ব্রিটেনের বিশ্ববিদ্যালয়ে চীনা ভাষা প্রশিক্ষণ সম্মেলন
সম্প্রতি ব্রিটেনের ল্যানচেস্টার বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্তর্জাতিক চীনা ভাষা প্রশিক্ষণ সম্মেলন আয়োজিত হয়। ব্রিটিশ চীনা ভাষা গবেষণাগার ও ল্যানচেস্টার বিশ্ববিদ্যালয় যৌথভাবে এই সম্মেলন আয়োজন করে। এতে বিশ্বের ৩০টি দেশ ও অঞ্চলের ১৮০ জনেরও বেশি চীনা ভাষা-বিষয়ক পণ্ডিত, বিশেষজ্ঞ ও শিক্ষক অংশ নেন। তাঁরা আন্তর্জাতিক চীনা ভাষা প্রশিক্ষণের মিল ও বৈশিষ্ট্য নিয়ে ব্যাপক আলোচনা করেন এবং নিজ নিজ অভিজ্ঞতা ও গবেষণার ফলাফল বিনিময় করেন।
তিনদিনব্যাপী সম্মেলনটি ভাষণ ও আলোচনা- এ দুটি পর্বে অনুষ্ঠিত হয়। ইউরোপ, আমেরিকা ও এশিয়ার বিভিন্ন দেশ, চীনের হংকং বিশেষ প্রশাসনিক অঞ্চল ও তাইওয়ান প্রদেশের পণ্ডিতরা চীনা ভাষার মূল গবেষণা, দ্বিতীয় ভাষার লেখাপড়া, চীনা ভাষার প্রশিক্ষণ পদ্ধতি ও ক্লাসসূচি নিয়ে গভীরভাবে মতবিনিময় করেন। সম্মেলনে 'ল্যানচেস্টার ঘোষণা' গৃহীত হয়। এতে বিশ্বের চীনা ভাষা শিক্ষক ও পণ্ডিতদের যৌথ প্রয়াসে শিক্ষা সম্পদের অভিন্ন গঠন ও তা উপভোগের আহ্বান জানানো হয়। সেই সঙ্গে একাডেমিক বিনিময় ও অভিজ্ঞতা শেয়ার করার মাধ্যমে চীনা ভাষা প্রশিক্ষণ ও গবেষণার অবস্থান আরো উন্নীত করা হবে বলে ঘোষণায় উল্লেখ করা হয়।
সম্মেলন চলাকালে ইউরোপে চীনা ভাষা প্রশিক্ষণ পরিষদের মহাপরিচালক অধ্যাপক জোয়েল বেল্লাসেন সম্মেলন সফলভাবে আয়োজনে শুভেচ্ছা-বার্তা পাঠান। বার্তায় বলা হয়, ব্রিটেনে চীনা ভাষা প্রশিক্ষণ সাম্প্রতিক বছরগুলোতে কার্যকরভাবে উন্নয়ন হয়েছে, উচ্চশিক্ষায় চীনা ভাষা প্রশিক্ষণ সুদীর্ঘকালের, ব্রিটেনে চীনা ভাষা প্রশিক্ষণ ও চীন বিষয়ক বিদ্যার উত্তরাধিকার করা হয়েছে। ব্রিটেনে মৌলিক শিক্ষায় চীনা ভাষার প্রশিক্ষণ দ্রুত উন্নত হয়েছে। নতুন অবস্থায় নতুন চ্যালেঞ্জ ও সমস্যা ঘটবে। অধ্যাপক বেল্লাসেন বিশ্বাস করেন, ব্রিটেনে চীনা ভাষা প্রশিক্ষণ গবেষণা সমিতি নতুন প্রেক্ষাপটে দেশের চীনা ভাষা প্রশিক্ষকদের জন্য বিনিময় ও লেখাপড়ার প্ল্যাটফর্ম গড়ে তুলতে সক্ষম।
ব্রিটেনে চীনা ভাষা প্রশিক্ষণ গবেষণা সমিতির মহাপরিচালক অধ্যাপক ওয়াং ওয়ে ছুন সম্মেলনের তাত্পর্য ও বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে বলেন,
'চলতি বছরের সম্মেলনে 'ল্যানচেস্টার ঘোষণা' একটি দারুণ আকর্ষণীয় ব্যাপার। নতুন তত্ত্ব, নতুন উপায়, নতুন সমস্যা আর নতুন মোকাবিলার পদ্ধতি সবই ব্রিটেনে চীনা ভাষা প্রশিক্ষণ পরিস্থিতি ও প্রবণতার সাথে সম্পর্কিত। বলা যায় এটি ব্রিটিশ বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য নতুন তত্ত্ব, চিন্তাভাবনা ও প্রশিক্ষণ পদ্ধতির সমন্বয়।'
নতুন পরিস্থিতিতে চীনা ভাষা প্রশিক্ষণে শিক্ষকদের দায়িত্ব ও ভূমিকার পরিবর্তন সম্পর্কে অধ্যাপক ওয়াং বলেন,
'বস্তুত ভবিষ্যতে চীনা ভাষা দ্বিতীয় ভাষা ও বিদেশি ভাষা প্রশিক্ষণ হিসেবে আখ্যায়িত করা হবে। আগের মতো শুধু ক্লাসে পড়াশোনা করলেই চলবেনা, বরং মেজর নির্মাণ ও তত্ত্ব গঠনে মনোযোগ দিতে হবে। অতীতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা প্রাথমিক বা মাধ্যমিক স্কুলের শিক্ষকের মতো কাজ করেন। ভবিষ্যতে আমরা আরো গবেষণা ও প্রবন্ধ রচনা করবো, বিজ্ঞানসম্মত গবেষণা করে মেজর নির্মাণ করবো।'
এবারের সম্মেলন প্রকাশকদেরও আকৃষ্ট করে। ৪৮ বছরের ঐতিহ্যবাহী কুয়াংহুয়া বইয়ের দোকান ব্রিটেনে একমাত্র চীনা ভাষার ম্যাগাজিন ও বই প্রকাশনার দোকান। এ সম্পর্কে দোকানটির দায়িত্বশীল ব্যক্তি সিয়ে সিয়াও ছেং বলেন, বর্তমানে চীনা ভাষা শেখার বই অনেক জনপ্রিয়, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ব্রিটিশরা প্রচুর চীনা বই কিনছে। এতে প্রতিফলিত হয় যে, ব্রিটিশদের মধ্যে চীনা ভাষা শেখার প্রবণতা ব্যাপকভাবে বাড়ছে। তিনি বলেন,
'ব্রিটেনে বিশ্ববিদ্যালয়ে চীনা ভাষা শেখা একটি প্রধান প্রবণতায় পরিণত হয়েছে। বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়া নাগরিক শিক্ষা ব্যবস্থায় চীনা ভাষার পরীক্ষা অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। এখন অনেক প্রাথমিক স্কুলেও চীনা ভাষার ক্লাস চালু হয়েছে। বড়রা ব্যবসা, পর্যটন বা কেউ কেউ ব্যক্তিগত ইচ্ছার কারণে চীনা ভাষা শিখতে শুরু করেন। চীনা ভাষা শেখার লোকসংখ্যা অনেক বেড়েছে।'
ব্রিটিশ চীনা ভাষা প্রশিক্ষণ গবেষণা সমিতি ব্রিটেনে বিশ্ববিদ্যালয়ের চীনা ভাষার শিক্ষকদের একটি প্রতিষ্ঠান, যা ১৯৯৭ সালে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতিষ্ঠিত হয়। সংস্থাটি প্রধানত ব্রিটেনে চীনা ভাষার শিক্ষকদের ভাষা গবেষণা ও প্রশিক্ষণের দক্ষতা উন্নয়নে সহায়তা দেয়।