সি চিন পিংয়ের প্রিয় বাক্য
বন্ধুরা, এখন অনুষ্ঠানের নতুন পর্ব।
চীনা প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং বিদেশে সফরকালে, আন্তর্জাতিক ফোরাম বা শীর্ষসম্মেলন অংশগ্রহণকালে বা চীনে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ অনুষ্ঠান উপস্থিত থাকাকালে ভাষণ দিয়ে থাকেন। এসব ভাষণে তাঁর নিজস্ব চিন্তাভাবনা প্রকাশিত হয়। বিভিন্ন সময়ে, বিভিন্ন স্থানে তার দেওয়া ভাষণ নিয়ে 'দেশ প্রশাসন' শীর্ষক গ্রন্থও প্রকাশিত হয়েছে। আসলে তাঁর রাজনৈতিক চিন্তাধারা ও প্রস্তাবসমূহ ধারাবাহিকভাবে উত্থাপিত হয়েছে। এসবই তাঁর কাজের অভিজ্ঞতার সাথে সম্পর্কিত। তিনি অনেক সময় প্রাচীন চীনের শ্রেষ্ঠ কবিতা, উপন্যাস বা বিখ্যাত ব্যক্তিদের কথা থেকে উদ্ধৃতি দিয়ে থাকেন। আমরা তাঁর কিছু কিছু প্রিয় বাক্য বাছাই করে বাংলা ভাষায় অনুবাদ করবো। আশা করি শ্রোতারা অনুষ্ঠান শুনে সি'র চিন্তাভাবনা ভালভাবে বুঝতে সক্ষম হবেন।
আজকে প্রেসিডেন্ট সি'র যেই প্রিয় বাক্যটি নিয়ে কথা বলবো সেটি হচ্ছে '一枝一叶总关情',বাংলা ভাষায় অনুবাদ করলে দাঁড়াবে: 'জনগণের বড় বা ছোট কাজের ওপর গুরুত্ব দিতে হবে'।
আসলে এ কথা প্রাচীনকালে ছিং রাজবংশের বিখ্যাত শিল্পী ও লেখক চেং বান ছিয়াওয়ের কবিতার অংশ। এই কবি চিয়াংসু প্রদেশের সিংহুয়া জেলায় জন্মগ্রহণ করেন এবং যুবক বয়সে শানতুং প্রদেশের ফান জেলা এবং ওয়েই জেলায় ১২ বছর সরকারি কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করেন। অবসর নেওয়ার পর তিনি ইয়াংচৌ শহরে এসে শিল্পকর্ম বিক্রির মাধ্যমে জীবন কাঁটান। তিনি সারা জীবন শুধু তিনটি জিনিস দিয়ে শিল্পচর্চা করেছেন। তিনটি জিনিস হচ্ছে: বাঁশ, অর্কিড গাছ ও পাথর। এ তিনটি জিনিসই পবিত্রতার প্রতীক।
যখন তিনি ওয়েই জেলার কর্মকর্তা হিসেবে কাজ করছিলেন, তখন তিনি এ কবিতা রচনা করেন। তাঁর কার্যমেয়াদে তিনি কোনো সরকারি কাজে ব্যর্থ হননি বা স্থানীয় বাসিন্দাদের জন্য কোনো ক্ষতিকর কাজও করেননি। তিনি দুর্নীতি দমন করেন এবং স্থানীয় বাসিন্দাদের যত্ন নেন। চেং বান ছিয়াও ছুটির সময় স্থানীয় কবিদের সাথে কবিতাচর্চা করতেন। যখন ওয়েই জেলায় দুর্ভিক্ষ দেখা দেয়, তখন তিনি সরকারি গোলাঘরের খাদ্যশস্য বাসিন্দাদের কাছে পাঠিয়ে দেন, যা স্থানীয় লক্ষ লক্ষ মানুষের জীবন বাঁচায়। তাঁর কাজের অভিজ্ঞতা অনুযায়ী তিনি লিখেছেন, '些小吾曹州县吏,一枝一叶总关情。'যার বাংলা অর্থ হল 'যদিও আমার মতো জেলা-সরকারি কর্মকর্তা নিম্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা, তবে স্থানীয় গ্রামবাসীদের জীবনযাপনের নানান ব্যাপার আমার সাথে জড়িত, যার প্রতি মনোযোগ দিতে হবে।'
ছিং রাজবংশের ঐতিহ্যিক লেখায় চেং বান ছিয়াওয়ের সরকারি কর্মকর্তা-জীবনের ভূয়সী প্রশংসা করা হয়েছে। তিনি কখনো স্থানীয় বাসিন্দাদের কাছ থেকে ঘুষ খাননি। তার কাছে বাসিন্দারা ছিলেন পরিবারের সদস্যের মতো। এমন পবিত্র চরিত্র এবং চারুকলা ও কবিতা রচনায় তাঁর দক্ষতার কারণে চেং বান ছিয়াও প্রাচীনকালের ইতিহাসে একজন বিখ্যাত ব্যক্তি হিসেবে সম্মানিত হয়েছেন।
চীনা প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংও বহু অনুষ্ঠানে চেং বান ছিয়াওয়ের এ কবিতার লাইন উল্লেখ করেছেন এবং চীনা জনগণের জীবনমান উন্নয়নে নিজের মনোযোগ দেওয়ার কথা বলেছেন। এ থেকে বোঝা যায়, চীনা জনগণের সুন্দর জীবনের জন্য প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং কতোটা সচেষ্ট।
আসলে প্রাচীনকালের আরেকটি বিখ্যাত দর্শনশাস্ত্র 'কুয়ানজি'তে বলা হয়েছে, জনগণের ইচ্ছার সাথে সঙ্গতিপূর্ণ হলে দেশ উন্নত হয়, জনগণের ইচ্ছা লঙ্ঘন হলে দেশের উন্নয়ন পিছিয়ে পড়বে।
ছিং রাজবংশের আরেকজন দার্শনিক ওয়ান সি তা বলেছিলেন, 'জনগণের জন্য কল্যাণকর যে-কোনো ক্ষুদ্র কাজ করতে হবে এবং জনগণের জন্য ক্ষতিকর যে-কোনো সামান্য কাজ করা থেকে বিরত থাকতে হবে।'
এ দুটি বাক্য যদিও ভিন্ন রাজবংশের ভিন্ন ব্যক্তিদের বক্তব্য, তবে মূল অর্থের দিক দিয়ে অনেক মিল রয়েছে। মোদ্দাকথা, জনগণের সুবিধাজনক ও কল্যাণকর কাজ বড় হোক ছোট হোক, সরকারি কর্মকর্তার পদ উচ্চ হোক নিম্ন হোক, সবসময় মনে রাখতে হবে যে, জনগণের সুখী জীবনের জন্য প্রচেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে।
সুপ্রিয় বন্ধুরা, সময় দ্রুত চলে যায়। আজকের 'বিদ্যাবার্তা' অনুষ্ঠানও তাড়াতাড়ি শেষ হয়ে এলো। আমাদের অনুষ্ঠান সম্পর্কে কোনো মতামত থাকলে আমাদের চিঠি লিখতে ভুলবেন না। আমাদের যোগাযোগ ঠিকানা ben@cri.com.cn,caoyanhua@cri.com.cn
রেডিওতে আমাদের অনুষ্ঠান শুনতে না পারলে বা মিস করলে আপনারা আমাদের ওয়েবসাইটে শুনতে পারবেন। আমাদের ওয়েবসাইটের ঠিকানা হলো- www.bengali.cri.cn
এবার তাহলে বিদায় নিচ্ছি। সবাই ভালো থাকুন, সুন্দর থাকুন। আবারো কথা হবে। চাইচিয়ান। (সুবর্ণা/আলিম/মুক্তা)