চীনে সৈকতে নির্মিত মাঠে ফুটবলারদের প্রশিক্ষণ এবং চীন ও ইসরাইলের উচ্চশিক্ষা-বিষয়ক সহযোগিতা
  2019-12-09 17:16:36  cri

দক্ষিণপূর্ব চীনের ফুচিয়ান প্রদেশের সিয়াপু জেলার সৈকত এলাকায় বিশেষ একটি খেলার মাঠ রয়েছে, স্থানীয় লোকজন একে 'শত ইউয়ান ফুটবল খেলার মাঠ' বলে ডাকেন। এ খেলার মাঠের নির্মাণকারী, কোচ ছেন লুং ছিয়াংয়ের স্বপ্ন স্থানীয় বাচ্চাদের মনে ফুটবলের প্রতি ভালোবাসার স্বপ্ন তৈরি করা। স্থানীয় বাচ্চারা এখানে ফুটবল খেলা ও প্রশিক্ষণের মাধ্যমে আনন্দ লাভ করে, সাথে সাথে অতুলনীয় ফলাফলও অর্জন করেছে।

কোচ ছেন নিয়মিতভাবে বাচ্চাদের নিয়ে শত ইউয়ানের খেলার মাঠে ফুটবল খেলেন। ৩৩ বছর বয়সী শিক্ষক ছেন বর্তমানে সিয়াপু জেলার চার নম্বর প্রাথমিক স্কুলের এক জন ফুটবল কোচ। ছোটবেলায় তিনি গ্রামে বড় হয়েছেন, তখন থেকেই তিনি ফুটবল খেলা খুব পছন্দ করেন। ১৭ বছর বয়সে পরিবারের মার্বেল ব্যবসা চালু করার জন্য তিনি ফুটবল খেলা বন্ধ করে দেন। তবে ২০১৬ সালে মার্বেল দোকানের ব্যবসা ভালো না হওয়ায় এবং হাঁটাহাটির সময় তিনি সৈকতে বাচ্চাদের ফুটবল খেলা দেখতে পেয়ে তিনি আবার ফুটবল খেলার প্রতি আগ্রহী হন এবং বাচ্চাদের সাথে আনন্দময় সময় কাটাতে শুরু করেন।

এ গল্প স্মরণ করে শিক্ষক ছেন বলেন, সৈকতে ফুটবল খেলার সময় কোনো গোলপোস্ট ছিলোনা, তখন তিনি ফেনা ও পাথর দিয়ে গোলপোস্ট তৈরি করেন, তবে মাঝে মাঝে গোলের অবস্থা স্পষ্টভাবে দেখতে পারা যায় না। একদিন বাসায় ফিরে যাওয়ার পথে তিনি পাইপের দোকান অতিক্রম করেন, তখন হঠাত্ ভাবেন যে পাইপ দিয়ে গোলপোস্ট তৈরি করা সম্ভব! তিনি বলেন,

'আমি গোলপোস্টের সঠিক মাপ জেনে এবং ৬টি পাইপ কিনে দু'টি গোলপোস্ট তৈরি করি। এ ধরনের গোলপোস্ট সহজ‌েই তৈরি করতে পারি এবং প্রতিযোগিতা শেষ হলে আবার গুছিয়ে রাখতে পারি। তখন থেকে আমাদের খেলার মাঠ আরো ভালো হয়ে ওঠে। এসব কাজে মোট ১০০ ইউয়ান খরচ হয়।'

তখন থেকে 'শত ইউয়ানের খেলার মাঠ' লোকদের মধ্যে প্রচলিত হয়ে ওঠে। এ মাঠে শিক্ষক ছেনের সাথে ফুটবল খেলা শেখার বাচ্চাদের সংখ্যাও অনেক বেড়েছে। পরে তিনি 'ছাংফেং' নামের ফুটবল দল গঠন করেন। এ নাম প্রাচীনকালে চীনের থাং রাজবংশের বিখ্যাত কবি লি বাইয়ের কবিতা থেকে বেছে নেওয়া হয়। এর অর্থ হলো বাতাস ও ঢেউসহ বিভিন্ন জটিল অবস্থার সম্মুখীন হলেও, প্রচেষ্টার মাধ্যমে অবশেষে গন্তব্যে পৌঁছানো যায়। এ কথার সঙ্গে ফুটবল দলের অবস্থার অনেক মিল রয়েছে। তিনি বলেন,

'আমাদের প্রশিক্ষণ নিয়মিতভাবে সমুদ্রের বাতাসের সাথে চালু হয়, 'ছাং ফেং' অর্থাত্ বড় বাতাস যেন আমাদের প্রশিক্ষণের পরিবেশ। আমি ভাবি যে, দীর্ঘকালের কঠোর প্রশিক্ষণে সাফল্য অর্জন করলে এ নাম হবে আমাদের দলের নাম'।

'ছাং ফেং' ফুটবল দলের বাচ্চাদের সংখ্যা সাধারণত ১০ জনেরও বেশি, এখানে বিভিন্ন বয়সের বাচ্চা রয়েছে। ঘূর্ণিঝড় ছাড়া তাদেরকে প্রতিদিন খেলার মাঠে কয়েক ঘন্টা ফুটবল খেলতে হয়। প্রতিদিন প্রশিক্ষণ শেষ করে মোটর সাইকেল চালিয়ে বাচ্চাদের বাসায় পাঠিয়ে দেন শিক্ষক ছেন। প্রতিদিন এ কাজ শেষ হতে হতে রাত ১০টা বেজে যায়। বাচ্চাদের জন্য শিক্ষক ছেন শুধু কোচ নয়,বরং তাদের বন্ধু ও বড় ভাইয়ের মতো।

প্রশিক্ষণ কাজের শুরুর দিকে অনেকে শিক্ষক ছেনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারে না। পরিবারের সদস্যও ছেনের এ সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে। তবে শিক্ষক ছেন দৃঢ়ভাবে নিজের সিদ্ধান্তে অটল থাকেন এবং বাচ্চাদের নিয়ে অনেক সাফল্য অর্জন করেন। তখন থেকে আশেপাশের লোকজন 'ছাং ফেং' দলকে ব্যাপক স্বীকৃতি দেয় আর পরিবারের সদস্যরাও মনে করেন, ছেনের এ সিদ্ধান্ত সঠিক, তাই ফুটবল দল গঠনে তাকে আর বাধা দেওয়া হয় না। এ সম্পর্কে শিক্ষক ছেনের চাচাত বোন লি ফাং বলেন,

'আমি আগে তার এ সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করেছি। কারণ শুধু বাচ্চাদের সাথে ফুটবল খেলা সঠিক কাজ নয়।তবে ধীরে ধীরে খেয়াল করি যে, তার সাহায্যে বাচ্চাদের দক্ষতা অনেক বেড়েছে, তখন থেকে তাকে সমর্থন দেই।'

'ছাং ফেং' দলের বাচ্চারা সৈকতে বাতাসের সাথে ফুটবল খেলার অনুভূতি ও আনন্দ অনুভব করে এবং এ প্রশিক্ষণ তাদের জীবনে আরো বেশি সম্ভাবনা তৈরি করে। গত কয়েক বছরে এ দলের অনেক খেলোয়াড় বিভিন্ন স্কুলের ফুটবল দলের প্রধান শক্তিতে পরিণত হয়েছে এবং কেউ কেউ জেলা পর্যায়ের ফুটবল দলে যোগ দেয়। ২০০৫ সালে জন্মগ্রহণ করা ছেন সিয়াও হুং প্রাথমিক স্কুলের চতুর্থ শ্রেণী থেকে শিক্ষক ছেনের সাথে ফুটবল প্রশিক্ষণ শুরু করে। নিজের প্রাধান্য ও শ্রেষ্ঠ ফুটবল খেলার প্রযুক্তির কারণে ষষ্ঠ শ্রেণীতে জেলা পর্যায়ের ফুটবল দলে নির্বাচিত হয় এবং এ বিশেষ দক্ষতায় জেলার শ্রেষ্ঠ মাধ্যমিক স্কুলে ভর্তি হয়। এখন সে মাধ্যমিক স্কুলের ফুটবল দলের প্রধান খেলোয়াড়ে পরিণত হয়েছে। ফুটবল খেলার প্রশিক্ষণ সম্পর্কে ছাত্র ছেন সিয়াও হুং বলে,

'আমি শিক্ষক ছেনের কাছ থেকে ফুটবল খেলার বিভিন্ন কৌশল ও প্রযুক্তি শিখেছি, তখন পেশাগত খেলোয়াড় হিসেবে কাজ করার কোনো পরিকল্পনা ছিলোনা, তবে ফুটবল খেলার মাধ্যমে তিনি আমাকে জীবনের অনেক তত্ত্ব বুঝিয়ে দেন। তাই প্রতিযোগিতা না থাকলেও তার সাথে দেখা করি।'

ভালোভাবে বাচ্চাদের ফুটবল খেলা বুঝিয়ে দেওয়ার জন্য অপ্রশিক্ষিত কোচ ছেন প্রতিদিন নিজস্বভাবে ৫ ঘন্টার মতো ফুটবল খেলেন এবং প্রশিক্ষণ ভিডিও থেকে ফুটবল খেলার প্রযুক্তি ও কৌশল গবেষণা করেন। তাঁর প্রয়াসে ২০১৮ সালে তিনি ফুটবল কোচের সনদ অর্জন করেন এবং এ বছরের অগাস্ট মাসে সিয়াপু জেলার চার নম্বর প্রাথমিক স্কুলের একজন ফুটবল শিক্ষকে পরিণত হন।

শিক্ষক হওয়ার পরও তিনি নিয়মিতভাবে সৈকতে গিয়ে বাচ্চাদের সাথে ফুটবল খেলেন এবং 'ছাং ফেং' দলের বাচ্চাদের প্রশিক্ষণ দেন। তিনি বলেন, বাচ্চাদের সাথে ফুটবল খেলা অতি আনন্দের ব্যাপার। বাচ্চাদের নিজের স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে দেখা অনেক আনন্দের। ফুটবল বাচ্চাদের মধ্যে ইতিবাচক শক্তি বয়ে আনবে বলে তিনি আশা করেন। তিনি বলেন,

'আশা করি ফুটবল প্রশিক্ষণ দেওয়ার মাধ্যমে বাচ্চাদের মধ্যে ফুটবল খেলার আগ্রহ বেড়ে যাবে এবং তাদের নিয়ে আরো বেশি পদক অর্জন করতে পারবো ও আরো উচ্চপর্যায়ের প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে পারবো। কয়েক জন বাচ্চা পেশাদার ফুটবল খেলোয়াড় হতে চায়, আমার সাথে ফুটবল খেলায় তাদের এমন স্বপ্ন আরো দৃঢ় হয়েছে। আমি মনে করি তারা বড় হওয়ার পর ফুটবল না খেললেও সমাজে একজন মহান ও মহত্ মানুষ হতে পারবে।'

সৈকতে নির্মিত শত ইউয়ানের খেলার মাঠে প্রতিদিন শিক্ষক ছেন ও তাঁর 'ছাং ফেং' দলের বাচ্চাদের প্রশিক্ষণের দৃশ্য দেখা যায়। ভবিষ্যতে তারা অবশ্যই গ্রাম থেকে দূর বিশ্বে চলে যাবে। বাচ্চারা তাঁকে মনে রেখে সুযোগ পেলে আবার ফুটবল খেলবে বলে আশা করেন শিক্ষক ছেন।


1  2  
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040