বিদ্যাবার্তা ০৩০৯
  2020-03-09 10:30:35  cri

 


উহান রেনমিন হাসপাতালের নার্সের দিনলিপি

নভেল করোনাভাইরাসে আক্রান্তদের চিকিত্সার কাজে নিয়োজিত ডাক্তার ও নার্সরাও এ ভাইরাসে আক্রান্ত হবার ঝুঁকির মধ্যে থাকেন। তাদের মধ্যে কিছু লোক ভাইরাসে আক্রান্ত হলেও, অধিকাংশই বিজ্ঞানসম্মত চিকিত্সার মাধ্যমে কম সময়ের মধ্যে সুস্থ হয়ে উঠেছেন। সম্প্রতি উহান রেনমিন হাসপাতালের জরুরি বিভাগের নার্স চিয়া সোশাল মিডিয়ায় তাঁর গল্প শেয়ার করেন। তিনি লিখেছেন, নার্স হিসেবে তাকে নিয়মিত রোগীদের সাথে দেখা করতে হয়, তাদের যত্ন নিতে হয়। তাঁর সহকর্মীদের মধ্যে কেউ কেউ ভাইরাসে আক্রান্তও হন। ২৩ জানুয়ারি সিটি পরীক্ষার মাধ্যমে তাঁর ফুসফুসেও কিছু সমস্যা দেখা যায়। তখন থেকে বোঝা যায়, নার্স চিয়া ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন।

চিকিত্সকরা তাঁর চেকআপ ফলাফল দেখে বলেন যে, এখনও তাঁর শরীর অসুস্থ হয়নি। তাই বাড়িতে আলাদাভাবে বিচ্ছিন্ন থাকলে তিনি নিয়মিত ওষুধ খেতে পারবেন। কারুর সাহায্য লাগবে না। তখন থেকে নার্স চিয়া একাই বাড়িতে থাকতে শুরু করেন এবং ওষুধ খেয়ে ভাইরাসের সাথে সংগ্রাম শুরু করেন। নিয়মিত খাবার খাওয়া, ঘুমানো আর সময়মতো ওষুধ খাওয়া তার কাজ। প্রতিদিন সহকর্মীরা সবজি ও মাংসসহ বিভিন্ন খাবার কিনে চিয়ার বাড়ির সামনে রাখে। তিনি বাড়িতে প্রতিদিন জীবাণুনাশক ছড়ান এবং ঘরে বিশুদ্ধ বায়ু চলাচলের জন্য জানালা খুলে দেন। ১১ দিন পর ৪ ফেব্রুয়ারি আবারও হাসপাতালে তার সিটি স্ক্যান হয়। তখন দেখা যায়, তিনি ফুসফুসের সমস্যা থেকে মুক্তি পেয়েছেন।

সোশাল মিডিয়ায় চিয়া লিখেছেন, 'যদি আপনি নিজেকে ভাইরাসে আক্রান্ত বলে সন্দেহ করেন, তবে স্বেচ্ছায় অন্যদের থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে থাকা শুরু করুন। কারণ, তা নিজেকে রক্ষার পাশাপাশি অন্যদেরও রক্ষা করবে।'

তিনি আরও লিখেছেন, 'শীত শিগগিরি শেষ হবে এবং বসন্ত আসবে। তখন উহান আগের রূপে ফিরে যাবে এবং চীনারা আগের চেয়ে আরও বেশি ঐক্যবদ্ধ হবে।'

৭৮ বছর বয়সী প্রবীণের গল্প

যদিও নভেল করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) বয়স্ক লোকদের জন্য বেশি বিপদজনক, তবে বিজ্ঞানসম্মত চিকিত্সা আর দৃঢ় প্রতিজ্ঞায় এ ভাইরাসের আক্রমণ থেকে বেঁচে উঠতে পারেন বয়স্করাও। উহান শহরের বাসিন্দা জনাব লু'র বয়স ৭৮ বছর। জানুয়ারি মাসের শুরুতে তিনি ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন। তখন তার স্ত্রী ম্যাডাম ইউয়ান প্রতিদিন তাঁকে খাবার রান্না করে হাসপাতালে পাঠিয়েছেন। উইচ্যাটের মাধ্যমে তিনি স্ত্রীর কাছে জানিয়েছেন তার কী কী খেতে ইচ্ছে করে। তবে ১১ ফেব্রুয়ারি তিনি স্ত্রীকে বলেন, 'আজকে আমাকে খাবার দিও না। আমার কিছু খেতে ইচ্ছে করছে না।'

তখন জনাব লু'র স্ত্রী ভাবলেন জ্বর না-কমা স্বামীর রোগের গুরুতর হওয়ার মূল কারণ। তবে চিকিত্সকদের দৃষ্টিতে লু'র বয়স আর শারীরিক অবস্থার দুর্বলতার কারণেই এমনটা হচ্ছে।

এ সম্পর্কে হুয়াচুং বিজ্ঞান প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের থুংজি হাসপাতালের চিকিত্সক চাও চিয়ান পিং বলেন, লু'র বয়স প্রায় ৮০ বছর। তিনি গুরুতর রোগীদের অন্যতম। ডায়াবিটিস আর উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা আছে তার।'

কয়েক দিনের মধ্যে জনাব লু'র খাওয়া খুবই কমে যায়। তবে, চিকিত্সকদের প্রচেষ্টায় তিনি অবশেষে ভালো হয়ে ওঠেন। একদিন ম্যাডাম ইউয়ান আগের মতো স্বামীর ম্যাসেজ পান। স্বামী খেতে চেয়েছেন তার প্রিয় খাবার। ২৯ ফেব্রুয়ারি তিনি অবশেষে পুরোপুরি সুস্থ হয়ে ওঠেন এবং বাসায় ফিরে যান।

হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সময় জনাব লু বলেন, রোগীদের আত্মবিশ্বাস থাকতে হবে। তাহলে সরকার ও চিকিত্সকদের সহায়তায় তারা অবশ্যই সুস্থ হয়ে উঠতে সক্ষম হবেন।

৪ মাসের বাচ্চার সুস্থ হবার গল্প

চীনের চিয়াংসি প্রদেশের কানচৌ শহরের স্বাস্থ্য কমিটির সূত্রে জানা গেছে, এ শহরের একজন ৪ মাসের বাচ্চা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়। বাচ্চার বাবা-মাও ভাইরাসে আক্রান্ত। ২৯ জানুয়ারি শরীরে ভাইরাস ধরা পড়ার পর তার বাবা-মা হাসপাতালে ভর্তি হন। তখন বাচ্চার শরীরেও ভাইরাস আছে বলে নিশ্চিত হন চিকিত্সকরা। পরিবারের তিন জন একসাথে কানচৌ শহরের ৫ নম্বর রেনমিন হাসপাতালে ভর্তি হয়। আর ১২ ফেব্রুয়ারি প্রায় দুই সপ্তাহের চিকিত্সায় বাচ্চা পুরোপুরি সুস্থ হয়ে ওঠে। তার বাবাও ৯ ফেব্রুয়ারি বাড়িতে ফিরে যান।


1  2  
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040