চীন-আলবেনিয়া শিক্ষা বিনিময় এবং যুক্তরাষ্ট্রে চীন-মার্কিন শিক্ষা বিনিময়ের ৪০তম বার্ষিকী পালন অনুষ্ঠান
  2019-12-02 16:14:24  cri

 


চীন ও আলবেনিয়ার শিক্ষা বিনিময়

চলতি বছর চীন ও আলবেনিয়ার কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার ৭০তম বার্ষিকী। গত ৭০ বছরের মধ্যে শিক্ষা খাতে দু'দেশের সহযোগিতা সাফল্যমণ্ডিত, তার মাধ্যমে প্রশিক্ষিত শ্রেষ্ঠ দক্ষ ব্যক্তিরা দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের উন্নয়নে ব্যাপক অবদান রেখেছেন।

দু'দেশের নেতৃবৃন্দ শিক্ষার সহযোগিতার ওপর উচ্চপর্যায়ের গুরুত্ব দেন। ১৯৫৪ সালে চীনের সাথে শিক্ষার্থী-বিনিময় প্রস্তাব করে আলবেনিয়া। একই বছরে ৬ জন চীনা শিক্ষার্থী আলবেনিয়ায় লেখাপড়া করতে যান। তাদের মধ্যে একজন হলেন আলবেনিয়ায় নিযুক্ত দশম চীনা রাষ্ট্রদূত ফান ছেং জুও। এ অভিজ্ঞতা স্মরণ করে রাষ্ট্রদূত ফান বলেন,

'আমরা ছয় জন সহপাঠী আলবেনিয়ার ভাষা শেখার ভিত্তিতে দেশটির ইতিহাস, ভূগোল ও সাহিত্যসহ বিভিন্ন বিষয় লেখাপড়া করেছি। মোদ্দাকথায় সেই দেশ সম্পর্কে সবকিছু শিখতে হয়েছে।'

স্নাতক হওয়ার পর চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে যোগ দিয়েছেন ফান। দ্বিপাক্ষিক রাজনৈতিক অনুষ্ঠানে বহুবারের মতো তত্কালীন চীনা প্রেসিডেন্ট মাও সে তুংয়ের অনুবাদক হিসেবে কাজ করেছিলেন। এ সম্পর্কে রাষ্ট্রদূত ফান বলেন,

'প্রথমবারের মতো চেয়ারম্যান মাওয়ের অনুবাদক হিসেবে কাজ করি,তখন আমি তাঁর পাশে বসে আছি। কিছু কথা অনুবাদ করার পর তিনি আমার দিকে তাকান এবং হঠাত্ আমাকে জিজ্ঞেস করেন যে, 'তুমি কি কথা বলো?' আমি উত্তর করে বলি যে, 'চেয়ারম্যান, আমি আলবেনিয়ার ভাষা বলি।' তখন তিনি আবার জিজ্ঞেস করেন যে, 'তুমি এ ভাষা কোথা থেকে শিখেছ? চীনে এ ভাষা জানার লোক আছে?' তখন আমি আলবেনিয়ার স্পিকার মার্কোকে দেখে বলি যে, 'আমি তাদের দেশে এ ভাষা শিখেছি।' আমার কথা শুনে চেয়ারম্যান মাও মার্কোকে কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বলেন যে, 'আমাদের দেশে শ্রেষ্ঠ ব্যক্তির প্রশিক্ষণে ধন্যবাদ।'

চীনে নিযুক্ত আলবেনিয়ার রাষ্ট্রদূত হাজদার মুনেকা চীনে লেখাপড়া করেছেন। বহু বছর ধরে তিনি দ্বিপাক্ষিক বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের উন্নয়নে প্রচেষ্টা চালান এবং '১৭ প্লাস ১' আর 'এক অঞ্চল, এক পথ' কাঠামোতে সহযোগিতায় অবদান রাখেন। গত শতাব্দীর ৭০ দশকে চীনের লেখাপড়ার অভিজ্ঞতা তাঁর মনে গভীর দাগ কাটে। তিনি বলেন,

'আমি বেইজিং ভাষা ও সংস্কৃতি বিশ্ববিদ্যালয়-বিএলসিইউতে চার বছর চীনা ভাষা শিখেছি, তা খুবই সৌভাগ্যের ব্যাপার। আমার বিশ্ববিদ্যালয়ের সময় চীন ও আলবেনিয়ার অর্থনৈতিক অবস্থা দুর্বল। যখন আমি চীনে লেখাপড়া করতে আসতে চাই, তখন আমার দেশের নেতৃবৃন্দ আমাদের বলেন যে, চীনে গেলে বেশি অনুরোধ করতে হবে না, কারণ তাদের অবস্থাও জটিল। বস্তুত যখন আমি চীনে আসি এবং চার বছর পর দেশে ফিরে যাই, চীনা জনগণের আন্তরিকতা ও মৈত্রী গভীরভাবে অনুভব করেছি। চীনা অধ্যাপক নিজের সন্তানের মতো আমাদের সাথে থাকেন এবং এ চার বছরে আমরা কোনো সমস্যার সম্মুখীন হই নি, তা আমাদের জীবনে সবচেয়ে সুন্দর সময় বলা যায়।'

শাংহাই বৈদেশিক কার্যালয়ের বিদেশি অতিথি বিভাগের সাবেক পরিচালক ম্যাডাম হুয়া তা মিং ১৯৬৪ সালে আলবেনিয়ায় লেখাপড়া করতে যান।উত্তেজনাময় ও সরল দু'টি শব্দ দিয়ে তাঁর লেখাপড়া অভিজ্ঞতা বর্ণনা করেন তিনি। তিনি বলেন,

'সর্বপ্রথম দুই তিন জন আলবেনিয়ার শিক্ষার্থীদের সাথে থাকি। আমার রুম একটু বড়, তাই তিন জন আলবেনিয়ার মেয়ের সাথে থাকি।আমাদের সম্পর্ক ভালো, প্রতিদিন তাদের সাথে কথাবার্তা বলি আর বাইরে শপিংয়ের সময় বা স্থানীয় বাচ্চাদের সাথে দেখা হলে সবসময় কথা বলা চর্চা করি।'

শাংহাই বিদেশি ভাষা বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রিস বিভাগের অধ্যাপক চু শেং পেং ১৯৬৫ সালে আলবেনিয়ায় গ্রিস ভাষা শিখতে শুরু করেন। বিদেশে লেখাপড়ার উদ্দেশ্য সম্পর্কে অধ্যাপক চু বলেন,

'তখন শুধু ভাবি যে ভালভাবে লেখাপড়া করা, নিজের প্রচেষ্টায় দেশের উন্নয়নে সেবা করা, আমার উদ্দেশ্য খুবই সরল।'

তবে এ সরল বিশ্বাসের কারণে চীনের বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম পর্যায়ের গ্রিস ভাষা শিক্ষকে পরিণত হন অধ্যাপক চু এবং তাঁর অর্জিত জ্ঞান দিয়ে শাংহাই বিদেশি ভাষা বিশ্ববিদ্যালয়ে সারা জীবন অবদান রাখেন।

গত ৭০ বছরের মধ্যে শিক্ষা বিনিময় দু'দেশের যুবকদের সুন্দর ভবিষ্যত গঠনে ব্যাপক সুযোগ প্রদান করেছে। শিক্ষার্থীদের বিদেশে লেখাপড়ার উদ্দেশ্য, জীবনযাপন আর কর্তব্য পরিকল্পনাসহ বিভিন্ন ব্যাপারও ব্যাপক পরিবর্তন ঘটেছে।

চীনের কেন্দ্রীয় অর্থ ও অর্থনীতি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক শিক্ষার্থী সায়েলমা হাকা ৪ বছর আগে চীনে এসে অর্থনীতি বিষয়ে লেখাপড়া করেন। তার জন্য লেখাপড়া শুধু কর্তব্যের লক্ষ্যমাত্রা বাস্তবায়ন করা নয়, বরং সার্বিকভাবে নিজের দক্ষতা উন্নীত করা।এ সম্পর্কে তিনি বলেন,

'আমার বাবা অর্থনীতিবিদ এবং আমিও এ বিষয় শিখতে চাই। তাছাড়া, চীনের অর্থনীতি সুষ্ঠুভাবে উন্নত হয়, এখানে সুযোগ অনেক বেশি। ছুটির দিনে কণ্ঠশিল্পী ও মডেল প্রতিযোগিতায় অংশ নেই, তা আমার অন্যান্য স্বপ্ন। আমি গান ও নৃত্য বেশি পছন্দ করি। প্রদর্শনীর মাধ্যমে আত্মপ্রকাশের সুযোগ পাই আর সবাই আমার প্রদর্শনীর মাধ্যমে আলবেনিয়াকে জানতে পারে।'

চীনা শিক্ষার্থী পান শু হাও সরকারি বৃত্তি নিয়ে আলবেনিয়ায় এক বছরের মতো লেখাপড়া করেন। সেই সময় তিনি স্থানীয় নৃত্য দলে যোগ দিয়ে বিশ্ব নৃত্য প্রতিযোগিতার হিপহপ নৃত্যে রৌপ্য পদক লাভ করেন। তিনি বলেন,

'প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়ার মাধ্যমে আলবেনিয়ার লোকদের সাথে কথাবার্তা বলতে পারি, তা খুবই শ্রেষ্ঠ সুযোগ। এ প্রক্রিয়ায় হিপহপ জ্ঞান জানতে সক্ষম। আসলে স্থানীয় লোকজন চীন সম্পর্কে খুব কম জানে, তারা সবসময় চীনের বিভিন্ন বিষয় আমাকে জিজ্ঞেস করে,এভাবে চীনা ভাষার সম্প্রচার করতে পারি।'

ভবিষ্যত সম্পর্কে শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন ধরনের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। যেমন-

'চীনের জীবনযাপন আমাকে স্বাধীন, শান্ত ও শক্তিশালী করেছে। স্নাতক হওয়ার পর পেশা জীবন শুরু হবে, তবে আমি আমার শিল্পকলার স্বপ্ন ত্যাগ করবো না।'

'পড়াশোনা করলে বিদেশি মাস্টার্স ডিগ্রি পেতে চেষ্টা করবো।'

গত ৭০ বছরের মধ্যে দু'দেশের শিক্ষা বিনিময়ে ব্যাপক দক্ষ ব্যক্তিদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। তারা দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের উন্নয়নে অনেক অবদান রেখেছে।

পরিসংখ্যান থেকে জানা গেছে, ১৯৬১ সাল থেকে এ পর্যন্ত বেইজিং বিদেশি ভাষা বিশ্ববিদ্যালয়ে আলবেনিয়া ভাষা বিভাগ থেকে শতাধিক শিক্ষার্থী স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন। ২০০০ সাল ও ২০১৪ সালে এ বিশ্ববিদ্যালয়ে এ ভাষার মাস্টার্স ও ডক্টরেট কার্যক্রম চালু হয়। দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের উন্নয়নে বেইজিং দ্বিতীয় বিদেশি ভাষা একাডেমিও ২০১৮ সালে আলবেনিয়া ভাষা বিভাগ চালু করেছে।

এর সঙ্গে সঙ্গে, আন্তর্জাতিক সমাজে চীনের প্রভাব দিন দিন বাড়ছে এবং দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কও ঘনিষ্ঠতর হচ্ছে। আলবেনিয়ার রাজধানী তিরানা বিশ্ববিদ্যালয়ের কনফুসিয়াস ইনস্টিটিউট ব্যাপক শিক্ষার্থীদের আকর্ষণ করেছে।

ইনস্টিটিউটের পরিচালক এরিওন মালাজ বলেন, কনফুসিয়াস ইনস্টিটিউট চালু করার পর আলবেনিয়ার যুবকরা চীনের প্রতি আরো বেশি আকৃষ্ট হয়েছেন। তাদের চীনা ভাষা শেখার আগ্রহ অনেক বেড়েছে। ২০১৮ সালে ভর্তির সংখ্যা এর আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ৭৫ শতাংশেরও বেশি।এ সম্পর্কে মালাজ মনে করেন, তা দ্বিপাক্ষিক যৌথ প্রচেষ্টার সাফল্য। তিনি বলেন,

'বর্তমানে আলবেনিয়ায় একমাত্র চীনা ভাষা ও সংস্কৃতি শেখার প্রতিষ্ঠান তিরানা কনফুসিয়াস ইনস্টিটিউট। চীনের সহায়তা শুধু আর্থিক নয়, বরং পেশাগত গবেষণাও। এ ভিত্তিতে কিছু সাফল্য অর্জিত হয়েছে। ভবিষ্যতে আলবেনিয়ার অন্যান্য শহরে কনফুসিয়াস ইনস্টিটিউট চালু করতে চেষ্টা করবো। কম সময়ের মধ্যে দেশের দক্ষিণাঞ্চলে ভ্লোরা ইনস্টিডিউট চালু হবে, তা আরো বেশি লোকদের চীনা ভাষার চাহিদা পূরণ করতে সক্ষম।'

২০১৯ সালের অক্টোবর মাসে আলবেনিয়ার শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রী রেদি শটিনো চীন সফরে আসেন। দ্বিপাক্ষিক শিক্ষা সহযোগিতার গভীর সহযোগিতা সম্পর্কে তিনি বলেন,

'আমাদের দেশে চীনা ভাষা শেখার আগ্রহ বৃদ্ধির মূল কারণ সরকারি ও পেশাগত সহযোগিতার গভীর উন্নয়ন। সাথে সাথে আন্তর্জাতিক মঞ্চে চীনের ভূমিকাও দিন দিন গুরুত্বপূর্ণ। তাই অব্যাহতভাবে বিভিন্ন খাতের সহযোগিতা জোরদার করা, বিশেষ করে শিক্ষা ও যুবক খাতের বিনিময় জোরদার করা হবে বলে আশা করে আলবেনিয়া।'

৭০ বছরের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক শিক্ষা বিনিময় ও সহযোগিতার ফলে দু'দেশের উন্নয়নে দক্ষ ব্যক্তি ও বুদ্ধি প্রদান করা হয় এবং দ্বিপাক্ষিক মৈত্রীও সম্প্রসারিত হয়। নতুন আরম্ভে দাঁড়িয়ে দু'দেশের শিক্ষা বিনিময় দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের উন্নয়ন ও জনগণের মৈত্রীতে আরো কল্যাণ বয়ে আনবে।


1  2  
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040