বাংলাদেশি যুবকদের চীন সফর, শিক্ষা-সম্পর্কিত খবর এবং চীনের জাতীয় শিক্ষা সম্মেলনে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের বিশ্লেষণ
  2018-10-01 14:45:31  cri

চীনে ৭ বছর বয়সী শিশুদের মধ্যে ৩০ শতাংশ ইন্টারনেটের সাথে জড়িত

সম্প্রতি বেইজিংয়ে প্রকাশিত এক জরিপ থেকে জানা গেছে, বর্তমানে চীনা শিশুদের ইন্টারনেট ব্যবহারের বয়স অব্যাহতভাবে কমছে এবং শিশুদের মোবাইল ব্যবহারের পরিমাণও দিন দিন বাড়ছে।

চীনের সমাজ ও বিজ্ঞান প্রযুক্তি একাডেমির সংবাদ ও সম্প্রসারণ গবেষণাগার এবং চীনের শিশু উন্নয়ন পরিষেবা কেন্দ্রসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের যৌথ উদ্যোগে গত ১০ বছরের পরিসংখ্যান বিবেচনা করে এ জরিপ প্রকাশ করা হয়। তা থেকে জানা যায়, ২০১৭ সালে জরিপে অংশগ্রহণকারী ১৮ বছর বয়সের নিচে শিশু ও যুবকদের ইন্টারনেট ব্যবহার পরিমাণ ছিলো ৯৮.১ শতাংশ, তাদের মধ্যে ১০ বছর আগে ইন্টারনেটের সাথে জড়িতদের পরিমাণ ৭২ শতাংশ, যা ২০১০ সালের জরিপে ৫৫.৯ শতাংশের তুলনায় অনেক বেশি এবং ৭ বছর বয়সের চেয়ে কম বয়সী ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর পরিমাণ ২৭.৯ শতাংশ।

তাছাড়া, শিশুদের নিজের মোবাইল ফোন ব্যবহারের পরিমাণও ৭৩.১ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। শহরে এ সংখ্যা ৭৫.৪ শতাংশ ও গ্রামে ৬৭.৬ শতাংশ। প্রাথমিক স্কুলে এ সংখ্যা ৬৪.২ শতাংশ, মাধ্যমিক স্কুলে ৭১.৩ শতাংশ আর উচ্চ বিদ্যালয়ে ৮৬.৯ শতাংশ।

মোবাইল ব্যবহার নিয়ে কিছু আলোচনা।

চীনের জাতীয় শিক্ষা সম্মেলনে গুরুত্বপূর্ণ কিছু বিষয়ের বিশ্লেষণ

শিক্ষা দেশের উন্নয়ন ও জনগণের জীবনযাপনের সাথে ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কিত, যা শুধু বর্তমান নয়, ভবিষ্যতের ওপরও গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলে। তাই চীনের জাতীয় শিক্ষা সম্মেলনে জনগণের মনোযোগী বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হয় এবং বিশেষজ্ঞরা এ বিষয়টি নিয়ে গভীর বিশ্লেষণ করেন। আজকের অনুষ্ঠানে এ সম্পর্কিত কিছু তথ্য তুলে ধরবো।

১.স্কুলের শিক্ষাদানের মান উন্নত করা

জাতীয় শিক্ষা সম্মেলনে চীনের শিক্ষাদানের আধুনিকায়ন দ্রুততর করা, শিক্ষার মাধ্যমে দেশকে শক্তিশালী করা ও জনগণের সন্তোষজনক শিক্ষা চালু করা'সহ বিভিন্ন লক্ষ্যমাত্রা উত্থাপন করা হয়।

গভীরভাবে শিক্ষা ব্যবস্থার সংস্কার চালু করার মূল উদ্দেশ্য হলো শিক্ষাদানের মান উন্নত করা। এ সম্পর্কে চীনের শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রকাশিত দলিলে স্নাতক কোর্সের মান নিশ্চিত করা ও কঠোরভাবে পরীক্ষার শৃঙ্খলা মেনে চলা এবং শিক্ষার্থীদের স্নাতক পর্যায়ের মানদণ্ড নিয়ন্ত্রণ করাসহ ধারাবাহিক নির্দেশনা দেওয়া হয়। কারণ প্রতিটি পরিবার সন্তানদের শিক্ষাগ্রহণে ব্যাপক টাকা ও সময় ব্যয় করে থাকে, তাই গুণগতমানসম্পন্ন শিক্ষাদান সবার প্রত্যাশা। শ্রেষ্ঠ শিক্ষক ও চমত্কার স্কুল উভয়ই প্রয়োজন। শ্রেষ্ঠ শিক্ষকের প্রশিক্ষণ অতি জরুরি। শিক্ষকদের অবস্থান উন্নত করা ও বেতন বাড়িয়ে দেওয়াসহ বিভিন্ন ব্যবস্থা নেওয়া উচিত, যাতে শিক্ষকতার প্রতি আকর্ষণ ব্যাপকভাবে বেড়ে যায়।

২.শিক্ষাদানের সমতা বাস্তবায়ন করা

এবার শিক্ষা সম্মেলনে 'চীনের আঞ্চলিক, শহর ও গ্রাম এবং বিভিন্ন পর্যায়ের শিক্ষাদানের ভারসাম্য উন্নয়ন' এমন লক্ষ্যমাত্রা উত্থাপন করা হয়। এতে শহর ও গ্রামে একই মানদণ্ডের শিক্ষাদান, বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলের বাধ্যতামূলক শিক্ষাদানের ব্যয় দিয়ে শিক্ষকদের বেতন বাড়ানো এবং স্কুলের থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা উন্নত করার প্রতি গুরুত্বারোপ করা হয়। শিক্ষাদানের সমতা সমাজে সমতা বাস্তবায়নের গুরুত্বপূর্ণ ভিত্তি। গত কয়েক দশক বছরের মধ্যে চীনের প্রায় ১০০ শতাংশ বাধ্যতামূলক শিক্ষাদান গ্রহণ ও উচ্চ শিক্ষার ৪৫.৭ শতাংশ ভর্তির হার বাস্তবায়িত হয়েছে, যা চীনের শিক্ষাদানের নতুন রেকর্ড সৃষ্টি করেছে। তাই শিক্ষার সমতা বাস্তবায়নে বিভিন্ন মহলের যৌথ প্রয়াস প্রয়োজন।

৩. সুস্থতা বজায় রাখতে শ্রম ও শরীর চর্চা জোরদার

এবারের শিক্ষা সম্মেলনে শ্রমের তাত্পর্য গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানে রাখা হয়। ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে শ্রমের মর্ম প্রচার করা এবং তাদের নৈতিকতা, মেধা ও স্বাস্থ্য উন্নত করার কথা উল্লেখ করা হয়। খেলাধুলার মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা আনন্দ উপভোগ ও শক্তিশালী শরীর গঠন করবে বলে আশা করা হয়। বর্তমানে চীনা সমাজে পুরুষদের চরিত্র গঠন নিয়ে ব্যাপক আলোচনা করা হয়। খেলাধুলা পুরুষদের শারীরিক অবস্থা জোরদারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। কম্পিউটার ও মোবাইল গেমস সৃষ্টির পর থেকে যুবকদের শারীরিক অবস্থা ও খেলাধুলার দক্ষতা ব্যাপকভাবে হ্রাস পেয়েছে।

অনেকে এখন সারাদিন বাসায় বসে গেমস খেলে থাকে, তারা শরীর চর্চা করতে চায় না। এ সমস্যা সমাধানে স্কুলের ইতিবাচক ভূমিকা পালন করা উচিত। শ্রম শিক্ষাদানের মাধ্যমে ছাত্রছাত্রীরা বুঝতে পারবে জীবনে এর প্রয়োজন কতটা গুরুত্বপূর্ণ। শিক্ষার্থীদের মধ্যে এমন ধারণা তৈরি করতে হবে যে, শ্রম হলো সবচেয়ে পবিত্র, সুন্দর ও গৌরবের একটি ব্যাপার।

৪. শুধু পরীক্ষার ফলাফল শিক্ষার্থীদের বিচারের মানদণ্ড হতে পারে না

শিক্ষা ব্যবস্থার গভীর সংস্কার বাস্তবায়ন করতে চাইলে সংশ্লিষ্ট বিচার ব্যবস্থাও পরিবর্তন করতে হবে। শুধু পরীক্ষার ফলাফল বা শ্রেষ্ঠ স্কুলে ভর্তির হার বা থিসিস পেপার লেখার সংখ্যাসহ বিভিন্ন ফলাফল শিক্ষার্থীদের বিচারের মানদণ্ড হতে পারে না

বর্তমানে অনেক পিতামাতা বলেন, প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্কুলের ছাত্রছাত্রীদের হোমওয়ার্ক অনেক বেশি, যা শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্যের জন্য অনুকূল নয়। অতিরিক্ত চাপের কারণে ছাত্রছাত্রীরা পর্যাপ্ত ঘুমাতে পারে না, এছাড়া, স্কুলের পরও অতিরিক্ত ক্লাসে প্রশিক্ষণ শিক্ষার উন্নয়নে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে থাকে। তাই শুধু পরীক্ষার ফলাফল নয়, বরং নৈতিকতাসহ বহুমুখী পদ্ধতিতে শিক্ষার্থীদের বিচার ব্যবস্থা গড়ে তোলা হবে।

৫. চীনের বৈশিষ্ট্যময় শিক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তোলা

এবারের শিক্ষা সম্মেলনে চীনের বাস্তব অবস্থার উপর ভিত্তি করে শিক্ষা ব্যবস্থা উন্নত করতে হবে বলে উল্লেখ করা হয়। যদিও বিদেশি শিক্ষাদানে অনেক শ্রেষ্ঠ বিষয় রয়েছে, তবে তা চীনের বাস্তব অবস্থার সাথে সমন্বয় করে গ্রহণ করতে হবে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, কিছু কিছু প্রদেশে প্রাচীন কবিতার বিষয় প্রাথমিক স্কুলের চীনা ভাষা ক্লাসের বই থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে, তাতে ব্যাপক সমালোচনা তৈরি হয়েছে। চীনা জাতির সাংস্কৃতিক ভিত্তি ও উপাদান হিসেবে এসব শাস্ত্র ছাত্রছাত্রীদের মনে রাখা উচিত।

প্রতিটি দেশের স্কুলের পাঠ্যপুস্তকে সেই দেশের সাংস্কৃতিক আত্মবিশ্বাস প্রতিফলিত হয়, তাই চীনের বৈশিষ্ট্যসহ শিক্ষা-উপকরণ রচনার প্রচেষ্টা চালাতে হবে।

৬. পারিবারিক শিক্ষার ওপর গুরুত্বরোপ

পরিবার মানুষের জীবনের প্রথম স্কুল এবং পিতামাতা বাচ্চাদের প্রথম শিক্ষক। তাই শিক্ষাদানের শুরুটা হয় আসলে পরিবার থেকেই। এবারের শিক্ষা সম্মেলনে পিতামাতা ও পারিবারিক শিক্ষাদানের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার কথা উল্লেখ করা হয়। একটি উদাহরণ দিয়ে বলা যায়, সাবওয়েতে লাইনে দাঁড়িয়ে অপেক্ষার সময় বাচ্চা মাকে জিজ্ঞেস করে, 'মা, পায়ের ছাপের অর্থ কি?' 'মা উত্তরে বলেন, তা লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে সাবওয়ের জন্য অপেক্ষা করার জন্য স্থাপিত হয়েছে'। মায়ের কথা শুনে বাচ্চা লাইনে দাঁড়িয়ে ট্রেনের অপেক্ষা করে। এটা হল পারিবারিক শিক্ষাদানের ভূমিকা। বাচ্চাদের বড় হওয়ার পথে স্কুল, শিক্ষা-প্রতিষ্ঠান ও পরিবারসহ বিভিন্ন পক্ষকে যৌথভাবে আরো বেশি স্নেহ ও নৈতিক চিহ্ন রাখতে হবে বলে উল্লেখ করা হয়।

সুপ্রিয় বন্ধুরা, সময় দ্রুত চলে যায়। আমাদের আজকের 'বিদ্যাবার্তা' অনুষ্ঠানও তাড়াতাড়ি শেষ হয়ে এলো। আমাদের অনুষ্ঠান সম্পর্কে কোনো মতামত থাকলে আমাদের চিঠি লিখতে ভুলবেন না। আমাদের যোগাযোগ ঠিকানা ben@cri.com.cn,caoyanhua@cri.com.cn

রেডিওতে আমাদের অনুষ্ঠান শুনতে না পারলে বা মিস করলে আপনারা আমাদের ওয়েবসাইটে শুনতে পারবেন। আমাদের ওয়েবসাইটের ঠিকানা হলো- www.bengali.cri.cn

এবার তাহলে বিদায় নিচ্ছি। সবাই ভালো থাকুন, সুন্দর থাকুন। আবারো কথা হবে। চাইচিয়ান। (সুবর্ণা/টুটুল)


1  2  
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040