চীন-বেলারুশ উচ্চশিক্ষার সহযোগিতা এবং সিনচিয়াং উইগুর স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের এক অধ্যাপকের গল্প
  2019-06-03 14:22:17  cri

সিনচিয়াং উইগুর স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের শিহোজি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ছাও লিয়ানফু'র গল্প

৮০ বছর বয়সী অধ্যাপক ছাও লিয়ান ফু চীনের সিনচিয়াং শিহোজি বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি একাডেমির সিনিয়র অধ্যাপক। তিনি গমের নতুন ধারণা নিয়ে কাজ করেছেন। গত কয়েক দশক বছরে তিনি গবেষণা দল নিয়ে সাফল্যের সঙ্গে সিনচিয়াংয়ের আবহাওয়ার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ নতুন জাতের গম উত্পাদন করে বিস্ময় সৃষ্টি করেন। এই গম ব্যাপকভাবে চাষ করার পর অঞ্চলটির কৃষকদের আয় অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে।

গত শতাব্দীর ৬০'র দশকে বেইজিং কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক হওয়ার পর চীনের সীমান্ত ও দূরবর্তী এলাকায় চাকরি করার আবেদন করেন অধ্যাপক ছাও। ১৯৬৩ সালে তিনি তত্কালীন চীনা গণমুক্তি ফৌজের সিনচিয়াং সামরিক এলাকার উত্পাদন ও নির্মাণ সৈন্য গ্রুপের অধীনে শিহোজি বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি একাডেমির একজন শিক্ষক হন। এ গল্প স্মরণ করে অধ্যাপক ছাও বলেন,

'প্রায় পাঁচ দিন চলার পর সিনচিয়াংয়ের উরুমুচি শহরে পৌঁছাই। এরপর আমরা ৩০জনেরও বেশি যাত্রী বিশ্ববিদ্যালয়ের এক বড় ট্রাকে উঠে ৭-৮ দিন চলার পর কৃষি একাডেমিতে পৌঁছাই।'

অতীতকালের কৃষি একাডেমির অবকাঠামো নির্মাণ বর্তমানের তুলনায় অনেক দুর্বল, তা প্রায় শূন্য থেকে গড়ে তোলা হয়। অধ্যাপক ছাও স্মরণ করে বলেন, তখন কৃষি একাডেমির প্রশিক্ষণ এবং উত্পাদন ও নির্মাণ কাজ একসাথে চালু হয়, শিক্ষকরা প্রশিক্ষণ কাজের সাথে সাথে উত্পাদনের কাজে অংশ নেন এবং শিক্ষার্থীদের সাথে উত্পাদন কর্তব্য সম্পন্ন করেন। তিনি বলেন,

'প্রতিদিন তিনবারের খাবার কৃষিক্ষেতে খেতে হয়েছে। ক্যান্টিন থেকে খাবারগুলো ক্ষেতে পাঠানো হতো। কাজ শেষে সন্ধ্যাবেলায় হোস্টেলে ফিরে যেতাম। তাই প্রতিদিন ১৩-১৪ ঘন্টার মতো কাজ করতাম। শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা একসাথে পরিশ্রম করতাম।'

পরিস্থিতি যত প্রতিকূলেই থাকুক না কেন, গমের নতুন ধারণা গবেষণায় অবিচল থাকেন অধ্যাপক ছাও ও তাঁর দল। গত শতাব্দীর ৮০'র দশকের মাঝামাঝি সময়ে সফলভাবে 'শিছুন নম্বর ১' ধারণার গম গবেষণা করেন তিনি। তারপর টানা ২০টিরও বেশি ধরনের গমের ধারণা গবেষণা করেন তাঁরা। এ সম্পর্কে অধ্যাপক ছাও বলেন,

'আমাদের প্রথম গবেষণার গমের নাম 'শিছুন নম্বর ১', তা শিহোজির বসন্তকালের গম। অনেক দিন গবেষণার পর তাঁরা সফলতা পেয়েছেন। ১৯৬৩ সালে সিনচিয়াংয়ে আসার পর থেকে এ পর্যন্ত ২০ বছরেরও বেশি সময় ধরে এ গমের ধারণা সৃষ্টি হয়। পরে ধারাবাহিক নতুন ধারণা গবেষণা করি। তখন এ কাজ আমাদের জন্য ছিলো অনেক কঠিন ব্যাপার।'

কৃষি একাডেমির সহকর্মীদের চোখে অধ্যাপক ছাওয়ের সাফল্য শুধু গমের নতুন ধারণা গবেষণায় সীমাবদ্ধ নয়, পাশাপাশি তিনি দক্ষ প্রশিক্ষিত দল গঠন করেছেন। এ সম্পর্কে শিহোজি বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি একাডেমির সিপিসি'র কমিটির সম্পাদক লিউ হুয়াই ফেং বলেন,

'তাঁর গবেষক দলের প্রধান সদস্য অধ্যাপক ছাওয়ের শিক্ষার্থী। অধ্যাপক ছাওয়ের প্রচেষ্টায় দক্ষ ব্যক্তিদের দল গঠন করা হয়েছে, তা সিনচিয়াংয়ের কৃষি উন্নয়ন ও স্থানীয় দক্ষ ব্যক্তিদের স্থিতিশীল কর্মসংস্থানের জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ।'

কৃষি একাডেমির অধ্যাপক খুং কুয়াং ছাও অধ্যাপক ছাওয়ের প্রিয় ছাত্রের অন্যতম। তিনি স্নাতক হওয়ার পর ছাওয়ের গবেষক দলে যুক্ত হন। এরপর তিনি মাস্টার্স ডিগ্রি লাভের পর চেচিয়াং বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডিতে ভর্তি হন। ডক্টরেট ডিগ্রি অর্জনের পর তিনি শিহোজি কৃষি একাডেমিতে অধ্যাপক ছাওয়ের সাথে বিজ্ঞান গবেষণার কাজে যুক্ত হন। এ সম্পর্কে অধ্যাপক খুং বলেন,

'অধ্যাপক ছাও অনেক মহান কাজ করেছেন। গমের নতুন ধারণা গবেষণায় আমাদের গ্রুপে মোট ২০টিরও বেশি ধরনের গম সৃষ্টি হয়েছে। পাশাপাশি তিনি অনেক শ্রেষ্ঠ ব্যক্তিদের প্রশিক্ষণ দিয়েছেন।'

গত কয়েক দশক বছরে অধ্যাপক ছাও লিয়ান ফু বিজ্ঞান গবেষণার ওপর মনোযোগ দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে স্নাতক পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের প্রশিক্ষণে গুরুত্ব দেন। তাঁর প্রভাবে কৃষি একাডেমির অনেক শিক্ষার্থী স্নাতক হওয়ার পর সিনচিয়াংয়ে চাকরি শুরু করেন। তারা সিনচিয়াংয়ের বাইরে প্রশিক্ষণ নিলেও অবশেষে অঞ্চলটিতে ফিরে যান এবং স্থানীয় অঞ্চলের উন্নয়নে প্রচেষ্টা চালান।.............

'যদিও বয়স প্রায় ৮০ বছর, তারপরও অধ্যাপক ছাও যুবকদের মতো আন্তরিকভাবে চীনের সীমান্ত এলাকার উন্নয়নে অবদান রাখেন। ৭০ বছর বয়সে তিনি স্নাতক পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের ক্লাস নেন আর ৮০ বছর বয়সে তিনি যুব শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ ও নতুন শিক্ষার্থীদের পরিচিতি ক্লাসে অতিথি হিসেবে ভাষণ দেন'। অধ্যাপক ছাও বলেন,

'গত কয়েক বছরে আমার প্রধান কাজ ছিলো শ্রেষ্ঠ দক্ষ ব্যক্তি প্রশিক্ষণ দেওয়া। প্রতি বছর নতুন শিক্ষার্থীদের ইতিহাস, গল্প ও আশাবাদ শেয়ার করি। ইতিহাসের কথা বলতে গেলে শিহোজি বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়নের ইতিহাস স্মরণ করতে হবে, আসলে তা সৈন্য গ্রুপের আত্মার হস্তান্তর। গল্পের কথা বলতে গেলে সিনচিয়াংয়ের উন্নয়নে সেনাদের চমত্কার জীবনের অভিজ্ঞতার কথা বলতে হবে। আশাবাদের কথা বলতে গেলে বলতে চাই, আমি হাঁটতে পারলে যথাযথভাবে আমার দায়িত্ব পালন করবো।'

প্রিয় শ্রোতা, সময় দ্রুত চলে যায়। আমাদের আজকের অনুষ্ঠানও এখানেই শেষ করতে হবে। এ অনুষ্ঠান সম্পর্কে কোনো মতামত থাকলে আমাদের চিঠি লিখতে ভুলবেন না। আমাদের যোগাযোগ ঠিকানা ben@cri.com.cn,caoyanhua@cri.com.cn

সময় মতো আমাদের অনুষ্ঠান শুনতে না পারলে বা শুনতে মিস করলে আমাদের ওয়েবসাইটে তা শুনতে পারবেন। ওয়েবসাইটের ঠিকানা: www.bengali.cri.cn

তাহলে এবার বিদায় নিচ্ছি, সবাই ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন, থাকুন সুন্দর ও আনন্দে। আগামী সপ্তাহের একই দিনে একই সময়ে আবারো কথা হবে। যাই চিয়ান। (সুবর্ণা/টুটুল/স্বর্ণা)


1  2  
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040