শিক্ষা সম্পর্কিত খবর, জার্মানিতে চীনা ছাত্র সমিতির বার্ষিক সম্মেলন এবং সেরিব্রাল পালসিতে আক্রান্ত বাচ্চাদের সহায়তা কার্যক্রম
  2019-12-16 14:36:59  cri

সেরিব্রাল পালসিতে আক্রান্ত বাচ্চাদের সহায়তা কার্যক্রম

শীতকালে উত্তর চীনের হারবিন শহরে ব্যাপক তুষারপাত হয়। সকাল ৭টা ২০ মিনিটে হেইলুংচিয়াং প্রদেশের সেরিব্রাল পালসিতে আক্রান্ত বাচ্চাদের সহায়তা কেন্দ্র থেকে ওয়াংকাং জেলার প্রাথমিক স্কুলে যাওয়ার পথে নানী লিউ এবং তাঁর ৮ বছর বয়সী নাতী সিয়াওসুংকে(লি সুং থাও) দেখা যায়। সেরিব্রাল পালসি রোগে আক্রান্ত সিয়াওসুং টুপি ও মাস্ক পরে ছোট হুইলচেয়ারে বসে আছে। তার নানী লিউ চি রুং হুইলচেয়ার নিয়ে আস্তে আস্তে তুষার পথে হাঁটেন। স্কুলে যাওয়ার এ ১০ মিনিট পথ এ পরিবারের জন্য অতি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। স্কুলে পৌঁছে গণিত ক্লাসে ছেলে লি সুং থাও শিক্ষকের প্রশ্নের উত্তর দেয়। গুণন সূত্র ভালভাবে মুখস্থ করে সে এবং তার উত্তর সহপাঠীদের উষ্ণ করতালি লাভ করে।

(উল্লেখ্য, সেরিব্রাল পালসি হচ্ছে বাচ্চার জন্মের সময়, আগে অথবা জন্মের কিছু পরে ব্রেইন এর কোনো আঘাত বা রক্ত চলাচলের ব্যাঘাতের ফলে সৃষ্ট শারীরিক চলাচলের ও এর সমন্বয় এর সমস্যা)।

নানী লিউ নাতীর রোগের কথা স্মরণ করে বলেন যে, যখন ১১ মাস বয়স, তখন সিয়াওসুংয়ের শারীরিক অবস্থায় একটু অস্বাভাবিকতা দেখা দেয়। অন্য বাচ্চারা তখন হাঁটতে শুরু করে, তবে সিয়াওসুং দাঁড়াতে সক্ষম নয় এবং ভালভাবে ভাত খেতে পারে না। তখন হাসপাতালে চেকআপ করে বোঝা যায় সে সেরিব্রাল পালসি রোগে আক্রান্ত হয়েছে। তখন থেকে সিয়াওসুংকে চিকিত্সা করার জন্য বিভিন্ন হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠানে নিয়ে যাওয়া হয়। সে দাঁড়াতে ও হাঁটতে সক্ষম নয় এবং কলমও ধরতে পারে না, এমন অবস্থায় বাধ্যতামূলক শিক্ষাগ্রহণ থেকে বঞ্চিত হওয়ার ঝুঁকি তৈরি হয়।

সৌভাগ্যের ব্যাপার হলো ২০১৮ সালের শুরুতে হারবিন শহরের নানকাং এলাকার শিক্ষা বিভাগ সিদ্ধান্ত নেয় যে, স্থানীয় কয়েক জন প্রতিবন্ধী-বাচ্চাদের লেখাপড়ায় বিশেষ সুযোগ সুবিধা দেওয়া হবে। সিয়াওসুং তাদের মধ্যে একজন হিসেবে ওয়াংকাং জেলার প্রাথমিক স্কুলে পড়াশোনা শুরু করে। প্রতিদিন পুনর্বাসন প্রশিক্ষণ নেওয়ার সাথে সাথে ক্লাসেও যেতে সক্ষম।

অফিস ভবনের দুই তলায় ছেলে সুংথাও এবং শিক্ষক চাং ই হুই'র সাক্ষাতের জায়গা রয়েছে। যখন টয়লেট যেতে চায়, তখন সুংথাও এখানে আসে এবং শিক্ষক তাকে সহায়তা দেন। কারণ স্কুলের টয়লেট অনেক দূর, তার যাওয়া আসায় অনেক অসুবিধা হয়। শিক্ষক চাং এমন কথা বলেন।

ওয়াংকাং জেলার প্রাথমিক স্কুলে ছেলে লি সুং থাওয়ের মতো বাচ্চা মোট ৪ জন, এমন মুগ্ধকর গল্প প্রতিদিন ঘটে।

সম্প্রতি স্কুলে বাস্কেটবল প্রতিযোগিতা আয়োজিত হয়। দৌড়াদৌড়ি আর জাম্প তৃতীয় শ্রেণীর সেরিব্রাল পালসি রোগী ছেলে ফান রু জের জন্য কঠিন ব্যাপার। তাকে বাস্কেটবল খেলায় অংশগ্রহণে শিক্ষক সু ইয়ু ফেং বিশেষ দায়িত্ব দেন। প্রতিযোগিতায় বোর্ড ধরে রাখার দায়িত্ব ছেলে ফানকে দেন তিনি। এমনভাবে সেও অন্য বাচ্চাদের সাথে খেলায় অংশ নিতে পারে। শিক্ষক সুন এমন কথা বলেন।

ছেলে ওয়াং জি ইয়াও মিষ্টি হাসিমুখে সংবাদদাতার প্রশ্নের উত্তর দেয়। দুই বছর আগে যখন প্রথমে স্কুলে আসে তখন অন্যদের সাথে দূরত্ব থাকে। এ সম্পর্কে শিক্ষক ইয়াং ফেং হুয়ান স্মরণ করে বলেন যে, এ রোগে আক্রান্ত হওয়ার কারণে ছেলে জি ইয়াও'র মধ্যে আত্মবিশ্বাসের অভাব তৈরি হয়। আসলে সে খুবই বুদ্ধিমান বাচ্চা এবং অন্যদের চেয়ে মানসিকভাবে পরিপক্ক। তার সাথে যোগাযোগ করার সময় শিক্ষক ইয়াং বলেন, অন্যরা শ্রমের মাধ্যমে চাকরি নিতে পারে,তবে তুমি মাথা দিয়ে চাকরি নিতে পারো। তখন থেকে ছেলে জি ইয়াও শিক্ষকের কথা শুনে মনোযোগ দিয়ে লেখাপড়া করে। অনেক বই পড়ার পর সে সহপাঠীদের সাথে গল্প শেয়ার করে এবং কৌতুক বলে, সবাই তাকে পছন্দ করে।

ধীরে ধীরে পরিবর্তন ঘটে, মাঝে মাঝে বিস্ময়কর ঘটনা ঘটে। শিক্ষক চাং বলেন, ছেলে সুংথাও স্কুলে ভর্তির সময় নানী তাকে সিঁড়িতে উঠতে সহায়তা করে। তবে বর্তমানে সে নিজের হাত দিয়ে সিঁড়িতে উঠতে সক্ষম, যদিও প্রতি পদক্ষেপ তার জন্য কঠিন, তবে সে শক্তি দিয়ে প্রচেষ্টা চালায়। শুরুর দিকে সহপাঠীরা তাকে সহায়তা দেয়, তবে শিক্ষক বলেন যে, যখন তার সাহায্য দরকার, তখন তাকে সহায়তা দেওয়া উচিত, যখন সে নিজেই এ কাজ করতে চায়, তখন তাকে এমন সুযোগও দিতে হবে। ধীরে ধীরে সবার উত্সাহে হুইলচেয়ার থেকে নেমে হাঁটতে সক্ষম সুং থাও।

শিক্ষক, ছাত্র বা তাদের পিতামাতা হোক 'পরিত্যাগ না করা' হল তাদের অভিন্ন লক্ষ্যমাত্রা। আর্থিক অবস্থা দুর্বল হওয়ায় সুং থাওয়ের নানী ম্যাডাম লিউ একদিনে দুটি চাকরি করেন, দিনের বেলায় পুনর্বাসন কেন্দ্রে পরিচ্ছন্নতার কাজ করেন এবং রাতের সময় একটি হ্যামবার্গার কারখানায় চাকরি করেন। একদিনে শুধু নাতীর ক্লাসের সময় বিশ্রাম নেন তিনি। এ সম্পর্কে ম্যাডাম লিউ বলেন, বাচ্চার ভবিষ্যতের আশাবাদ আমাকে আনন্দ দেয়, আমিও জানি না সে পরে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে পারবে কিনা।

বাচ্চা তুয়ান ইউ ইয়াংয়ের গল্প একটু আলাদা। কয়েক বছর আগে উচ্চজ্বরের পর তার বাম হাত অবশ হয়ে যায়। তখন থেকে তার চরিত্রও স্বল্পভাষী হয়ে ওঠে। ওয়াংকাং জেলার প্রাথমিক স্কুলে ভর্তির পর ছেলে সুং থাও ও জি ইয়াওয়ের সাথে তার ঘনিষ্ঠ বন্ধুত্ব তৈরি হয়।

একসাথে পুনর্বাসন প্রশিক্ষণ গ্রহণ করা, খেলা ও স্কুলে আসা যাওয়ায় ছেলে তুয়ান ইয়ু ইয়াংয়ের হাসিমুখ দেখা যায়।

২০১৭ সালে সংমিশ্রণ শিক্ষাদান প্রথমবারের মতো 'প্রতিবন্ধীদের শিক্ষা নীতিমালায়' অন্তর্ভুক্ত হয়। চীনে সাধারণ স্কুলে প্রতিবন্ধী ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা ২০১৩ সালের ১ লাখ ৯১ হাজার জন থেকে ২০১৮ সালের ৩ লাখ ৩২ হাজার জনে উন্নীত হয়েছে।

স্কুল প্রতিবন্ধী ছাত্রছাত্রীদের পড়াশোনার সুযোগ প্রদান করেছে। এ সুযোগে প্রতিবন্ধী বাচ্চারা নিজের চরিত্র ও চেষ্টা দ্বারা লেখাপড়া করছে। তাদের এই চেষ্টা সুস্থ বাচ্চাদের মুগ্ধ করে।

এ সম্পর্কে শিক্ষক ইয়াং বলেন, অনেক ছাত্রছাত্রী প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের সহায়তার মাধ্যমে অন্যদের সাহায্য করার সুখ ও তাত্পর্য অনুভব করে এবং তাদের জীবনযাপন দেখে সুস্থ ছাত্রছাত্রীদের চরিত্রও আরো শক্তিশালী হয়ে ওঠে।

সংমিশ্রণ শিক্ষাদানের ইতিবাচক প্রভাব অতুলনীয়। ওয়াংকাং জেলার প্রাথমিক স্কুলের প্রেসিডেন্ট লিউ হুং ইয়ান বলেন, চিন্তাভাবনার শিক্ষাদান শুধু ক্লাসের মাধ্যমে সম্পন্ন করা নয়, বরং লবণ পানিতে সংমিশ্রণের মতো ধীরে ধীরে স্কুলের ছাত্রছাত্রীদের উপর প্রভাব ফেলে। তা হবে বাচ্চাদের জন্য সবচেয়ে ভালো উপহার।

জীবনের সম্পূর্ণতা অসম্ভব ব্যাপার নয়, সবাই একসাথে বিভিন্ন সমস্যা সমাধান করবে। এ উষ্ণ ও আন্তরিক স্কুলে প্রতিবন্ধীদের সহায়তার গল্প অব্যাহতভাবে ঘটে।

প্রিয় শ্রোতা, সময় দ্রুত চলে যায়। আমাদের আজকের অনুষ্ঠানও এখানেই শেষ করতে হবে। এ অনুষ্ঠান সম্পর্কে কোনো মতামত থাকলে আমাদের চিঠি লিখতে ভুলবেন না। আমাদের যোগাযোগ ঠিকানা ben@cri.com.cn,caoyanhua@cri.com.cn

সময় মতো আমাদের অনুষ্ঠান শুনতে না পারলে বা শুনতে মিস করলে আমাদের ওয়েবসাইটে তা শুনতে পারবেন। ওয়েবসাইটের ঠিকানা: www.bengali.cri.cn

(সুবর্ণা/টুটুল/শুয়ে ফেই ফেই)


1  2  3  
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040