'শিক্ষকদের বেতন কম হবার কারণে তারা অন্য চাকরি খুঁজতে থাকেন এবং অন্য বেশি বেতনের চাকরি পেলে তারা কিন্ডারগার্টেনের চাকরি ছেড়ে দিয়ে চলে যান। সেই জন্যে বেসরকারি কিন্ডারগার্টেনে এমন দৃশ্য খুব সহজেই দেখা যায়। বাচ্চাদের বাবা মা আমাকে বলেন, তাদের বাচ্চাদের কিন্ডারগার্টেনে নিয়মিতভাবে শিক্ষক পরিবর্তন হয়, ফলে শিক্ষক বিভিন্ন ক্লাসের বাচ্চাদের নাম মনে রাখতে পারেন না। এসব কারণে শিক্ষকদের প্রতি বাচ্চাদের আস্থা ও নির্ভরতা তৈরি হয় না। এমন দৃশ্য এড়িয়ে চলতে চাইলে কিন্ডারগার্টেনের উন্নয়নে আরো বেশি বরাদ্দ দিতে হবে এবং শিক্ষকদের বেতন বাড়াতে হবে।'
লিউ আরো বলেন, প্রি-স্কুলে ভালোভাবে ব্যাপক কল্যাণমূলক শিক্ষাদান চালু করতে চাইলে শিক্ষকদের বেতন সমানভাবে দেওয়া উচিত। যাতে শিক্ষকদের স্থিতিশীল চাকরির ভিত্তি স্থাপন করা যায়। বর্তমানে কিছু কিছু বেসরকারি কিন্ডারগার্টেন এটাকে কেবল ব্যবসা হিসেবে দেখে এবং অতিরিক্ত টাকা আদায় করে থাকে। এটাকে অনেক ভুল আচরণ হিসেবে আখ্যায়িত করেন সদস্য লিউ। তিনি বলেন, কিন্ডারগার্টেন কখনো একটি লাভজনক শিল্প নয়, যারা বাচ্চাদের শিক্ষাদানের সাথে জড়িত, তাদের দায়িত্বশীল মনোভাব নিয়ে এ কাজ করা উচিত।
প্রি-স্কুলের শিক্ষাদান মানুষের ভিত্তিমূলক শিক্ষা। এখানে শিক্ষক ও শিক্ষাদান সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। প্রি-স্কুলের শিক্ষকদের অবস্থানের উন্নতি হবে বলে তিনি আশা করেন। তিনি প্রত্যাশা করেন, প্রতিটি বাচ্চার ছোটবেলা মধুর ও সুন্দর হবে।
৩. ঐতিহ্যিক সংস্কৃতি শিক্ষা আরো আকর্ষণীয় হওয়া উচিত: সিপিপিসিসি'র সদস্যের প্রস্তাব
২০১৭ সাল থেকে চীনের প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্কুলের ছাত্রছাত্রীদের সামনে চীনা ঐতিহ্যিক সংস্কৃতি তুলে ধরার বিষয় চীনা ভাষার পাঠ্যপুস্তকে বাড়িয়ে দিয়েছে চীনের শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এবার সিপিপিসিসি'র অধিবেশনে চীনা ঐতিহ্যিক সংস্কৃতির প্রশিক্ষণ ও ঐতিহ্যিক সংস্কৃতির আকর্ষণ জোরদার করা সম্পর্কে ব্যাপক পরামর্শ দিয়েছেন সদস্যরা।
(রে ১,ইংরেজি ভাষার পাঠ্য)
এ রেকর্ডিং পশ্চিমা নাটকের বিষয় নয়, এটি ইংরেজি ভাষায় চীনের ঐতিহ্যবাহী লেখার বিষয়ের অনুবাদ। ১০০০ বছর আগে রচিত এ প্রবন্ধ এখনো অনেক প্রচলিত। সৃজনশীলতার সাথে ঐতিহ্যিক সংস্কৃতি তুলে ধরা সিপিপিসিসি'র সদস্যদের বিবেচনার ব্যাপার।
ঐতিহ্যবাহী সংস্কৃতি উত্তরাধিকার করতে চাইলে পাঠ্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ। এ সম্পর্কে বেইজিং তুছেং এলাকার বিশেষ শিক্ষাদান স্কুলের প্রধান চৌ ইয়ে বলেন, চলতি বছর তাঁর প্রস্তাব হল চীনা ঐতিহ্যিক সংস্কৃতি জানার জন্য একটি বিশেষ বই রচনা করবে চীন সরকার। তিনি বলেন,
'বর্তমানে আমাদের বাধ্যতামূলক শিক্ষায় ঐতিহ্যিক সংস্কৃতির সাথে জড়িত বিষয় শুধু স্কুলে নিজস্বভাবে রচিত পাঠ্যপুস্তকের বিষয়। প্রতিটি স্কুলের বিষয় ভিন্ন, তা সরকারের পর্যায় থেকে এক রকম হলে ভালো হবে।'
জানা গেছে, ২০১৭ সাল থেকে চীনের প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্কুলে ছাত্রছাত্রীদের বইয়ের মধ্যে ঐতিহ্যিক সংস্কৃতির বিষয় বেড়ে গেছে। বর্তমানে প্রাথমিক স্কুলের চীনা ভাষার বইতে কবিতার সংখ্যা ১০০টিরও বেশি, তা মোট পরিমাণের ৩০ শতাংশে দাঁড়িয়েছে এবং উচ্চ বিদ্যালয়ে কবিতার পরিমাণ ৭০টিরও বেশি। কবিতা ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে অনেক জনপ্রিয়। এ সম্পর্কে বেইজিংয়ের একটি প্রাথমিক স্কুলের ছাত্রী লি জি সু জানায়,
'হুইছোং বসন্তকালের নদীর দৃশ্য' নামে কবিতাটি আমি খুবই পছন্দ করি। কবিতার সাথে অঙ্কিত ছবিও দারুণ সুন্দর। কবিতা পড়ার মাধ্যমে বুঝতে পারি প্রাচীনকালে লোকজনের জীবন কি রকম ছিল।'
কবিতার পড়া সম্পর্কে উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী স্যু সিনও নিজের অনুভূতি শেয়ার করে। স্যু সিন বলে,
'আমার ধারণায় কবিতা আবৃত্তি একটি ভালো অভ্যাস। যদিও তা মুখস্থ করতে অনেক সময় লাগে এবং সহজেই আবার ভুলে যাই, তবে কবিতা চীনা ভাষার মধ্যে সবচেয়ে সুন্দর বিষয়। তা বেশি পড়লে নিজের ভাষার দক্ষতাও উন্নত করতে সক্ষম।'
সিপিপিসিসি'র সদস্য চীনের চেচিয়াং প্রদেশের শিক্ষা বিভাগের উপ-প্রধান হান পিং মনে করেন, ইংরেজি ভাষার অনুবাদে চীনা কবিতা বা শ্রেষ্ঠ প্রবন্ধ একটি ভালো পদ্ধতি। এভাবে চীনা ঐতিহ্যিক সংস্কৃতি জানার পাশাপাশি ইংরেজি ভাষাও পড়াশোনা করতে পারা যায়। তিনি বলেন,
'প্রতি বছর একটি বই পড়ার অনুষ্ঠান আয়োজন করি। তার মাধ্যমে চীনা ঐতিহ্যিক সংস্কৃতি তুলে ধরা হয় এবং এতে শ্রেষ্ঠ কবিতা আবৃত্তি অন্তর্ভুক্ত থাকে। এ বিষয়কে ভিত্তি করে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্কুলের ছাত্রছাত্রীদের জন্য বই রচনা করি। এটি শুধু পেশাগত প্রশিক্ষণ নয়, এটি প্রতিটি ক্লাসে চীনা সংস্কৃতি তুলে ধরার পদ্ধতি খুঁজে বের করতে সক্ষম।'
পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তর্ভুক্ত প্রাথমিক স্কুলের চীনা ভাষার শিক্ষক ওয়াং হোং বলেন,
'২০১৭ সালের মধ্য শরত্ উত্সবে আমরা বিশেষ অনুষ্ঠান আয়োজন করি। তাতে এক জন ছাত্রী ছাংএ'র অভিনয় করে। অন্যদের সামনে প্রায় ৩০টিরও বেশি বাক্য নিয়ে চাঁদের সাথে জড়িত কবিতার কথা পড়ে। যদি অন্যদের উত্তর দিতে পারে, তাহলে মিষ্টি পেয়ার সুপ খেতে পারে, এমনভাবে শিক্ষার্থীদের উত্সাহ দেই।'
চীনের ছিংহুয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের চীনা সংস্কৃতি একাডেমির প্রধান ছেন লাই মনে করেন, এ সমস্যার সমাধান শুধু কবিতা আবৃত্তির মাধ্যমে বাস্তবায়ন করা সম্ভব নয়। তিনি বলেন,
'মাধ্যমিক ও প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষক ও প্রধানদের সৃজনশীলতা পালন করে বই বা পাঠ্যপুস্তক রচনায় শিক্ষার্থীদের প্রিয় বিষয় যুক্ত করতে হবে এবং প্রশিক্ষণের পদ্ধতিতেও নব্যতাপ্রবর্তন করতে হবে।'
মোদ্দাকথা, সংগীত, কবিতাসহ বিভিন্ন বিষয় আধুনিক শিক্ষাদানের সাথে যুক্ত করা চীনের ঐতিহ্যিক সংস্কৃতি সম্পর্কে জানার জন্য সহায়ক। শিক্ষকদের সৃজনশীলতার মাধ্যমে চীনের ঐতিহ্যিক সংস্কৃতির প্রশিক্ষণ আরো চমত্কার হবে বলে আশা করি।
৪. বিদেশে প্রবাসী চীনা নেতা ও চীনা ভাষা স্কুলের প্রধানদের জন্য চীনা সংস্কৃতি জানার প্ল্যাটফর্ম গড়ে তোলা অনেক জরুরি
এবার সিপিপিসিসি'র অধিবেশনে চীনের কুয়াংশি চুয়াং জাতির স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের সিপিপিসিসি'র ভাইস চেয়ারম্যান লিউ মু রেন সিআরআইয়ের সাংবাদিকের কাছে একটি সাক্ষাত্কার দেন। এতে তিনি বলেন, বর্তমানে বিদেশে অনেক চীনা সমিতির প্রধান ও চীনা ভাষা স্কুলের প্রধান চীনা ভাষা বলতে, লিখতে পারেন না। তাদের জন্য চীনা ভাষা শেখার প্ল্যাটফর্ম গড়ে তোলাকে অনেক জরুরি ব্যাপার হিসেবে আখ্যায়িত করা উচিত।
২০১৬ সালে থাইল্যান্ডের চীনা ভাষা সমিতির সাথে যোগাযোগ করার সময় সদস্য লিউ খেয়াল করেন, সেদেশে ৩০০টিরও বেশি চীনা ভাষার স্কুল রয়েছে, যা দ্বিপাক্ষিক সাংস্কৃতিক বিনিময়ের গুরুত্বপূর্ণ চ্যানেল। থাইল্যান্ডে প্রবাসী চীনাদের বংশধররা চীনা ভাষা ও সংস্কৃতি শিখতে আগ্রহী, তবে একটি জটিল সমস্যা হচ্ছে, বর্তমানে চীনা ভাষা স্কুলের প্রধান ও পরিচালক বোর্ডের সদস্যরা চীনা ভাষা বলতে পারেন না। চীনা সভ্যতা ও সংস্কৃতি সম্পর্কিত জ্ঞান তাদের জন্য খুব জরুরি এবং তাদেরকে সংশ্লিষ্ট পেশাগত প্রশিক্ষণও গ্রহণ করতে হবে।
এ সম্পর্কে সিপিপিসিসি'র সদস্য লিউ মু রেন মনে করেন, বিদেশে প্রবাসী চীনাদের চাহিদা বিবেচনা করে এসব সমস্যা সমাধান করা উচিত। আসিয়ানভুক্ত দেশের বিভিন্ন ভাষার অনুবাদকদের প্রশিক্ষণ ঘাঁটি হিসেবে চীনের কুয়াংসি স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল শ্রেষ্ঠ চীনা ভাষার শিক্ষক প্রশিক্ষণ দিতে সক্ষম। শিক্ষকরা আসিয়ানভুক্ত দেশের প্রবাসী চীনা সমিতির নেতাদের ও চীনা ভাষা স্কুলের প্রশাসকদের চীনা ভাষা শেখার জন্য সহায়তা দেবেন এবং তাদের চীন সফর ও প্রশিক্ষণের সুযোগ বয়ে আনবেন, যাতে আধুনিক চীনের সংস্কৃতি, অর্থনীতি, রাজনীতি ও সমাজসহ বিভিন্ন তথ্য তারা জানতে সক্ষম হন।
বিদেশে চীনা প্রবাসীদের নিজেদের উদ্যোগে সংশ্লিষ্ট প্রশিক্ষণ নেওয়া অনেক কঠিন ব্যাপার। যদিও আসিয়ানভুক্ত দেশের অনেক ছাত্রছাত্রী এখন চীনে লেখাপড়া করে, তবে প্রবাসী চীনা সমিতির নেতা ও চীনা ভাষা স্কুলের প্রশাসকদের জন্য পেশাগত প্রশিক্ষণ চাহিদা এখনও মেটানো হয় নি। তাই সংশ্লিষ্ট সরকারি প্রতিষ্ঠানকে এ বিষয়ে মনোযোগ দেওয়ার আহ্বান জানান সদস্য লিউ।
সুপ্রিয় শ্রোতা, সময় দ্রুত চলে যায়। আমাদের আজকের অনুষ্ঠানও এখানেই শেষ করতে হবে। এ অনুষ্ঠান সম্পর্কে কোনো মতামত থাকলে আমাদের চিঠি লিখতে ভুলবেন না। আমাদের যোগাযোগ ঠিকানা: ben@cri.com.cn, caoyanhua@cri.com.cn
সময় মতো আমাদের অনুষ্ঠান শুনতে না পারলে বা শুনতে মিস করলে আমাদের ওয়েবসাইটে তা শুনতে পারবেন। ওয়েবসাইটের ঠিকানা: www.bengali.cri.cn
সবাই ভালো থাকুন, সুন্দর থাকুন, আবার কথা হবে। চাইচিয়ান। (সুবর্ণা/টুটুল)