক জটিল। এ সম্পর্কে বেইজিং বাণিজ্য ব্যুরোর পরিষেবা বিভাগের পরিচালক ওয়াং জি ইয়ুং বলেন, বেইজিংয়ের বাসিন্দাদের দৈনন্দিন চাহিদা মেটানোর সাথে সাথে বিভিন্ন নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে। পরিষেবার মান মহামারীর কারণে কমানো যাবে না।

শ্রমিকদের অভাব বর্তমানে অনেক শিল্পপ্রতিষ্ঠানের বড় সমস্যা। কুয়াংতুং প্রদেশের ফৌশান শহরের শুনতে এলাকায় গ্লান্জ কোম্পানিতে ৮০ শতাংশ কর্মী কারখানায় ফিরেছেন। মার্চ মাসে উত্পাদনকাজ স্বাভাবিক হয়ে যাবে বলে ধারণা করা হয়। কারখানার উত্পাদন পুনরুদ্ধার সম্পর্কে এ কোম্পানির সিইও লিয়াং চাও সিয়ান বলেন, 'আমাদের হারিয়ে যাওয়া সময় দ্রুত ও কার্যকর কাজের মাধ্যমে পুষিয়ে নিতে হবে। এখন কোম্পানির কর্মীরা উত্পাদনকাজে যোগ দিচ্ছে। তারা বাজারের চাহিদা মেটাতে সক্ষম। প্রেসিডেন্ট সি জোর দিয়ে বলেছেন, কর্মসংস্থানের সুযোগ স্থিতিশীল রাখতে হবে। চলতি বছর গ্লান্জ কোম্পানি আরো ১০ বিলিয়ন ইউয়ান বিনিয়োগ করবে এবং আরো ১০ হাজার কর্মী নিয়োগ দেবে।'

বড় শিল্পপ্রতিষ্ঠানের তুলনায় ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পপ্রতিষ্ঠানের চ্যালেঞ্জ আরো কঠোর। এ সম্পর্কে প্রেসিডেন্ট সি বলেন, স্বল্পকালীন ও নির্দিষ্ট কর কমানোর নীতি চালু করতে হবে, যাতে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোর বোঝা কমে যায়।

চেচিয়াং প্রদেশের থাইচৌ শহরের কৃষকরা কুয়াংতুং ও হাইনান প্রদেশে তরমুজ চাষ করেন। তবে মহামারীর কারণে তরমুজ বিক্রির সমস্যা দেখা দেয়। এ সমস্যার সমাধানে থাইচৌ ব্যাংক কৃষকদের জন্য ঋণ প্রদান করে। ১১৭টি কৃষক পরিবারে মোট ৭৭ লাখ ইউয়ানেরও বেশি ঋণ দেওয়া হয়।

দারিদ্র্যবিমোচন এবং সার্বিক সচ্ছল সমাজ গড়ে তোলা চলতি বছরে চীনের বড় কার্যক্রম। এ সম্পর্কে প্রেসিডেন্ট সি বলেন, মহামারীর কারণে অর্থনীতির উন্নয়নে কিছু নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে, তাই মহামারী ঠেকানোর সাথে সাথে বিভিন্ন শিল্পপ্রতিষ্ঠান ও কারখানায় যত দ্রুত সম্ভব উত্পাদন পুনরুদ্ধার করতে হবে।

এ সম্পর্কে কানসু প্রদেশের শ্রমবিষয়ক কার্যালয়ের পরিচালক লিউ সিয়াও মিং বলেন, কানসু প্রদেশে সুশৃঙ্খলভাবে বিভিন্ন কারখানা ও প্রতিষ্ঠানে উত্পাদন পুনরুদ্ধারকাজ শুরু হয়। এ পর্যন্ত ৫১৯টি কারখানার ১৫ হাজারের বেশি কর্মী কর্মসংস্থানের সুযোগ পেয়েছেন।

সি আরো বলেন, প্রাচীনকাল থেকে এ পর্যন্ত চীনা জাতি বহু সমস্যা ও চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হয়েছে। তবে কখনো আপোস করেনি, পরাজিত হয়নি। বরং সাহসের সাথে উন্নয়ন ও পুনরুত্থানের জন্য কাজ করে গেছে। যদিও এবার জাতি অতুলনীয় মহামারীর সম্মুখীন, তবে চীনা জাতি অবশ্যই এ যুদ্ধে জয়ী হবে এবং নতুন বছরের বিভিন্ন উন্নয়ন-লক্ষ্যও অর্জন করবে।

সুপ্রিয় শ্রোতা, সময় দ্রুত চলে যায়, আজকের বিদ্যাবার্তা অনুষ্ঠানের সময় শেষ হয়ে এলো। সময় মতো আমাদের অনুষ্ঠান শুনতে না পারেন বা মিস করেন, আমাদের ওয়েবসাইটে তা শুনতে পারেন। আমাদের ওয়েবসাইটের ঠিকানা www.bengali.cri.cn,আমাদের যোগাযোগ ইমেল ঠিকানাben@cri.com.cn,caoyanhua@cri.com.cn

তাহলে এবার বিদায় নিচ্ছি, সবাই ভালো থাকুন, সুন্দর থাকুন। আগামী সপ্তাহে একই সময় একই দিনে আবার কথা হবে। যাইচিয়ান। (সুবর্ণা/আলিম/মুক্তা)


1  2  
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040