দারিদ্র্যবিমোচন চীনের মানবাধিকার কর্তব্য উন্নয়নের সবচেয়ে আকর্ষণীয় প্রতীক
সম্প্রতি জাতিসংঘ মানবাধিকার পরিষদের ৪১তম অধিবেশন জেনিভায় আয়োজিত হয়। চীনের মানবাধিকার গবেষণা পরিষদের উদ্যোগে 'গণপ্রজাতন্ত্রী চীনের ৭০ বছরের মানবাধিকার উন্নয়ন ও অগ্রগতি' প্রতিপাদ্য ভিত্তিক এক প্রদর্শনীও সাথে উদ্বোধন হয়। চলতি বছর গণপ্রজাতন্ত্রী চীন প্রতিষ্ঠার ৭০তম বার্ষিকী। জাতিসংঘ মানবাধিকার অধিবেশনের সুযোগ কাজে লাগিয়ে চীনের বিশেষজ্ঞরা অধিবেশনে গত ৭০ বছরে চীনের মানবাধিকার কর্তব্যের উন্নয়ন ও অগ্রগতি তুলে ধরেন।
৭০ বছরের মধ্যে চীনের ৭০ কোটিরও বেশি মানুষ দারিদ্র্যমুক্ত হয়েছেন। এই সংখ্যা বিশ্বের দারিদ্র্যমুক্ত লোকসংখ্যার ৭০ শতাংশেরও বেশি। বলা যায়, এটি মানবজাতির দারিদ্র্যবিমোচনের অলৌকিক ঘটনা। এ সাফল্য চীনের মানবাধিকার কর্তব্য উন্নয়নের সবচেয়ে আকর্ষণীয় প্রতীকে পরিণত হয়েছে।
জাতিসংঘের অধিবেশনে চীনের সাউথ-ওয়েস্ট আইন ও রাজনীতি বিশ্ববিদ্যালয়ের মানবাধিকার গবেষণা একাডেমির শিক্ষক শাং হাই মিং শিক্ষার মাধ্যমে দারিদ্র্যমুক্ত হওয়ার দিক থেকে চীনের সংশ্লিষ্ট অভিজ্ঞতা বিনিময় করেন। তিনি বলেন,
'গত কয়েক দশক বছরে দারিদ্র্য বিমোচনের কাজে বহু পদক্ষেপ নিয়েছে চীন। এর মধ্যে শিক্ষার মাধ্যমে দারিদ্র্যমুক্তকরণ সবচেয়ে কার্যকর পদ্ধতি। এ প্রক্রিয়ায় চীন ব্যাপক অভিজ্ঞতাও অর্জন করেছে।'
শিক্ষক শাং বলেন, মৌলিক শিক্ষা খাতে চীনে 'নিরক্ষরতা বর্জন করা' এবং ৯ বছরের বাধ্যতামূলক শিক্ষাদানসহ নানা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, যাতে দরিদ্র মানুষের শিক্ষা গ্রহণের মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করা যায় এবং দারিদ্র্যবিমোচনে সাফল্য অর্জিত হয়। চীনে নিরক্ষর লোকসংখ্যা ৮০ শতাংশ থেকে ৪.০৮ শতাংশে নেমে এসেছে এবং প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী ভর্তির হার ৯৯.৯১ শতাংশে দাঁড়িয়েছে।
পেশাগত প্রশিক্ষণে দরিদ্র পরিবারের বাচ্চাদের আর কৃষক শ্রমিকদের পেশাগত প্রশিক্ষণ গ্রহণের মাধ্যমে দরিদ্র লোকদের দারিদ্র্যবিমোচনের পরিমাণ ব্যাপকভাবে বেড়ে গেছে। উচ্চশিক্ষা গ্রহণের সমান সুযোগ নিশ্চিত করেছে চীন সরকার। এর মধ্যে দিয়ে দরিদ্র লোকদের উচ্চশিক্ষা গ্রহণের সুযোগও বাড়ানো হয়েছে। চীনের 'কাওখাও' অর্থাত্ উচ্চ বিদ্যালয়ের পরীক্ষা ব্যবস্থার সমতার প্রশংসা করেছে স্প্যানিশ 'ইআই পাইস পত্রিকা'। শিক্ষার্থীদের পরিবার, ব্যক্তিগত প্রেক্ষাপট বিবেচনা না করে শুধু পরিশ্রমের সাথে লেখাপড়া করে সবাইকে সাফল্য অর্জন করতে হবে।
চীনের তিব্বত স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের দারিদ্র্যবিমোচনের উন্নয়ন নিয়ে বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরেন মানবাধিকার পরিষদের প্রতিনিধি লুও বু। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে তিব্বতের দারিদ্র্যবিমোচন কাজে ব্যাপক সাফল্য অর্জিত হয়। তিব্বতের কিছু কিছু এলাকায় শহরায়ন আর স্থানান্তর কাজ সুষ্ঠুভাবে সমন্বয় করা হয়, অবকাঠামো নির্মাণ ও শিল্প উন্নয়নের কাজ সংযুক্ত করা হয় এবং শিল্প উন্নয়নের মাধ্যমে দরিদ্র লোকদের কর্মসংস্থান সমস্যার সমাধান করা হয়। বিভিন্ন এলাকার সরকারের দরিদ্রদের আর্থিক সহায়তা আর বিশেষ শিল্প অর্থের প্রকল্পে দরিদ্র এলাকার দীর্ঘস্থায়ী দারিদ্র্যমুক্ত বাস্তবায়ন করা হয়। লুও বু বলেন,
'২০১৯ সালের জুন মাসে তিব্বতে দরিদ্র লোকের সংখ্যা ৫.৯ লাখ থেকে ১.৫ লাখে নেমে আসে। এ ছাড়া, দরিদ্র জেলার সংখ্যাও ৭৪টি থেকে কমে আসে ১৯টিতে, দরিদ্র লোকের পরিমাণ ২৫.২ শতাংশ থেকে ৫.৬ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। চলতি বছর তিব্বতের চরম দরিদ্রতা নির্মূল করা হবে এবং বাকি ১.৫ লাখ মানুষ দারিদ্র্যমুক্ত হবেন বলে পরিকল্পনা করা হয়।'
লুও বু আরো বলেন, তিব্বতের দারিদ্র্যবিমোচন এবং প্রাকৃতিক পরিবেশ সংরক্ষণ যৌথভাবে চালু হয়েছে, যাতে দুই দিক থেকে নির্দিষ্ট লক্ষ্যমাত্রা বাস্তবায়ন করা যায়। তিব্বতের প্রাকৃতিক সংরক্ষণ এলাকার আয়তন অব্যাহতভাবে সম্প্রসারিত হয়েছে, ৪৭টি প্রাকৃতিক সংরক্ষণ এলাকা গঠিত হয়েছে, যার মোট আয়তন তিব্বতের ৩৫ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। সাথে সাথে ২০১৬ সাল থেকে তিব্বতে তৃণভূমি প্রশাসন, প্রাকৃতিক সংরক্ষণ এলাকা প্রশাসন, প্রাকৃতিক বন সংরক্ষণসহ ৮ ধরনের ৭ লাখ কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করা হয়েছে, যা দরিদ্র ও নিম্ন আয়ের লোকদের দারিদ্র্যবিমোচনে সহায়ক।
চীনের মানবাধিকার গবেষণা পরিষদের উপ-মহাসচিব ম্যাডাম ওয়াং লিন সিয়া বলেন, চীনের দারিদ্র্যবিমোচনের সাফল্য গভীরভাবে গবেষণা ও বিশ্লেষণের ভিত্তিতে অর্জিত হয়েছে। গত ৭০ বছরে চীন নিজের বৈশিষ্ট্যময় দারিদ্র্যবিমোচন পদ্ধতি খুঁজে পেয়েছে। তিনি বলেন,
'মানবাধিকার তত্ত্বের দিক থেকে চীন মনে করে, 'বেঁচে থাকা ও উন্নয়নের অধিকার হবে মানবাধিকারের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়'। এ তত্ত্ব আন্তর্জাতিক মানবাধিকার তত্ত্বের ব্যবস্থা সমৃদ্ধ করেছে এবং বিশ্বের মানবাধিকার তত্ত্বে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছে। এ তত্ত্বের ভিত্তিতে রাষ্ট্রীয় দারিদ্র্য বিমোচন অনুশীলন অনুসরণ করে রাষ্ট্রীয় মানবাধিকার উন্নয়ন করেছে বেইজিং এবং এতে বিরাট সাফল্য অর্জিত হয়েছে।'