চীন-ব্রিটেন উচ্চশিক্ষাবিষয়ক সহযোগিতা
সম্প্রতি চীনের শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও ব্রিটিশ কাউন্সিলের যৌথ উদ্যোগে বেইজিংয়ে চীন-ব্রিটেন 'এক অঞ্চল, এক পথ' প্রকল্প শুরু হয়। এই প্রকল্পটি চীন ও ব্রিটেনের শিক্ষা খাতের নতুন সহযোগিতামূলক পদক্ষেপ, যা ব্যাপকভাবে অংশীদারি সম্পর্ক সম্প্রসারণ করতে সক্ষম। এ প্রকল্পের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট দেশের শিক্ষার সামর্থ্য উন্নীত করা হবে, যৌথভাবে চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করা হবে ও যৌথ উন্নয়ন বাস্তবায়ন করা হবে।
প্রকল্পটির অন্যতম উদ্যোক্তা,ব্রিটিশ কাউন্সিলের বৈশ্বিক শিক্ষা-বিষয়ক পরিচালক অ্যান্ড্রিউ জের্জান বলেন, এ প্রকল্পের তাত্পর্য গুরুত্বপূর্ণ, যা দু'দেশের শিক্ষা সহযোগিতায় নতুন অধ্যায় উন্মোচন করেছে। তিনি বলেন,
'ব্রিটিশ কাউন্সিল ও চীনের শিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রথমবারের মতো 'এক অঞ্চল, এক পথ' প্রকল্প তহবিল চালু করেছে। ব্রিটেন ও চীনের সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয় আর 'এক অঞ্চল, এক পথ' সংলগ্ন দেশের সহযোগিতামূলক অংশীদারের জন্য এ অর্থ প্রদান করে ব্রিটিশ কাউন্সিল। তা খুবই গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। আমার ধারণায় এটি দু'দেশের শিক্ষা সহযোগিতায় দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে নতুন মানে উন্নীত করবে।'
প্রকল্পের কারণ ও প্রয়োজন সম্পর্কে জের্জান বলেন, সমান স্কেলের সহযোগিতা ও বহুপক্ষীয় অংশীদারি সম্পর্ক স্থাপন করা হবে প্রকল্পের নতুন পর্যায়ের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। তিনি বলেন,
'চীনের সাথে সহযোগিতামূলক পশ্চিমা অংশীদার হিসেবে আমাদের সম্মুখীন সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো কিভাবে চীনের চাহিদা মেটানো যায়। চীনের বিশ্ববিদ্যালয় বা গবেষণা প্রতিষ্ঠান উভয়েই বড় ও সমৃদ্ধ, তাই এ ধরনের স্কেলের অংশীদারের চাহিদা মেটানো খুবই কঠিন ব্যাপার। চীনের লোকসংখ্যা ব্রিটেনের ২০ গুণ, তাই এমন চাহিদা পূরণ করা আমাদের জন্য অতি কষ্টের ব্যাপার। অন্য দিক থেকে বিবেচনা করে নতুন পর্যায়ে আমরা সক্রিয়ভাবে 'এক অঞ্চল,এক পথ' উদ্যোগে অংশ নেই। এটি সংশ্লিষ্ট দেশের সাথে সহযোগিতার মাধ্যমে বহুপক্ষীয় অংশীদারি সম্পর্ক স্থাপন করতে সক্ষম, তা চীনের সাথে বড় স্কেলের সহযোগিতার বাস্তবায়ন আর কার্যকর সহযোগিতামূলক অংশীদারি সম্পর্ক স্থাপনে সহায়ক। তা হবে ভবিষ্যতে আমাদের সহযোগিতার মূল বিষয়।'
চীন ও ব্রিটেনের শিক্ষা প্রকল্প চালু হওয়ার পর মালয়েশিয়া, ফিলিপিন্স, দক্ষিণ আফ্রিকা ও কেনিয়াসহ ১০টি দেশের বিশ্ববিদ্যালয় এতে আকৃষ্ট হয়। এতে ব্যাপক বিনিময় ও গভীর সহযোগিতামূলক প্রকল্পের তাত্পর্য প্রতিফলিত হয়।
ব্রিটেন চীনা শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ার গন্তব্য দেশে পরিণত হওয়ার কারণ সম্পর্কে জের্জান বলেন, ব্রিটেনের সমৃদ্ধ সংস্কৃতি ও গুনগতমানসম্পন্ন শিক্ষা-সম্পদ বিভিন্ন দেশের শিক্ষার্থীদের ব্যাপক আগ্রহের মূল কারণ। তিনি বলেন,
'আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ায় ব্রিটেনের উচ্চশিক্ষা ব্যবস্থায় বিরাট দক্ষতা ও সম্ভাবনা রয়েছে, বিশেষ করে চীনা শিক্ষার্থীদের জন্য। পরিসংখ্যান থেকে জানা গেছে, প্রতি বছর ব্রিটেনে আসা চীনা শিক্ষার্থীদের সংখ্যা বাড়ছে। তা শুধু যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের সম্পর্ক অবনতির কারণে ব্রিটেনে চীনা শিক্ষার্থীদের সংখ্যা বেড়েছে তা নয়, বরং এ বিষয়টি ব্রিটেনের শিক্ষার মানের সাথে জড়িত। শ্রেষ্ঠ মানের শিক্ষাগ্রহণ শিক্ষার্থীদের জন্য কল্যাণ বয়ে আনবে। আমার ধারণায় ব্রিটেনের শিক্ষার মান অতি কার্যকর, তাই এখানে চীনা শিক্ষার্থীর সংখ্যা বেশি। ভবিষ্যতে দেশের উচ্চশিক্ষা ব্যবস্থায় আরো বেশি বিদেশি শিক্ষার্থী গ্রহণ করা হবে বলে মনে করি।'
চীন ও ব্রিটেনের শিক্ষা সহযোগিতার প্রধান বিষয় সম্পর্কে জের্জান বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি গবেষণা বিনিময় এবং সহযোগিতা হবে একটি গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার। তিনি বলেন,
'দু'দেশের শিক্ষা সহযোগিতা অনেক শক্তিশালী হয়েছে। বর্তমানে বিবেচনা করতে হবে যে সুন্দর ভবিষ্যত গঠনে কি কি করা দরকার। বিনিময় জোরদার করার সাথে সাথে দু'দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি গবেষণার সহযোগিতা উন্নত করতে হবে। সুখবর হচ্ছে দু'পক্ষের সহযোগিতার ইচ্ছা অনেক শক্তিশালী, কারণ আমরা জানি দু'পক্ষের যৌথ উদ্যোগে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির গবেষণার সাফল্য আরো বড়। এটি খুবই ইতিবাচক ব্যাপার। এতে ভবিষ্যত আরো সুন্দর হবে।'
ব্রিটিশ কাউন্সিলের একজন পরিচালক হিসেবে চীন ও চীনা শিক্ষার্থীদের প্রতি বিশেষ অনুভূতি রয়েছে জের্জানের। তিনি বলেন,
'চীনের যে জিনিস আমার মনে গভীর ছাপ ফেলেছে তা হলো চীনাদের পরিশ্রম ও বিরাট শক্তি। আমার কাছে চীনাদের এমন শক্তি বিশ্বে অতুলনীয় ও বৈশিষ্ট্যময়। তা চালিকাশক্তির মতো। এ শক্তি মানুষের মধ্যে প্রবাহিত ও হস্তান্তর করা হয়,তা অনেক উত্সাহজনক। বিশ্বের অন্যান্য দেশে এমন শক্তি খুঁজে পাই না। আমার মনে হয় পাশ্চাত্য দেশ জানে যে, চীন একটি শক্তিশালী অর্থনৈতিক সত্তায় পরিণত হয়েছে, তবে অনেকে বুঝতে পারে না যে, এ সাফল্যের পিছনে চালিকাশক্তির মূল কারণ কি?'
উল্লেখ্য, ব্রিটিশ কাউন্সিল ১৯৩৪ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়, তা ব্রিটিশ রাজপরিবারের অনুমোদনে স্থাপিত একটি অলাভজনক প্রতিষ্ঠান। শিক্ষাদান ও সাংস্কৃতিক বিনিময়ের আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানের অন্যতম হিসেবে বর্তমানে বিশ্বের শতাধিক দেশের সাথে সহযোগিতামূলক সম্পর্ক স্থাপন করেছে সংস্থাটি। সহযোগিতার বিষয় শিল্পকলা, সংস্কৃতি, ইংরেজি ভাষা, শিক্ষা ও সামাজিক উন্নয়ন ইত্যাদি।
প্রিয় শ্রোতা, সময় দ্রুত চলে যায়। আমাদের আজকের অনুষ্ঠানও এখানেই শেষ করতে হবে। এ অনুষ্ঠান সম্পর্কে কোনো মতামত থাকলে আমাদের চিঠি লিখতে ভুলবেন না। আমাদের যোগাযোগ ঠিকানা ben@cri.com.cn,caoyanhua@cri.com.cn
সময় মতো আমাদের অনুষ্ঠান শুনতে না পারলে বা শুনতে মিস করলে আমাদের ওয়েবসাইটে তা শুনতে পারবেন। ওয়েবসাইটের ঠিকানা: www.bengali.cri.cn
তাহলে এবার বিদায় নিচ্ছি, সবাই ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন, থাকুন সুন্দর ও আনন্দে। আগামী সপ্তাহের একই দিনে একই সময়ে আবারো কথা হবে। যাই চিয়ান। (সুবর্ণা/টুটুল/স্বর্ণা)